রান্নাঘরে এখন টোম্যাটো ছাড়া বাঙালির না চললেও, আদতে লাতিন আমেরিকার বাসিন্দা এই ফলটি ভারতে এসেছিল পর্তুগিজদের হাত ধরে, সেই ১৬ শতকের গোড়ার দিকে! গরমে টোম্যাটোর ফলন ভাল হয় বলে, এদেশে আস্তে-আস্তে টোম্যাটো ফলাতে শুরু করে চাষীরা। তারপর থেকেই ভারতে টোম্যাটোর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁওয়া। এর পিছনে কারণও আছে অনেক। প্রথমত, যে-কোনও পদের স্বাদ বাড়াতে এই সবজির (Beauty And Health Benefits Of Tomatoes) কোনও বিকল্প হয় না। আর টোম্যাটোতে উপস্থিত একাধিক উপকারী উপাদান শরীরে যত্নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনকী, ত্বক এবং চুলের যত্নেও এর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ফলটিতে এমন কী আছে, যা এত কাজে আসে? সেকথাই বলছি এখানে।
Table of Contents
- টোম্যাটোয় আছে নানা উপকারী উপদান (Tomato Nutrition Facts)
- শরীরের যত্নে টোম্যাটো (Health Benefits of Tomato)
- ত্বকের পরিচর্যায় টোম্যাটো (Tomato Benefits for Skin)
- চুলের পরিচর্যায় টোম্যাটো (Tomato for Hair)
- টোম্যাটো জুসের উপকারিতা (Tomato Juice Benefits)
- টোম্যাটো জুস তৈরির সহজ উপায় (How to Make Tomato Juice at Home)
- টোম্যাটোর খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (Side Effects of Tomato)
- টোম্যাটোর উপকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্নর উত্তর (FAQS)
টোম্যাটোর উপকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্নর উত্তর
টোম্যাটোয় আছে নানা উপকারী উপদান (Tomato Nutrition Facts)
এতে রয়েছে লাইকোপিন (Lycopene) নামক একটি উপাদান, যা শরীরের দেখভালে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ছাড়াও আছে আরও অনেক কার্যকরী উপাদান। যেমন…
১| কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrate)
১০০ গ্রাম কাঁচা টোম্যাটোয় (tomato) রয়েছে কম-বেশি পাঁচ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, যা কিছুটা হলেও শরীরে প্রয়োজনীয় এনার্জির চাহিদা পূরণ করে থাকে।
২| ফাইবার (Fiber)
শরীর নামক যন্ত্রটিকে চালাতে ফাইবার আবশ্যিক। আর ১০০ গ্রাম টোম্যাটোয় রয়েছে প্রায় ১৩ গ্রাম ফাইবার, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।
৩| ভিটামিন, মিনারেল এবং আরও সব উপাদান (Vitamins, Minerals and etc)
এতে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ভিটামিন কে, ফলেট, লাইকোপেন, বিটা-ক্যারোটিন সহ একাধিক উপকারী অ্যাসিড, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।
শরীরের যত্নে টোম্যাটো (Health Benefits of Tomato)
এত সব ভিটামিন এবং মিনারেল যখন একসঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে, তখন দেহের প্রতিটি অঙ্গের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না। তাই তো নিয়মিত একটা করে কাঁচা টোম্যাটো খেলে নানা উপকার মেলে।
১| হার্টের ক্ষমতা বাড়ে (Improves Heart Health)
রোজের ডায়েটে এই সবজিটিকে রাখলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে হার্ট রেট স্বাভাবিক থাকে। সঙ্গে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না।কোনও ধরনের কার্ডিভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
২| দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে (Improves Eyesight)
টোম্যাটোয় রয়েছে ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেক্স, থিয়ামিন, ফলেট এবং নিয়াসিনের মতো উপদান, যা শরীরে প্রবেশ করামাত্র এমন কিছু পরিবর্তন হয়, যার প্রভাবে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। তাই যাঁরা দিনে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় কম্পিউটারে কাজ করেন বা কোনও ধরনের ডিজিটাল স্ক্রিন নিয়ে যাঁদের কাজে, তাঁদের নিয়মিত একটা করে টোম্যাটো খাওয়া উচিত। কারণ, এমনটা করলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। এমনকী, চোখসংক্রান্ত কোনও ধরনের রোগের প্রকোপে পড়ার ভয়ও দূর হয়।
