তাঁকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে! ছোট্ট সিংহাসনের উপর বসে থাকেন, হাতে নাড়ুটি নিয়ে, মায়াময় মুখখানা আর আদর কেড়ে নেওয়া চাহনি নিয়ে...তাঁকে দেখে তো দেবতা মনে হয় না! একবারও মনে হয় না, বড় হয়ে ইনিই পরে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে অর্জুনকে মনুষ্য জীবনের সারাৎসার বোঝাবেন! ইনিই হস্তিনাপুরের রাজসভায় পাঞ্চালীর লাজরক্ষা করবেন। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করার জন্যই ইনি এসেছেন দ্বাপরে, কৃষ্ণরূপে। নাড়ু হাতে বসে তিনি যখন মিটিমিটি হেসে ভক্তের দিকে তাকান, তখন তাঁকে বাড়ির আদরের খোকাটির মতোই আদরে-আদরে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এই বালগোপালের আবির্ভাব দিবসই হল জন্মাষ্টমী (Krishna Janmashtami-Jhulan Yatra In Bengali)। দেশ-বিদেশের কৃষ্ণভক্তরা এই দিনটিতে ধুমধাম করে পালন করে নন্দলালা, বালগোপালের জন্ম, যিনি বিষ্ণুর নবম অবতার। এই জন্মাষ্টমীর দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস থেকে শুরু করে লোকাচার, আরও নানা গল্প-কাহিনি। ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে এই দিনটি পালিত নানা ভাবে, নানা ধরনের উৎসবের মধ্যে দিয়ে। অবশ্য জন্মাষ্টমীর সেলিব্রেশন ঠিক জন্মষ্টমীর দিনটি থেকে শুরু হয় তা ভাবলে ভুল হবে। আসলে শ্রাবণ মাসের একাদশী থেকেই শুরু হয় কৃষ্ণলীলার নানা উৎসব। ঝুলন, রাখিপূর্ণিমা দিয়ে যার শুরু জন্মাষ্টমীতে এসে তা পূর্ণতা পায় বলা যেতে পারে।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে, চান্দ্র শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। আসলে শ্রাবণ মাস শ্রীকৃষ্ণের মাস। ঝুলন উৎসব দিয়ে শুরু, জন্মাষ্টমীতে এসে শেষ। এ বড় বিচিত্র এক সময়পঞ্জী! কৃষ্ণের জন্মের দিনটি আসে পরে, তাঁর লীলাখেলার উৎযাপন শুরু হয়ে যায় আগে থেকেই! তার অবশ্য জুতসই ব্যাখ্যাও আছে। ভগবান নাকি ভক্তদের মধ্যে আগে আসেন, তারপর যান মাতৃগর্ভে! তাই আমরাও আলোচনা শুরু করছি একেবারে ক্যালেন্ডার ধরে, ঝুলন (Jhulan) উৎসব দিয়ে।
ঝুলন মানে দোলা বা দোলনা। ছোট্ট শিশুরূপী শ্রীকৃষ্ণকে (Krishna) দোলায় দোলাতেন মা যশোদা। পরে গোকুল-বৃন্দাবনেও গোরু চরাতে গিয়ে দোলনায় দুলে-দুলে গোপিনীদের উত্যক্ত করতেন তিনি! আবার এই দোলনাতেই রাধার সঙ্গে দুলে ভালবাসার বিভোরও হতেন। কৃষ্ণের কৈশোরে তাই দোলনা বা ঝুলনের (Jhulan Jatra) গুরুত্ব অপরিসীম।
এই উৎসবটি পালিত হয় শ্রাবণ মাসের একাদশী থেকে শুরু করে বলরাম পূর্ণিমা পর্যন্ত, মোট পাঁচদিন ধরে। প্রসঙ্গত, ঝুলন উৎসব পালনের কথা আছে পুরাণ ও নানা প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রেও। ভাগবত পুরাণ, হরিবংশ এবং গীতগোবিন্দতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিমুখর ঠান্ডা পরিবেশে দোলনায় শ্রীকৃষ্ণকে দুলিয়ে উৎসব পালন করেন বৈষ্ণবরা। ভারতে অন্যতম জনপ্রিয় কৃষ্ণশাস্ত্র হরি ভক্তি বিলাস-এ এই উৎসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া আছে। বছরে তিনটি পূর্ণিমা কৃষ্ণপ্রেমীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই তিনটি দিনে শ্রীকৃষ্ণের তিন রকম লীলা বা আনন্দ খেলা দেখতে পাওয়া যায়। এগুলি হল, দোলপূর্ণিমা, ঝুলন পূর্ণিমা ও রাস পূর্ণিমা। এর মধ্যে দোলের সময় প্রভু আবিরে নিজেকে ও ভক্তদের রাঙিয়ে দেন, ঝুলনে দোলনায় (Jhulan Yatra) দুলে ভক্তদের আদর খান ও রাসপূর্ণিমায় নৃত্য করেন!
