ওয়েলনেস

কাশি কমাতে হোক বা বাতের ব্যথা বাসক পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিন (Basak Pata Benefits)

Debapriya Bhattacharyya  |  Mar 26, 2020
কাশি কমাতে হোক বা বাতের ব্যথা বাসক পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিন (Basak Pata Benefits)

আচ্ছা, আপনি যখন ছোট ছিলেন তখন সর্দি-কাশি হলে আপনার মা বা বাড়ির বড় কোনও সদস্য কখনও এক ধরনের পাতা বেটে তার রস আপনাকে খাইয়েছিলেন? আমাকে ছোটবেলায় প্রচুর খেতে হয়েছে এই পাতার রস। বড্ড তেতো! আজ এত বছর পর হঠাৎ করে বাসক পাতার উপকারিতা (Basak Pata) সম্পর্কে লিখতে বসে সেই তেতো স্বাদটা আবার যেন অনুভব করলাম। কিন্তু যাই হোক, বাসক পাতার গুনাগুন (Basak Pata Benefits) রয়েছে, আর বেশিরভাগই হল বাসক পাতার ঔষধি গুণ। তবে একইসঙ্গে বাসক পাতার অপকারিতাও রয়েছে। সব ব্যাপারগুলোই জেনে রাখা উচিত এবং ঠিক কী কীভাবে বাসক পাতার ব্যবহার (Basak Pata Uses) হয়ে থাকে, চলুন একবার দেখে নেওয়া যাক।

বাসক পাতা কী? (What Is Basak Pata?)

বাসক পাতার উপকারিতা, বাসক পাতার ঔষধি গুণ অথবা বাসক পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানার আগে তো এটা জানতে হবে যে বাসক পাতা কী, কেমন দেখতে ইত্যাদি! তা না হলে কীভাবে চিনবেন আর বাসক পাতার ব্যবহারই বা কীভাবে করবেন (Basak Pata Uses)। বাসক পাতা (Basak Pata) হল এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার শুধুমাত্র পাতাই নয়, মূল, ফুল, এবং আরও নানা অংশ ওষুধ তৈরির কাজে লাগে। বাসক পাতার গাছ উচ্চতায় তিন থেকে চার ফুট মতো হয় এবং ঘন গুল্মের মতো দেখতে হয়। থোকা থোকা ফুল হয় এবং বাদামের মতো দেখতে ফল হয়। চারা অবস্থায় যদিও বাসক পাতার গাছ দেখতে সবুজ থাকে, কিন্তু পরিণত গাছের কান্ডটি হালকা বেগুনি রঙের হয়।

বাসক পাতার ঔষধি গুণ (Medicinal Uses of Basak Pata)

বাসক পাতার ঔষধিগুণের (Basak Pata Benefits) কথা বলতে গেলে সবার প্রথমেই বলা যায় যে পাতাগুলিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ওষুধ তৈরি করতে। ওষুধ তৈরি করতে তাজা এবং শুকনো – দু’রকমের বাসক পাতার ব্যবহারই দেখা যায়। বাসকের পাতায় ভ্যাসিসিন নামে একটি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে (বাসক পাতার গুনাগুন) এবং জরুরি কিছু এসেনশিয়াল অয়েলও থাকে। বাসক পাতার ব্যবহার (Basak Pata Uses) সাধারণত সর্দি ও কাশি কমাতে ব্যবহার করা হয়। বহুদিনের বুকে জমা কফ তরল করার জন্যও বাসক পাতার রস খাওয়ানোর চল অনেকদিন ধরেই রয়েছে। বাসক পাতায় (Basak Pata) থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি বুকে জমে থাকা কফ গলিয়ে ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।

বাসক পাতার উপকারিতা (Basak Pata Benefits)