৩| রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে (Controls High Blood Pressure)
পরিবারে কি এই মারণ রোগের ইতিহাস আছে? তা হলে সময় থাকতে-থাকতে সাবধান হওয়াটা জরুরি। আর সেই কারণেই নিয়মিত একটা করে কাঁচা টোম্যাটো খেতে হবে। এতে উপস্থিত একাধিক মিনারেল, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে যাতে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকেও নজর রাখে এই সবজিটি। তার সঙ্গেই কমায় খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও। তাই একথা বলতে আর দ্বিধা নেই যে, সব দিক থেকে হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে এই সবজিটির কোনও বিকল্প নেই।
৪| হাড় এবং দাঁতের যত্নে কজে আসে (Good for Teeth and Bones)
বুড়ো বয়সে বাতের রোগ ঘাড়ে চেপে বসুক, এমনটা যদি না চান, তা হলে এখন থেকে নিয়মিত একটা করে কাঁচা টোম্যাটো খাওয়া শুরু করুন। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের শক্তি বাড়ায়। এমনকী, দাঁতের যত্নেও কাজে আসে। একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে মেনোপজের পরে বেশিরভাগ মহিলার শরীরেই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়, যে কারণে আরও সব শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই তো এই সময় আরও বেশি করে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
৫| শরীরকে বিষ মুক্ত করে (Eliminates Toxins From Your Body)
এই গোলগাল, ছোট্ট সবজিটির শরীরে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডান্ট, সঙ্গে রয়েছে লাইকোপেনও, যা নিমেষে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলিকে শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে দেহের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
আরও পড়ুন: শরীর-স্বাস্থ্যের দেখভালে মৌরির জুড়ি মেলা ভার
৬| ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে (Prevents Cancer)
“আই সি এম আর”-এর রিপোর্ট অনুসারে প্রতি বছর ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষত, ব্রেস্ট, সার্ভাইকাল, ওরাল এবং লাং ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। আর সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হল আগামী দিনে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। তাই এখন থেকেই সাবধান না হলে যে মারাত্মক বিপদ! কিন্তু প্রশ্ন হল, ক্যান্সারের মতো রোগকে কি দূরে রাখা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। তবে তা জন্য ডায়েটে একটু পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষত, নিয়মিত টোম্যাটোর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সবজি খেতে হবে। কারণ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে মেশামাত্র ক্যান্সার সেলগুলি ধ্বংস করে দেয়। সেই সঙ্গে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলিকেও শরীরে ছাড়া করে। ফলে কোনওভাবেই ক্যান্সার রোগ ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৭| খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় (Reduces Bad Cholesterol)
