জানি, এই প্রতিবেদনের শিরোনামটুকু পড়াই অনেকে ভুরু কুঁচকে ফেলেছেন এখনই! বেশিরভাগ তো ব্যাপারটা এড়িয়েই যাবেন। যেন, পর্নোগ্রাফি সম্বন্ধে আলোচনা করা আর পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করা অনেকটা একই ব্যাপার! কিন্তু যদি সত্যিই এই বিষয়টি নিয়ে এত ছুঁতমার্গ থেকে থাকে, তা হলে বলুন তো, পর্নোগ্রাফি সাইটগুলো এত রমরমিয়ে চলছে কী করে? আর ভারতে এই ইন্ডাস্ট্রি এখনও ধামাচাপা দেওয়া থাকলেও, বহির্বিশ্বে এই অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে মোটেও এত ঢাকঢাক গুড়গুড় নেই! ঘোমটার তলায় খেমটা নাচাটা বরাবরই আমাদের অভ্যেস, তাই আমরা লুকিয়েচুরিয়ে পর্নোগ্রাফি দেখি, কিন্তু তারপর সযত্নে সার্চ হিস্ট্রিটা মুছে দিতে ভুলি না! তাই আমরা এবার এই বিষয়টি, মানে, পর্নোগ্রাফি নিয়ে আলোচনা (How To Stop Watching Porn) করব ঠিক করেছি! তা সে কারও পছন্দ হোক ছাই না হোক! আর নিজেদের যতটুকু চিনেছি, তাতে এটুকু বলতে পারি যে, শতকরা ৯৯ জন এই প্রতিবেদনটি খুলে পড়বেন, কিন্তু সর্বসমক্ষে স্বীকার করবেন না!
তা না করুন, আমাদের উদ্দেশ্য, এই বহু সার্চযোগ্য বিষয়টি নিয়ে একটু খতিয়ে আলোচনা করা এবং সেটি যাতে আপনার নেশায় না পরিণত হয়, সেই সম্বন্ধে আপনাদের সাবধান (Quit Watching Porn) করে দেওয়া। আপনারা তা কীভাবে গ্রহণ করবেন, বা আদৌ করবেন কিনা, সেই বিচারের ভার না হয় আপনাদের উপরেই রইল!
পর্নোগ্রাফির ইতিহাস (History of Pornography)
Porn প্রথম শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯৬৯ সালে। তখন তাকে বলা হত ব্লু ফিল্ম। প্রথম পর্নোগ্রাফি সিনেমা পরিচালনা করেন অ্যান্ডি ওয়ারহল নামক একজন পরিচালক। কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে মোটামুটি ঘরে-ঘরে Porn পৌঁছে যায় এবং ইদনীং তো সস্তা ইন্টারনেটের যুগে প্রত্যেকেরই হাতের মুঠোয় পর্নোগ্রাফির চাবিকাঠি আছে! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম যখন এই ব্লু ফিল্ম শুরু হয়, তখন তার সেন্সরশিপ করার কথা বলা হয়েছিল। সমাজে এর কু-প্রভাব পড়তে পারে সেই আশঙ্কা অনেক আগে থেকেই করেছিলেন বিদ্বজ্জনেরা। কিন্তু ‘বাকস্বাধীনতা’র দোহাই দিয়ে সেই সেন্সরশিপের প্রস্তাব উড়িয়ে দেওয়া হয়।
পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির লক্ষণ (Signs of Porn Addiction)
আপনার আশেপাশে এমন অনেকেই হয়তো আছেন, যাঁরা পর্নোগ্রাফি দেখতে বা পড়তে অভ্যস্ত। অনেকেই নিজের সেক্সুয়াল ড্রাইভ সাময়িকভাবে বাড়ানোর জন্য porn দেখেন বা পড়েন। কিন্তু নিজের অজান্তেই কখন যে তাঁরা পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন, তা তাঁরা নিজেরাই বুঝতে পারেন না। যদি আপনার মধ্যে এমন কোনও লক্ষণ (Stop Watching Porn) দেখা দেয়, তা হলে বুঝতে হবে আপনিও নিষিদ্ধ ভিডিওতে আসক্ত!
১। বাস্তব এবং অবাস্তবের মধ্যে কোনও ফারাক করতে না পারা (Unable To Differentiate Between What Is Real and What Is Unreal)
যাঁরা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হন, একটা সময়ের পর তাঁদের মধ্যে একটা কমন সমস্যা দেখা দেয়। সেটা হল, তাঁরা বাস্তব এবং অবাস্তবের মধ্যে তফাৎ করতে পারেন না! কম্পিউটার বা ফোনের পর্দায় যা দেখছেন, সেটাই বাস্তব বলে ভেবে বসেন! ফলে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় নানা সমস্যা; কারণ, আদতে বাস্তব জীবন এবং সিনেমার জগতের মধ্যে ফারাকটা বিস্তর!
