শপিংয়ে গিয়ে ফ্যাশনেবল ড্রেস ফিট না হওয়ার দুঃখে জিমের খাতায় নাম তো অনেকেই লেখান। কিন্তু ন'টা-ছ'টার অফিস আর ঘর-সংসার সামলানোর পরে শরীর-মনের এমন নয়-ছয় অবস্থা হয় যে সিংহভাগেরই নিয়মিত জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানোর ইচ্ছে আর থাকে না। ফলে দুগ্গা মায়ের আসার আগে ওজন কমানোর ধনুকভাঙা পণ করলেও তা স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়। অগত্যা ছোট্ট ভুঁড়িটা লুকাতে ঢিলেঢালা পোশাক পরা ছাড়া আর কোনও গতি থাকে না। তাতে ম্যাডক্স স্কোয়্যারের পুজোয় ফ্যাশনিস্তাদের আড্ডায় 'ফেস লস' হওয়ার চক্করে আপনাদের অনেকেরই যে মনের কোলে দুঃখের মেঘ জমে, সে খবর রাখি আমরাও। তাই তো এবছর আর এমন ঘঠনা ঘটবে না। বরং পুজোর (Durga Puja) আগে ওজন তো কমবেই, সঙ্গে হালফিলের পোশাক পরার ইচ্ছেও ষোলো আনা পূরণ হবে। ভাববেন না, মশকরা করছি! কারণ, এই ফিটনেস টিপসগুলি মানলে ঘর-সংসার এবং অফিস সামলেও কিন্তু দিন কুড়ির মধ্যে কিলোখানেক ওজন (weight) ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব!
ওজন কমানোর একটা সহজ ফর্মুলা রয়েছে। কী ফর্মুলা? শরীরে ক্যালরির প্রবেশ যাতে কম করে হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। আর যে পরিমাণ ক্যালরি ঢুকছে, তার থেকে বেশি ঝরাতে হবে, তাহলেই ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আর ঠিক এই কারণেই একেবারে প্রথমেই ডায়েটের দিকে নজর ফেরানোটা জরুরি। তাই তো আগামী কুড়ি-পঁচিশ দিন লুচি, সিঙারা এবং কচুরির মতো ভাজাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। মিষ্টি খাওয়াও চলবে না। ভাত-রুটির মতো সিম্পল কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। বেশি করে খেতে হবে প্রোটিন, ফাইবার এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার, তাতে ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদা তো মিটবেই, সেই সঙ্গে খিদেও কমবে। ফলে কম পরিমাণে খাওয়ার কারণে ওজন বাড়ার আশঙ্কা আর থাকবে না। এক্ষেত্রে আরও কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন ধরুন, সকাল আটটার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সেরে ফেলতে হবে। আর তার তিন ঘণ্টা পরে অল্প করে ছোলা, নয়তো ডাবের জল খেতে হবে। এর সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে লাঞ্চ। চেষ্টা করবেন, একটা-দেড়টার মধ্যে দুপুরের খাবার খেয়ে ফেলতে। বিকালের দিকে অল্প করে ছোলা, নয়তো ভুট্টা, সঙ্গে এক কাপ গ্রিন টি পান মাস্ট। আর রাতের খাবার সন্ধে সাতটার মধ্যে সেরে ফেলবেন। যদি রাতের দিকে খিদে পায়, তা হলে অল্প করে ছানা খেতে পারেন। এই সব নিয়মগুলি মানলে ওজন কমতে সময় লাগবে না। তবে ডায়েটিংয়ের পাশাপাশি নিয়ম করে কিছু এক্সারসাইজও করতে হবে। তবেই কিন্তু ১০০ শতাংশ ফল মিলবে।
বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, হজম ক্ষমতা ঠিক থাকলেও কিন্তু চটজলদি ওজন কমে যায়। তাই প্রতিদিন ফাইবার সমৃদ্ধ ফল বা সবজি খেতে হবে। তাতে মেটাবলিক রেটের উন্নতি ঘটার কারণে ফ্যাট বার্নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। ফলে ওজন কমতে শুরু করবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পুজোর আগে 'টোনড' বডি পাওয়ার ইচ্ছে থাকলে দিনে তিন-চার লিটার জল খেতে ভুলবেন না যেন! জলের সঙ্গে ওজন কমার কী সম্পর্ক? কম পরিমাণে জল খেলে শরীরে ওয়াটার রিটেনশন হয়। সেই কারণেও কিন্তু সহজে ওজন কমতে চায় না। তাই শরীরে যাতে জলের ঘাটতি না হয়, সেদিকে নজর রাখাটা জরুরি।