কোলেস্টেরলের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তা হলে নিয়মিত একটা করে টোম্যাটো খান। দেখবেন, উপকার মিলবে একেবারে হাতে-নাতে! কারণ, এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং নিয়াসিন, যা অল্প সময়েই শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেকে ভাবেন, টোম্যাটোর বীজ খেলে নাকি কোলেস্টেরল বাড়ে। এই ধারণার স্বপক্ষে কিন্তু কোনও প্রমাণ মেলেনি। তাই গুজবে কান দেবেন না। আর যদি একান্তই এ সম্পর্কে জেনে নিতে মন চায়, তা হলে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
৮| অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (Anti-Inflammatory)
কখনও বিশেষ কিছু খাবারের কারণে তো কখনও অন্য নানা কারণে আমাদের শরীরে ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়। যথা সময়ে যদি এই প্রদাহের মাত্রা কমিয়ে ফেলা না যায়, তাহলে কিন্তু বিপদ। কারণ, সেক্ষেত্রে হার্টের উপর যেমন খারাপ প্রভাব পড়ে, তেমনই দেহের অন্যান্য অঙ্গেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তো রোজের ডায়েটে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। আর এক্ষেত্রে টোম্যাটোর (Tomato ) কোনও বিকল্প নেই। কারণ, এতে উপস্থিত লাইকোপেন এবং বিটা-ক্যারোটিন এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯| রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে (Boosts Immunity)
নিয়মিত কাঁচা টোম্যাটো খাওয়া শুরু করলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। সেই সঙ্গে এমন কিছু উপকারী উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে ছোট-বড় কোনও রোগের পক্ষেই ধারেকাছে ঘেঁষা সম্ভব হয় না।
আরও পড়ুন: শরীর সুস্থ রাখতে পান করো গ্রিন কফি
১০| ওজন কমে (Reduces Weight)
একেবারেই ঠিক শুনেছেন! নিয়মিত একটা করে কাঁচা টোম্যাটো খেলে সত্যি ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে-বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। ওজন কমাতে আর-একভাবেও টোম্যাটো বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে উপস্থিত ফাইবার হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ফলে শরীরের ইতি-উতি মেদ জমার সুযোগ আর থাকে না।
ত্বকের পরিচর্যায় টোম্যাটো (Tomato Benefits for Skin)
শরীরের পাশাপাশি ত্বকের খেয়াল রাখতেও এই সবজিটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষত, অল্প সময়েই ত্বকের জেল্লা (Tomato Benefits for Skin) বাড়াতে টোম্যাটোর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন…
১। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে (Increases Beauty)
নিয়মিত কাঁচা টোম্যাটো খাওয়ার পাশাপাশি টোম্যাটোর রস দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের ভিতরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলি বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সঙ্গে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের জেল্লা (Beauty Benefits of Tomato) বাড়তে সময় লাগে না।
২| ত্বকের বয়স কমে (Prevents Aging)
একটা টোম্যাটো নিয়ে চটকে নিন। তারপর তা ভালে করে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এইভাবে টোম্যাটোর পেস্ট মুখে লাগালে দেখবেন বলিরেখা মিলিয়ে যাবে। ফলে ত্বকের বয়স কমতে সময় লাগবে না।
৩| ত্বক পুড়ে যায় না (Prevents Sunburn)
২ চামচ টমাটোর পেস্ট নিয়ে, তার সঙ্গে ১ চামচ দই মিশিয়ে নিন। তারপর সেই মিশ্রণ সারা মুখে, হাত এবং গলায় লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিটের অপেক্ষা। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। সারা গরমকাল জুড়ে প্রায় দিনই যদি এইভাবে ত্বকের যত্ন (Tomato Skin Care) নেওয়া যায়, তা হলে কিন্তু সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়!
আরও পড়ুন: ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্যে tulsi leaves!
