দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল…ছোটবেলার সেই কবিতার কথা মনে আছে আপনাদের? বাঙালি হেঁশেলে কিন্তু মুসুর (masoor) ডালের (dal) খুব কদর। বাড়িতে কিছু না থাকলে গরম-গরম ডাল আর আলুসেদ্ধ দিয়েই ভাত খেয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু এ তো গেল পেটপুজোর কথা। এই মুসুর ডাল যে ত্বকের যত্নে কাজে আসে সেটা জানেন কি? হয়তো কেউ-কেউ জানেন। কারণ, তাঁরা ছোটবেলায় দেখেছেন বাড়ির মহিলারা দুপুরবেলা মুসুর ডাল বেটে মুখে লাগাচ্ছেন। অনেক আগে বাঙালি বাড়িতে মেয়ের বিয়ে ঠিক হলেই তাঁকেও যত্ন করে মুসুর ডাল বেটে লাগিয়ে দিতেন তাঁর আত্মীয়রা। তখন তো আর এত পার্লারে যাওয়ার চল ছিল না। তাই ত্বকে উজ্জ্বল আভা আনতে মুসুর ডালই ছিল ভরসা। এর থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট হল যে, মুসুর ডালের এমন কিছু গুণ আছে যা ত্বকের যত্নে কাজে দেয়। আজ এই নিয়েই আমাদের প্রতিবেদন। সকলের বাড়িতেই মুসুর ডাল থাকে। সুতরাং সেটা দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নেওয়া কোনও ব্যাপার নয়।
Table of Contents
আরও পড়ুনঃ ছোলার ডালের নানা উপকারিতা
ত্বকের যত্নে মুসুর ডালের উপকারিতা (Masoor Dal for Skin Benefits)
মুসুর ডাল খেতে যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনই ত্বকের যত্নে এর অনেক উপকারিতা আছে। তবে এই ডালের প্যাক আপনি কেন ব্যবহার করবেন সেটা আপনার জেনে নেওয়া উচিত। না জেনে একটি উপাদান কেন আপনি আপনার রূপচর্চায় ব্যবহার করবেন। তাই এই অংশে আলোচনা করা হল মুসুর ডালের উপকারিতা নিয়ে বিশেষ করে ত্বকের যত্নে এই ডাল কীভাবে কাজে দেয় সেটা জানাই মূল উদ্দেশ্য।
মুসুর ডাল কিনতে এখানে ক্লিক করুন
১| এর মধ্যে আছে অ্যান্টি এজিং উপাদান (Rich In Anti-Ageing Properties)
মুসুর ডালে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আর প্রোটিন। এগুলো ফেসপ্যাকের মাধ্যমে ত্বকে প্রবেশ করে এবং ত্বকের টিসুকে সজীব রাখে। তাই সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক অনেক বেশি টানটান হয় এবং বলিরেখা অনেক কম পড়ে।
২| ত্বকে সামঞ্জস্য আনে (Clear Spots and Blemishes)
অনেক সময় আমাদের স্কিন টোনের সামঞ্জস্য হারিয়ে যায়। দেখা দেয় দাগছোপ বা ডার্ক স্পট। আবার মুখের রঙের সঙ্গে হাত পায়ের রং ম্যাচ করে না। মুসুর ডালের সঙ্গে গোলাপ জল আর হলুদ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগালে এই সমস্যা দূর হবে। এই তিনটি উপাদানের মিলিত প্রভাবে দাগছোপ দূর হবে এবং ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল হবে।
৩| ট্যান রিমুভ করে (Acts as a Natural Tan Removal)
রোদে পুড়ে ট্যানড হয়ে গেছেন নাকি খুব সম্প্রতি সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে এসেছেন। রোদ লেগে ত্বকের একদম দফারফা অবস্থা। কোথাও সাদা আবার কোথাও কালো ছোপ সব মিলিয়ে মোটেই ভাল অবস্থা নয়। সাহায্য নিন মুসুর ডালের। এতে আছে ভিটামিন বি ১, ভিটামিন কে আর ভিটামিন এ। এই ভিটামিনগুলো ত্বকের ট্যান রিমুভ করতে সাহায্য করে। তার সঙ্গে ত্বকে পুষ্টিও যোগায়। মুসুর ডালের সঙ্গে একটু টমেটো মিশিয়ে ত্বকে লাগালে দূর হবে আপনার ট্যান।