বাসক পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন –

১। কাশি কমাতে বাসক পাতা

আগেই যেমন বলা হল সর্দি কাশি কমাতে বাসক পাতার ব্যবহার (Basak Pata Uses) অনস্বীকার্য। যদি বহু পুরনো সর্দি বা কাশির সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে দু-চারটি বাসক পাতা খুব ভাল করে ধুয়ে বেটে নিয়ে সেই রস যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে উপশম হয়। এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল যে বাসক পাতা (Basak Pata) প্রচন্ড তেতো হয়। কাজেই এক চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ বাসক পাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে বেশ কয়েকদিন খেতে পারেন। এরপর অবশ্যই এক গ্লাস জল খাবেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কাশি কমে যাবে।

২। যক্ষ্মা রোধে বাসক পাতা

বাসক পাতার ঔষধি গুণ গুলির মধ্যে একটি হল বাসক পাতা (Basak Pata) যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস রোগ সারাতে সাহায্য করে। বাসক পাতায় অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান রয়েছে যা যক্ষ্মা কমাতে (বাসক পাতার গুনাগুন) সাহায্য করে। এছাড়াও ব্রঙ্কাইটিস ও হুপিং কাশির সমস্যা সমাধানেও বাসক পাতা সাহায্য করে।

৩। বাতের ব্যথায় উপশম করে

বাসক পাতার ঔষধিগুণ (Bashok Pata) গুলির মধ্যে আরও একটি হল এই পাতা বাতের ব্যথাও উপশম করতে সাহায্য করে। এতে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যা আরট্রাইটিস, বাতের ব্যথা, গাঁটে ব্যথা ইত্যাদি নিরাময় করতে সাহায্য করে। কয়েকটি বাসক পাতা (Basak Pata Benefits) বেটে তার সঙ্গে হলুদ ও চুন মিশিয়ে লাগালে বাতের ব্যথা কমে বলে অনেকে দাবী করেন।

৪। রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে

অনেকেরই মুখে ব্রণ হয় বা পেটে সমস্যা হয় অথবা নানারকম অ্যালারজির সমস্যা থাকে। এই সমস্যাগুলো বেশিরভাগ সময়েই তখন হয় যখন রক্ত পরিষ্কার থাকে না। বাসক পাতার (Bashok Pata) নিয়মিত সেবনে কিন্তু আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়। শুধু তাই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে।

৫। জ্বর হলে বাসক পাতা খান

জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে বাসক পাতা (Bashok Pata) যথেষ্ট সাহায্য করে। এছাড়াও অনেকসময়েই জ্বরের সঙ্গে সর্দি ও কাশির সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে এক চামচ মধু, এক চামচ তুলসি পাতার রস এবং এক চামচ বাসক পাতার রস (Basak Pata Benefits) খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

৬। শ্বাসকষ্টে বাসক পাতা

বাসক পাতা কাশি, সর্দি, ব্রঙ্কাইটিস, হাপানি ইত্যাদি নিরাময় করতে সাহায্য করে। বাসক পাতার ঔষধি গুণ আমাদের শ্বাসনালী প্রশস্ত করতে (বাসক পাতার গুনাগুন) সাহায্য করে যার ফলে শ্বাসকষ্ট কমে এবং ব্রঙ্কাইটিস ও হাপানি রোগীদের উপশম পেতে সাহায্য করে। হাপানির ওষুধ তৈরি করতেও অনেকসময়ে বাসক পাতার ব্যবহার (Basak Pata Uses) দেখা যায়।

৭। শরীরের নানা ‘দোষ’ কাটাতে

আয়ুর্বেদ মতে আমাদের শরীরে নানা দোষ থাকে যার ফলে আমাদের নানারকমের শারীরিক সমস্যা ও অসুখ হয়। আয়ুর্বেদ অনুসারে, শরীরের সুস্থ থাকা নির্ভর করে বায়ু, পিত্ত এবং কফ, এই তিনটি বিষয়ের ভারসাম্যের উপর। এর কোনওটার মাত্রা যদি বেড়ে যায়, তা হলেই দেখা দেয় নানা সমস্যা। তবে বাসক পাতার (Bashok Pata) নিয়মিত সেবনে আমাদের শরীরে এই তিনটি বস্তুর ভারসাম্য বজায় থাকে এবং শরীর সুস্থ থাকে।

