প্রতিটি বাঙালি বাড়িতে তুলসি গাছ থাকলেও এর গুণাগুণ সম্পর্কে খোঁজ রাখেন না অনেকেই। তাই তো কথায় কথায় 'ওভার দ্য কাউন্টার' মেডিসিন কিনে রোগ-ব্যাধি সারানোর চেষ্টা চালান, যেখানে হাজার বছর ধরে ছোট-বড় নানা রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগানো হয়ে আসছে তুলসি পাতাকে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক বই অনুসারে দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি ফুসফুসকে চাঙ্গা রাখতে, জ্বর-জ্বালা কমাতে, হার্টের ক্ষমতা বাড়াতে এবং স্ট্রেসের প্রকোপ কমাতে তুলসি পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করলে আরও নানা রকমের শারীরিক উপকার মেলে, যে সম্পর্কে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে তার আগে একথা জেনে রাখা ভাল যে, তুলসি পাতা যেমন শরীরকে চাঙ্গা রাখতে নানাভাবে সাহায্যে করে, তেমনই তুলসি পাতা থেকে সংগ্রহ করা তেলেও নানাভাবে শরীর এবং ত্বকের কাজে আসে। বিশেষত, স্কিন অ্যালার্জি এবং সংক্রমণের প্রকোপ কমাতে তুলসি এসেনশিয়াল তেলের জুড়ি মেলা ভার। শুধু তাই নয়, এই তেল যেমন স্ট্রেস-অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমায়, তেমনি ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসা তেও কাজে আসে।
তুলসি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি এবং আয়রন। সেই সঙ্গে মজুত রয়েছে সোডিয়াম, জিঙ্ক, থিয়ামিন, riboflavin, নিয়াসিন, ফলেট, ফাইবার, ভিটামিন বি৬ এবং কে, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। যেমন ধরুন...
এক গ্লাস জলে খানদশেক তুলসি পাতা ফেলে সেই জল ফুটিয়ে নিয়ে যদি পান করা যায়, তা হলে শরীরে বিশেষ কিছু phytonutrients-এর প্রবেশ ঘটে। সেই সঙ্গে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদানের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে, যে কারণে জ্বরের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের মতো রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই তো বলি, বর্ষাকালে নানা সংক্রমণের খপ্পরে যদি পড়তে না চান, তা হলে নিয়মিত তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করুন।
তুলসি পাতায় রয়েছে camphene, eugenol এবং সিনেওলের মতো এসেনশিয়াল তেল, যা ফুসফুসে হওয়া সংক্রমণ কমাতে যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনই bronchitis-এর মতো রোগের চিকিৎসাতেও দারুন কাজে আসে। শুধু তাই নয়, বায়ু দূষণের কারণে যাতে ফুসফুসের কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকেও নজর রাখে তুলসি পাতা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, air quality index অনুসারে বায়ু দূষণের দিক থেকে দিল্লির পরেই কলকাতার স্থান। এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশে উপস্থিত নানা ক্ষতিকর উপাদানের হাত থেকে ফুসফুসকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত তুলসি পাতা খাওয়া মাস্ট!
এমন রোগকে একেবারে গোড়া থেকে সারিয়ে তুলতে তুলসি পাতার জুড়ি মেলা ভার। কারণ, এতে রয়েছে উপকারী কিছু phytonutrients, রয়েছে নানা এসেনশিয়াল তেল এবং ভিটামিন-মিনারেল, যা হাঁপানির মতো রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনিও যদি এমন রোগের শিকার হয়ে থাকেন, তা হলে নিয়মিত তুলসি পাতা খেতে ভুলবেন না যেন!
