সারা দিন দৌড়-ঝাঁপের পরে শরীর এত ক্লান্ত থাকে যে বিছানায় শরীর ঠেকা মাত্র দু’চোখ বুজে আসে। তখন কারও খেয়ালই থাকে না যে শরীরে সোজা আছে না বেঁকে। ফলস্বরূপ ঘুম থেকে ওঠা মাত্র কখনও ঘাড়ে, তো কখনও পিঠে এত ব্যথা হয় যে চোখে জল এসে যায়। কখনও-সখনও তো পেটে যন্ত্রণা এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যাও ঘাড়ে চেপে বসে। স্লিপ (sleeping) পজিশন ঠিক না থাকার কারণে সারা মুখে অসময়ে বলিরেখা প্রকাশ পাওয়া এবং নাক ডাকার মতো সমস্যাও হতে পারে। তাই এই বিষয়টিকে হলকা ভাবে নিলে কিন্তু ভুল করবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে স্লিপ পশ্চার ঠিক না হলে স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea) বা ঘুমজনিত নানা সমস্যা ও দেখা দিতে পারে, যা বেজায় চিন্তার বিষয়। চিন্তার কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের পর ঠিক মতো ঘুম না হলে বেশ কিছু জটিল শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। তাই তো সময় থাকতে-থাকতে সাবধান হওয়াটা একান্ত প্রয়োজন।
শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে ঠিক মতো ঘুমাতে হবে (Sleep Deprivation Effects)
একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে শরীরকে সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াটা যতটা জরুরি, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ঠিক ঘুমানোটাও। কারণ, ঘুমানোর সময় শরীর তার ক্ষতের চিকিৎসা করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্রেন ফাংশন যাতে ঠিক মতো চলে, সেই সংক্রান্ত নানা কাজকর্মও হয়ে থাকে। তাই ঠিক মতো ঘুম না হলে এই সব কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে ছোট-বড় নানা সব রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। বিশেষ করে…
১| ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ে (Leads To Weight Gain)
একাধিক স্টাডির পরে একথা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে দৈনিক সাত-আট ধন্টা ঘুম না হলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রায় ৮৯ শতাংশ বেড়ে যায়। কারণ, সেক্ষেত্রে ghrelin এবং leptin নামে দুটি হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মতো হয় না, যে কারণে ক্ষিদে খুব বেড়ে যায়। ফলে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরির প্রবেশ ঘটার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে সময় লাগে না। আর একবার ওজন বাড়তে শুরু করলে হার্টের ক্ষমতা যেমন কমে, তেমনই উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল এবং হাই প্রেসারের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই বুঝতেই পারছেন, ঘুমের কোটা পূরণ হওয়াটা কতটা জরুরি। আর সেই কারণেই তো ঘুমানোর সময় বডি পশ্চার যাতে ঠিক থাকে, সেদিকে নজর রাখাটা একান্ত প্রয়োজন।
২| ব্রেন পাওয়ার কমে যায় (Can Reduce Your Brain Power)
দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে ব্রেন ফাংশনে ব্যাঘাত ঘটে, যে কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি মনোযোগ ক্ষমতা কমে যাওয়া মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। কমে শারীরিক ক্ষমতাও। এই কারণেই তো দৈনিক সাত-আট ঘন্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
৩| হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে (Risk Of Heart Disease/Stroke)
এক-দুটো নয়, প্রায় পনেরোটা স্টাডিতে দেখা গেছে ঠিক মতো ঘুম না হলে হার্টের এতটাই ক্ষতি হয় কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এমনকী, ncbi-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি স্টাডিতে দেখা গেছে ঘুমের সঙ্গে স্ট্রোকেরও সম্পর্ক রয়েছে। তাই তো বলি, অসময়ে নানা জটিল রোগের খপ্পরে পড়তে না চাইলে স্লিপ পজিশনের দিকে নজর ফেরান, সেই সঙ্গে নিয়মিত সাত ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন, তা হলেই আর কোনও চিন্তা থাকবে না।
