সুন্দর, ঘন আর লম্বা চুলের অধিকারিণী হতে সব মহিলাই চান এবং নানা রকমের এক্সপেরিমেন্টও করতে থাকেন চুলের ওপরে যাতে তাঁদের চুল তাড়াতাড়ি লম্বা হয়। কখনও মাথায় তেল লাগিয়ে বিনুনি বাঁধেন তো কখনও বা পার্লারে গিয়ে দামী দামী সব প্যাকেজ নিয়ে ট্রিটমেন্ট করান। কিন্তু এতেও চুল যে খুব তাড়াতাড়ি লম্বা হয় তা কিন্তু নয়। যদি আমরা আপনাকে অল্প সময়ে দ্রুত চুল লম্বা করার উপায় বলি, মানে এসব না করেও খুব সহজেই আপনি বাড়ি বসে লম্বা, ঘন আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের অধিকারিণী হতে পারেন, তাহলে কি আপনি সে কথায় বিশ্বাস করবেন? আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনি বাড়িতে বসেই বেশ কিছু ঘরোয়া টোটকার সাহায্যে তাড়াতাড়ি চুল লম্বা করতে পারেন। শুধু কয়েকটা নিয়ম একটু মেনে চলতে হবে ব্যস! তবে তার আগে আপনার জেনে রাখা দরকার যে কেন অনেকেরই চুল তাড়াতাড়ি বাড়ে না।
চুল তাড়াতাড়ি লম্বা করার দশটা ঘরোয়া টোটকা
চুল তাড়াতাড়ি লম্বা করার জন্য শ্যাম্পু
কীভাবে সুন্দর ও লম্বা চুল পাবেন তা নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর
১। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এতো বেশি স্ট্রেস কিন্তু আমাদের শরীরে সাথে সাথে চুলেরও ক্ষতি করে, যার ফলে অনেকেরই চুল তাড়াতাড়ি লম্বা হয়না।
২। অনেকেই নানা ধরণের ওষুধ খান, তার যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে তা বলাই বাহুল্য। এটিও চুল ঝরার এবং চুল তাড়াতাড়ি না বাড়ার একটি অন্যতম কারণ।
৩। আমরা কি খাচ্ছি, তার ওপরেও কিন্তু চুলের স্বাস্থ্য কেমন হবে তা নির্ভর করে। যদি আমরা বেশি ফাস্ট ফুড বাঁ তেল মশলাযুক্ত খাবার খাই, তাহলে কিন্তু চুল ঝরবেই এবং চুল ঝরতে থাকলে চুল লম্বাও হবে না।
৪। চুলে নানারকমের এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে যে আমরা চুলের কতটা ক্ষতি করি তা আমাদের কারোরই স্টাইল করার সময়ে মনে থাকে না। অতিরিক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগের ফলেও চুলের সাংঘাতিক ক্ষতি হয় এবং চুল লম্বা হওয়া তো দূরের কথা, ঝরে পড়ে যায়।
তাড়াতাড়ি চুল লম্বা করার ঘরোয়া উপায় যেগুলি আপনার চুল করে তুলবে দ্রুত লম্বা, ঘন এবং মজবুত।
একটা কাঁচের বাটিতে ১ চামচ করে নারকোল তেল, অলিভ অয়েল, মধু আর একটা ডিম ফেটিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রনটি ভালো করে চুলের গোঁড়ায় গোঁড়ায় লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। এক ঘণ্টা পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে কোনও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে স্ক্যাল্প আর চুল পরিস্কার করে নিন। খেয়াল রাখবেন, এই মাস্ক লাগানোর পরে কিন্তু ভুল করেও গরম জল দেবেন না চুলে। তাড়াতাড়ি ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এই মাস্ক ব্যবহার করুন। এক মাসের মধ্যে নিজেই বুঝতে পারবেন যে চুল কতটা লম্বা হয়েছে।