ঝুলন যাত্রার (Jhulan Jatra) তাৎপর্য কিন্তু বেশ গভীর। এই উৎসবের সময় কৃষ্ণ কিন্তু একা দোলনায় দোল খান না, বরং রাধার সঙ্গে দোলনা ভাগ করে নেন। প্রসঙ্গত, কৃষ্ণ-রাধার প্রেমকাহিনির নাকি কোনও ঐতিহাসিক মান্যতা নেই! অন্তত সেরকমটাই বলে থাকেন ঐতিহাসিকেরা। আমরা যাঁরা ভাবি, মহাভারতে কৃষ্ণ-রাধার প্রেমের কাহিনি বর্ণনা করা আছে, তাঁরা ভুল জানি এবং ভাবি। এই প্রেমের গল্প আসলে লোকায়ত, মানে লোকমুখে তৈরি হওয়া লেজেন্ড বিশেষ। আসল মহাভারতে এর কোনও উল্লেখ নেই! পরে লোকমুখে বিভিন্ন পাদটীকা যুক্ত হয়েছে মহাভারতের গল্পে। সেভাবেই ঢুকে পড়েছে রাধা-কৃষ্ণের লীলাখেলার গল্পও। কিন্তু আমরা অত তত্ত্বের কচকচিতে যাব না। বরং ভাবুন, এটি এমন এক প্রেমের গল্প, যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকার কোনওদিন মিলন হয়নি, কিন্তু তা-ও তাঁদের একসঙ্গে দোলনায় বসিয়ে দোলাই আমরা। অনেকে আবার বলেন, কৃষ্ণের সব লীলার সঙ্গেই প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের এক আশ্চর্য যোগাযোগ লক্ষ করতে পারা যায়! দোল, মানে, বসন্তোৎসবে তিনি মাতেন রংয়ের খেলায়। তারপর গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে জুড়োতে হয় চন্দনচর্চা দিয়ে স্নানযাত্রা, তারপর আসে বর্ষাকালে সবুজের সমারোহ প্রকৃতির সঙ্গে সেজে উঠে ঝুলনযাত্রা (Jhulan Yatra) ও শেষ হয় রাসলীলা দিয়ে! তা হলে কি প্রকৃতি ও প্রেমকে একসঙ্গে মিলিয়েই প্রাচীন ভারতে শুরু হয়েছিল এই উৎসবগুলি!
শ্রাবণ মাসের শুক্লা একাদশী থেকে শুরু করে পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে ঝুলন উৎসব (Jhulan Festival)। এবছরে তা কবে থেকে শুরু হচ্ছে ও কীভাবে অগ্রসর হবে, তার দিনপঞ্জী রইল এখানে…
তথ্যসূত্র: শ্রী বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা
দোলনায় দুলবেন শ্রীকৃষ্ণ আর তাঁর সঙ্গী হবেন শ্রীরাধা...শুনতে এটুকু লাগলেও, ঝুলন উৎসবেরও কিছু নিয়মকানুন আছে বই কী! যদি নিষ্ঠাভরে এই উৎসব পালন করতে চান, তা হলে সেগুলি না হয় মেনেই চলুন। আর যদি মনে হয়, ভগবান তো ভক্তেরই, তাঁকে নিজের মতো করে সাজাবেন, উৎসব পালন (Jhulan Festival) করবেন, তা-ও করতে পারেন। আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও তো বলাই আছে শাস্ত্রে!
এই উৎসবটি এককালে শুরু হয়েছিল বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে। মন্দিরে দেবতাকে দোলনায় বসিয়ে দোলানো হত আর তা দেখতে বিপুল ভক্ত সমাগম হত। পরবর্তীকালে বিভিন্ন গৃহে শ্রীকৃষ্ণ পূজিত হতে শুরু করেন এবং তারই সঙ্গে নানাবিধ নিয়ম সহযোগে ঝুলন উৎসবও শুরু হয়। একাদশীর প্রাতঃকালে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রী রাধাকে প্রথমে স্নান করানো হয় দুধ কিংবা গঙ্গাজলে। তারপর পরানো হয় রাজবেশ। আগে থাকতেই তৈরি থাকে কাঠের, পিতলের কিংবা রুপোর দোলনা। স্নান সেরে, রাজ বেশ পরে তাতে যুগলে বসেন কৃষ্ণ-রাধা। দোলনা ও তার চারপাশ সাজানো হয় ফুলের সাজে। সেই সঙ্গে কৃষ্ণের মন্দির ও মন্দিরপ্রাঙ্গণ বা জায়গাবিশেষে মন্দির ঘরটিও সাজানো হয় ফুল দিয়ে। প্রতিদিন দুবার রান্না ভোগ, নানারকম ফল ও নৈবেদ্য অর্পণ করা হয় তাঁকে। দোলনায় বসার পর ভক্তরা একে-একে ফুলের দড়ি টেনে দোলাতে থাকেন রাধাকৃষ্ণকে। সঙ্গে চলে কীর্তন। এই উৎসবের প্রতিদিন আলাদা-আলাদা সাজে সকাল-সন্ধে সাজেন ভগবান। তবে সব সাজেই থাকতে হবে সবুজ রংয়ের আধিক্য। কারণ, সময়টা বর্ষাকাল, প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষ্ণও হয়ে ওঠেন সতেজ!