৪| স্কিন টোনার হিসেবে কাজে আসে (Natural Skin Toner)
এই গরমে ত্বককে তরতাজা রাখতে স্কিন টোনারের কোনও বিকল্প নেই। আর সেই টোনার যদি টোম্যাটো দিয়ে তৈরি করতে পারেন, তা হলে তো কথাই নেই। একটা বাটিতে অল্প করে জল নিয়ে তাতে অর্ধেক টোম্যাটো ফেলে দিন। যখন দেখবেন জলটা ফুটতে শুরু করেছে, তখন ছেঁকে নিন। এবার সেই জল একটা স্প্রে বোতলে ঢেলে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণটি অল্প-অল্প করে ত্বকের উপর স্প্রে করলে উপকার মিলবে হাতে-নাতে।
৫| ত্বকের পরিচর্যায় টোম্যাটো ফেস প্যাক (Tomato Face Pack)
ফেসপ্যাক হিসেবে এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে কাজে লাগালে মেলে একাধিক উপকার। যেমন…
ক. ব্রণর প্রকোপ কমে (Cures Acne and Pimple)
অর্ধেক টোম্যাটো নিয়ে ভাল করে চটকে নিন। তারপর তাতে ১ চামচ জোজোবা তেল এবং ৩-৫ ড্রপ টি ট্রি তেল মিশিয়ে ভালো করে মিক্স করে নিন। এবার সেই মিশ্রণটি থেকে অল্প-অল্প করে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, সপ্তাহে ২-৩ বার এই ফেসপ্যাক মুখে লাগালে ব্রণ (Tomato Juice for Skin) মিলিয়ে যেতে সময় লাগবে না।
খ. ব্ল্যাকহেড দূর হয় (Remove Blackheads)
২ চামচ টোম্যাটোর পেস্টের সঙ্গে ১ চামচ মিহি করে গুঁড়ো করা ওটস এবং ১ চামচ দই মিশিয়ে ভাল করে মেখে নিন। এবার সেই মিশ্রণটা একটু গরম করে নিন। তারপর ঠান্ডা করে সারা মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার এইভবে ত্বকের যত্ন নিলে দেখবেন ব্ল্যাকহেডস সব দূরে পালাবে।
গ. ডার্ক সার্কল মিলিয়ে যাবে (Get Rid of Dark Circles)
চটজলদি চোখের নীচের কালি দূর করতে চান? তা হলে ১ চামচ টোম্যাটোর রসের সঙ্গে কয়েক ড্রপ অ্যালো ভেরা জেল নিয়ে ভালো কের মিশিয়ে নিন। তারপর সেই মিশ্রণ, চোখের নিচে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। দ্রুত ফল পেতে দিনে দু’বার করে এই পেস্ট চোখের নিচে লাগালে হবে।
ঘ. ডার্ক স্পট মিলিয়ে যাবে নিমেষেই (Remove Dark Spots)
১ চামচ টোম্যাটোর পেস্টের সঙ্গে ৩-৪ ড্রপ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার সেই মিশ্রণটা সারা মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে হলকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দু’বার করে এই পেস্ট মুখে লাগালে দেখবেন দাগছোপ সব মিলিয়ে যাবে। সঙ্গে ত্বকের জেল্লাও বাড়বে।
৬| টোম্যাটো স্ক্রাব (Tmoato Scrub)
ত্বকের উপরে জমতে থাকা মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ফেলতে কাজে লাগাতে পারেন টোম্যাটো। একটা টোম্যাটো নিয়ে অর্ধেক করে নিন। এবার একটা অংশ নিয়ে তাতে ভাল করে চিনি লাগিয়ে প্রথমে কপালে, তারপর দুই গালে সার্কুলার মোশনে ধীরে-ধীরে ঘষুন। কিছুক্ষণ এভাবে মালিশ করার পরে কম করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার ত্বকের পরিচর্যায় এইভাবে টোম্যাটোকে কাজে লাগালে মৃত কোষ সব ধুয়ে যাবে। ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়তে সময় লাগবে না।
চুলের পরিচর্যায় টোম্যাটো (Tomato for Hair)
১| চুল পড়ার মাত্রা কমে (Helps To Fight Hair Loss)
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তা হলে চুলের পরিচর্যায় আজ থেকেই টোম্যাটোকে কাজে লাগান। এক গ্লাস টমাটোর রস বানিয়ে নিন। এবার সেই রস দিয়ে ভাল করে চুল ধুয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, রসটা যে চুলের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছয়। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে স্নান করে নিন। সপ্তাহে ৩ বার টোম্যাটোর রস দিয়ে চুল ধুলে হেয়ার ফলের মাত্রা কমবে চোখে পড়ার মতো।