একটা ডিম, দুই থেকে আড়াই চামচ (চুলের লেন্থ অনুযায়ী) অলিভ অয়েল, একটা ভিটামিন ই ক্যাপস্যুল, এক চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার আর দু’ফোটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন। আপনার বাড়িতে যদি এসেনশিয়াল অয়েল না থাকে তাতে অসুবিধে নেই, কারণ এটা অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার আর ডিমের উগ্র গন্ধ দূর করার জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে এই পেস্টে। চুলের গোঁড়ায় গোঁড়ায় এই পেস্ট লাগিয়ে নিন এবং এক ঘণ্টা বাদে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ঠাণ্ডা জলে চুল ধুয়ে নিন। চাইলে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন, না করলেও সমস্যা নেই। ১৫ দিনে একবারই এই টোটকা ট্রাই করুন।
একটা মাঝারি আকারের অ্যাভোকাডো আর একটা ছোট সাইজের পাকা কলা একসাথে চটকে নিন। এবারে এর মধ্যে এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় গোঁড়ায় লাগিয়ে আধ ঘন্টা মাসাজ করুন। খুব বেশি প্রেশার দিয়ে মাসাজ করবেন না, আর মাসাজ করার সময়ে আঙুলের ডগা দিয়েই মাসাজ করুন। তারপরে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ঠাণ্ডা জলে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুবার এটা করতে পারেন।
এক চামচ আমলকির রস, এক চামচ শিকাকাই পাউডার, দু’চামচ নারকোল তেল মিশিয়ে একটু গরম করে নিন। একটু ঠাণ্ডা হলে চুলের গোঁড়ায় গোঁড়ায় মাসাজ করে নিন। সারা রাত এভাবে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এই টোটকাটি আপনি সপ্তাহে একবার ট্রাই করতে পারেন।
অনেকসময়ে কিন্তু চুল রুক্ষ আর শুষ্ক হয়ে গেলে চুলের ডগা ভেঙে যায় ফলে চুল লম্বা হয়না। এই সমস্যা দূর করতে একটা ছোট সাইজের পাকা কলা চটকে নিয়ে তাতে চার চামচ নারকোল তেল, এক চামচ গ্লিসারিন আর দু’চামচ মধু মিশিয়ে মিক্সিতে পেস্ট করে নিন। এবারে ওই পেস্ট ভালো করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন (যাতে জামা-কাপড়ে না লাগে)। আধ ঘণ্টা বাদে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে একবার এভাবে চুলের যত্ন নিলে তফাৎ দেখতে পাবেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।
আধ কাপ মধুতে চার চামচ বাদাম তেল (আমন্ড অয়েল) মিশিয়ে একটা এয়ার টাইট কাঁচের বোতলে রেখে দিন। এটা খুব ভালো কন্ডিশনারের কাজ করে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এই ন্যাচারাল কন্ডিশনার চুলে লাগিয়ে (গোড়ায় লাগাবেন না) ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে দিন। তারপরে মাইল্ড কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
একটা ন্যাশপাতি ছোট ছোট টুকরো করে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবারে ওই পেস্টে দু’চামচ জল, তিন চামচ আমন্ড অয়েল আর দু’চামচ দুধের সর মিশিয়ে চুলে ভালো করে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট এভাবে রেখে শুকিয়ে এলে জল দিয়ে ধুয়ে নিন। ন্যাশপাতি চুল মোলায়েম আর শাইনি করতে সাহায্য করে।
কয়েকটা নীমপাতা ৪ কাপ জলে দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এবারে ঠাণ্ডা হলে জলটা ছেঁকে নিন। যখনি চুল ধোবেন, এই জল দিয়ে চুল ধোবেন, দেখবেন চুল তাড়াতাড়ি লম্বা হয়।