দ্রুত ওজন কমাতে ডায়েটিং-এর পাশাপাশি নিয়মিত এক্সারসাইজ করাটাও জরুরি। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না জিমে যেতে হবে। বরং অফিসে যাওয়া-আসার সময়, এমনকী, কাজ করতে-করতেও মেদ ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব! কীভাবে তাই ভাবছেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সিঁড়ি ভাঙতে হবে
এবার থেকে লিফ্ট নয়, যতবারই উপর-নিচ করবেন, ততবারই সিঁড়ি ব্যবহার করুন। তাতে কী লাভ হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে মাত্র চব্বিশটা সিঁড়ি ভাঙলেই কম-বেশি প্রায় ১০ ক্যালরি বার্ন হয়, তাহলে একবার ভাবুন, দু'তলা বা তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠলে কতটাই না ক্যালরি বার্ন হবে! তাই ওজন কমানোর যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে লিফ্টের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনও গতি নেই।
হাঁটাহাঁটি
বাড়ি থেকে অফিসের দূরত্ব যদি চার-পাঁচ কিলোমিটার হয়, তাহলে নিয়মিত হেঁটে অফিস যেতে হবে। ফেরার সময়ও বাস-অঠো নিলে চলবে না। নিয়মিত এই পরিমাণ হাঁটলে যে কোনও ফ্যাশনেবল ড্রেসেই যে আপনি ফিট হয়ে যাবেন, তা হলফ করে বলতে পারি। কারণ, ওজন কমাতে হাঁটার কোনও বিকল্প নেই। আর যদি দিনে মিনিট কুড়ি হাঁটতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই! তবে যাঁদের অফিস বাড়ি থেকে দূরে, তাঁদের হেঁটে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাড়ি ফিরে একটু হাঁটাহাঁটি করতে ভুলবেন না যেন!
চেয়ার স্কোয়াট
সারা দিন তো বসে বসে কাজ, তাহলে ক্যালরি বার্ন হবে কীভাবে? এই চিন্তায় যাঁদের কপালে ভাঁজ পরেছে, তাঁদের জন্য সুখবর। এবার থেকে কাজের ফাঁকে মিনিটদশেক করে বার পাঁচেক স্কোয়াট এক্সারসাইজটি করুন। দেখবেন, উপকার পাবেই পাবেন। কীভাবে করতে হবে এই ব্যায়ামটা? চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় সোজা হয়ে দাঁড়ান। তারপরে আবার বসে পরুন। এইভাবে পঞ্চাশ বার ওঠা-বসা করার পরে কাজ শুরু করে দিন। প্রথম প্রথম এক্সারসাইজটি করার সময় চেয়ারে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু দিন কয়েক পর থেকে চেয়ারে না বসে, চেয়ার থেকে এক ইঞ্চি নিচে এসে, এই পজিশনে কয়েক সেকেন্ড থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। অর্থাৎ গোদা বংলায় যাকে ডন বৈঠক বলে, সেটাই করতে হবে। তাতে আরও বেশি মাত্রায় ক্যালরি ঝরবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্কোয়াটের পাশাপাশি নিয়মিত যদি চার সেট করে প্ল্যাঙ্ক এক্সারসাইজটা করতে পারেন, তাহলে পেটের মেদ চটজলদি ঝরে যাবে।
প্রতি ঘণ্টায় চেয়ার ছেড়ে উঠতে হবে
ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করে গেলে কিন্তু ওজন কমতে সময় লাগবে। তাই তো ডায়েটিং এবং এক্সারসাইজের পাশাপাশি আর একটা কাজ নিয়মিত করতে হবে। তা হল, প্রতি ঘণ্টায় একবার করে চেয়ার থেকে উঠে মিনিটপাঁচেক একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে। তাতে দুটো উপকার মিলবে। এক তো জয়েন্টের সচলতা বাড়বে। সেই সঙ্গে অল্প পরিমাণে হলেও ক্যালরি বার্ন হবে। পাশাপাশি পায়ের পেশির ক্ষমতাও বাড়বে।
চেয়ার বসে জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে
কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই নাক দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়বেন। মিনিটপাঁচেক এমনটা করলে স্ট্রেস লেভেল তো কমবেই, সেই সঙ্গে ব্লাড প্রসারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। শুধু তাই নয় এমন Deep breathing এক্সারসাইজ করলে পেটের মেদ ঝরতেও সময় লাগে না। সেই সঙ্গে পেটের পেশির গঠনও সুন্দর হয়।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!