নাইটলাইফ এবং ফুড

বাংলার রসগোল্লার পর এবার উড়িষ্যার রসগোলাও পেল জি আই ট্যাগ! দুই গোল্লার লড়াই আরও জমল তা হলে

Parama Sen  |  Jul 30, 2019
বাংলার রসগোল্লার পর এবার উড়িষ্যার রসগোলাও পেল জি আই ট্যাগ! দুই গোল্লার লড়াই আরও জমল তা হলে

বাগবাজারের নবীন দাস, রসগোল্লার কলম্বাস! 

ভাগ্যিস নবীন দাস নতুন তুলতুলে মিষ্টি তৈরির সময় তার নাম রেখেছিলেন রসগোল্লা, যদি বাই চান্স গোল্লা না রেখে গোলা রাখতেন, তা হলে এই মিষ্টির আবিষ্কারক হিসেবে তাঁর যে অ্যাদ্দিনের সুনাম, তা এক ফুৎকারে হারিয়ে যেত চেন্নাইয়ের জিআই রেজিস্ট্রি আপিসের পাল্লায় পড়ে! আসলে বহুদিন ধরেই বাংলা এবং উড়িষ্যা, এই রাজ্যের মধ্যে কে রসগোল্লা আগে আবিষ্কার করেছিল, তা নিয়ে বিস্তর লড়াই চলছে। বাঙালিরা বলেন নবীন ময়রা বাগবাজারে বসে বারবার ছানার গোল্লা পাকিয়ে তা রসে ফেলে পরীক্ষানিরীক্ষার পর এই তুলতুলে, জিভে জল আনা মিষ্টি বের করেছিলেন। অন্যদিকে ওড়িয়ারা বলেন, ধুস, ও তো কবে থেকে শ্রী জগন্নাথ দেবের পুরীধামে ভোগের সঙ্গে পরিবেশন করা হত। তোমাদের শ্রীচৈতন্য যখন পুরী মন্দিরে কৃষ্ণভাবে বিভোর হয়ে আছেন, তখনও আমরা ভোগে রসগোল্লা দিতুম। তখন তো কলকাতারই জন্ম হয়নি, তো বাগবাজার আর নবীন ময়রা! তাইলে তোমরা কী করে রসগোল্লা আবিষ্কার করলে কও দেখি! 

হক কথা। জগন্নাথ দেবের ভোগে যে রসগোলা (Rasagola) পরিবেশন করা হত, সেকথা সত্যি! উড়িষ্যার অনেক প্রাচীন সাহিত্যে তার উল্লেখ আছে। ১৫ শতকে বলরাম দাসের লেখা ওড়িয়া রামায়ণে রসগোলার উল্লেখ আছে। এই রামায়ণই সুর করে পড়া হয় পুরীর মন্দিরে। এই রামায়ণের অযোধ্যা কাণ্ডে ছানা এবং ছানা দিয়ে তৈরি নানা মিষ্টির কথা বলা আছে, যার সঙ্গে বিলক্ষণ মিল আছে আমাদের রসগোল্লার! আবার ১৮৯২ সালে বিখ্যাত ওড়িয়া সাহিত্যিক ফকির মোহন সেনাপতির লেখাতেও উড়িষ্যার নানা প্রদেশে যে রসগোলা তৈরি হত, তার উল্লেখ পাওয়া যায়! এই সব দেখিয়েই উড়িয়ারা বিস্তর চেঁচামেচি শুরু করে এবং দাবি জানাতে থাকে যে, রসগোলা আসলে তাদের, আমরা স্রেফ পরে গিয়ে তার বানানে একটা বাড়তি ‘ল’ যোগ করে রসগোলাকে রসগোল্লা (Rasogolla) বানিয়ে তৈ নিয়ে লাফালাফি করছি।

সমস্যা হল, মাছ, ফুটবল আর রাজনীতির মতো যে আরও একটি ব্যাপার নিয়ে চব্বিশ ইঞ্চি ছাতি যে-কোনও সময় ফুলিয়ে বিয়াল্লিশ করাটা বাঙালির অভ্য়েসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, সেটি হল এই রসগোল্লা। তামাম বিশ্ব বাঙালিকে চেনে ‘মছলি খাতা, রসগুল্লা খাতা’ বলে, আর ওরা কিনা আমাদের সেই গর্বের বেলুন ফুটো করে দেবে? অমনই বাংলার ময়রাকুল এক হয়ে জিআই রেজিস্ট্রি আপিসে আবেদন দাখিল করে এই বলে যে, বাংলার রসগোল্লা-কে বাংলার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক! এই জিআই রেজিস্ট্রি আপিস ঠিক কী করে? এঁরা তথ্যপ্রমাণাদি খুঁটিয়ে দেখে রায় দেন যে, যে অঞ্চলের বিশেষ প্রোডাক্ট হিসেবে কোনও বস্তুকে দাবি করা হচ্ছে, সেটি সত্যিই সেই অঞ্চলের কিনা! তা হলে সেই বস্তুটি জিআই ট্যাগ, মানে, জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ পায়। আর তা হলেই আর তাকে নিয়ে কেউ কথা কইতে পারে না!

২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বাংলার রসগোল্লা জিআই ট্যাগ পেয়েছিল। তা নিয়ে বিস্তর নাচানাচিও হয়েছিল। উড়িষ্যা সরকার তখন হেঁটমুণ্ড হয়ে স্বীকারও করেছিলেন যে, তাঁরা প্রমাণ জোগাড়ে ব্যর্থ হয়েছেন বলে বাংলা বাজি মেরে তাঁদের সাধের রসগোলা ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেল! পরে অসিত মোহান্তি নামে এক ওড়িয়া স্কলার অনেক কষ্টেসৃষ্টে প্রমাণ জোগাড় করেন এবং শেষ পর্যন্ত ধপধপে সাদা, নরম-তুলতুলে, মিষ্টির রসে চোবানো ছানার বল রসগোলা উড়িয়া রসগোলা হিসেব গতকাল জিআই ট্যাগ (GI tag) পেয়েছে! 

লক্ষ করবেন, একটি হল বাংলার রসগোল্লা, অন্যাটি ওড়িয়া রসগোলা! বানানের মতো স্বাদে-গন্ধেও কিন্তু অনেকটাই আলাদা! যাক গে, নবীন দাসের হাত ধরে রসগোল্লা স্বীকৃতি পেয়েছিল। এবার না হয় নবীন পট্টনায়কের হাত ধরে রসগোলা পেল! আমরা হলুম গিয়ে মিষ্টিপ্রেমী! তা ছাড়া ওদের পাক্কা দু বছর আগে আমাদের রসগোল্লা যুদ্ধ জিতে গিয়েছিল, তাই ঠিক আছে…ওরা বাজি ফাটাক, আমরা রসগোল্লার প্রেমে হাবুডুবু খাই বরং!

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!

Read More From নাইটলাইফ এবং ফুড