‘রান্নাঘর’ তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি। রান্নাঘর তাঁর জনপ্রিয়তার অস্ত্র। এ কথা তাঁর সম্পর্কে বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না। তিনি অর্থাৎ সুদীপা (Sudipa) চট্টোপাধ্যায়। নিজে ভালবেসে রান্না করেন। নিত্য নতুন রেসিপি ট্রাই করা তাঁর অভ্যেস। আর এই রান্নার শো-এর অ্যাঙ্কার হিসেবেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন বাংলার ঘরে ঘরে। হ্যাঁ, গিয়েছিলেন। পাস্ট টেন্স। কারণ গত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় সেই কাজ থেকে বিরতি নিয়েছেন সুদীপা। মা হয়েছেন তিনি। ছেলে আদি (Adi) এখন তাঁর সবটা জুড়ে রয়েছে। রাত পোহালেই ছেলের প্রথম জন্মদিন। অর্থাৎ মাতৃত্বের বর্ষপূরণ। কেমন আছেন তিনি? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই বা কী? সে সব নিয়ে মন খুলে আড্ডা দিলেন সুদীপা।
কেমন আছেন?
খুব ভাল আছি। আপনি?
ভাল আছি। আদিকে নিয়েই ব্যস্ত তো?
হ্যাঁ, ওকে নিয়েই বেশি সময় কাটছে। পাশাপাশি কিছু কাজও করছি।
আগামীকাল ছেলের প্রথম জন্মদিন। সেলিব্রেশনের কী কী প্ল্যান করলেন?
আমি আদিকে একটু নর্মালি মানুষ করতে চাই। ও দাদা, পিসি বা মামারবাড়ি থেকে এত ভালবাসা পায়, সব কিছুই যেন বেশিই পায়। কিছু চাইতে হয় না ওকে। চাওয়ার আগেই পেয়ে যায়। কোনও অভাব বুঝতে পারছে না। ফলে জন্মদিনটা একেবারেই লো-প্রোফাইলে রাখার ইচ্ছে রয়েছে আমার। ওটা একটু কম হোক।
যেমন?
আদি স্কুলে যেতে শুরু করলে বা বড় হলে হয়তো ওর মতো করে জন্মদিন সেলিব্রেট করতে হবে আমাকে। কিন্তু এখন একেবারে সাধারণ ভাবে করব। যেমন ভাবে আমার বার্থডে সেলিব্রেট হত। আদিকে চোখে চন্দন পরিয়ে, গলায় মালা পরিয়ে রূপোর থালায় একেবারে বাঙালি খাবার পরিবেশন করব। পোলাও, মাংস, মাছের মাথা দিয়ে ডাল- মানে একেবারে খাঁটি বাঙালি খাবার হবে। রাতে ফ্যামিলি ডিনার। কোনও বন্ধুও নয়। শুধু ফ্যামিলি। ওর দাদা মানে আকাশকেও এটা আমি করিয়েছি। জন্মদিনে লাঞ্চটা বাড়িতে ফ্যামিলির সঙ্গে করতেই হবে। তারপর অন্য সেলিব্রেশন থাকতেই পারে। কিন্তু লাঞ্চ হবে বাড়িতেই। আর বাঙালি খাবার থাকবে মেনুতে। আদিকে সকলে এত প্যাম্পার করে, আমার ভয় লাগে। ঠিক মতো করে বড় করতে পারব তো?…
অফকোর্স পারবেন। আসলে আদি আসার আগে থেকেই তো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আপনি। সেই পর্বের কথা যদি শেয়ার করেন…
হুম। আমি বেশি বয়সে মা হয়েছি তো। ফলে মানসিক প্রস্তুতি ছিলই। আমি অ্যাক্সিডেন্টালি মা হতে চাইনি। শরীরে, মনে সম্পূর্ণভাবে ওর অস্তিত্বকে ওয়েলকাম করতে চেয়েছি। আদি আসার আগে ভীষণভাবে মা হতে চেয়েছিলাম। দু’একবার ফেলিওর হয়েছে। মনখারাপ। তারপর, আমার এখনও মনে আছে, ১৬ মার্চ যখন জানতে পারলাম, পজিটিভ, সেই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। আমিও মানুষটা একটু একটু করে বদলে যাচ্ছিলাম। বয়স কম হলে, বোঝার আগেই অনেক মেয়ে মা হয়ে যায়। আমরা ভয় ছিল, চিন্তা ছিল, আমি পারব তো? বাড়িতে আমি সবার ছোট। প্যাম্পার্ড চাইল্ড। কখনও কিছু করিনি। তাই আরও চিন্তা ছিল।
তারপর তো আদির দেখভাল আপনি নিজেই করতে শুরু করেন…
হ্যাঁ। সেও এক ঘটনা। যখন ও এল, মানে ওর ১৫-১৬ দিন বয়স পর্যন্ত আয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম। তারপর একদিন গাড়িতে ওকে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরছি, রাস্তায় দেখলাম এক পরিবার রান্না করছে। আর একটা বাচ্চা হামা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বেশ ভাল। তখন ভাবলাম, আমার ছেলেকে যদি আমার মতো করে মানুষ করি…। আয়াকে ছুটি দিয়ে নিজেই শুরু করলাম। ওর জামা ধোওয়া দিয়ে শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম, কাজ করতে গিয়ে ভুল হবে, শিখব। কিন্তু কারও ওপর নির্ভরশীল হব না। অগ্নি শিখিয়েছিল, কীভাবে স্নান করাতে হবে। এখনও পর্যন্ত ওর কাজ আমি নিজেই করি। যেমন আদিকে সব কিছু খাওয়াই। আড়, পাবদা, তেলাপিয়া মাছ খায়। চিকেন, মাটন খায়। মানে, আমার বাড়িতে যেদিন যেমন হবে, আদিও তাই খাবে। ওর জন্য আলাদা কিছু ব্যবস্থা করি না। কোনও কিছুতেই আতিশয্য বা বাড়াবাড়ি নেই।
আচ্ছা, আদিকে কী নামে ডাকেন আপনি?’