১৫ থেকে ২০টা কারিপাতা এবং একটা লেবুর খোসা নিয়ে নিন। এবারে তাতে সোপ নাট পাউডার, সবুজ ছোলা আর মেথির বিজ একসাথে মিক্সিতে বেটে কারিপাতা আর লেবুর খোসার সাথে মিশিয়ে নিন। এবারে ওই মিশ্রন চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষন রেখে শ্যাম্পু করে নিন।
তিন চামচ কালোজিরের পেস্ট এবং তিন চামচ মেথিদানার পেস্ট একসাথে মিশিয়ে নিন। এর মধ্যে সামান্য জল দিয়ে একটু পাতলা করে নিন। এবারে ওই মিশ্রনে ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল আর দুটো ভিটামিন ই ক্যাপস্যুল অথবা অল্প ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ওই পেস্ট চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। যদি আপনার খুশকির সমস্যা থাকে তাহলে ২ চামচ নারকোল তেলও মিশিয়ে নেবেন। এক ঘণ্টা বাদে মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
বাজারচলতি অনেক শ্যাম্পুই রয়েছে যার বিজ্ঞাপন আমরা প্রতিদিনই দেখি, তবে সেই শ্যাম্পুগুলো রাসায়নিকে ভরপুর যা চুলের ভালো করার থেকে ক্ষতি বেশি করে। POPxo বাংলা তাই সবসময়ে আয়ুর্বেদিক প্রোডাক্টই রেকমেন্ড করে -
অ্যারোমা ম্যাজিক ত্রিফলা শ্যাম্পু তিনটি বিশেষ আয়ুর্বেদিক ওষধির গুণে সমৃদ্ধ। যদি আপনার অয়েলি স্ক্যাল্প হয় এবং শ্যাম্পু করার পরের দিন বাঁ দু’দিনের মধ্যেই চুল পেতে যায় এবং চিপচিপ করে তাহলে অবশ্যই আপনার এই শ্যাম্পুটি ব্যবহার করা উচিত। এর উপাদানগুলি চুলের গোড়া মুজবুত করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো করতে সাহায্য করে। ফলে চুল ঝরা কমে এবং চুল না ভেঙে বরং লম্বা হয়। তবে আপনার যদি শুষ্ক চুল হয় তাহলে এই শ্যাম্পুটি একেবারেই আপনার চলবে না, কারণ এতে শিকাকাই রয়েছে যা শুষ্ক চুলকে আরও রুক্ষ এবং ফ্রিজি করে দেয়।
চুল ঘন এবং সুন্দর করে তুলতে চুলে প্রোটিন এবং ভিটামিন অ্যাড করা খুব জরুরি। সোয়া প্রোটিন এবং বাদামের তেলের গুণে সমৃদ্ধ ভিএলসিসি-র ন্যাচারাল সায়েন্স সোয়া প্রোটিন কন্ডিশনার শ্যাম্পু চুলের গভীরে গিয়ে কাজ করে এবং ভেতর থেকে চুলকে পুষ্টি যোগায়। ফলে চুল হয়ে মজবুত, লম্বা, মোলায়েম এবং স্বাস্থ্যে ভরপুর। এই শ্যাম্পুতে হলুদও রয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবেই অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল। এই শ্যাম্পুটি খুব ধীরে ধীরে স্ক্যাল্প পরিস্কার করে ফলে যদি খুশকি বা অন্য কোনও ইনফেকশন থাকে তাহলে গোড়া থেকেই নির্মূল হয়।
উত্তরঃ ঘন, মোলায়েম এবং লম্বা চুলের জন্য একটা নয় অনেকগুলো ভিটামিন প্রয়োজন; ভিটামিন এ, বি, বি কমপ্লেক্স, সি, ডি এবং ই সবগুলিই প্রয়োজন।
উত্তরঃ আয়োডিন বললেই সবার আগে নুনের কথাই মনে পড়ে। তবে আয়োডিন কিন্তু চুলের জন্য খুব উপকারী, বিশেষ করে চুল মজবুত করার ক্ষেত্রে আয়োডিনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আয়োডিন অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল হবার কারণে স্ক্যাল্প ইনফেকশন হবার কোনও চান্স থাকেনা ফলে চুল ঝরারও কোন আশঙ্কা থাকে না। চুল ঝরার সমস্যা, অকালপক্কতা, রুক্ষ এবং শুষ্ক চুলের সমস্যা সমাধানে আয়োডিনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন