অনেকদিন আগে ডিম (egg) নিয়ে একটি সরকারি বিজ্ঞাপন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেখানে বলা হত সোমবার থেকে রবিবার, ভেজে হোক, সেদ্ধ করে হোক বা পোচ করে হোক, প্রতিদিন একটা করে ডিম খাওয়া আবশ্যক। হাসির ছলে গান গেয়ে বললেও, এই কথাটি অত্যন্ত দামি। কারণ ডিম হল পুষ্টিগুণের আধার। একজন গর্ভবতী মা থেকে একজন শিশু বা জে কোনও পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের খাবারে ডিম হল একটি অত্যাবশ্যক খাবার। ডিম ধারণ করে আস্ত একটি প্রাণ। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ছোট্ট একটা ডিমে ঠিক কতটা প্রোটিন থাকতে পারে। তাছাড়া ডিম খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু। আপনি যদি ভেবে থাকেন, একটা করে ডিম খেলে শুধু এর পুষ্টিগুণই আপনার শরীরে প্রবেশ করবে, তা কিন্তু নয়। রূপচর্চার অন্যতম উপাদান হল এই ডিম। চুল (hair) হোক বা ত্বক (skin), ডিম এনে দিতে পারে জেল্লা। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে ডিম নিয়ে দু’চার কথা বলব। জেনে নেব ডিমের উপকারিতা (benefits), পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য কিছু জরুরি তথ্য।
ডিমের পুষ্টিগুণ (Nutrition Facts Of Eggs)
আগেই বলেছি ডিম হল পুষ্টির আধার। এমনকী, আলাদা-আলাদা করে দেখতে গেলে ডিমের সাদা অংশ বা এগ হোয়াইট এবং ডিমের কুসুম বা এগ ইয়কেরও প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে। মজার বিষয় হল ডিম খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। কারণ এতে মাত্র ৭৫ গ্রাম ক্যালোরি আছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ফ্যাট, আয়রন, ভিটামিন, মিনারেলস ও ক্যারোটিনয়েডস আছে প্রচুর। দেখে নেব আলাদা আলাদা করে ডিমের সাদা অংশ ও ডিমের কুসুমের পুষ্টিগুণ।
ডিমের সাদা অংশ বা এগ হোয়াইট (Egg White)
ডিমের সাদা অংশে আছে ৯০ শতাংশ জল আর মাত্র ১০ শতাংশ প্রোটিন। তাই অনেক সময় ডাক্তাররা বলেন শুধু ডিমের সাদা অংশ না খেতে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ডিমের সাদা অংশে ওজন বাড়েনা কিন্তু প্রোটিনের সরবরাহ হয়। এটা খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে, তাই খিদে কম পায়। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাঁদের জন্য এটি খুব ভাল। কারণ এতে মাত্র ১৭ ক্যালোরি আছে।
ডিমের কুসুম বা এগ ইয়ক (Egg Yolk)
ডিমের কুসুমে আছে প্রচুর ভিটামিনস। তবে এর ক্যালোরির পরিমাণও বেশি। কিন্তু যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে বা কোলেস্টরলের সমস্যা আছে তাঁদের ডাক্তাররা ডিমের কুসুম বেশি খেতে বারণ করেন। এতে কোলেস্টরল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। ভিটামিন ছাড়াও এতে আছে সাতটি অতি আবশ্যক খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস ইত্যাদি। তাই যারা দীর্ঘদিন ধরে কোনও অসুখে ভুগছেন বা যাঁদের শরীরে ইমিউনিটি কম তাঁরা ডিমের কুসুম খেতে পারেন।
স্বাস্থ্য রক্ষায় ডিম (Healthy Benefits Of Eggs)
ডাক্তাররা বলেন একজন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ ও মহিলার ডায়েটে প্রতিদিন একটা করে ডিম খাওয়া উচিত। কারণ ডিমে আছে প্রোটিন সহ অন্যান্য জরুরি ভিটামিন আর খনিজ। দেখে নেওয়া যাক স্বাস্থ্য রক্ষায় কীভাবে কাজে আসে ডিম।
১| অসম্ভব পুষ্টিকর (Incredibly Nutritious)
ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ দুই মিলিয়ে অর্থাৎ একটি গোটা ডিম খুব পুষ্টিকর। একটি ডিম খেলে আপনার শরীরে ভিটামিন, খনিজ থেকে শুরু করে প্রোটিন ইত্যাদি সব কিছুই প্রবেশ করবে। এতে রয়েছে সাতটি দরকারি খনিজ এবং ভিটামিন ডি, ই, কে ইত্যাদি। রয়েছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিঙ্ক আর ক্যালসিয়াম।
২| এতে কোলেস্টরল আছে কিন্তু তা রক্তে মেশে না (High In Cholesterol, But Doesn’t Affect In Blood Cholesterol)
ডিমের কুসুমে কোলেস্টরল আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় জে এটি আপনার শরীরে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। কারণ আপনার লিভার এমনিতেই প্রতিদিন কোলেস্টরল উৎপাদন করে। যখন আপনি খাবারে ডিম গ্রহণ করবেন তখন লিভার নিজে থেকেই কোলেস্টরল উৎপাদন কমিয়ে দেবে।
৩| ভালো কোলেস্টরল বা এইচডিএলে মাত্রা বাড়িয়ে দেয় (Raise Good Cholesterol)
এইচডিএল বা হাঁই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন যাকে আমরা ভাল বা গুড কোলেস্টরলও বলি। যাঁদের রক্তে এই এইচডিএলের মাত্রা বেশি থাকে স্বভাবতই তাঁদের হার্টও অনেক বেশি সুস্থ থাকে। ডিম খেলে রক্তে এই ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৪| এতে আছে অতি প্রয়োজনীয় কোলাইন ( Contain Important Nutrient Choline)
কোলাইন (Choline) যে আমাদের জন্য কতটা দরকারি সেটা আমরা অনেকেই জানি না। এটি মস্তিষ্কের কোষের পর্দা বা সেল মেমব্রেন তৈরি করে। আমাদের মস্তিষ্ক যে বিভিন্ন কাজের জন্য আমাদের নির্দেশ দেয় সেই অণু বা মলিকিউলসও তৈরি করে এই কোলাইন।শরীরে কোলাইনের ঘাটতি খুব খারাপ ব্যাপার। তবে ডিমে প্রচুর কোলাইন থাকে।
৫| হার্টের অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখে (Reduce Risk Of Heart Disease)
খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রেখে এটি ভাল কোলেস্টরল বাড়িয়ে দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের অন্যান্য রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।যদিও ডিম খেলে সামান্য হলেও কোলেস্টরল বৃদ্ধি পায়। তবে দেখা গেছে এতে ব্যাড কোলেস্টরল বা এলডিএলের কণার আকার বৃদ্ধি করে যা হার্টের পক্ষে ভাল।
৬| এতে আছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট (Contain Antioxidants)
চোখ ভাল রাখতে হলে ডিমের বিকল্প নেই। কারণ এতে আছে লুটেইন আর জিয়াজ্যান্থিন নামক দুটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা চোখ ভাল রাখে। বয়সের কারণে যারা চোখে কম দেখছেন তাঁদের ডিম খাওয়া উচিত । কারণ ডিমে উপস্থিত এই দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রেটিনা যত্নে রাখে এবং সময়ের আগে ছানি পড়া রোধ করে।
৭| ক্ষতিকর ট্রাই গ্লিসারাইড কম করে (Reduce Triglycerides)
এতে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি যা ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়। এই ট্রাইগ্লিসারাইড যদি বাড়তে থাকে তাহলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ডিম খেলে এই ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
৮| অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি (High In Amino Acids)
এতে আছে সব রকমের দরকারি প্রোটিন এবং সঠিক পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড। একটা গোটা ডিমে ছয় গ্রাম করে প্রোটিন থাকে। যা আমাদের শরীরের বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করে। শুধু তাই নয় প্রতিদিন শরীরে প্রোটিন গেলে ওজন কমে, ব্লাড প্রেসার কমে, হাড় মজবুত হয় পেশী মজবুত হয়।
৯| স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা কমায় (Reduce The Risk Of Stroke)
অনেকেই কোলেস্টরল আছে বলে ডিম খেতে ভয় পান। কিন্তু ডিম খেলে উল্টে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে হার্টের সমস্যা আছে এরকম বেশ কয়েকজন ডিম খেয়েছেন এবং এতে তাঁদের কোনও ক্ষতি হয়নি উল্টে তাঁদের হার্টের অবস্থা অনেক ভাল হয়েছে।
১০| ওজন কমাতে সাহায্য করে ( Helping ose Weight)
ব্রেকফাস্টে যদি আপনি প্রতিদিন একটি করে ডিম খান আপনার ওজন কমবে। কারণ ডিম খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং খিদে কম পায়। অর্থাৎ ডিম আপনার মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে রাখে। ডিমে প্রোটিন আছে কিন্তু ফ্যাট কম আছে। তাই ডিম খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় নেই।
রূপচর্চায় ডিমের উপকারিতা (Beauty Benefits Of Eggs)
আগেই বলেছি ডিম খেলে শুধু যে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় তা কিন্তু নয়। রূপচর্চাতেও ডিমের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। বিশেষ করে ত্বক ও চুলের নানা সমস্যায় এটি দারুণ কাজে দেয়। তাই প্রথমে আমরা জেনে নেব ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রে এটি কীভাবে কাজে লাগে আর তারপর দেখব কীভাবে বিভিন্ন ঘরোয়া ফেসপ্যাক ও হেয়ার মাস্ক ডিম দিয়ে তৈরি করা যায়।
চুলের যত্নে ডিম (Egg For Hair Care)
১| চুলের বৃদ্ধি ঘটায় (Enhances Hair Growth)
চুলের খাদ্য বলতে যা বোঝায় সেই হেয়ার ফুডের যোগান দেয় ডিম। কারণ এতে আছে প্রোটিন আর জরুরি নিউট্রিয়েন্টস। এগুলি চুলে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের বৃদ্ধির গতি বাড়িয়ে দেয়। নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে এই ডিম।
২| চুল পড়া কমায় (Reduces Hair Fall)
চুল পড়া বা হেয়ারফল আমাদের জীবনে একটি বড় সমস্যা। ডিম কিন্তু এই সমস্যার অনেকটাই প্রতিকার করতে সক্ষম। ডিম চুলের গোড়া মজবুত করে। শুধু তাই নয় এটি স্ক্যাল্পে পুষ্টি যোগায় এবং সমৃদ্ধ করে। চুলের গোড়া মজবুত হওয়ার ফলে চুল পড়াও অনেকটাই কমে যায়।
৩| ফ্রিজি চুলকে মোলায়েম করে (Tame Frizzy Hair)
ডিমে যে প্রোটিন আছে তা হল কেরাটিন সমৃদ্ধ। তাই ডিম ফ্রিজি, জট পাকানো চুলকে অনেক বেশি মোলায়েম করে তুলতে পারে। তাছাড়াও এতে আছে ফোলিক অ্যাসিড। এটিও চুল নরম ও স্মুদ করতে অনেকটাই কার্যকরী হয়।
৪| স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে (Controls Oily Scalp)
যাঁদের স্ক্যাল্প তৈলাক্ত তাঁদের চুল সবসময় চিটচিটে আর তেলতেলে থাকে। ডিম স্ক্যাল্প থেকে অতিরিক্ত তেলের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।প্রয়োজনের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ না হলে চুলও আর চিটচিটে দেখায় না।
৫| চুল উজ্জ্বল করে (Add Shine To Hair)
চুলে স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য থাক এটা আমরা সবাই চাই। কারণ নির্জীব প্রাণহীন চুল কেউই পছন্দ করে না। চুলে ঔজ্জ্বল্য বা শাইন আনতে ডিমের জুড়ি নেই। কারণ ডিম হল একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। এতে আছে ভিটামিন বি, যা চুলের টেক্সচার সুন্দর করে চুলে শাইন নিয়ে আসে।
৬| চুলে আর্দ্রতা যোগায় (Acts As Natural Hair Moisturizer)
ডিমে আছে লুটেন। এটি চুলে আর্দ্রতা যোগায়। বিশেষ করে যাঁদের চুল শুষ্ক তাঁদের জন্য এটি খুব কার্যকরী। আর্দ্রতা বাড়িয়ে এটি চুলের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে।
৭| চুল নষ্ট হওয়া রোধ করে (Prevents Damage Hair)
ডিমের কুসুমে আছে লুটেন। আগেই বলেছি এটি চুলে আর্দ্রতা যোগায়। এছাড়াও এর কাজ হল চুল নষ্ট হয়ে যাওয়া রোধ করা। অর্থাৎ চুলের ডগা ফেটে যাওয়া বা মাঝখান থেকে চুল ছিঁড়ে যাওয়া রোধ করে ডিম।
৮| খুসকি নিয়ন্ত্রণ করে (Manages Dandruff)
ডিমের সাদা অংশ স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ক্যাল্পে মৃত কোষ জমতে দেয় না। এর ফলে খুসকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। কারণ এই মৃত কোষ জমেই খুসকি দেখা দেয়। ডিমের সাদা অংশ নারকেল তেলের সঙ্গে ফেটিয়ে নিয়ে মাসাজ করলে খুসকি দূর হয়।
ডিম দিয়ে তৈরি ঘরোয়া হেয়ার মাস্ক (Egg Hair Mask)
১| ডিম, অলিভ অয়েল আর অ্যালোভেরা মাস্ক (Egg Yolk – Olive Oil & Aloe Vera Hair Mask)
একটি পাত্রে ২ থেকে ৩ টেবিল টেবিল চামচ ডিমের কুসুম নিন। এর মধ্যে ৪ থেকে ৫ চামচ অ্যালোভেরা জেল দিন। অলিভ অয়েল হাল্কা গরম করে তাঁর থেকে এক টেবিল চামচ নিয়ে মিশিয়ে দিন। চুলের আগা থেকে গোড়া ভাল করে এটা মাসাজ করুন। তিরিশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক লাগালে চুল মজবুত হবে এবং এটি আপনি মাসে দুবার লাগাতে পারেন।
২| ডিম, মধু ও কলার হেয়ার মাস্ক (Egg – Honey & Banana Hair Mask)
প্রথমে একটা ডিম ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এর মধ্যে একটা কলা চটকে দিয়ে দিন। ৩ টেবিল চামচ দুধ, ৩ টেবিল চামচ মধু আর ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল দিন। সব কিছু ভাল করে মিশিয়ে নিন। স্ক্যাল্প থেকে শুরু করে পুরো চুলে দিন। এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল নরম ও উজ্জ্বল হবে। সপ্তাহে দুদিন এটা লাগাতে পারেন।
৩| ডিম আর দইয়ের কন্ডিশনার (Egg & Yogurt Conditioner)
যারা চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য এটা ভাল। একটা ডিম আর ৩-৪ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে মাস্ক বানিয়ে নিন। একটু লেবুর রসও দিতে পারেন। লেবু স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখে। এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই কন্ডিশনার আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
৪| ফ্রিজি চুলের জন্য ডিম আর মেয়োনিজ মাস্ক (Egg & Mayonnaise Hair Mask For Frizzy Hair)
তিনটে ডিমের কুসুম ভাল করে ফেটিয়ে নিন। তার মধ্যে এক কাপ মেয়োনিজ, হাফ কাপ অলিভ অয়েল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে দিন। ১০ থেকে ২০ মিনিট এই মাস্ক মাথায় রেখে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল অনেক নরম হয়েছে আর জট পড়ছে না। সপ্তাহে দুই থেকে টিন দিন এটা ব্যবহার করা যায়।
৫| তৈলাক্ত চুলের জন্য ডিমের সাদা অংশের মাস্ক (Egg White Hair Mask For Oily Hair)
দুটো ডিমের সাদা অংশ আলাদা করে একটা পাত্রে রাখুন। এর মধ্যে প্রয়োজন মতো নারকেল তেল মেশান। ভাল করে ফেটিয়ে নিন। ভেজা চুলে এই মাস্ক লাগান। আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুলের তেলতেলে ভাব এতে দূর হবে। সপ্তাহে তিনদিন আপনি এটা ব্যবহার করতে পারেন।
৬| খুসকি দূর করতে ডিমের সাদা অংশের মাস্ক (Egg Hair Mask To Get Rid Of Dandruff)
যারা খুব খুশকির সমস্যায় ভোগেন তাঁদের জন্য এই মাস্ক আদর্শ। একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার স্ক্যাল্পে ভাল করে এটা মাসাজ করুন। তিরিশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন হাল্কা গরম জলে। সপ্তাহে তিনবার এটা ব্যবহার করতে পারেন। খুসকি কমে এলে সপ্তাহে দুবার করলে হবে।
ত্বকের যত্নে ডিম (Egg For Skin Care)
১| অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করে (Removes Unwanted Hair)