সাজসজ্জাই কিন্তু এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। তাই ঝুলন পালন করতে চাইলে আগে থেকেই ছকে নিন কীভাবে ঠাকুরঘর, ঠাকুরের আসন কিংবা মন্দির সাজিয়ে তুলবেন! মূলত ফুলের সাজেই সাজানো হয় ঝুলন যাত্রার দোলনা, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকাকে। বর্ষাকালের উৎসব, প্রকৃতি সবুজ হয়ে আছে, গাছে এসেছে নতুন ফুলের বন্যা, তাই ফুলই ঝুলনের সাজের মুখ্য উপাদান। আজকাল অবশ্য নানা ধরনের সাজে সাজানো হয়ে থাকে ঠাকুরের আসন ও মন্দির প্রাঙ্গণ। দোলনা হতে পারে কাঠের কিংবা ধাতুর। তবে তা সম্পূর্ণরূপে ঢেকে দিতে হবে ফুলে। দোলনার দড়িটিও হবে ফুলের। প্রতিদিন এই ফুলের সাজ পাল্টাতেও হবে। অনেক মন্দিরে বা বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের জীবনকাল ছোট-ছোট পুতুলের মাধ্যমেও সাজিয়ে তোলা হয় এই উৎসবের সময়।
কৃষ্ণের অঙ্গরাগ ও মন্দির সজ্জা তো বটেই, প্রতিদিনের কাজের মধ্যে থাকবে তাঁর স্নান ও অঙ্গমার্জনা, বেশভূষা পরানো, ভোগ রান্না, নৈবেদ্য সাজানো, দিনে দুবার আরতি ও তারপরে দোলনায় দোল দেওয়া, নামসংকীর্তন গাওয়া, কৃষ্ণকে শয়ান দেওয়া ইত্যাদি। অনেক মন্দিরের চারপাশে এই সময় মেলা বসে। বাড়িতে হয় অতিথি সমাগম। উৎসবের (Jhulan Festival) পাঁচদিন নিরামিষ ভক্ষণ করাটাই শ্রেয়। আর বলদেবের জন্মদিনে তাঁর জন্য বিশেষ বেশ, ভোগ ও দোলনারও ব্যবস্থা করা হয়।
সারা দেশের কৃষ্ণভক্তরা নিজেদের মতো করে এই উৎসব পালন করলেও,ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে বেশ ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় এই উৎসব। তালিকায় আসবে মথুরা, বৃন্দাবন, নবদ্বীপ, মায়াপুরের নাম। শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলার দুই পীঠস্থান মথুরা ও বৃন্দাবনে এই উৎসব পালিত হয় ১৩ দিন ধরে। রাধাকৃষ্ণের মূল বিগ্রহ মন্দির থেকে বাইরে বের করে আসা হয় ও দোলনায় বসিয়ে তাঁদের দোলানো হয়। বৃন্দাবনের শ্রী রূপ-সনাতন গৌড়ীয় মঠ, বাঁকেবিহারীর মন্দির, রাধারমণ মন্দির বা মথুরার দ্বারকাধীশ মন্দির, সর্বত্রই মন্দিরের দেবতা নেমে আসেন ভক্তের মাঝে! একই রীতি প্রচলিত মায়াপুর ও নবদ্বীপেও। এ ছাড়াও আজকাল ইসকনের বিভিন্ন শাখায়ও ঘটা করে পালিত হয় এই উৎসব (Jhulan Festival)।
জন্মাষ্টমী বা গোকুলাষ্টমী (Janmashtami In Bengali), যে নামেই এই দিনটিকেই ডাকুন না কেন, তার গুরুত্ব একই থাকে! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেবতাদের মধ্যে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণেরই জন্মদিন পালিত হয় ঘটা করে! তা হলে কি এই উৎসবই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কৃষ্ণ আসলে ইতিহাসমান্য একটি চরিত্রবিশেষ? আমরাই নির্বিচারে তাঁকে দেবতার পর্যায়ে তুলে দিয়েছি! সে যাই হোক, ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে না হয় অন্য কোনওদিন দেখা যাবে! আমরা বরং নজর দিই জন্মাষ্টমীর নানা গল্পে!