৪| শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা যোগায় (Moisturizes Dry Skin)
যাঁদের ত্বক শুষ্ক, তাঁদের জন্য আশীর্বাদের মতো এই মুসুর ডাল। অনেকে মনে করেন, এই ডাল ত্বক আরও শুষ্ক করে দেয়। আসলে কিন্তু বিষয়টি একদমই তা নয়। দুধের সঙ্গে মুসুর ডাল বাটা মিশিয়ে যদি প্রতিদিন মাখেন তাহলে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা অনেকটাই দূর হবে। শুধু তাই নয় ত্বক হবে আগের চেয়ে অনেক বেশি নরম ও পেলব।
৫| অবাঞ্ছিত লোম তুলতে সাহায্য করে (Removes Unwanted Hair)
অনেকেই থ্রেডিং করাতে ভয় পান ব্যথা লাগবে বলে। মুসুর ডাল কিন্তু মুশকিল আসান হতে পারে। মুসুর ডালের প্যাক লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার পর আলতো করে ঘষলে ছোট ছোট লোম উঠে আসে। এতে এক ঢিলে দুই পাখি হয়। লোমও উঠে যায় আবার ত্বকও অনেক নরম হয়ে যায়।
৬| ত্বক টানটান করে (Tightens The Skin)
মুসুর ডালে আছে পটাশিয়াম, আয়রনসহ অন্যান্য উপকারি যৌগ। এগুলো ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে ত্বককে র্যা ডিক্যালমুক্ত করে। ত্বকে পুষ্টি জুগিয়ে দূষণ থেকে রক্ষা করে। তাই মুসুর ডালের প্যাক মুখে লাগালে ত্বক অনেক বেশি টানটান ও তরুণ দেখায়।
বাড়িতে তৈরি করুন মুসুর ডালের প্যাক (Homemade Masoor Dal Face Pack)
মুসুর ডালের প্যাক এমনিতেই ত্বকের জন্য ভাল। তাই মোটামুটিভাবে ত্বক যত্ন রাখতে এই ডাল আপনি বেটে মুখে লাগাতে পারে। অনেকে এই ডাল ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করে রেখে দেন। যাতে মাঝে মাঝে রূপচর্চায় ব্যবহার করতে পারেন। তবে ত্বকের প্রকার অনুযায়ী ফেসপ্যাকেও কিছু পরিবর্তন থাকবে। মূল উপাদান মুসুর ডাল হলেও অন্য উপাদানে তারতম্য থাকবে।
১| সব রকমের কাজে আসবে এই ‘অলরাউন্ডার ফেসপ্যাক (All Round Face Pack)
এই প্যাক সব রকমের ত্বকে এবং সব কাজে ব্যবহার করা যাবে। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে অ্যাকনে প্রতিরোধ করবে, ত্বকে উজ্বল আভা আনবে এবং ট্যান দূর করবে। এই প্যাক তৈরি করার জন্য আগের দিন রাত্রে মুসুর ডাল ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। পরের দিন সেটা বেটে নিয়ে তাঁর মধ্যে ১/৩ কাপ কাঁচা দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। মুখে চক্রাকার মোশনে এটা লাগাতে হবে। কুড়ি মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
২| প্রতিদিনের ফেসওয়াশ হিসেবে মুসুর ডালের প্যাক (Acts as a Daily Face Wash)
এক টেবিল চামচ মুসুর ডালের পাউডার বা পেস্ট তার সঙ্গে দুই টেবিল চামচ দুধ আর এক চিমটে হলুদ ও কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। দুই মিনিট মতো রেখে হাল্কা স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকও রোজ ব্যবহার করা যাবে। এটা আসলে একটা ফেসওয়াশের মতো। তবে যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় তাহলে নারকেল তেল ব্যবহার করবেন না।