৪| রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় (Rise In Blood Sugar Level)
অল্প বয়সেই ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগের খপ্পরে পড়তে চান না নিশ্চয়? তাহলে ঠিক মতো ঘুমচ্ছেন না কেন! বেশ কিছু স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে মাত্র ছ’দিন ঠিক মতো না ঘুমালেই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে শুরু করে, সে সময় যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না যায়, তাহলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল, ঘুমের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? টানা কয়েকদিন ছয়-সাত ঘন্টা ঘুম না হলে insulin sensitivity কমতে শুরু করে, যে কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৫| মানসিক অবসাদের প্রকোপ বাড়ে (Can Lead To Mental Exhaustion)
২০১৮ সালে প্রকাশিত National Care Of Medical Health-এর রিপোর্ট অনুসারে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬.৫ শতাংশ, মানসিক অবসাদ সহ নানা ধরনের মেন্টাল ডিসঅর্ডারের শিকার। সেই দলে যদি নাম লেখাতে না চান, তাহলে ঘুমের দিকে নজর ফেরান। কারণ, দিনের পর দিন ঠিক মতে ঘুম না হলে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সঙ্গে স্ট্রেস লেভেলও বাড়ে। তাই সুখে-শান্তিতে যদি বাঁচতে হয়, তাহলে নিয়মিত সাত-আট ঘন্টার ঘুম জরুরি।
৬| দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে (Effects Your Immune System)
ঘুমানোর সময় শরীর তার ক্ষতের চিকিৎসা করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কীভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়, সেই কাজও সমান তালে চলতে থাকে। তাই তো কম করে সাত ঘন্টা না ঘুমলে এই সব কাজ ঠিক মতো সম্পন্ন হয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহের ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে পড়ে, যে কারণে ছোট-বড় নানা রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা প্রায় তিন গুণ বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে নানা সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও থাকে।
৭| অসময়ে ত্বক বুড়িয়ে যায় (Premature Aging)
দিন সাতেক ঠিক মতো ঘুম না হলেই তার প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকের উপরে। আর যদি দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হয়, তাহলে শিরে সংক্রান্তি। কারণ, সেক্ষেত্রে অসময়ে বলিরেখা প্রকাশ পাওয়ার কারণে ত্বকের সৌন্দর্য কমে যায়। লেজুড় হয় ডার্ক সার্কেল এবং puffy eyes-এর মতো সমস্যাও। তাই তো ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে নিয়মিত সাত-আট ঘন্টা ঘুমাতেই হবে। তার থেকে কম হলেই বিপদ!
স্লিপ পজিশনকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় কেন? (Why Are Sleeping Positions So Important?)
শরীরকে সুস্থ রাখতে কম করে সাত ঘন্টা তো ঘুমতেই হবে। আর এতটা সময় শরীরের পজিশন যদি ঠিক না থাকে, তাহলে মেরুদণ্ডের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে, যে কারণে ঘুম থেকে ওঠা মাত্র ঘাড়ে, কাঁধে এবং পিঠে অসহ্য যন্ত্রণা হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কাও থাকে। ফলে টানা ঘুম না হওয়ার কারণে শরীরের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। তাই তো স্লিপ পজিশনের দিকে নজর ফেরানোটাও একান্ত প্রয়োজন।
শরীরকে সুস্থ রাখতে এই সব স্লিপ পজিশনে শোয়া উচিত (Healthy Sleeping Positions)
দীর্ঘ গবেষণার পরে বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু স্লিপ পজিশনকে মান্যতা দিয়েছেন, যা অনিদ্রার মতো সমস্যাকে দূরে রাখতে যেমন বিশেষ ভূমিকা নেয়, তেমনই শিরদাঁড়ার যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে দিকেও নজর রাখে। শুধু তাই নয়, এইসব স্লিপ পজিশনে শুলে ছোট-বড় একাধিক রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। এখন প্রশ্ন হল, এত সব উপকার পেতে কোন কোন পজিশনে শোয়া উচিত, সে সম্পর্কে জানা আছে কি?
