বহুকাল ধরেই রূপচর্চার ক্ষেত্রে কৃত্রিম কসমেটিকসের বদলে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের চল রয়েছে। ঠাকুরমা-দিদিমাদের সময়ে কি আর এত রেডিমেড ফেসপ্যাক ছিল? ছিল না তো, তা বলে কি তাঁদের কখনও ত্বকের সমস্যায় ভুগতে দেখেছেন! বরং অনেক বয়স পর্যন্ত তাঁদের ত্বক দাগ-ছোপহীন, কোমল এবং উজ্জ্বল থাকত। কীভাবে সেটা সম্ভব, তা যদি ভাবতে বসেন, তা হলে উত্তরটা আমিই দিয়ে দিচ্ছি! তাঁরা রূপচর্চার ক্ষেত্রে সব সময়েই প্রাকৃতিক উপাদানের উপরে ভরসা করতেন। খুব ছোট-ছোট জিনিস যেগুলো সব সময় রান্নাঘরে মজুত থাকে, তা দিয়েই ত্বকের যত্ন নিতেন। আজ দিদিমার হেঁশেলের সব টপ সিক্রেট উপকরণে তৈরি ফেসপ্যাকের হদিশ আপনাদের দেব, যাতে আপনার ত্বকও হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যে ঝলমলে! কিন্তু তার আগে আরও কয়েকটা বিষয় জানিয়ে দেওয়া জরুরি।
আরো পড়ুনঃ ত্বক ও চুলের যত্নে টোম্যাটোর গুণ
কোমল এবং সুন্দর ত্বকের জন্য এই ৯টি ঘরোয়া ফেসপ্যাক
চটজলদি জেল্লা ফেরানোর জন্য ৪টি ঘরোয়া ফেসপ্যাক
ফেসপ্যাক সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নোত্তর
কোন ধরনের ত্বকে কেমন ফেসপ্যাক লাগানো উচিত, কীভাবে বাড়িতেই রকমারি ফেসপ্যাক তৈরি করা যায় সেসব জানার আগে Face Pack ব্যাপারটা আসলে কী, ফেসপ্যাক লাগালে কী হয়, সেটা খায় না মাথায় দেয়, সবটাই জানতে হবে! সহজ ভাষায় যদি বলতে হয়, ফেসপ্যাক হল এমন একটি প্রোডাক্ট. যা ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বকের সমস্ত সমস্যার সমাধান করে এবং তার সঙ্গে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে ও হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে দেয়। মোট কথা, ত্বকের টেক্সচার ঠিক করতে, ড্যামেজ হয়ে যাওয়া ত্বক সারাই করতে, ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে Face Pack কাজে লাগে। বিভিন্ন ধরনের ত্বকের জন্য বিভিন্ন রকম ফেসপ্যাক হয়, মানে হল, শুষ্ক ত্বকে যে Facepack টা কাজ দেবে, তেলতেলে বা সেনসিটিভ স্কিনে সেই ফেসপ্যাক কাজ দেবে না। মোটামুটি ১০ মিনিট থেকে শুরু করে ৩০ মিনিট পর্যন্ত যদি ফেসপ্যাক লাগিয়ে রাখা হয়, তা হলেই যথেষ্ট।
ত্বককে ঝলমলে দেখানোর জন্য আমরা কত কী-ই না করি, নানা ধরনের স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট থেকে শুরু করে হরেক ব্র্যান্ডের রকমারি মেকআপ পর্যন্ত সবকিছু ট্রাই করি। কিন্তু যদি আমাদের ত্বক ভিতর থেকে সুস্থ না থাকে, তা হলে যাই করি না কেন, সেই গ্লো-টা ঠিক আসে না। বাজারচলতি নানা ফেসপ্যাক তো আছেই, কিন্তু অনেকসময়ই সেগুলির মধ্যে এমন কিছু উপকরণ থাকে, যা হয়তো আপনার ত্বকে অ্যালার্জি বা র্যাশ সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা বলব, আপনি ঘরোয়া ফেসপ্যাক-এর সাহায্য নিন। বাড়িতে তৈরি ফেসপ্যাক এর (Face Packs for Glowing Skin In Bengali) সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল আপনার ত্বকে একটা ন্যাচারাল গ্লো চলে আসে। এছাড়াও...