৩| ত্বক উজ্জ্বল রাখার জন্য ফেসপ্যাক (Masoor Dal for Skin Brightening)
যাঁদের ত্বক শুষ্ক তাঁদের এই প্যাক খুব কাজে দেবে। এই প্যাক ত্বক উজ্জ্বল করবে এবং মুখে কালো দাগছোপ থাকলে সেটা দূর করবে। ৫০ গ্রাম মতো মুসুর ডাল বেটে তাতে এক চা চামচ কাঁচা দুধ আর এক চা চামচ আমন্ড অয়েল মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪| শুষ্ক ত্বকের জন্য মুসুর ডালের প্যাক (Masoor Dal Face Pack for Dry Skin)
দুই টেবিল চামচ মুসুর ডাল সাড়া রাত কাঁচা দুধে মিশিয়ে রাখুন। পরের দিন একটু দানা দানা করে বেটে নিন। মানে বেশই মিহি করে বাটবেন না। এবার এই প্যাক মুখে, ঘাড়ে ও গলায় লাগিয়ে নিন। কুড়ি মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৫| মেথি ও মুসুর ডালের প্যাক (Methi and Masoor Dal Face Pack)
২-৩ টেবিল চামচ মুসুর ডাল ও এক চা চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। এটা আসলে একটা স্ক্রাবের মতো কাজ করবে আপনার ত্বকে। তাই একটু দানা দানা মতো করে বাটবেন। বেশি মিহি করে বাটবেন না। মুসুর ডাল আপনার ত্বক উজ্জ্বল করবে আর মেথি কাজ করবে প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে।
৬| মুখের অবাঞ্ছিত লোম তোলার জন্য ফেসপ্যাক (Removes Facial Hair)
এই প্যাক ত্বক উজ্জ্বল করবে এবংস সমস্ত দাগছোপ নির্মূল করবে। তার সঙ্গে এটি আপনার মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করবে। তাই থ্রেডিং না করেও অতি সহজে আপনি আপার লিপ বা থুতনির অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে পারবেন।১০০ গ্রাম মুসুর ডাল, পঞ্চাশ গ্রাম চন্দন পাউডার আর এক চা চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো দুধে মিশিয়ে রেখে দিন সারা রাত। এগুলো ভাল করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে যদি প্যাক বেশি শুকিয়ে যায় তাহলে অলিভ অয়েল দিয়ে আজ্ঞে হাল্কা করে স্ক্রাব করে নেবেন।
৭| নির্জীব ত্বকের জন্য মুসুর ডালের প্যাক (Masoor Dal Face Pack for Dull Skin)
মুসুর ডাল একটু ভেজে নিয়ে তারপর বেটে নিন। যতটা মুসুর ডাল নিলেন ততটা কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো নিন। দুটো ভাল করে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক সপ্তাহে দুইবার লাগাতে পারেন। মাস তিনেক ব্যবহার করার পর আপনি নিজেই তফাৎ বুঝতে পারবেন।
৮| ত্বকের ছিদ্র সঙ্কুচিত করার প্যাক (Pore Tightening Face Pack)
অনেকের ত্বকের ছিদ্র খুব বড় হয়। এতে মুখে বেশি ধুলো ময়লা ঢুকে যায়। অ্যাকনে ও পিম্পল দেখা যায়। মুসুর ডালের প্যাক লাগালে এই ছিদ্র অনেক ছোট হয়ে আসে এবং ত্বকের সমস্যা দূর হয়। এর সাথে আপনি নিম পাটা পেস্ট বা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিলে আরও ভাল ফল পাবেন।
৯| তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুসুরের ফেসপ্যাক (Masoor Dal Face Pack for Oily Skin)
