আর মাত্র দুদিন পেরলেই নারী দিবস। আর নারী দিবসে সেই সব মেয়েদের কাহিনিই সবাই পড়তে বা জানতে ভালোবাসে যারা অন্যদের উদ্বুদ্ধ করে, তাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায়। মেয়েরা এখন ফাইতার জেট চালাচ্ছে, বিয়ের মণ্ডপে অস্বীকার করছে কনকাঞ্জলি দিতে, পুলিশ, গোয়েন্দা, পরিচালক এমনকি দমকলেও তারা চাকরি করছেন। এই পর্যন্ত তো তাও জানা ছিল। তাই বলে একটা মেয়ে (Kazi asma azmery) একা একা ১০০ দেশ ঘুরে এল, সেটা কি আদৌ সম্ভব? লোকে শুনে বলবে কী? লোকের কথা শুনে চলতে এই মেয়ের (Kazi asma azmery) বয়েই গেছে!অত কথা শুনতে গেলে যে ঘরেই বসে থাকতে হত। কিন্তু বাইরের টান বড় সাঙ্ঘাতিক। আর অনন্তের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ১০০টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন আসমা (Kazi asma azmery)। উঁহু, বাংলাদেশের (Bangladesh) খুলনার (Khulna) মেয়ে কাজী আসমা আজমেরি (Kazi asma azmery)।
কীভাবে শুরু হল এই যাত্রা?
আপনার কৌতূহল এতক্ষণে তুঙ্গে নিশ্চয়ই? জানতে ইচ্ছে করছে তো কীভাবে এবং কবে থেকে আসমার এই যাত্রা শুরু হল? বলছি, বলছি। তা প্রায় আজ থেকে বারো বছর আগের ঘটনা।ওই ২০০৭ সালের আশেপাশের কথা। আসমা তখন ছাত্রী। পড়াশোনা করছেন ঢাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা করতে করতেই প্রথমবার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ এল। প্রথম দেশ তাইল্যান্ড।তাইল্যান্ড ঘুরে আসমা পৌঁছলেন আমাদের ভারতে। তারপর নেপাল। ব্যাস, সারা পৃথিবী ঘোরার নেশা চেপে বসল মেয়ের মাথায়। ২০০৭ সালে আসমার দিকে আঙুল তুলে বান্ধবীর মা বলেছিলেন, যে এই মেয়ে অতি সাধারণ এবং জীবনের যুদ্ধে হেরে যাওয়া একজন! ব্যাস, জেদ চেপে গেল মেয়ের মাথায়।
বাধা বিপত্তি?
ওমা, সেকি আর আসেনি। মেয়েদের জীবন বলে কথা। তারা তো এগোলেও বিপদ, পিছলেও বিপদ। একা মেয়ে ধিঙ্গিপানা করে দেশে দেশে ঘুরবে আর টিপ্পুনি কাটা আত্মীয় স্বজনের দল আর সমাজ কি চুপ করে থাকতে পারে? ওমনি শুরু হয়ে গেল, ছিছি, এমা, একির বন্যা!কিন্তু সমাজ জানেনা আসমার মতো মেয়েরা অন্য ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। ২০০৯ সালে নিজের সমস্ত গয়না বিক্রি করে দেন আসমা! কারণ তার বাবা তাকে অর্থসাহায্য করতে অস্বীকার করেন। মোটা রকমের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট না দেখালে ভিসা পাবেন না। তাই গয়না বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি।
বিপদে মোরে রক্ষা করো…
আপনি কি ভাবছেন এই একা একা এত্তগুলো দেশ ঘুরে বেরানো খুব সহজ ছিল? একদম না। ভিয়েতনামে ২৩ ঘণ্টা ইমিগ্রেশান জেলে আটকে রাখা হয়েছিল তাকে!তুরস্ক থেকে সাইপ্রাসে ঢুকতে বাধা পেয়েছিলেন কারণ তার পাসপোর্ট বাংলাদেশের। কলম্বিয়ার বোগোটায় টাকা পয়সা সর্বস্ব খোয়া যায় আসমার। এদিকে আসমার পকেটে তখন মাত্র ১৮০ ডলার। তাই দিয়েই ১৭ দিন কাটিয়েছিলেন তিনি। পরে ব্যাঙ্কের সহায়তায় তার কার্ড এসে পৌঁছয়। কিন্তু কলম্বিয়ার মানুষের সাহায্যের কথা কোনওদিন ভুলবেন না তিনি। তবে এতকিছুর পরেও আসমার পাসপোর্ট আজও বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলার বাংলাদেশ। সেখানকার মেয়ে আসমা সদর্পে প্রত্যাখান করেছেন ইউরোপের পাসপোর্ট।
আসমার ট্র্যাভেল ডায়েরি
আসমা কোথায় কোথায় গেছেন জানতে চাইবেন না। জানতে চান তিনি কোথায় কোথায় যাননি! ট্রাক, মোটরগাড়ি চড়ে অস্ট্রেলিয়া ঘুরেছেন, ব্রাজিল গিয়ে বিশ্বকাপ দেখেছেন, হনডুরাস গেছেন, ১২ মাইল ধুলো মাখা পথ হেঁটে গেছেন সেই গ্রামে যেখানে চে গুয়েভারাকে হত্যা করা হয়। হ্যাঁ, বলিভিয়ার ভালেগ্রান্দেতেও উপস্থিত হয়েছেন আসমা। ফিজি থেকে গেলেন নিউজিল্যান্ড। মূলত এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি দেশ ঘুরেছেন তিনি। কারণ এখানেই তিনি রেড ক্রসে চাকরি পান।তবে আসমার প্রিয় জায়গা মনটেনেগ্রো।
অভিজ্ঞতার ঝুলি
ওরে বাবা, সেই ঝুলি তো প্রায় উপচে পড়ছে। কলকাতায় এলেই প্রাণ আনন্দে টইটম্বুর আসমার। এখানে যে বাংলা বলা যায়। ঘুরে এসেছেন তানজানিয়া, কেনিয়া আর ইথিওপিয়া। এইবার কন্যের বাবা মা বুঝেছেন এই মেয়েকে আটকে রাখা অসম্ভব। তবে বিয়ের জন্য বড্ড পিড়াপিড়ি। মেয়ে বললে, পঞ্চাশ খানা দেশ দেখে তবেই সাত পাক ঘুরবে। সেই ক-অ-অ-বে ২০১৮ তে ব্রাজিল ঘুরেই পঞ্চাশ কমপ্লিট! এবার? এবার টার্গেট ১০০। সেটাও হয়ে গেছে গত অক্টোবরে তুর্কমেনিস্থান সফরের পর।ও বলতে ভুলে গেছি ঘোড়ার মাংসের তরকারি, কুমিরের ডালনা, হাসের বরফি সব খেয়েছেন তিনি!!
বার্তা দেন আসমা
শুধু ঘুরে বেরিয়েই দায়িত্ব শেষ নয় মেয়ের। অবৈধ দেশান্তরের বিপদ নিয়ে তিনি প্রচার করেন। আর দেশের লোকেদের বলেন চরৈবেতি! বেরিয়ে পড়ো, ঘুরে দেখো সারা বিশ্ব।
সব ভালো যার…
বিয়ে করে বরকে নিয়ে যাবেন নেদারল্যান্ড আর সুইৎজারল্যান্ড। তাই আপাতত ওই দুটি দেশ তালিকা থেকে বাদ রেখেছেন তিনি।
তথ্যসূত্রঃ আনন্দবাজার আরকাইভ ও কালের কণ্ঠ
Picture Courtsey: Official account of Kazi Asma Azmery
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!