যারা থ্রেডিং করতে ভয় পান তাঁরা এটা অবশ্যই শুনবেন। ডিমের কুসুমে বা হলুদ অংশে আছে সেই গুণ যা প্রাকৃতিক ওয়াক্সের কাজ করে। এটি অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করতে পারে। অনেকেই টিস্যু পেপারে ডিম লাগিয়ে আপার লিপের লোম অপসারণ করেন।
২| ত্বক টানটান করে (Skin Tightening)
ডিমের সাদা অংশে আছে অ্যাসট্রিনজেন্ট উপাদান। তাই এটি লাগালে ত্বকের ছিদ্র অনেক সঙ্কুচিত হয়ে আসে এবং ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে। ডিমের সঙ্গে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নিলে আরও ভাল ফল পাওয়া যায়।
৩| ত্বকের ছিদ্র ছোট করে (Helps In Tightening Pores)
ডিমের সাদা অংশে আছে অ্যালবুমিন। এটি একটি সরল প্রোটিন যা ত্বকের ছিদ্র সঙ্কুচিত করে দেয়। শুধু তাই নয় ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও ধরে রাখে এই প্রোটিন।
৪| অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে (Reduces Excess Sebum Production)
যেহেতু এটি ত্বকের ছিদ্র ছোট করে দেয় এবং ত্বক টানটান রাখে তাই যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত তাঁদের জন্য এটি খুব ভাল। কারণ ছিদ্র ছোট হয়ে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এর মধ্যে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকে আর্দ্রতা জুগিয়ে ত্বক উজ্জ্বল রাখে।
৫| ব্রণ ও ব্রণর দাগ অপসারিত করে (Removes Acne Scars)
মূলত ত্বকের উপরিভাগ থেকে নিঃসৃত অতিরিক্ত সেবামের জন্যই ব্রণ দেখা দেয়। ডিমের সাদা অংশ এই সেবামের উৎপাদন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা দূর করে। শুধু তাই নয়, ব্রণ শুকিয়ে গেলে যে কালো দাগ দেখা দেয় সেটাও দূর করে ডিম।
৬| ব্ল্যাক হেডস দূর করে (Get Rid Of Blackheads)
ডিম অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বকের ছিদ্র দিয়ে সরাসরি অনেকটা ভিতরে চলে যায়।এতটা ভিতরে যেতে পারে বলেই ডিমের অ্যাসট্রিনজেন্ট উপাদান ব্ল্যাক হেডস বা ত্বকের গভীরের ময়লা ঠেলে এনে ত্বকের উপরিভাগে নিয়ে চলে আসে এববগস এটি অপসারিত করে।
৭| চোখের নীচে ফোলাভাব দূর করে (Reduces Puffiness)
চোখের নীচে আইব্যাগ বা ফোলা পাফি আইজও দূর করতে সক্ষম। এর মধ্যে যে অ্যাসিডিক উপাদান আছে তা চোখের নীচের রক্ত জালিকা সঙ্কুচিত করে ফলে ফোলাভাব কমে যায়। ডিমের সাদা অংশ তর্জনী দিয়ে আলতো করে ঘষলেই ফল পাওয়া যায়।
৮| বলিরেখা নিয়ন্ত্রণ করে (Reduces Wrinkles & Fine Lines)
আগেই আপনারা জেনে গিয়েছেন যে ত্বকের ছিদ্র ছোট করে দেয় ডিম। শুধু তাই নয়, এটি ত্বক টানটানও করে। সুতরাং ত্বকের বলিরেখা নিয়ন্ত্রনেও ডিমের ভূমিকা আছে। এটি এজিং প্রসেসকে অনেক ধীর গতির করে দেয়।
ডিম দিয়ে তৈরি ঘরোয়া ফেসপ্যাক (Homemade Egg Face Packs)
১| ডিম ও লেবুর রসের প্যাক (Egg & Lemon Face Pack)
একটা গোটা ডিম ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এর মধ্যে দিন কয়েক ফোঁটা লেবুর রস। আর দিন এক চা চামচ মধু। লেবুর রস আর মধু ত্বকের অতিরক্ত তেল শুষে নেবে এবং ডিম ত্বকের ছিদ্র ছোট করে দেবে। সপ্তাহে একদিন এই প্যাক আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
২| ডিম আর দইয়ের প্যাক (Egg & Yogurt Face Pack)
একটা গোটা ডিম ভাল করে ফেটিয়ে তার মধ্যে দুই টেবিল চামচ দই দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার এই প্যাক মুখে লাগিয়ে নিন। মিনিট কুড়ি রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকে ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আসবে। তবে খেয়াল রাখবেন যাঁদের ত্বক খুব বেশি শুষ্ক তাঁরা এই প্যাক ব্যবহার করবেন না।