১| পিঠের উপর ভর দিয়ে শোওয়া (Back Position)
চিত হয়ে শোয়ার উপকারীতা অনেক। কারণ, বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে শুলে মাথা, ঘাড় এবং শিরদাঁড়া স্বাভাবিক পজিশনে থাকে, যে কারণে পিঠে-ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা কমে। এমনকী, acid reflux-এর মতো সমস্যার খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও আর থাকে না। সেই সঙ্গে অসময়ে বলিরেখা প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়। কারণ, চিত হয়ে শুলে বিছানা এবং বালিশের সঙ্গে মুখের ঘর্ষণ হয় কম। ফলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। এমন পজিশনে শোয়ার সময় হাঁটুর নিচে একটা বালিশ রাখলে আরও উপকার মেলে। সেক্ষেত্রে কোমরের উপর চাপ পরে কম। ফলে পিঠে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা কমে।
২| পাশ ফিরে শোওয়া (Side Position)
বাঁ বা ডান পাশে ফিরে শুলে শিরদাঁড়ার উপর কম চাপ পরে। ফলে পিঠে, ঘাড়ে এবং কাঁধে যন্ত্রণা হওয়ার মতো সমস্যা দূরে থাকতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে acid reflux-এর প্রকোপও কমে। পাশ ফিরে শোয়ার সময় দুই হাঁটুর মাঝে যদি কোলবালিশ রাখতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে শিরদাঁড়ায় চোট লাগার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। সাইড পজিশনে শুলে এত উপকার পাওয়া যায় বলেই গর্ভবতী মহিলাদের এই পশ্চারে শোওয়ার পরামর্শ দেন গাইনোকলজিস্ট।
৩| ফেটাল পজিশন (Fetal Position)
ডান বা বাঁ দিকে ফিরে হাঁটু দুটো ভাঁজ করে বুকের কাছে এনে শুলে তাকে চিকিৎসা পরিভাষায় ফেটাল পজিশন বলা হয়ে থাকে। একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে দশ জনের মধ্যে প্রায় চার জন মহিলা এইভাবে শুতে পছন্দ করেন। আর মজার বিষয় হল ফেটাল পজিশনে শুলে নানা উপকারও পাওয়া যায়। বিশেষ করে স্পাইনাল কর্ডে চাপ পড়ার আশঙ্কা আর থাকে না। সেই সঙ্গে নাক ডাকাও বন্ধ হয়ে যায়। এমনকী, এই ভাবে শুলে নাকি অ্যালঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। কিন্তু প্রশ্ন হল, স্লিপ পজিশনের সঙ্গে মস্তিষ্কের ভাল-মন্দের সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? বেশ কিছু অ্যানিমেল স্টাডির পরে বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছে ফেটাল পজিশনে শুলে নাকি মস্তিক আরও দ্রুত কাজ করে, যে কারণে এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় বাঁদিকে ফিরে ফেটাল পজিশনে শুলে ফিটাসে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে বাচ্চার কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
৪| উপুড় হয়ে শোয়া (Stomach Position)
নাক ডাকা বন্ধ করতে এই ভাবে শোয়া যেতেই পারে। কিন্তু গবেষণা বলছে উপুড় হয়ে শোয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ, এই ভাবে শুলে হয় ডান দিকে, নয়তো বাঁদিকে মুখ ফিরিয়ে শুতে হয়, যে কারণে মেরুদণ্ড এবং জয়েন্টের উপরে মারাত্মক চাপ পরে। ফলে সকালে ঘুম ভাঙা মাত্র ঘাড়ে এবং পিঠে মারাত্মক ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। সেই সঙ্গে স্পাইনাল নার্ভের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয় যায় না। তাই তো স্টমাক পজিশনে শুতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।
৫| লগ পজিশন (Log Position)
পাশ ফিরে শোয়ার সময় পা’দুটো যদি একেবারে সোজা থাকে, আর হাত থাকে থাইয়ের উপরে, তাহলে সেই পজিশনকে ‘লগ পজিশন’ বলা হয়। প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ এইভাবে শুতে ভালবাসেন। এই ভাবে শুলে শিরদাঁড়ার উপর কম চাপ পরে। ফলে পিঠে-ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। শুধু তাই নয়, লগ পজিশনে শুলে sleep apnea-এর মতো সমস্যাও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে ঠিক মতো ঘুমানোর কারণে নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়। এই ভাবে শোয়ার সময় হাঁটুর মাঝে একটা পাতলা বালিশ বা চাদর ভাঁজ করে রাখলে hip-এর উপর অযাচিত চাপ পড়ার আশঙ্কাও আর থাকে না।
৬| ফ্রি ফল (Free-Fall Position)
উপুড় হয়ে হাত দুটো বালিশের নিচে রেখে শুতে অনেকেই বেশ পছন্দ করেন। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এই ভাবে শোয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ, ফ্রি ফল পজিশনে শুলে পিঠের নিচের অংশ এবং ঘাড়ে মারাত্মক চাপ পরে, যে কারণে ঘুম থেকে ওঠার পরে শরীরের এই অংশে মারাত্মক যন্ত্রণা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া ঘুমনোর সময় পেটে চাপ পরাও ঠিক নয়, তাই তো এই পজিশনে শুতে মানা করেন বিশেষজ্ঞরা।
৭| স্টারফিশ (Starfish Position)
চিত হয়ে শোয়ার সময় হাত দুটো যখন মাথার দু’পাশে থাকে এবং দু’পায়ের মাঝে অনেকটা ফাঁক থাকে, তখন সেই স্লিপ পজিশনকে ‘স্টারফিশ পজিশন’ বলা হয়ে থাকে। এই ভাবে শুলে ঘুমনোর সময় acid reflux-এর মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। কিন্তু বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে স্টারফিশ পজিশনে ঘুমলে নাক ডাকার আশঙ্কা যেমন থাকে, তেমনই sleep apnea-এর মতো সমস্যাও ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। তাই সম্ভব হলে এমন স্লিপ পজিশনে না শোয়াই বাঞ্ছনীয়।
মাথার বালিশ কেনার সময় মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি (Tips To Consider When Buying A Pillow)
১| আপনি কেমন ভাবে শুতে ভালবাসেন, তার উপর কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করে থাকে। যেমন ধরুন, যাঁরা উপুড় হয়ে শুতে ভালবাসেন, তাঁদের নরম এবং ফ্ল্যাট মাথার বালিশ কেনা উচিত। তাতে ঘুমনোর সময় আরাম পাবেন। অন্যদিকে যাঁরা চিত হয়ে অথবা পাশ ফিরে ঘুমান, তাঁদের মোটা বালিশ কেনা উচিত। তাতে ঘাড়ের উপর অযাচিত চাপ পরে না। ফলে ঘুম থেকে ওঠার পরে পিঠে-ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
২| বালিশের পেটে কেমন উপাদান ঠাসা রয়েছে, তাও একবার দেখা নেওয়া উচিত। কারণ, অনেকেরই তুলো থেকে অ্যালার্জি হয়। তাই ভুল করে তুলোর বালিশ কিনে ফেললে কিন্তু মুশকিল। আজকাল তুলো ছাড়াও আরও নানা ধরনের বালিশ কিনতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে থেকে পছন্দ মতো কোনও একটা বেছে নিতে হবে। feather pillow নামে আজকাল এক ধরনের বালিশ কিনতে পাওয়া যায়। এটা বেশ টেকসই এবং শুয়েও বেশ আরাম পাওয়া যায়।
৩| যাঁরা কথায় কথায় অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের wool বা cotton pillow কেনা উচিত। কারণ, এই ধরনের বালিশে ধুলো জমতে পারে না। ফলে ঘুমানোর সময় অ্যালার্জির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা কমে। তবে যাঁরা স্টমাক পজিশনে ঘুমতে ভালবাসেন, তাঁদের এমন বালিশ না কেনাই উচিত।
৪| যঁদের ঘাড়ে অথবা কাঁধে কোনও সমস্যা রয়েছে, তাঁরা তুলোর বালিশের পরিবর্তে foam pillow ব্যবহার করতে পারেন, তাতে উপকার পাবেন। তবে একটা জিনিস জেনে রাখা ভাল যে এই ধরনের বালিশ থেকে এক ধরনের গন্ধ বের হয়, যা আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। তাই কেনার আগে ভাল করে দেখে-বুঝে নেবেন।
৫| আমাদের রাজ্যে বছরের বেশিরভাগ সময়ই যেহেতু গরম থাকে, তাই বালিশে সুতির কভার ব্যবহার করা উচিত। তাতে ঘুমনোর সময় গরম লাগবে কম। এ কথা ঠিক যে সিল্কের কভার দেখতে খুব সুন্দর লাগে। কিন্তু শেগুলি কতটা আরাম দায়ক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই গরমকালে ভুলেও মাথার বালিশে সিল্কের কভার পরাতে যাবেন না যেন!