আরও পড়ুনঃ বলিরেখা দূর করার ঘরোয়া উপায়
একটা পাকা টোম্যাটো নিয়ে তার পিউরি বানিয়ে নিন। এবারে তাতে দুই টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে ভাল করে মিশিয়ে মুখে, গলায় এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। মিনিটকুড়ি বাদে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে ন্যাচারাল ব্লিচের কাজ করে এই প্যাক। যদি আপনার ত্বকে কোথাও কেটে যায় বা র্যাশ থাকে, সেক্ষেত্রে এই face packটি ব্যবহার করবেন না।
ত্বকের মরা কোষ দুর করতে ওটমিলের কোনও তুলনা হয় না। আর অন্য দিকে মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে ত্বকের ভিতর থেকে ময়লা টেনে বের করে। এক টেবিল চামচ ওটমিল গুঁড়ো, ২ চা চামচ মুলতানি মাটি, এক টেবিল চামচ করে কাঁচা দুধ এবং শশার রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবারে মুখে, গলায় ও ঘাড়ে আধঘণ্টার জন্য লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দু’বার করলেই যথেষ্ট।
এক কাপ ফ্রেশ কমলালেবুর রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ বেসন ও ২ টেবিল চামচ মিল্ক পাউডার মিশিয়ে মুখে প্যাক হিসেবে লাগিয়ে ফেলুন। শুকিয়ে গেলে একটা ঠান্ডা, ভেজা, নরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিন। আপনার যদি জেল্লাহীন ত্বক হয়, তা হলে আপনি সপ্তাহে একবার এই face pack ব্যবহার করতে পারেন।
যদি ত্বকে কোনও জীবাণু সংক্রমণ-সংক্রান্ত সমস্যা থাকে এবং স্কিন ম্যাড়ম্যাড়ে দেখতে লাগে, তা হলে এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করুন। একটা ছোট সাইজের গাজর কুরিয়ে নিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এবারে ওই পেস্ট মুখে লাগিয়ে নিন। যেখানে-যেখানে ত্বকে সমস্যা আছে, সেখানে ঘন করে পেস্ট লাগাবেন। মিনিটপনেরো পর ঊষ্ণ জলে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এটা করুন।
তুলতুলে ত্বকের জন্য এই ফেসপ্যাকটির কোনও তুলনা হয় না! একটা পাকা কলা (চটকে নেওয়া), দুই টেবিল চামচ জল ঝরানো দই এবং এক টেবিল চামচ মধু ভাল করে ব্লেন্ড করে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন পেস্টটি খুব বেশি ঘনও না হয়, আবার খুব পাতলাও না হয়। মুখে, গলায় ও ঘাড়ে লাগিয়ে শুকোতে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চার টেবিল চামচ ওটমিল এবং চারটি আমন্ড একসঙ্গে গুঁড়ো করে নিন। সামান্য মধু ও কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে নিন। মিনিটপাঁচেক রেখে হালকা প্রেশার দিয়ে মালিশ করে নিন। এবারে ঊষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে নিন। ত্বকে জমে থাকা মরা কোষ দূর করতে এবং ত্বক কোমল করতে এই প্যাকটি সাহায্য করে।
ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করতে হলুদ তো খুবই উপকারী। তিন টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস, ছোট এক টুকরো কাঁচা হলুদের পেস্টের সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবারে মুখে, গলায় ও ঘাড়ে ওই প্যাকটি মিনিট ২০ রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। যদি হলুদের দাগ শুধু জলে না ওঠে, তা হলে মাইল্ড কোনও ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
এক টেবিল চামচ শশার রসের সঙ্গে এক চা চামচ করে পাতিলেবুর রস ও হলুদ ভাল করে মিশিয়ে নিন। আপনার যদি শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থাকে, তা হলে এর সঙ্গে এক চা চামচ গ্লিসারিনও মেশাতে পারেন। এবার ওই প্যাক মিনিটপনেরো মেখে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ট্যান, সূর্যের ক্ষতিকর ইউ ভি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে এই ফেসপ্যাকটি খুব ভাল।
চার-পাঁচটি আমন্ড সামান্য দুধে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে আমন্ডের খোসা ছাড়িয়ে দুধ আর আমন্ডের পেস্ট তৈরি করে নিন। ঘণ্টাদুয়েক ওই পেস্ট মুখে লাগিয়ে বসে থাকুন। পরে ভাল করে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। ত্বক বেশ উজ্জ্বল হবে। সপ্তাহে একবার করলে তফাত চোখে পড়বেই।
আরও পড়ুনঃ চুলের যত্নে কীভাবে ব্যবহার করবেন আমন্ড অয়েল
যদি খুব তাড়াহুড়ো থাকে, তা হলে চটপট ত্বকের জেল্লা ফেরাতে এই চারটি ঘরোয়া ফেসপ্যাক (Homemade Facepack) ব্যবহার করতে পারেন।
একটা অ্যাভকাডো, চার টুকরো পাকা পেঁপে আর অর্ধেক শশা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এবার ওই মিশ্রণ মুখে, গলায় আর ঘাড়ে মেখে নিন। আধ ঘণ্টা পর ঊষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ রূপচর্চায় এবং সুস্বাস্থ্যে পেঁপের দারুণ উপকারীতা
একটা পিচ চটকে নিন এবং তাতে এক চা চামচ ব্র্যান্ডি মিশিয়ে নিন। এবারে ওই মিশ্রণ মুখে, গলায় এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। মিনিটকুড়ি বাদে ঠান্ডা জলে মুখ ধুলেই দেখতে পাবেন ত্বক কত চকচক করছে!