পরিত্রাণায় সাধুনাম, বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম, ধর্মসংস্থাপনার্থায়, সম্ভবামি যুগে, যুগে...
একথা গীতায় নিজমুখে বলেছেন শ্রীকৃষ্ণ, বিষ্ণুর নবম অবতার। দ্বাপরে কৃষ্ণ অবতারে ধরাধামে এসেছিলেন শ্রী বিষ্ণু, হিন্দু শাস্ত্র মতে, চান্দ্র শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে, মথুরার রাজা কংসের কারাগারে, দেবকী-বসুদেবের অষ্টম সন্তান হয়ে। উদ্দেশ্য সেই একটাই, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন!
সত্যি কথা বলতে গেলে, পুরাণে কিছুই বলে না! কৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্তের জন্য আমদের নজর ফেরাতে হবে সেই মহাভারতের উপর। যেখানে বলা হয়েছে, শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় পক্ষ অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীতে রোহিণী নক্ষত্রে চন্দ্র যখন বৃষভের ঘরে প্রবেশ করেন, সেই বুধবার, বিশ্ববসু বছরে মধ্যরাতে কৃষ্ণ জন্ম নেন মথুরায়। অত্যাচারী কংসকে বধ করার জন্যই জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। জন্মের পর শিশুটিকে মেরে ফেলা হতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে বৃন্দাবনে বসুদেবের মিত্রবর নন্দরাজের বাড়িতে রেখে আসা হয়েছিল। যাওয়ার পথে কীভাবে কারাগারের বদ্ধ দরজা খুলে গেল, প্রহরীরা কীভাবে ঘুমিয়ে পড়ল, দুর্দান্ত যমুনা পার হয়ে কীভাবে সেই শিশুকে নিয়ে বৃন্দাবনে পৌঁছেছিলেন বসুদেব, সেই গল্প বহুচর্চিত।
বিষ্ণুর সব অবতারের মধ্যে এই কৃষ্ণ অবতারই মানুষ হিসেবে কর্তব্য কর্মের ব্যাপারে প্রথম শিক্ষা দেয় আমাদের! সেদিক থেকে দেখতে গেলে, জন্মাষ্টমীর গুরুত্ব আছে বই কী! ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাবে পালিত হয় এই উৎসব। উত্তর ও পূর্ব ভারতের উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গে যেমন বালগোপালের পুজো ও জন্মদিন পালিত হয় ধুমধাম করে, ঠিক তেমনই মহারাষ্ট্রে এদিন কৃষ্ণের কৈশোরের লীলা মাথায় রেখে পালিত হয় দহি-হাণ্ডি উৎসব! আবার দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে এই দিনটি পালিত হয় উরিয়াদি হিসেবে, অনেকটা সেই দহি-হাণ্ডির স্টাইলেই। তবে মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যেখানে শহরাঞ্চলেই এই উৎসবের বেশি বোলবোলাও, তামিলনাড়ুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। সেখানে গ্রামের দিকেই বেশি পালিত হয় উরিয়াদি।
এবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ২৩ অগস্ট পালিত হবে জন্মাষ্টমী (Janmashtami In Bengali)। যদিও অষ্টমী তিথি শুরু হচ্ছে ২২ অগস্ট গভীর রাতে, কিন্তু যেহেতু হিন্দু শাস্ত্রমতে, সূর্যোদয় না হলে তিথি সম্পূর্ণ হয় না। তাই ২৩ অগস্ট ২০১৯-কেই জন্মাষ্টমী হিসেবে পরিগণিত করা হবে।
তথ্যসূত্র: বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা
কী করে আবার, বালগোপালের জন্মদিন পালন করে! যাঁদের বাড়িতে গোপাল প্রতিষ্ঠিত দেবতা, তাঁদের প্রত্যেকের বাড়িতে তো নিজস্ব নিয়ম মেনে পুজো হবেই। আপনিও যদি এবার থেকে এই দিনটি সেলিব্রেট করতে চান, তা হলে তার উপায় বাতলে দেওয়া হল এখানে! তবে একটা কথা পরিষ্কার করে দেওয়া ভাল। জন্মাষ্টমী মূলত একটি পারিবারিক উৎসব, বিশেষত বাঙালিদের জন্য। তাই সেলিব্রেশন যা হবে, বাড়িতেই হবে!
মূলত বালগোপালের পুজো, তাঁর জন্য ভোগ রান্না ও তাঁর নাম জপ করা, এসবের মাধ্যমেই জন্মাষ্টমী পালন (Janmashtami Puja Vidhi In Bengali) করে থাকেন বাঙালিরা। পুজোর দিন সঙ্কল্প করা হয় নির্জলা উপবাসের। অবশ্য আজকাল অনেকেই আর নির্জলা উপবাস করেন না। সামান্য ফলাহার করেন বা অল্প সরবত পান করেন। তবে অষ্টমী তিথি না কাটা পর্যন্ত তাঁরা অন্ন, মানে ভাত-রুটি গ্রহণ করেন না।
জন্মাষ্টমী পূজার উপাচার: পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগব্য, তিল, হরিতকী, ফুল, তুলসি, দূর্বা, বিল্বপত্র, ধূপ-দীপ-ধুনা, আসনাঙ্গুরীয়, মধুপর্ক, ছ প্রকার নৈবেদ্য, কুচো নৈবেদ্য, গুড়, ঘৃত, বালি, কাষ্ঠ, খড়কে, পূর্ণপাত্র, দধি-মধু, চিনি, তৈল ও হরিদ্রা।
বালগোপালের (Laddu Gopal) অঙ্গরাগ থেকে শুরু হয় জন্মাষ্টমীর শৃঙ্গার। নিয়মানুসারে চারবার সাজ পরিবর্তন করতে হবে গোপালের (Bal Gopal)। সকালে উঠে তাঁকে স্নান করানো হবে দুধে, অঙ্গ মার্জনা করা হবে নতুন অঙ্গবস্ত্র দিয়ে। তারপর চন্দন সহযোগে অঙ্গরাগ করার পর পরানো হবে নতুন পোশাক ও গহনা। হাতে দেওয়া হবে বাঁশি, মাথায় মুকুট। সকাল, দুপুর, বিকেল ও রাত, চার বেলাই নতুন পোশাক পরবেন তিনি, গহনাও হতে হবে পোশাকের সঙ্গে মানানসই!
সেই যে পুজোর সঙ্কল্প দিয়ে জন্মাষ্টমী শুরু করবেন কৃষ্ণভক্ত, তিথি শেষ হওয়া না পর্যন্ত জলস্পর্শ করবেন না তিনি। কিন্তু গোপালের জন্য রান্না হবে ছাপ্পান্ন ভোগ, থাকবে অতি আবশ্যিক মাখন-মিছরির ভোগও। কী-কী থাকতে পারে বালগোপালের ছাপ্পান্ন ভোগে? অন্ন ছাড়া থাকতে পারে সবকিছুই। লুচি, সুজি, ডাল, ভাজা, তরকারি, পায়েস, নানা রকমের মিষ্টি, মালপোয়া, সিন্নি, তালের বড়া, তালক্ষীর, তালের লুচি, ইত্যাদি তো থাকবেই, থাকতে পারে এগলেস কেকও! গোপালের জন্মদিন বলে কথা! ছাপ্পান্ন ভোগ সাধারণত ভাগ করা হয় আট ভাগে, প্রতিটি ভাগে থাকে আটটি করে পদ। এই আটটি ভাগ হল, নোনতা (ভাজা ও নানারকম তরকারি), মিষ্টি (অবশ্যই থাকবে মালপোয়া, সুজি বা সিমাইয়ের পায়েস, তালের তৈরি নানা মিষ্টি ইত্যাদি) চাটনি, তাজা ফল (আট প্রকারের), শুকনো ফল (আট রকমের ড্রাই ফ্রুটস), লুচি-পুরি-খিচুড়ি (এটিও আট প্রকারের হওয়া চাই), ও মাখন-মিছরি। অবশ্য সকলকেই যে বাধ্যতামূলকভাবে এই ছাপ্পান্ন ভোগ দিতেই হবে, তার কোনও মানে নেই। যাঁর যেমন ইচ্ছে, ততগুলি পদেরই আয়োজন করতে পারেন।
জন্মাষ্টমীর (Janmashtami) পরের দিন পালিত হয় নন্দ্যোৎসব। মানে, কৃষ্ণ জন্মে গিয়েছেন, এবার তা সেলিব্রেট করার উৎসব! নন্দরাজার ঘরে পুত্রসন্তান জন্মেছে, এই মর্মে খবর পেয়ে পুরো গোকুল ভেঙে পড়েছিল তাঁর বাড়িতে, সদ্যোজাতকে দেখতে! আর নন্দরাজা খুশির চোটে সকলকে দিয়েছিলেন নানা উপহার! এখনও বৃন্দাবনে রাধাবল্লভ মন্দিরে ঘটা করে পালিত হয় নন্দোৎসব। যাঁরা জন্মাষ্টমীর পুজো করেন বাড়িতে, তাঁরাও এদিনটি পালন করেন নিষ্ঠাভরে। এদিন সকালে প্রথমে বালগোপালের অভিষেক হয় ও তারপর আরতি করে তাঁকে পুজো করা হয়। পরানো হয় নতুন বেশও।
জন্মাষ্টমীর আলাদা করে কোনও ব্রতকথা নেই। তবে শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্র, নাম সঙ্কীর্তন ও অষ্টোত্তর শতনাম জপ করে, পুষ্পাঞ্জলি দিয়েই পুজো সমাপন হয়। এখানে রইল প্রণাম মন্ত্র ও শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম…
প্রণাম মন্ত্র
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে। গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধাকান্ত নমহস্তুতে।।
নমো ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমো নমঃ।।
অষ্টোত্তর শতনাম জপ
শ্রীনন্দ রাখিল নাম নন্দের নন্দন।১
যশোদা রাখিল নাম যাদু বাছাধন।।২
উপানন্দ নাম রাখে সুন্দর গোপাল।৩
ব্রজবালক নাম রাখে ঠাকুর রাখাল।।৪
সুবল রাখিল নাম ঠাকুর কানাই।৫
শ্রীদাম রাখিল নাম রাখাল রাজা ভাই।।৬
ননীচোরা নাম রাখে যতেক গোপিনী।৭
কালসোনা নাম রাখে রাধা-বিনোদিনী।।৮
কুজ্বা রাখিল নাম পতিতপাবন হরি।৯
চন্দ্রাবলী নাম রাখে মোহন বংশীধারী।।১০
অনন্ত রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া।১১
কৃষ্ণ নাম রাখেন গর্গ ধ্যানেতে জানিয়া।।১২
কন্বমুনি নাম রাখে দেব চক্রপাণী।১৩
বনমালী নাম রাখে বনের হরিণী।।১৪
গজহস্তী নাম রাখে শ্রীমধুসূদন।১৫
অজামিল নাম রাখে দেব নারায়ণ।।১৬
পুরন্দর নাম রাখে দেব শ্রীগোবিন্দ।১৭
দ্রৌপদী রাখিল নাম দেব দীনবন্ধু।।১৮
সুদাম রাখিল নাম দারিদ্র-ভঞ্জন।১৯
ব্রজবাসী নাম রাখে ব্রজের জীবন।।২০
দর্পহারী নাম রাখে অর্জুন সুধীর।২১
পশুপতি নাম রাখে গরুড় মহাবীর।।২২
যুধিষ্ঠির নাম রাখে দেব যদুবর।২৩
বিদুর রাখিল নাম কাঙাল ঈশ্বর।।২৪
বাসুকী রাখিল নাম দেব-সৃষ্টি স্থিতি।২৫
ধ্রুবলোকে নাম রাখে ধ্রুবের সারথি।।২৬
নারদ রাখিল নাম ভক্ত প্রাণধন।২৭
ভীষ্মদেব নাম রাখে লক্ষ্মী-নারায়ণ।।২৮
সত্যভামা নাম রাখে সত্যের সারথি।২৯
জাম্বুবতী নাম রাখে দেব যোদ্ধাপতি।।৩০
বিশ্বামিত্র নাম রাখে সংসারের সার।৩১
অহল্যা রাখিল নাম পাষাণ-উদ্ধার।।৩২
ভৃগুমুনি নাম রাখে জগতের হরি।৩৩
পঞ্চমুখে রাম নাম গান ত্রিপুরারি।।৩৪
কুঞ্জকেশী নাম রাখে বলী সদাচারী।৩৫
প্রহ্লাদ রাখিল নাম নৃসিংহ-মুরারী।।৩৬
বশিষ্ঠ রাখিল নাম মুনি-মনোহর।৩৭
বিশ্বাবসু নাম রাখে নব জলধর।।৩৮
সম্বর্ত্তক নাম রাখে গোবর্দ্ধনধারী।৩৯
প্রাণপতি নাম রাখে যত ব্রজনারী।।৪০
অদিতি রাখিল নাম আরতি-সুদন।৪১
গদাধর নাম রাখে যমল-অর্জুন।।৪২
মহাযোদ্ধা নাম রাখি ভীম মহাবল।৪৩
দয়ানিধি নাম রাখে দরিদ্র সকল।।৪৪
বৃন্দাবন-চন্দ্র নাম রাখে বিন্দুদ্যুতি।৪৫
বিরজা রাখিল নাম যমুনার পতি।।৪৬
বাণী পতি নাম রাখে গুরু বৃহস্পতি।৪৭
