বসন্ত এলেই যেন মনটা বলে ওঠে, ‘পিন্দারে পলাশের বন পালাব পালাব মন’। আসলে বসন্ত (spring) মানেই তো চারপাশের প্রকৃতি রঙে রঙে সেজে ওঠে। আর বসন্ত কালের আগমন মানেই তো বসন্ত উৎসব (basanta utsav) আর দোল (dol)। আর দোল (dol) মানেই শিমুল-পলাশ-আবির-রং আর অবশ্যই রঙের উৎসবে মেতে ওঠা মানুষের বাঁধভাঙা আনন্দ। আর দোলে (dol) তো প্রতিবারই আনন্দ করে রং খেলায় মেতে ওঠেন অথবা হোলি পার্টি বা ঘরোয়া আড্ডায় যোগ দেন। এ বার দোলটাকে (dol) একটু অন্য ভাবে কাটাতে দু’-তিন দিনের জন্য বেরিয়েই পড়ুন। একেই ইয়ার এন্ডিংয়ের জন্য অফিসে কাজের প্রচুর চাপ। তার উপর বহু দিন বেরোনোও হয়নি। তাই এ বার দোলে ঘুরেই আসুন শান্তিনিকেতন (shantiniketan)। আর ছুটি একটু বেশি পেলে তো পোয়া বারো! একসঙ্গে পুরুলিয়াটাও (purulia) ঘুরে নিতে পারেন। কারণ সেখানেও তো গত কয়েক বছর ধরে পলাশ উৎসব হচ্ছে। আর দোলেও (dol) থাকে নানা আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। তাই যাঁরা শান্তিনিকেতনের ভিড়টা এড়াতে চান, তাঁরা পুরুলিয়া চলে যেতে পারেন।
এক বার ভাবুন তো, রোজ ঝলমলে দিন, নীল আকাশ পেঁজা তুলোর মতো ইতিউতি সাদা মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রামের লাল মাটির রাস্তা সেই কোন সুদূরে গিয়ে মিশেছে। আর রাস্তার পাশে পাতাহীন পলাশ গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। যেন আগুন ঝরছে গাছগুলো থেকে। আর তার সঙ্গে হালকা-মিষ্টি দখিনা বাতাস গোটা ব্যাপারটাকে যেন একটা ভালবাসার চাদরে মুড়ে রেখেছে। আর গোটা প্রকৃতিই যেন বলছে, ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এ বার যাবার আগে’।
শান্তিনিকেতন
শান্তিনিকেতনে (shantiniketan) তো এমনিতেই বাঙালিদের অত্যন্ত পছন্দের জায়গা। সে দু’-দিনের জন্যই হোক আর পাঁচ দিনের জন্যই হোক। মনটা কেমন করে উঠলে একটু শান্তিনিকেতন (shantiniketan) ঘুরে আসলেই যেন শান্তি! আর এমনও নয় যে, এক বার গেলে আর যাওয়া যাবে না। বিশ্বভারতী, রবি ঠাকুরের বাড়ি, কোপাই নদী, সোনাঝুরির হাট, খোয়াই- এ সব বারবার দেখলেও যেন সাধ মেটে না। অনেকে তো আবার মন খারাপ হলেই ছুটে যান শান্তিনিকেতনে। কোপাই নদী অর্থাৎ যে নদীকে নিয়েই বিশ্বকবি লিখে গিয়েছেন, ‘আমাদের ছোট নদী চলে আঁকেবাঁকে।’ যে কবিতাটা ঘিরে রেখেছে আমাদের ছোটবেলাটাকে। সেই কোপাই নদীর ধারে একটু সময় কাটালেই সব ক্লান্তি যেন মুছে যায়। শুধু তা-ই নয়, এক-একটা মরসুমে শান্তিনিকেতনের রূপ যেন এক-এক রকম। আর বসন্তে (spring) তো যে দিক তাকাবেন, সে দিকেই আগুন রাঙা পলাশের সমাহার, যে সৌন্দর্য কবির চোখে ধরা দিয়েছে ‘রাঙা হাসি রাশি রাশি’ রূপে। যখন বসন্ত উৎসবের চলে, তখন সেখানে যেন কেউ আরও রং ঢেলে দেয়। বসন্ত উৎসব শুরু করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই উৎসবের ধারা আজও অব্যাহত। দোলপূর্ণিমার দিনই শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের (basanta utsav) আয়োজন করা হয়। তার আগের দিন সন্ধ্যেতেই শুরু হয়ে যায় বৈতালিক। আর দোলের দিন সকালে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল’ গানটিতে মেতে ওঠে আকাশ-বাতাস। অনুষ্ঠান শেষে বেলা পর্যন্ত চলে আবির খেলা। নানা জায়গা থেকে আসা মানুষ রঙের খেলায় মেতে ওঠেন। চারিদিকে রংবেরঙের আবির ওড়ে। জায়গায় জায়গায় শুরু হয় নাচ-গানের আসর। বাউলগান-নাচে মেতে ওঠে সকলে। তবে হ্যাঁ, শান্তিনিকেতনের (shantiniketan) বসন্ত উৎসবে (basanta utsav) যেতে চাইলে আগে থেকেই হোটেল অথবা থাকার জায়গা বুক করে রাখতে হবে। আর যাঁরা ট্রেনে যেতে চাইবেন, তাঁরাও আগে থেকে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখতে পারেন।
পুরুলিয়া
শান্তিনিকেতনের (shantiniketan) ভিড় এড়াতে অনেকেই পছন্দ চান। তা হলে ঘুরে আসুন অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে পুরুলিয়ায় (purulia)। নীল আকাশ, রাস্তার ধারে ধারে আগুনরাঙা পলাশের সমাহার, পাহাড় ঝরনা, মাদল আর মহুয়ায় মাতোয়ারা হতে বসন্তে রঙের উৎসবে শামিল হতে চলে যান পুরুলিয়া (purulia)। মূল আকর্ষণ- লোকগীতি, সাঁওতালি নাচ-গান, ঝুমুর, ছৌ। সেখানে গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে পলাশ উৎসবও। গোটা জেলা জুড়ে চলবে উৎসবের আবহ। দোলের (dol) আগের দিন বিকেলে পাহাড়ের কোলে সাঁওতালি নৃত্য আর ঝুমুর গান দিয়ে উৎসবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়৷ সঙ্গে প্রথা মেনে হয় ন্যাড়াপোড়াও৷ দোলের দিন সকালে উৎসব শুরু হয়৷ সন্ধ্যা থেকে বাউল গানের আসর৷ তা হলে দেরি কীসের! দোলে এক ছুট্টে চলে যান শাল-পিয়ালের বনে।
ছবি সৌজন্যে: ইউটিউব
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!