এক চা চামচ অ্যালো ভেরা জেল কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিনের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে মেখে নিন। ২০-২৫ মিনিট পরে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। চটজলদি ত্বকে জেল্লা আনতে এই ফেসপ্যাকটির জুড়ি মেলা ভার।
দু’-তিনটি আমন্ড গুঁড়ো করে তার মধ্যে একটা ডিম ফেটিয়ে প্যাক (Face Pack for Glowing Skin) তৈরি করে নিন। এবার ওই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে অন্তত মিনিটকুড়ি রেখে দিতে হবে। পরে জল দিয়ে ধুয়ে নিন। ভাল ফল পেতে রাতে শোওয়ার আগে এই প্যাকটি লাগিয়ে সারা রাত রেখে পরদিন সকালে মুখ ধুয়ে নিন।
১। প্রশ্ন: আমি কি সারা রাত মুখে মধু দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক লাগিয়ে রাখতে পারি?
উত্তর: আপনার যদি ত্বকে অ্যাকনের সমস্যা থাকে, তা হলে আপনি মুখের যে-যে জায়গায় অ্যাকনে রয়েছে শুধুমাত্র সেখানে অল্প করে মধু লাগিয়ে রাখতে পারেন। পরদিন সকালে উঠেই কিন্তু মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে এবং কোনও ফেসওয়াশ ব্যবহার করা চলবে না সেক্ষেত্রে। কিন্তু যদি মধুর সমগে অন্য কিছু মেশানো থাকে ফেসপ্যাক হিসেবে, তা হলে রাতে শোওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করে শুতে যাওয়া উচিত।
২। প্রশ্ন: ফেসপ্যাক ব্যবহার করার পর মুখে কী লাগানো উচিত? নাকি কিছুই লাগানো উচিত নয়?
উত্তর: প্রথমেই বলে রাখি, ফেসপ্যাক যখন লাগাবেন, তার আগে মাইল্ড কোনও ক্লেনজার দিয়ে ভাল করে মুখ পরিষ্কার করে নেবেন। তারপর ফেসপ্যাক লাগিয়ে মুখ পরিষ্কার করা হয়ে গেলে অ্যালকহলহীন কোনও টোনার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে পারেন। সেটা সম্ভব না হলে তুলোয় করে গোলাপজল লাগিয়ে নিতে পারেন।
৩। প্রশ্ন: প্রতিদিন কি মুখে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক লাগানো যায়?
উত্তর: না। প্রতিদিন মুলতানি মাটি লাগালে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। দু’সপ্তাহে একবার মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক লাগালেই যথেষ্ট। তবে যদি আপনার অতিরিক্ত তেলতেলে ত্বক হয়, সেক্ষেত্রে আপনি সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে পারেন মুলতানি মাটির Face Pack.
৪। প্রশ্ন: কত দিন অন্তর ফেসপ্যাক লাগানো উচিত?
উত্তর: আপনার ত্বকের ধরন কেমন অথবা আপনার ত্বকে কী সমস্যা, তার উপরে এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে। সাধারণত সপ্তাহে একবার অথবা খুব বেশি সমস্যা থাকলে সপ্তাহে দু’বার ফেসপ্যাক লাগালেই যথেষ্ট। তবে আপনার যদি খুব বেশি ত্বকজনিত সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে কোনও ভাল ডারমাটোলজিস্ট-এর পরামর্শ নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
৫। প্রশ্ন: ফেসপ্যাক আর ফেস মাস্কের মধ্যে কি কোনও তফাত আছে?
উত্তর: হ্যাঁ। ফেস্প্যাক আপনার ত্বকের ময়লা এবং নানা সমস্যা দূর করে, আর অন্যদিকে ফেক মাস্ক মূলত ত্বকের মরা কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন