ADVERTISEMENT
home / স্টোরিজ
পুজোর অণুগল্প: বিজয়া দশমীর মিষ্টিমুখ করতে-করতে পড়ে ফেলুন ছোট গল্প ‘বরণ’

পুজোর অণুগল্প: বিজয়া দশমীর মিষ্টিমুখ করতে-করতে পড়ে ফেলুন ছোট গল্প ‘বরণ’

বাঙালি গল্প শুনতে ও শোনাতে ভালবাসে। আমরা জানি পুজোর (Durga Puja) আগে ও পরে পূজাবার্ষিকী ছাড়া আমাদের পুজো সম্পূর্ণ হয় না। আমরাও তাই নিয়ে এসেছি কিছু পুজো স্পেশ্যাল (special) গল্প (short story)। প্রতিটা গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুজোর আবেগ আর নস্টালজিয়া। আজকের অণুগল্প ‘বরণ’ (Boron)। গত দু’দিন আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি ছ’টি অণুগল্প, যা লিখে পাঠিয়েছিলেন আমাদের পাঠকেরা। আজকের দু’টি গল্প লিখেছেন POPxo বাংলা টিমের সদস্যরা। এই গল্পটির লেখিকা পরমা সেন, এডিটর, POPxo Bangla।

ইনস্টাগ্রাম

দৃশ্যপট ১

ADVERTISEMENT

আবার বাজছে! আবার শুরু হয়েছে সেই গুরগুরানি…

ঘুম জড়ানো চোখে চেনা সুরে ঢাকের বোলটা কানে যেতেই বুকটা সেই চেনা সুরে হু হু করে উঠল সুচরিতার! উফ, এরা এতদিন ধরে ঢাক বাজাচ্ছে, তা-ও একটা নতুন বোল তুলতে পারে না ঢাকে? প্রতিবার সেই এক সুরে ঠাকুর থাকবি কতক্ষণ, ঠাকুর যাবি বিসর্জন…শুনলেই বছরপনেরো আগের সেই দিনটা…না, না, সেই দিনটা একটুও মনে করতে চান না তিনি!

মায়ের উদ্দেশ্যে প্রণামটা সেরে বিছানা থেকে উঠে পড়লেন সুচরিতা। আজ তাঁর মেলা কাজ। নারকেল কুরিয়ে রেখেছেন কাল রাতেই, আজ পাক দিয়ে ছাপ তৈরি করবেন। সেই সঙ্গে নিমকি ভাজতে হবে, বোঁদে রসে ফেলতে হবে, ঘুগনির মটর ভেজানো আছে, কিমাও তৈরি, সেটাও ফাইনাল করে ফেলতে হবে…দেওয়ালে ঝোলানো অবিনাশের দিকে একবার তাকালেন তিনি…ছোট একটা চাপা নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেল বুক চিরে! মনে-মনে বললেন, তুমি তো চলে গেলে, প্রতিবার এই বছরকার দিনে আমার দীর্ঘনিঃশ্বাসটা পৌঁছয় কি, সেই স্বর্গ অবধি?

এই পাড়ার ঠাকুর এখনও কাঁধে চড়ে ভাসান যায়। অবিনাশও নিয়ে যেতেন এক কালে। সুচরিতা দোতলার ঝুলবারান্দা থেকে দেখতেন, পাশে থাকত…ওই আবার, আবার সেই চাপা কষ্টটা…নাঃ, জোর করে কাজে মন দিতে হবে দেখছি…জোর করে কানে অদৃশ্য তুলো গোঁজেন সুচরিতা, শব্দটা কানে না ঢুকলেই বাঁচা যায়!

ADVERTISEMENT

দৃশ্যপট ২

দূর থেকে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখছিল আনম মুস্তাফি। পুজোটা তার চেনা, বাড়িটাও। ছোটবেলায় ওই ঝুলবারান্দা থেকে নীচে ঝুঁকে দেখলেই তার মাথা ঘুরে যেত! এখনও কি ঘুরবে? বাঁশের সঙ্গে ঠাকুর বাঁধা হচ্ছে, দুই হেঁচকা টানে মা উঠে পড়বেন বলিষ্ঠ কাঁধে। আবার পাড়ি দেবেন শ্বশুরবাড়ির দিকে…আনমও কি ঘরে ফিরবে এবার? নাকি প্রতিবারের মতো এবারও ওড়নার আড়াল থেকে মা দুর্গাকে প্রণাম করেই ফিরে যাবে? শুভ্রাংশু বলেছে, এবার ঘরে না ফিরলে পরের বার নাকি এখানে আসতেই দেবে না! মা দুর্গা কেন, অবিনাশকেও তো দূর থেকেই বিদায় জানিয়েছে আনম, কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি! যদি মানুষটা সেই গুরুগম্ভীপ গলায় আবার তিরস্কার করেন! হঠাৎ কে যেন আনমের হাতটা এসে ধরে…তমকে তাকায় আনম, লাল-সাদা ফ্রক পরা একটা ছোট্ট মেয়ে ফিকফিক করে হাসছে তার দিকে তাকিয়ে…

তুমি কোন বাড়িতে থাক সোনা?

এক গাল হেসে, আঙুল উঁচিয়ে মণ্ডপের পিছনের দিকের বাড়িটা দেখায় মেয়েটি, তারপর আনমের হাত ধরে টেনে এগিয়ে যেতে থাকে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে…আনম শত চেষ্টা করেও হাত ছাড়াতে পারে না! তার ওড়নার আড়াল সরে গিয়েছে…আশপাশের লোকেরা তাকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে! সে বিবাহসূত্রে, বা বলা ভাল স্বেচ্ছায় আনম মুস্তাফি, জন্মসূত্রে সুদক্ষিণা…পাড়ার পুরনো বাসিন্দাদের ড্যাবড্যাবে দৃষ্টির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে অদৃশ্য টানে…

ADVERTISEMENT

দৃশ্যপট ৩

ঘুগনিটার উপর গরমমশলা ছড়িয়ে ঢাকনাটা সবে দিয়েছিলেন সুচরিতা। হঠাৎই পুরনো ঝি মানদার গলা পেলেন নীচ থেকে…কী বলছে সে বুঝতে না পেরে জানলা দিয়ে মুখ বাড়াতেই হৃদপিণ্ডটা এক লাফে তাঁর গলার কাছে চলে এল যেন! ঢাকনা ফেলে কোনওমতে নীচে নামলেন। দেওয়ালে ঝুলন্ত অবিনাশের প্রখর দৃষ্টি উপেক্ষা করেই…যে এসেছে, সে আনম মুস্তাফি নয়, সে সুদক্ষিণা চট্টোপাধ্যায়, সুচরিতা চট্টোপাধ্যায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন, একটি মুসলমান ছেলেকে মেয়ে ভালবেসেছিল বলে তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন অবিনাশ। পনেরো বছর আগে এই বিজয়া দশমীর দিন মেয়ে সেই ছেলেটিকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে বলেছিল, সে মুসলমান হয়েছে কলমা পড়ে আর ছেলেটি গোমূত্র পান করে হিন্দু ধর্মে দীক্ষা নিয়েছে! সুদক্ষিণা হয়েছে আনম, আর সইদুল হয়েছে শুভ্রাংশু! সুচরিতার বুক গর্বে ভরে গিয়েছিল মেয়ে দৃঢ়তা দেখে! কিন্তু অবিনাশের রক্তচক্ষুর সামনে কিচ্ছুটি বলতে পারেননি। তবে তারপর থেকে আর মাকে বরণ করেননি কোনওদিন! 

মেয়েকে বুকে জড়িয়ে চোখের জল ভিতরে ঠেলে মানদাকে দৃঢ় স্বরে বললেন,

বড় পিতলের থালাটা বের কর মানদা, আর মোড়ের দোকান থেকে একটু মিষ্টি আর একটা সিঁদুর কৌটো নিয়ে আয়। আজ মায়ে-ঝিয়ে বরণ করতে যাব মাকে!  

ADVERTISEMENT

ঢাকের আওয়াজটা বেশ ভাল লাগছে তাঁর এখন! কোলে মুখ গুঁজে থাকা মেয়ের চুলে বিলি কেটে দিতে-দিতে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় বিপ্লবটির জন্য মনে-মনে তৈরি হতে থাকলেন আনম মুস্তাফির মা আর অবিনাশ চট্টোপাধ্যায়ের বিধবা স্ত্রী সুচরিতা!

মূল ছবি সৌজন্য: ইনস্টাগ্রাম

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo Shop-এর স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…

ADVERTISEMENT
04 Oct 2019

Read More

read more articles like this
good points

Read More

read more articles like this
ADVERTISEMENT