৩| ডিম আর মধুর প্যাক (Egg & Honey Face Pack)
একটা ডিম ভাল করে ফেটিয়ে নিন। তার মধ্যে দুই টেবিল চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে দিন। এবার চুল টাইট করে পিছন দিকে বেঁধে নিয়ে এই প্যাক মুখে লাগান। চুল বাঁধার কথা বলা হল কারণ এই প্যাক চ্যাটচ্যাটে হবে। এটি একটি অ্যান্টি-এজিং প্যাক। এতে ত্বক টানটান হবে। মাসে একবার এই প্যাক আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
৪| চোখের নীচে ফোলাভাব কমানোর প্যাক (Egg Face Pack For Reduce Puffiness)
একটা ডিমের সাদা অংশ ভাল করে ফেটিয়ে নিন। তাতে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে দিন। এবার আঙুলে করে নিয়ে চোখের নীচে ঘষে নিন। মিনিট দশেক রেখে হাল্কা গরম জলে ধুয়ে নিন।
ডিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects Of Eggs)
ডিমের অনেক গুণ আছে ঠিকই কিন্তু এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। সেগুলিও একে একে জেনে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। অনেক সময় অতিরিক্ত ডিম খেলে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এগুলোই ডিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জনিত সমস্যা।
১| ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। অনেক সময় অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরের পক্ষে ভাল হয় না। বিশেষ করে যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে তাঁদের বেশি ডিম না খাওয়াই ভাল।
২| গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে যদি বায়োটিনের ঘাটতি থাকে তাহলে ডিম বেশি না খাওয়াই ভাল। এই বায়োটিন বা ভিটামিন বি ৭ ত্বক, চুল ও নখ ভাল রাখে। ডিম ত্বক থেকে বায়োটিন শুষে নেয়।
৩| অনেকে স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য কাঁচা ডিম দুধে গুলে বা এমনিই খায়। এটা একদমই উচিত নয়। কারণ কাঁচা ডিমে আছে সালমোনেল্লা নামক একটি জীবাণু। যা পেটে গেলে বমি, ডায়রিয়া ও সংক্রমণ হতে পারে।
৪| দমে যে ধরনের প্রোটিন আছে সেটি হল অ্যালবুমিন প্রোটিন। এই জাতীয় প্রোটিন অনেকেরই সহ্য হয় না। ডিম খেলে তাঁদের অ্যালার্জি হয়। সেক্ষেত্রে ডিম এড়িয়ে চলাই ভাল।
ডিম নিয়ে কয়েকটি জরুরি প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
১| প্রশ্ন: প্রতিদিন কি ডিম খাওয়া যায়?
উত্তর: শারীরিক কারণে ডাক্তারের বারণ না থাকলে প্রতিদিন একটা করে ডিম খাওয়া যেতেই পারে।
২| প্রশ্ন: ডিমের সাদা অংশ না ডিমের কুসুম কোনটির গুণ বেশি?
উত্তর: কিছু গুণ ডিমের সাদা অংশে আছে আর কিছু ডিমের কুসুমে। তাই অভাবে আলাদা করে বিচার না করে গোটা ডিম খাওয়াই ভাল।
৩| প্রশ্ন: একটি শিশু দিনে কটা ডিম খেতে পারে?
উত্তর: ডিমে প্রোটিন আছে। আর প্রোটিন ভাঙতে বা হজম হতে সময় লাগে। এক্তির বেশি ডিম শিশুকে না দেওয়াই ভাল।
৪| প্রশ্ন: ভাজা না সেদ্ধ, ডিম কীভাবে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়?
উত্তর: যে কোনও ভাবে খেলেই আপনি ডিমের গুণ পাবেন। তবে ডিম ভাজতে তেল লাগে বলে অনেকেই স্বাস্থ্যের কারণে ভাজা ডিম এড়িয়ে চলেন। আপনি হাফ বয়েল বা ওয়াটার পোচও খেতে পারেন।
৫| প্রশ্ন: ডিম কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর: শুধুমাত্র দিনের পর দিন ডিম খেয়ে গেলে ওজন কমে যাবে, এমনটা ভাববেন না। ডিমে ফ্যাট কম থাকে আর প্রোটিন বেশি। তাই ডিম খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!