ম্যাট্রেস কেনার সময় খেয়াল রাখুন এই বিষয়গুলি (Tips For Buying A New Mattress)
১| আরামটাই যাঁদের কাছে শেষ কথা, তাঁরা memory foam দিয়ে তৈরি ম্যাট্রেস কিনতে ভুলবেন না যেন!
২| আজকাল ল্যাটেক্স ফোম দিয়েও এক ধরনের ম্যাট্রেস তৈরি হচ্ছে, যা বেশ আরামদায়ক। বিশেষ করে যাঁদের একটু গরম বেশি লাগে, তাঁদের এই ধরনের ম্যাট্রেস ব্যবহার করা উচিত। তবে ল্যাটেক্স ম্যাট্রেস খুব বাউন্স করে। তাই কেনার আগে এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন।
৩| যাঁরা স্প্রিং ম্যাট্রেস পছন্দ করেন, তাঁরা Coil ম্যাট্রেস কিনলে ঠকবেন না।
৪| আপনি কি নরম গোদিতে শুতে পছন্দ করেন? তাহলে তো আপনার প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত পিলো-টপ ম্যাট্রেস। কারণ, এমন ধরনের গোদি যেমন নরম হয়, তেমনই আরামদায়কও বটে।
৫| স্প্রিং, বাউন্স এবং সাপোর্ট, যাঁরা এই তিনটেই চান, তাঁরা হাইব্রিড ম্যাট্রেস কিনতে পারেন।
৬| যাঁদের প্রায়ই পিঠে ব্যথা হয়, তাঁরা স্প্রিং, নয়তো ফোম ম্যাট্রেস কিনতে পারেন। আজকাল বেশ কিছু ম্যাট্রেস Orthopedic feature থাকে। এই ধরনের গোদি ব্যবহার করলেও কিন্তু আরাম মিলবে।
সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর (FAQs)
১| আট ঘন্টার বেশি ঘুমানো কি ঠিক নয়?
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে সাত ঘন্টার কম ঘুমনো যেমন ঠিক নয়, তেমনি দিনের পর দিন আট ঘন্টার বেশি সময় ঘুমালেও শরীরে নানা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তো দৈনিক সাত-আট ঘন্টার বেশি না ঘুমানোই শ্রেয়।
২| কোন দিকে ফিরে শোয়া উচিত?
ডান দিকে ফিরে শুলে acid reflux-এর মতো সমস্যা হতে পারে। তাই বাঁ পাশ ফিরে শোয়াই নিরাপদের।
৩| মাথার বালিশ ব্যবহার না করলে কী কোনও ক্ষতি হতে পারে?
এক্কেবারেই নয়! বরং বেশি কিছু উপকার মেলে। যেমন ধরুন, বালিশ ছাড়া শুলে ঘাড় এবং পিঠের ব্যথা কমে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে ইনসমনিয়ার মতো সমস্যাও দূরে পালায়। তাই ইচ্ছা হলে কয়েক দিন বালিশ ছাড়া শুয়ে দেখতে পারেন, তাতে যে নানা উপকার পাবেন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!