আরও পড়ুন: ঘরোয়া টোটকাতেই বাড়বে চুল
২| চুলের জেল্লা বাড়ে (Adds Shine on Your Hair)
একটা টোম্যাটো নিয়ে তার পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার সেই পেস্ট, সারা চুলে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে স্নান সেরে নিন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এই ভাবে চুলের যত্ন নিলে দেখবেন চুলের জেল্লা তো বাড়বেই, সঙ্গে আর্দ্রতাও বজায় থাকবে।
৩| খুশকি দূর করে (Controls Dandruff)
২ টো টোম্যাটো ভাল করে চটকে নিন। তারপর তাতে ২ চামচ লেবুর রস মেশান। এবার সেই পেস্ট থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ভাল করে মালিশ করুন। ৩০ মিনিট পর জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এইভবে চুলের যত্ন নিলে দেখবেন খুশকির প্রকোপ কমবে। বাড়বে চুলের জেল্লাও।
টোম্যাটো জুসের উপকারিতা (Tomato Juice Benefits)
কাঁচা টোম্যাটো খেলে যেমন নানা উপকার মেলে। তেমনই টোম্যাটোর জুস খাওয়া শুরু করলেও নানা সুফল মেলে। যেমন…
ক| লিভারের ক্ষমতা বাড়ে (Improves Liver Function)
নিয়মিত টোম্যাটোর জুস খাওয়া শুরু করলে শরীরে ফাইবারের ঘাটতি দূর হয়, যে কারণে লিভারের ক্ষমতাও তো বাড়েই, সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না।
খ| এনার্জির ঘাটতি দূর হয় (Boosts Energy)
টোম্যাটোয় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তে মেশামাত্র টক্সিক উপাদানগুলি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর এবং ত্বকের বয়স তো কমেই। সঙ্গে শরীরের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এনার্জির ঘাটতি দূর হতেও সময় লাগে না। তাই এই গরমে চাঙ্গা থাকতে প্রতিদিন টোম্যাটোর জুস খাওয়া মাস্ট।
টোম্যাটো জুস তৈরির সহজ উপায় (How to Make Tomato Juice at Home)
১| দু’খানা মাঝারি মাপের টোম্যাটো নিয়ে ছোট-ছোট টুকরো করে নিন। তারপর একটা পাত্রে সেগুলি সংগ্রহ করে পিষে নিন।
২| এবার কয়েক কাপ জল মিশিয়ে নিন। এরপর ঢিমে আঁচে টোম্যাটো এবং জলের মিশ্রণটি ফোটান। ১০-১৫ মিনিট ফোটানোর পরে আঁচটা বন্ধ করে দিন। এই সময় ক্রমাগত টোম্য়াটোর টুকরোগুলি নাড়াতে হবে।
৩| এই সময় অল্প করে চিনি নয়তো নুন মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটা একটু ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর ছেঁকে নিয়ে পরিবেশন করুন।
টোম্যাটোর খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (Side Effects of Tomato)
দিনে ১-২ টো কাঁচা টোম্যাটো খাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি পরিমাণে খাওয়া শুরু করলে ডায়েরিয়া বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা হলেও হতে পারে। এমনকী, কারও-কারও টোম্যাটো থেকে অ্যালার্জিও হয়।
টোম্যাটোর উপকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্নর উত্তর (FAQS)
১| কাঁচা tomato খেলেই কি শুধু উপকার পাওয়া যায়?
একেবারেই না। কাঁচা টোম্যাটো না খেয়ে যদি টোম্যাটোর জুস খাওয়া যায়, তা হলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।
২| টোম্যাটো কি কিডনির ক্ষতি করে?
এই প্রাকৃতিক উপাদানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যে কারণ অনেকের মনে হয় টোম্যাটো খেলে নাকি কিডনির ক্ষতি হয়। এই বিষয়ে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন। তিনি যদি মনে করেন আপনি নিয়মিত টোম্যাটো খেতে পারবেন, তা হলে আর কোনও চিন্তাই নেই।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!
আরও পড়ুন –