তুলসি পাতায় উপস্থিত ভিটামিন সি এবং eugenol নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হার্টের ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে রক্তে উপস্থিত নানা টক্সিক উপাদানের কারণে হার্টের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা-ও সুনিশ্চিত করে। সেই সঙ্গে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমায়। ফলে নানাবিধ হার্টের রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা কমে।
২০১৬ সালে National Institute of Mental Health and Neurosciences-এর প্রকাশ করা এক সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে প্রতি ২০ জন ভারতীয়ের মধ্যে একজন, স্ট্রেস-অ্যাংজাইটি, নয়তো ডিপ্রেশনের শিকার। একই তথ্য মেলে ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত এক রিপোর্টেও। সেই রিপোর্টে এমন উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭.৫ শতাংশ মানুষ স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি অথবা ডিপ্রেশনের মতো কোনও না-কোনও mental disorder-এর শিকার। আজ থেকে দু'বছর আগে যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তাহলে আজকের ডেটে সংখ্যাটা যে আরও অনেকটাই বেড়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তো ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবারই নিয়ম করে তুলসি পাতা খাওয়া উচিত। কারণ, এই প্রাকৃতিক উপাদানে উপস্থিত নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এসেনশিয়াল তেল, স্ট্রেস লেভেল কমাতে যেমন বিশেষ ভূমিকা নেয়, তেমনই অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের মতো সমস্যাকেও দূরে রাখে।
নিয়মিত তুলসি পাতা ভেজানো জল খাওয়া শুরু করলে এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের কারণে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলি মারা পরে। ফলে ক্যাভিটি এবং plaque-এর মতো সমস্যার খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই মুখের দুর্গন্ধও দূর হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তুলসি পাতা কখনও চিবিয়ে খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এতে রয়েছে mercury, যা দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করে দেয়। তা হলে তুলসি পাতা খাবেন কীভাবে, তাই ভাবছেন তো? এক গ্লাস জলে খান দশেক তুলসি পাতা ভিজিয়ে সেই জল পান করুন, তাতেই দেখবেন উপকার পাবেন। ইচ্ছে হলে তুলসি পাতা দিয়ে তৈরি চাও খেতে পারেন। তুলসি পাতা থেঁতো করে তার রস খেলেও কিন্তু সমান উপকার মেলে।
শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ইউরিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর সেই কাজটাই যাতে ঠিক মতো হয়, তার জন্য নিয়মিত তুলসি পাতার রস খেতে হবে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানে এমন কিছু উপকারী উপাদন রয়েছে যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমায়। সেই সঙ্গে কিডনিতে উপস্থিত টক্সিক উপাদানগুলিকে শরীরে থেকে বের করে দেয়। ফলে কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিডনির পাশাপাশি লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও তুলসি পাতার কোনও বিকল্প নেই। তাই বুঝতেই পারছেন, হার্ট, কিডনি, লিভার এবং ফুসফুস, শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গকে যদি সুস্থ রাখতে হয়, তা হলে নিয়মিত তুলসি পাতার রস, নয়তো তুলসি পাতা ভেজানো জল বা চা পান করতে ভুলবেন না যেন!
মাইগ্রেন বা সাইনাস হোক, কী স্ট্রেসের কারণে, যে-কোনও ধরনের মাথা যন্ত্রণা কমিয়ে ফেলতে তুলসি পাতার জুড়ি মেলা ভার। কারণ তুলসি পাতার রস খাওয়া মাত্র শরীরে Camphene, eugenol, সিনোয়েন এবং কার্ভাক্রোলের মতো উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা অল্প সময়েই মাথার যন্ত্রণা কমায়।
শরীরের কোথাও কেটে গেলে সেখানে তুলসি পাতার পেস্ট লাগালে ক্ষত সেরে উঠতে সময় লাগে না। এমনকী, ক্ষতের জায়গায় যাতে কোনও কারণে সংক্রমণ না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি।
বর্ষাকালে নানা কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বেজায় দুর্বল হয়ে পরে, যে কারণে নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বেড়ে যায়, তেমনই জ্বর-জ্বালার প্রকোপও বাড়ে। তাই তো বছরের এই সময় তুলসি পাতা খাওয়া জরুরি। কারণ, এতে রয়েছে ভিটামিন সি, সেই সঙ্গে মজুত রয়েছে একধিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান, যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসদের মেরে ফেলে। ফলে কোনও ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
নিয়মিত তুলসি পাতার রস বা তুলসি পাতা দিয়ে তৈরি চা খাওয়া শুরু করলে চোখে ছানি পড়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই macular degeneration, গ্লোকমা বা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। আর যদি নিয়মিত তুলসি পাতা ভেজানো জল দিয়ে চোখ পরিষ্কার করা যায়, তা হলে চোখে কোনও ধরনের ব্যাকটেরিয়াল বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা কমে।
তুলসি পাতায় উপস্থিত ভিটামিন সি এবং নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করা মাত্র রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানদের ধ্বংস করে দেয়। সেই সঙ্গে ক্যান্সার কোষগুলিকে নষ্ট করে দেয়। ফলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারে না।
যাঁদের পরিবারে হাই ব্লাড প্রেশারের মতো রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত তুলসি পাতা দিয়ে তৈরি চা খেতে ভুলবেন না যেন! কারণ তুলসি পাতায় রয়েছে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে হাই ব্লাড প্রেশারের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
তুলসি পাতায় রয়েছে একাধিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমায়। ফলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির কোনও ধরনের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। তাই তো বলি, প্রদাহের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে নিয়মিত তুলসি পাতা ভেজানো জল বা তুলসি পাতার রস খেতে ভুলবেন না!
গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবারই নিয়ম করে তুলিসা পাতা খাওয়া উচিত। কারণ এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, যে কারণে ডায়াবেটিসের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
শরীরে রোগমুক্ত রাখার পাশাপাশি চুলের যত্নেও তুলসি পাতার জুড়ি মেলা ভার। এই প্রকৃতিক উপাদান নানাভাবে চুলের খেয়াল রেখে থাকে। যেমন ধরুন...
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তা হলে খানদশেক তুলসি পাতা বেটে, সেই পেস্টের সঙ্গে চামচ দুয়েক নারকেল তেল মিশিয়ে তা ধীরে-ধীরে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে মিনিটকুড়ি অপেক্ষা করুন। সময় হওয়ামাত্র শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে বারতিনেক এভাবে চুলের যত্ন নিলে চুলের গোড়া এতটাই শক্তপোক্ত হয়ে উঠবে যে চুল পড়ার মাত্রাও কমবে।
এক চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে সম পরিমাণে তুলসি এসেনশিয়াল তেল মিশিয়ে সেই মিশ্রণ চুলে গোড়ায় লাগিয়ে মিনিটপাঁচেক মালিশ করুন। নিয়মিত এমনটা করলে চুলের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরে আসবে, যে কারণে খুশকির প্রকোপ কমতে দেখবেন সময়ই লাগবে না। সেই সঙ্গে মাথার চুলকানিও কমবে।
এক কাপ জলে এক চামচ তুলসি পাতার গুঁড়ো এবং সম পরিমাণ আমলা পাউডার মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন। পরের দিন সেই জল দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে বারতিনেক এই মিশ্রণটি দিয়ে চুল ধুলে অসময়ে চুল পেকে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনই হেয়ার ফলের মাত্রাও কমবে চোখে পড়ার মতো।
তুলসি পাতায় এমন কিছু উপকারী উপাদান রয়েছে, যা বেশ কিছু ত্বকের রোগের প্রকোপ কমাতে যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি সৌন্দর্য বাড়াতেও নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। যেমন ধরুন...
নিয়মিত তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করলে রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদানগুলি বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে শরীরে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্রণোর প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তবে এমন ত্বকের রোগের চিকিৎসায় আরেকভাবেও কাজে লাগানো যেতে পারে তুলসি পাতাকে। কীভাবে? খানদশেক তুলসি পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে তার সঙ্গে এক চামচ চন্দন গুঁড়ো এবং চামচদুয়েক গোলাপ জল মিশিয়ে তৈরি পেস্ট সারা মুখে লাগিয়ে মিনিটকুড়ি অপেক্ষা করতে হবে। সময় হওয়া মাত্র ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে বারদুয়েক এই পেস্ট মুখে লাগালে ব্রণর প্রকোপ কমতে সময় লাগবে না।
তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করলে যে কোনও ধরনের ত্বকের সংক্রমণ কমতে সময় লাগে না। এমনকী, রিংওয়ার্মের মতো সংক্রমণ কমাতেও তুলসি পাতা বিশেষ ভূমিকা নেয়। এক্ষেত্রে খানদশেক তুলসি পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এবার সেই পেস্টে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে সেই মিশ্রণ রিংওয়ার্মের উপরে লাগালেই রোগের প্রকোপ কমবে।
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, তুলসি পাতায় উপস্থিত নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এসেনশিয়াল তেল, একজিমার মতো রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনি যদি এমন রোগের শিকার হয়ে থাকেন, তা হলে নিয়মিত তুলসি পাতা খেতে ভুলবেন না যেন!
তুলসি পাতা দিয়ে তৈরি চা যেমন খেতে পারেন, তেমনই আরও নানা ভাবে তুলসি পাতা খাওয়া যেতে পারে। যেমন...
আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে, তুলসি পাতা চিবিয়ে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তাহলে কীভাবে খেতে হবে? তুলসি পাতার রস খেতে পারেন, নয়তো তুলসি পাতা দিয়ে তৈরি চা পান করলেও সমান উপকার মিলবে। এক্ষেত্রে খানকুড়ি তুলসি পাতা শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর তা গুঁড়ো করে সেখান থেকে চামচ দুয়েক নিয়ে এক কাপ জলে ফেলে মিনিটপাঁচেক ফুটিয়ে নিয়ে জলটা ছেঁকে পান করতে হবে!
এক চামচ তুলসি পাতার গুঁড়োর সঙ্গে সম পরিমাণে মধু অথবা ঘি মিশিয়ে খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে চোখে পড়ার মতো।
মিক্সিতে হাফ কাপ জল এবং এক কাপ তুলসি পাতা নিয়ে ভাল করে মিক্স করে নিন। এবার সেই পেস্টটা ছেঁকে নিলে যে রস পাবেন, তা পান করুন। এই রসে অল্প করে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যাঁদের কোনও অপারেশন হতে চলেছে, তাঁদের যেমন তুলসি পাতা খাওয়া উচিত নয়, তেমনই ভাবী মায়েদেরও তুলসি পাতা না খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যাঁরা Hypothyroidism-এর মতো রোগে ভুগছেন, তাঁদেরও তুলসি পাতা এড়িয়ে চলতে হবে।
১| দিনে কাপ দুয়েক তুলসি পাতা দিয়ে তৈরি চা পান করলে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু বেশি মাত্রায় তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করলেই বিপদ! সেক্ষেত্রে মাথা ঘোরা এবং ডায়রিয়ার মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
২| তুলসি পাতায় উপস্থিত Eugenol নামক উপাদানের মাত্রা যদি শরীরে বেড়ে যায়, তা হলে কফের সঙ্গে এবং প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরনোর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩| তুলসি পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা রক্তকে পাতলা করে দেয়। তাই তো বেশি মাত্রায় তুলসি পাতা খেতে বারণ করেন বিশেষজ্ঞরা।
৪| বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে বেশি মাত্রায় তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হয়, যে কারণে ছেলেদের স্পার্ম কাউন্ট কমে যেতে শুরু করে। ফলে বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যার দেখা দিতে পারে। তাই ছেলেদের বেশি মাত্রায় তুলসি পাতা না খাওয়াই উচিত।
১| তুলসি পাতা খেলে নাকি স্মৃতিশক্তি বাড়ে?
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত তুলসি (tulsi) পাতা খেলে স্ট্রেসের মাত্রা কমতে শুরু করে, যে কারণে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। তবে এই নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
২| তুলসি পাতা খেলে নাকি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূরে পালায়?
এই প্রাকৃতিক উপাদনটিতে রয়েছে ফাইবার, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গ্যাস-অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা কমাতেও তুলসি পাতা বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৩| তুলসি পাতা খেলে নাকি আয়ু বাড়ে?
এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, এ এবং নানা সব এসেনশিয়াল তেল, যা শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের খেয়াল রাখে। সেই সঙ্গে রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানগুলিকে শরীর থেকে বের করে দেয়, যে কারণ ছোট-বড় রোগ-ব্যাধি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আয়ু বাড়ে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন
স্বাস্থ্যরক্ষায় কুলেখাড়া পাতার জবাব নেই
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!