লক্ষ্মীপতি নাম রাখে সুমন্ত্র সারথি।।৪৮
সন্দীপনী নাম রাখে দেব অন্তর্যামী।৪৯
পরাশর নাম রাখে ত্রিলোকের স্বামী।।৫০
পদ্মযোনী নাম রাখে অনাদির আদি।৫১
নট-নারায়ণ নাম রাখিল সম্বাদি।।৫২
হরেকৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম।৫৩
ললিতা রাখিল নাম বাদল-শ্যাম।।৫৪
বিশাখা রাখিল নাম অনঙ্গমোহন।৫৫
সুচিত্রা রাখিল নাম শ্রীবংশীবদন।।৫৬
আয়ন রাখিল নাম ক্রোধ-নিবারণ।৫৭
চণ্ডকেশী নাম রাখে কৃতান্ত-শাসন।।৫৮
জ্যোতিষ্ক রাখিল নাম নীলকান্তমণি।৫৯
গোপীকান্ত নাম রাখে সুদাম ঘরণী।।৬০
ভক্তগণ নাম রাখে দেব জগন্নাথ।৬১
দুর্বাসা নাম রাখে অনাথের নাথ।।৬২
রাসেশ্বর নাম রাখে যতেক মালিনী।৬৩
সর্বযজ্ঞেশ্বর নাম রাখেন শিবানী।।৬৪
উদ্ধব রাখিল নাম মিত্র-হিতকারী।৬৫
অক্রুর রাখিল নাম ভব-ভয়হারী।।৬৬
গুঞ্জমালী নাম রাখে নীল-পীতবাস।৬৭
সর্ববেত্তা নাম রাখে দ্বৈপায়ন ব্যাস।।৬৮
অষ্টসখী নাম রাখে ব্রজের ঈশ্বর।৬৯
সুরলোকে নাম রাখে অখিলের সার।।৭০
বৃষভানু নাম রাখে পরম ঈশ্বর।৭১
স্বর্গবাসী নাম রাখে সর্ব পরাৎপর।।৭২
পুলোমা রাখেন নাম অনাথের সখা।৭৩
রসসিন্ধু নাম রাখে সখী চিত্রলেখা।।৭৪
চিত্ররথ নাম রাখে অরাতি দমন।৭৫
পুলস্ত্য রাখিল নাম নয়ন-রঞ্জন।।৭৬
কশ্যপ রাখেন নাম রাস-রাসেশ্বর।৭৭
ভাণ্ডারীক নাম রাখে পূর্ণ শশধর।।৭৮
সুমালী রাখিল নাম পুরুষ প্রধান।৭৯
পুরঞ্জন নাম রাখে ভক্তগণ প্রাণ।।৮০
রজকিনী নাম রাখে নন্দের দুলাল।৮১
আহ্লাদিনী নাম রাখে ব্রজের গোপাল।।৮২
দেবকী রাখিল নাম নয়নের মণি।৮৩
জ্যোতির্ম্ময় নাম রাখে যাজ্ঞবল্ক্য মুনি।।৮৪
অত্রিমুনি নাম রাখে কোটি চন্দ্রেশ্বর।৮৫
গৌতম রাখিল নাম দেব বিশ্বম্ভর।।৮৬
মরীচি রাখিল নাম অচিন্ত্য-অচ্যুত।৮৭
জ্ঞানাতীত নাম রাখে শৌনকাদিসুখ।।৮৮
রুদ্রগণ নাম রাখে দেব মহাকাল।৮৯
সুরগণ নাম রাখে ঠাকুর দয়াল।।৯০
সিদ্ধগণ নাম রাখে পুতনা-নাশন।৯১
সিদ্ধার্থ রাখিল নাম কপিল তপোধন।।৯২
ভাদুরি রাখিল নাম অগতির গতি।৯৩
মৎস্যগন্ধা নাম রাখে ত্রিলোকের পতি।।৯৪
শুক্রাচার্য্য নাম রাখে অখিল বান্ধব।৯৫
বিষ্ণুলোকে নাম রাখে দেব শ্রীমাধব।।৯৬
যদুগণ নাম রাখে যদুকুলপতি।৯৭
অশ্বিনীকুমার নাম রাখে সৃষ্টি-স্থিতি।।৯৮
অর্য্যমা রাখিল নাম কাল-নিবারণ।৯৯
সত্যবতী নাম রাখে অজ্ঞান-নাশন।।১০০
পদ্মাক্ষ রাখিল নাম ভ্রমরী-ভ্রমর।১০১
ত্রিভঙ্গ রাখিল নাম যত সহচর।।১০২
বংকচন্দ্র নাম রাখে শ্রীরূপমঞ্জরী।১০৩
মাধুরা রাখিল নাম গোপী-মনোহারী।।১০৪
মঞ্জুমালী নাম রাখে অভীষ্টপুরণ।১০৫
কুটিলা রাখিল নাম মদনমোহন।।১০৬
মঞ্জরী রাখিল নাম কর্ম্মব্রহ্ম-নাশ।১০৭
ব্রজব নাম রাখে পূর্ণ অভিলাস।।১০৮