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা হল অবশ্যই অতিরিক্ত তেল। মুসুর ডাল এমনিতেই অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। তবে আরও বেশি ভাল পেতে মুসুর ডালের পেস্টের সঙ্গে আপনি এক চা চামচ মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও দই এবং বেসন এই দুটো বস্তুও ব্যবহার করতে পারেন মুসুর ডালের প্যাকের সঙ্গে। যদি আপনার ত্বক মিশ্র প্রকৃতির হয় তাহলে যে যে জায়গায় বেশি তেলতেলে সেখানে এই প্যাক লাগাবেন। নাহলে আপনার ত্বকের যে জায়গাগুলো তৈলাক্ত নয় সেই জায়গা আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যাবে।
১০| অ্যাকনেযুক্ত অনুভূতি প্রবণ ত্বকের জন্য ফেসপ্যাক (Masoor Dal Face Pack for Sensitive Skin)
এক টেবিল চামচ মুসুর ডাল পেস্টের সঙ্গে এক চা চামচ আমন্ড অয়েল, এক চা চামচ গ্লিসারিন ও এক চা চামচ গোলাপ জল মেশান। এই পেস্ট মুখে লাগান।মিনিট দশেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। তবে ঘষবেন না। সপ্তাহে একবার এই প্যাক লাগাতে পারেন।
মুসুর ডালের ফেসপ্যাক নিয়ে জরুরি প্রশ্নোত্তর (FAQs)
১| প্রশ্ন: প্রতিদিন কি মুসুর ডালের প্যাক ব্যবহার করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রতিদিন মুসুর ডাল ব্যবহার করায় কোনও অসুবিধে নেই। এটা আপনার ত্বকের কোনও ক্ষতি করে না। তবে সমতা রাখতে একদিন ছাড়া ছাড়া ব্যবহার করার পরামর্শ দেব আমরা। ত্বকের কিছু স্বাভাবিক চাহিদা থাকে। একদিন অন্তত ত্বককে বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
২| প্রশ্ন: শিশুরা কি মুসুর ডালের প্যাক ব্যবহার করতে পারে?
উত্তর: মুসুর ডাল হল প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েন্ট। সাবানের বদলে এটা ব্যবহার করার যায় শিশুদের জন্য। তবে খেয়াল রাখতে হবে মুসুর ডাল যেন একদম মিহি করে বাটা হয়। দানা দানা থাকলে শিশুর ব্যথা লাগতে পারে। তবে শিশুর বয়স কত এবং তার ত্বকে কোনও সমস্যা আছে কিনা সেটা আগে দেখে নেবেন।
৩| প্রশ্ন: চুলে কি মুসুর ডালের প্যাক ব্যবহার করা যায়?
উত্তর: না চুলের জন্য মুসুর ডালের প্যাক ব্যবহার করবেন না। এটি আঠালো পদার্থ তাই এটি চুলে আটকে যাবে এবং সেটা পরে তুলতে গেলে অসুবিধে হবে। এই প্যাক মূলত ত্বকের যত্নেই ব্যবহার করা হয়।
৪| প্রশ্ন: অ্যাকনেযুক্ত ত্বকে কি মুসুর ডালের প্যাক ব্যবহার করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ করা যায়। কারণ মুসুর ডাল ত্বকের ছিদ্র অনেক সঙ্কুচিত করে দেয়। ত্বকের ছিদ্র ছোট হয়ে গেলে অ্যাকনে হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। তাছাড়া এত্তি বাড়তি তেলও শুষে নেয় তাই যাঁদের অ্যাকনে আছে তাঁরা এটা ব্যবহার করতে পারেন।
৫| প্রশ্ন: মুসুর ডালের প্যাক কি ফ্রিজে স্টোর করে রাখা যায়?
উত্তর: ডাল বেটে সেটা ফ্রিজে বেশিদিন রাখা যাবে না। কারণ গন্ধ হয়ে যাবে। প্যাকের মধ্যে কিছু মেশানো থাকলে আরও তাড়াতাড়ি গন্ধ হবে। ডালবাটা দু’দিনের বেশি রাখবেন না। তবে গুঁড়ো ডাল একটা কৌটোয় করে দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখা যায়।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!