(হাসি) আমি ওকে ঝাঙ্কু বলে ডাকি। আসলে আমার নাম পিঙ্কি। আমার দুই দাদা রিঙ্কু আর সিঙ্কু। সেই থেকেই বোধহয় ওই নামটা মাথায় এসেছিল।
আপনার শ্বশুরবাড়ির পরিবারে ছেলেরা তো হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন। সেটাই ট্র্যাডিশন। আদির জন্যও সেভাবেই তৈরি হচ্ছেন?
না! আদি এই পরিবারে প্রথম এমন কেউ, যে হস্টেলে যাবে না। এই কথাটা প্রথম ওর দাদা বলেছিল। আমরা সবাই আছি, সবাই মিলে করব। আসলে বাড়িতে থাকলে যেটা হয়, একদিন হয়তো দেখল বাবা-মা ঝগড়া করছে। আবার পরের দিন একসঙ্গে বসে চা খাচ্ছে। মানে, মিটে গিয়েছে। এটা দেখে বড় হবে। আর হস্টেলে বড় হলে, হঠাৎ করে বাড়ির পরিবেশে কোনও ঝামেলা দেখলে এক্সট্রিম কিছু ভেবে নেয়। ফ্যামিলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটার মধ্যে থেকেই আদি বড় হোক। কলকাতার বেস্ট স্কুলে ওকে পড়াতে হবে, এমন কোনও ব্যাপার নেই কিন্তু। যদি মেরিট থাকে, যে কোনও স্কুল থেকেই ভাল করবে। ও যেটা চায়, ওকে সেটা করতে দেওয়ার ইচ্ছে আছে আমার। শুধু এটুকু বুঝিয়ে দেব, এমন কিছু করো না, যাতে পরে নিজেই কষ্ট পাও।
ফের পুরোদমে কাজে ফিরবেন কবে?
ইচ্ছে আছে, আগামী মার্চ, এপ্রিল থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করব। আসলে আদি প্রথমবার হাঁটবে, সেটা বাড়ি থেকে কেউ ভিডিও কলে দেখাবে, সেটা আমি চাই না। ওর প্রথম হাঁটাটা সামনে থেকে দেখতে চাই। যদিও কাজে ফেরার জন্য মনটা ছটফট করছে। একাধিক অফারও আছে। কিন্তু আমি সব পক্ষের থেকেই একটু সময় চেয়ে নিয়েছি। আমি দেখেছি, ভগবান যা কিছু আমাকে ওয়েট করিয়ে দিয়েছেন, সে সব ভালই হয়েছে। চিত্রনাট্যের কাজ কিছু চলছে। অগ্নির দু’টো ছবি ‘ভিজিটিং আওয়ার’ আর ‘চোর’-এর স্ক্রিপ্ট, ডায়লগ লিখছি।
আপনি যেহেতু বেশি বয়সে মা হলেন, যাঁরা আপনারা মতো করে প্ল্যান করছেন, তাঁদের কিছু বলবেন?
দেখুন একটা মেয়ের বিয়ে হয় অনেক স্বপ্ন নিয়ে। সবটা কিন্তু করণ জোহরের সিনেমার মতো হয় না। আমি প্রথমেই বলব, মেয়েটিকে আগে বাঁচতে দিন। কখন সন্তান আসবে, সেটা স্বামী-স্ত্রীর সিদ্ধান্ত। তার মধ্যে পরিবারের অন্য কেউ ঢুকবেন না। মেয়েটির প্রতি শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেককে অনেক সহানুভূতিশীল হতে হবে। বাড়িতে যখন একটি বাচ্চা আসে, তখন কেউ তার পিসি, কেউ কাকা, কেউ ঠাকুমা হন। কিন্তু সেই বাচ্চাটিকে বড় করার দায়িত্ব একা মায়ের ওপর পড়ে। এটা কেন? সকলেই কিছু কিছু দায়িত্ব নিন। আমার শাশুড়ির ৭৫ বছর বয়স। তিনি আমার থেকে অনেক বেশি আধুনিক। আদি আসার আগে আমাকে শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি পারবে তো? আমি তো কোলে নিয়ে ঘুরতে পারব না। আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ মা, আমি পারব।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo-র স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়..