৮। মাংসপেশিতে টান ধরলে

অনেকসময়ে ব্যায়াম করতে গিয়ে অথবা অন্য কোনও কারণে মাংস্পেশিতে টান ধরে। সেক্ষেত্রে যদি চুন হলুদ করেও করে তার সঙ্গে বাসক পাতা (Bashok Pata) বেটে মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষন মালিশ করা যায়, তাহলে উপকার পাওয়া যায়।

৯। গলা ব্যথা কমাতে

অনেকসময়ে নানা কারণে গলা ব্যথা হতে পারে। তবে তখন যদি কষ্ট করে একটু বাসক পাতার রস (বাসক পাতার গুনাগুন) খেয়ে নেন তাহলে উপকার পাবেন।

১০। জন্ডিস কমাতে সাহায্য করে

আধ চামচ বাসক ফুলের রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় (Basak Pata Benefits), লিভার মজবুত হয় এবং জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়াও আরও নানা কাজে বাসক পাতার ব্যবহার (Basak Pata Uses) চলে আসছে –

বাসক পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects of Basak Pata)

অন্য সব কিছুর মতোই বাসক পাতার উপকারিতা (Basak Pata Benefits In Bengali) সম্বন্ধে যেমন জেনে নিলেন, তেমনই বাসক পাতার অপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও জেনে নেওয়া ভালো –

বাসক পাতা সংক্রান্ত কিছু জরুরি প্রশ্নোত্তর (FAQs)

১। বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম

নানাভাবে বাসক পাতা খাওয়া যায় এবং নানা সমস্যা দূর করতে বাসক পাতা খাওয়া যায়। তবে সাধারণত, দুভাবে বাসক পাতা (Bashok Pata) খাওয়া যেতে পারে – বেটে রস করে অথবা জলে ফুটিয়ে। যদি বাসক পাতা বেটে রস করে খেতে চান সেক্ষেত্রে প্রথমেই খুব ভাল করে পাতাটি ধুয়ে নিন এবং তারপরে হামানদিস্তায় বেটে নিন। যেহেতু বাসক পাতা খুব তেতো হয়, কাজেই আলাদা একটি হামানদিস্তা ব্যবহার করুন, তা না হলে পরে অন্য কিছু একই হামানদিস্তায় বাটলে সেটিও তেতো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

যদি বাসক পাতা জলে ফুটিয়ে ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে ভাল করে বাসক পাতা ধুয়ে জলে ফুটিয়ে নিন। জল ঠান্ডা হলে ছেঁকে তবেই ওই জলটি পান করুন।

২। প্রতিদিন কতটা বাসক পাতা খাওয়া যেতে পারে?

খুব বেশি সর্দি বা কাশি থাকলে দু-তিনটি বাসক পাতা বেটে রস করে প্রতিদিন খেতে পারেন। তবে বীণা কারণে বাসক পাতা (Bashok Pata) না খাওয়াই ভাল।

৩। সর্দি কাশি ছাড়া আর কী কী কারণে বাসক পাতা খাওয়া যায়?

যদি কারও ঋতুস্রাবের সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে বাসক পাতার রস খেলে সমস্যা দূর হয়। অনেকেরই ঋতুস্রাবের সময়ে পেটে ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়, তাঁরা নিয়মিত বাসক পাতা (Basak Pata)খেলে উপকার পাবেন।

POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!

২০২০ শুরু করুন আমাদের দারুণ দারুণ প্ল্যানার আর স্টেটমেন্ট সোয়েটশার্ট দিয়ে। এগুলো সবকটাই আপনারই মতো একশ শতাংশ মজার এবং অসাধারণ! ওহ হ্যাঁ, শুধুমাত্র আপনার জন্য রয়েছে ২০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থাও। দেরি কিসের আর, এখনই POPxo.com/shop থেকে কেনাকাটা সেরে ফেলুন আর নিজেকে আরেকটু পপ আপ করে ফেলুন!

Read More From ওয়েলনেস