২। সঙ্গীর প্রতি শারীরিক এবং মানসিক আকর্ষণ কমে যাওয়া (Losing Physical and Emotional Attraction Towards Partner)
Porn-এর নায়ক বা নায়িকাদের পর্দায় যেমন গ্ল্যামারাস বলে মনে হয়, বাস্তবে কিন্তু তাঁরা ততটা গ্ল্যামারাস নন। আর তার চেয়েও বড় কথা হল সেটা তাঁদের পেশা। কাজেই আপনি পর্নোগ্রাফিতে যেরকম ছবি দেখতে পান, সেগুলো সম্পূর্ণভাবেই অবাস্তব! ব্লু ফিল্ম দেখে যদি আপনি নিজের সঙ্গীর মধ্যে সেরকম কোয়ালিটি খোঁজেন, তা হলে সেটা ঠিক নয়। কারণ মনে রাখতে হবে যে, বাস্তব এবং অবাস্তব ঘটনা কখনোই মিল খায় না। কিন্তু যাঁরা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত (Stop Watching Porn) হন, তাঁদের মাথায় এই ব্যাপারটি কাজ করে না এবং ফলে তাঁরা নিজেদের বাস্তব জীবনে সঙ্গীর প্রতি শারীরিক এবং মানসিকভাবে আকর্ষণ অনুভব করেন না।
৩। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া (Become Physically Weak)
অনেকেই porn দেখতে-দেখতে বা পড়তে-পড়তে হস্তমৈথুন (Mustarbate) করে থাকেন। শারীরিক মিলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর না হলেও, মাত্রাতিরিক্ত মাত্রায় এটি হয়ে গেলে আপনি শারীরিকভাবে দুর্বল হতে বাধ্য।
৪। নেশাগ্রস্তের মতো ব্যবহার করা (Regular Watching Becomes An Addiction )
যদি আপনি এমন কোনও পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, যেখানে দিনে অন্তত একটি পর্নোগ্রাফিক সিনেমা না দেখলে আপনার অস্বস্তি হয়, তা হলে বুঝতে হবে যে, আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। এটা অনেকটা ড্রাগের নেশার মতো। কখন ধীরে-ধীরে আপনি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না। যদি ইন্টারনেটে আপনি ব্লু ফিল্ম খুঁজে না পান, তা হলে যেভাবে হোক আপনি তা জোগাড় করবেনই!
৫। অপরাধ বোধ কাজ করা (Makes You Feel Guilty)
আপনি পর্নোগ্রাফি দেখার সময়টুকু হয়তো চরম উন্মাদনায় রইলেন! কিন্তু সব মিটে যাওয়ার পরের মুহূর্তেই আপনাকে গ্রাস করতে শুরু করল চরম অপরাধবোধ। যে অপরাধ বোধের থেকে হয়তো আপনার মন খারাপ হয়ে গেল। আপনি কিছুটা শান্ত হয়ে গেলেন। এটা কাটাতে পর্ন দেখা বন্ধ করতে হবে।
পর্নোগ্রাফি দেখার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects of Watching Porn)
প্রতিটি জিনিসেরই কমবেশি নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects) থাকে, আর যাঁরা পর্নোগ্রাফি সিনেমা নিয়ম করে দেখেন বা বই নিয়মিত পড়েন, তাঁদের উপরেও এই অভ্যাসের একটা না-একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Porn Addiction Side Effects Bangla) তো হবেই! তবে নিয়মিত porn দেখার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কিন্তু যথেষ্ট চিন্তার বিষয়…
১। যৌন জীবনে কুপ্রভাব ফেলে (Regular Watching Porn Can Affect Your Sex Life)
যেসব নারী-পুরুষ নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখেন বা পড়েন, তাঁদের যৌন জীবনে কিন্তু এই অভ্যাস যথেষ্ট প্রভাব ফেলে! যে সময়ে একজন মানুষ পর্নোগ্রাফি দেখেন বা পড়েন, তখন তাঁদের যৌনাঙ্গ সম্পূর্ণভাবে ইরেক্ট হয় কারণ তখন তাঁরা উত্তেজিত হয়ে থাকেন। কিন্তু অন্য সময়ে যখন বাস্তবে তিনি তার সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিক মিলনে লিপ্ত হন, তখন তিনি তাঁর যৌন জীবন পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারেন না (Side Effects of Watching Porn)। কারণ, তখনও তাঁর মাথায় পর্নোগ্রাফিতে দেখা পুরুষ বা মহিলার কথাই ঘুরতে থাকে। ফলে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত মানুষটি না নিজে না তাঁর সঙ্গীকে যৌন অনন্দ দিতে পারেন এবং এর প্রভাব খুবই খারাপ পর্যায়ে চলে যায়।
২। মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে (Can Make You Depressed)
মাত্রাতিরিক্ত পর্ন দেখার ফলে নিজের সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ কমতে শুরু করে, ফলে porn-এ দেখানো চরিত্রদের মতো আকর্ষনীয় দেহ এবং চেহারা কে নিজের বাস্তব জীবনের সঙ্গীর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু একটা খুব সহজ সত্যি তাঁরা ভুলে যান যে, পর্নোগ্রাফিতে দেখানো নারী অথবা পুরুষের সৌন্দর্য কিন্তু কৃত্রিম। চড়া মেকআপ, কসমেটিক সার্জারি এবং খুব ভাল এডিটিং সফটওয়্যারের কামাল! এছাড়া পর্নোগ্রাফিতে দেখানো চরিত্ররা যা আচরণ করেন, তা সম্পূর্ণভাবে নাটকীয়, মূলত তা দর্শককে উত্তেজিত করার জন্যই করা হয়ে থাকে। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যাক্তি বাস্তবে এর কোনও মিল খুঁজে না পেয়ে নিঃসঙ্গতায় ভোগেন এবং এর ফলে আসতে পারে চরম মানসিক অবসাদ।
৩। পরিশীলিত রুচির হানি হতে পারে (May Reduce Sex Drive)
অনেকসময়ে দেখা যায়, দুজন মানুষ হয়তো একটি সম্পর্কে রয়েছেন কিন্তু তাঁদের মধ্যে একজন পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত এবং অন্যজন নন। সেক্ষেত্রে যিনি porn দেখেন এবং যথেষ্ট আসক্তি রয়েছে তাঁর, তাঁর সম্বন্ধে অন্য মানুষটির মনে খারাপ ধারনা হতে পারে। এছাড়াও যিনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত তিনি তাঁর সঙ্গীর মধ্যে Porn-এ দেখানো নায়ক বা নায়িকার চরিত্র খুঁজতে পারেন, যেটা বাস্তবে সম্ভব নয়। সুস্থ শারীরিক মিলনের বদলে হয়তো এমন কোনও পজিশন বা ট্রিক ট্রাই করতে গেলেন, যা অসুস্থ রুচির পরিচয় দেয় (Side Effects of Watching Porn)।
৪। পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে (Can Ruin Your Social and Family Relationship)
Porn-এর নেশা কোনও অংশে ড্রাগের নেশার চেয়ে কম নয়। আর এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়াও যথেষ্ট কঠিন। পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির ফলে পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্কও নষ্ট হতে পারে। যাঁরা porn-এ আসক্ত তাঁরা নিজের দুনিয়ায় থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। পড়াশোনাতে বা অফিসের কাজে অমনোযোগিতা, বার-বার কাজে ভুল হওয়া, সুস্থ রুচির মানুষের সংস্পর্শে না থাকা – এরকম অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া অনেকেরই ল্যাপটপে বা মোবাইলে পর্নোগ্রাফিক সিনেমা লোড করা থাকে। কখনও যদি বাইরের কারও সামনে তা প্রকাশ পায়, তখন পরিস্থিতি বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে।
৫। সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বদলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে (Sexual Orientation Can Be Changed)
না, না, হাসবেন না বা অবাক হবেন না! পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত মানুষদের অনেকসময়েই সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বদলে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা নিয়মিত porn দেখেন, দেখতে-দেখতে তাঁদের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বদলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ, প্রতিবারই নতুন কিছু দেখানো হয় এবং দর্শকের মনে হতেই পারে যে, তিনিও সেটা ট্রাই করে দেখবেন তাঁর বাস্তব জীবনে। এরকমভাবে কবে যে তাঁর যৌন আকাঙ্ক্ষা বদলাতে শুরু করে সেটা তিনি নিজেও বুঝতে পারেন না।
পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় (How To Deal With Porn Addiction)
আগেই বলেছি, এ নেশা কী যে নেশা… যাই হোক মজা করে লাভ নেই, পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে গেলে সবার প্রথমে যেটা দরকার তা হল মানসিক জোর এবং ইচ্ছেশক্তি! এছাড়া আপনি বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের বাকি সকলের সাহায্যও (Best Way To Stop Watching Porn) নিতে পারেন।
১। একটা জার্নাল বা ডায়েরি তৈরি করুন (Create A Journal/ Diary)
আপনার যদি ডায়েরি লেখার অভ্যেস থাকে তা হলে ভাল, যদি না থাকে, তা হলে অভ্যাস করুন। পর্নোগ্রাফি না দেখে বা না পড়ে আপনার মানসিক কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনি কী-কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, এগুলো সবই ওই ডায়েরিতে লিখে রাখুন।
২। যেখান থেকে আপনি নিষিদ্ধ ভিডিও বা বই পেতে পারেন সেসব অ্যাক্সেস বন্ধ করুন (Make Sure To Block All The Sources of Pornography)
মোবাইলের মেমরি কার্ড, পিসি/ল্যাপটপ/ট্যাব থেকে যত পর্নোগ্রাফিক ছবি এবং ভিডিও আছে, ডিলিট করুন। কারণ, পর্নোগ্রাফি না দেখার ব্যাপারে মনস্থির করলেও, হাতের কাছে যখন এগুলো পাবেন, দেখতে ইচ্ছে করবে। ল্যাপটপ থেকে পর্নোগ্রাফি সাইট গুলো ব্লক করুন। ইউটিউবে বেশি সময় কাটাবেন না। যেই ভিডিওটা দেখা প্রয়োজন, সম্ভব হলে শুধু সেটা দেখেই বেরিয়ে আসুন। ইউটিউবে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট থাকে না ঠিকই, তবে সফট পর্ন থাকে। অনেক সময় কোনও ভিডিও দেখার সময় ডান পাশের সাইড বারে অন্যান্য ভিডিও’র থাম্বনেলের সঙ্গে এসব সফট পর্ন ভিডিও-ও চলে আসে। সেরকম হলে ইউটিউবের সেফ ফিল্টারটি (Best Way To Stop Watching Porn) অন করে রাখতে পারেন, এতে আপনি কোনও অ্যাডাল্ট কনটেন্ট দেখতে পাবেন না।
৩। কোন-কোন বিষয়গুলো আপনাকে উত্তেজিত করে সেটা খেয়াল করুন (Keep A Check On All The Factors That Turns You On)
Porn দেখার প্রতি কোন-কোন জিনিস গুলো আপনার মনকে উত্তেজিত করে, সেগুলো খেয়াল করে তাঁর একটা তালিকা তৈরি করুন। কোনও গান, নির্দিষ্ট কোনও ভিডিও বা কোনও ছবি – কিছুও হতে পারে সেই উত্তেজক বস্তুটি। যদি কোনও গান বা ভিডিও বা ছবি এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তা আপনার ল্যাপটপে বা মোবাইল ফোনে থাকে, তা হলে সেগুলো তৎক্ষণাৎ ডিলিট (Quit Watching Porn) করে ফেলুন। যে-কোনও বিষয় যা আপনার মধ্যে যৌন উত্তেজনা জাগায়, তার কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
৪। আপনার জীবনে Porn কী-কী ক্ষতি করেছে তার একটা তালিকা তৈরি করুন (Make A List Of All The Ways In Which Pornography Has Affected Your Lifestyle)
আপনার পারিবারিক অথবা সামাজিক জীবনে আপনার এই পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি কতটা প্রভাব ফেলেছে, তার একটা তালিকা তৈরি করুন। তা ছাড়া এই নেশা আপনার শরীরের উপরে কোনও খারাপ প্রভাব (Quit Watching Porn) ফেলেছে কিনা তারও একটা তালিকা তৈরি করে ফেলুন। এবারে নিজেই সুস্থ মস্তিস্কে ভেবে দেখুন যে Porn Addiction আপনার জীবনে ভাল কিছু আদৌ করেছে কিনা! যদি উত্তর না হয়, তা হলে আশা করি এটাই যথেষ্ট একটা কারণ পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য!