পশ্চিমবঙ্গে ইদানীং জন্মাষ্টমী (Khishna Janmashtami) আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা হল লোকনাথ বাবার আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে। এই নিয়ে অবশ্য মতানৈক্যও কম নেই। লোকনাথ ব্রহ্মচারীকে এক দল বলেন বারদীধামেশ্বর, অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশের বারদী গ্রামে বাবার জন্ম হয়েছিল। অন্য দল বলেন, না, তিনি জন্মেছিলেন এপার বাংলারই চাকলা ধামে। যাঁরা এই দ্বিতীয় ভাবধারাটিতে বিশ্বাসী, তাঁরা বলেন ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে জন্মাষ্টমীর দিনটিতেই কলকাতার অনতিদূরে চাকলা গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। লোকনাথ বাবার বাণী ও বিশেষত 'রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে, যেখানেই বিপদে পড় না কেন, আমাকে স্মরণ করিবে, আমি রক্ষা করিব'-র টানে তাঁর ভক্ত সংখ্যাও ছাড়িয়েছে হিসেব! তাই বাবার জন্মদিন উপলক্ষে অনেকটা 'ভোলেবাবা পার করেগা' স্টাইলে আজকাল অনেকে বাঁক নিয়ে চাকলায় লোকনাথ বাবার মন্দিরে, বাবার মাথায় জল ঢালতেও যান!
দৃকসিদ্ধ পঞ্জিকা মতে, এবছরও ২৩ অগস্ট, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার শুভাবির্ভাব তিথি ও পূজার সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে!
শ্রীকৃষ্ণের এই ১০টি বাণী হোক আপনার জীবনের পাথেয়। এই জন্মাষ্টমীতে (Khishna Janmashtami) তা শেয়ার করুন নিকটজনের সঙ্গে...
১| গরম কিংবা ঠান্ডা, খুশি কিংবা আনন্দ, কোনওটাই মানুষের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সুতরাং, দুঃখের দিন দেখলেও ধৈর্য ধরুন। একদিন না-একদিন সুখ ফিরে আসবেই।
২| তোমার যা-যা করণীয়, সেটাই করো, কিন্তু লোভ না করে, হিংসে না করে, জেদ না করে আর মাৎসর্য না দেখিয়ে! বরং ভালবাসা, ভক্তি আর নম্রতা নিয়ে করো।
৩| আত্মা অবিনশ্বর। তাকে অস্ত্র দিয়ে কাটা যায় না, আগুনে পোড়ানো যায় না, বাতাস দিয়ে ওড়ানো যায় না। তাই আত্মাকে নিয়ে ছেলেখেলা কোরো না।
৪| আগে যে কাজ করতে তুমি পৃথিবীতে এসেছ, সেটা ভাল করে সম্পন্ন করো। তারপর অন্যের কাজ তদারকি করতে যেও। নিজের কাজটা সচেতনভাবে করলেই কোনও ব্যক্তি জীবনে সবকিছু পেতে পারে।
৫| যাঁদের নিজেদের ভাবনাচিন্তার উপর লাগাম নেই, তাঁরা জীবনে কোনওদিন সফল হবেন না!
৬| মনের স্বভাবই হল নিজের খেয়ালে বয়ে চলা। তাকে অনুশাসনের বেড়াজালে বেঁধে রাখা প্রায় অসম্ভব! কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাসে সেটিও হতে পারে!
৭| যিনি প্রকৃত জ্ঞানী, তিনি কর্ম এবং কর্তব্যের মধ্যে তফাত করেন না!
৮| আত্মা অবিনশ্বর! মানুষ যেমন পুরনো পোশাক ছেড়ে ফেলে নতুন পোশাক পরে, আত্মাও ঠিক তেমনই, পুরনো শরীর ছেড়ে নতুন শরীরে বাসা বাঁধে।
৯| যদি শক্তিশালী হতে চাও, তা হলে একা লড়াই করতে শেখো!
১০| সত্যি কথা শুনতে কেউ ভালবাসে না! কিন্তু তবুও সত্যি কথা বলো। কারণ, সত্যেই মুক্তি!