৫। সুস্থ কোনও কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন (Get Yourself Busy In Good Work)
মন শান্ত করার জন্য মেডিটেশন করতে পারেন। যে ইন্টারনেট ঘেঁটে এতদিন নিষিদ্ধ ভিডিও খুঁজতেন, সেখান থেকেই পেয়ে যাবেন গাইডেড মেডিটেশনের অনেক ভিডিও। নিয়মিত মেডিটেশন করলে আপনার মন শান্ত থাকবে এবং মনের উপরে নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। মন আপনাকে চালাবে না, আপনিই মন কে চালাবেন। এছাড়া নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন এবং অফিসের কাজে বা পড়াশোনায় মন দিতে পারেন।
৬। পরিবারের সকলের সঙ্গে সময় কাটান (Spend Time With Family)
Porn addiction থেকে মুক্তি পেতে মনের জোর যেরকম প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন পরিবারের মানুষদের এবং বন্ধুদের সাপোর্ট। যদি আপনি মনে করেন যে, আপনি একা এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না, সেক্ষেত্রে বাড়ির লোকের বা বন্ধু-বান্ধবের সাহায্য আপনি নিতেই পারেন।
পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য কী ধরনের চিকিৎসা করাতে পারেন (Porn Addiction Treatment)
নিজেই যদি Porn Addiction থেকে মুক্ত হতে পারেন তা হলে তো কোনও কথাই নেই! কিন্তু প্রয়োজনে আপনি বিশেষজ্ঞের সাহায্যও নিতে পারেন। নানা ধরনের চিকিৎসা রয়েছে এক্ষেত্রে…
১। ওষুধ (Medicine)
আপনি কোনও ভাল মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নার্ভ সুদিং ওষুধ খেতে পারেন। এই ধরনের ওষুধগুলো আপনার স্নায়ুর উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে এবং এর ফলে আপনার যৌন উত্তেজনাও যথেষ্ট কম হয় এবং ধীরে-ধীরে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তিও কমতে শুরু করে।
২। থেরাপি (Therapy)
ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে থেরাপি বা কাউন্সেলিংও দরকার। কলকাতা এবং দেশের আরও অনেক প্রান্তে ভাল-ভাল কাউন্সেলর রয়েছেন, প্রয়োজনে তাঁদের সাহায্য নিতে পারেন।
৩। সাপোর্ট গ্রুপ (Support Group)
এরকম অনেক এনজিও রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ বাতলে মানুষকে আবার জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনে। প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
৪। অনলাইন সাহায্য (Online Help)
যে সময়টা ইন্টারনেট ঘেঁটে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট খুঁজে বেড়ান, সেই সময়ে ইন্টারনেটকে কাজে লাগান। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এবং অনলাইনে এমন অনেক সাপোর্ট গ্রুপ রয়েছে যারা Porn Addiction থেকে কীভাবে মুক্তি পেতে পারেন সে ব্যাপারে সাহায্য করে।
পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
১। পর্ন দেখা বন্ধ কীভাবে করব?
উত্তর: সবার প্রথমে যেখান থেকে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্টের অ্যাক্সেস পান, সেটা বন্ধ করে দিন। মনে জোর এনে নিজেকে যৌন উত্তেজনামূলক ভিডিও দেখা থেকে বিরত রাখুন। প্রয়োজনে কিছুদিনের জন্য পরিবারের সকলের সঙ্গে কোথাও বেড়িয়ে আসুন।
২। পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি কি আমার যৌন জীবনে সমস্যা তৈরি করতে পারে?
উত্তর: অবশ্যই! যে সময়ে একজন মানুষ পর্নোগ্রাফি দেখেন বা পড়েন তখন তাঁদের যৌনাঙ্গ সম্পূর্ণভাবে ইরেক্ট হয় কারণ তখন তাঁরা উত্তেজিত হয়ে থাকেন। কিন্তু অন্য সময়ে যখন বাস্তবে তিনি তার সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিক মিলনে লিপ্ত হন, তখন তিনি তাঁর যৌন জীবন পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারেন না কারণ তখনও তাঁর মাথায় পর্নোগ্রাফিতে দেখা পুরুষ বা মহিলার কথাই ঘুরতে থাকে। ফলে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত মানুষটি না নিজে না তাঁর সঙ্গীকে যৌন অনন্দ দিতে পারেন এবং এর প্রভাব খুবই খারাপ পর্যায়ে চলে যায়।
৩। কখন বুঝব যে আমি ব্লু ফিল্মে আসক্ত হয়ে পড়েছি?
উত্তর: যদি আপনি Porn না দেখে থাকতে না পারেন, যদি আপনার যে-কোনও সময়ে যৌন উত্তেজনা হতে শুরু করে, যদি নির্দিষ্ট কারও প্রতি আপনার লাস্ট ফিলিং থাকে, যদি আপনি অবসাদে ভোগেন অথবা যদি আপনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে, আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
৪। আমি Porn Addiction কাটানোর আপ্রান চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। কী করব?
উত্তর: Porn Addiction কাটানোর জন্য প্রথমে নিজে চেষ্টা করুন, যদি দেখেন কোনও লাভ হচ্ছে না, তা হলে তখন আপনাকে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতেই হবে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!