সারা বিশ্বেই লেবুর বেশ কদর। আর কেন হবে নাই বা বলো! ইন্ডিয়ান থেকে কন্টিনেন্টাল, চাইনিজ থেকে জাপানিজ, সব ধরনের খাবার বানাতেই যে লেবুর প্রয়োজন পড়ে। শুধু কি তাই, অলিভিটো, দা ফাইটার, হট সস ইন মাই ব্যাগ এবং লেমন ড্রপের মত বিশ্ব বিখ্যাত ককটেল এবং মকটেলও লেবু ছাড়া বানানো সম্ভব নয়। তবে এখানেই শেষ নয়, নানান খাবার এবং ড্রিঙ্কের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং চাঙ্গা রাখতেও লেবুর রস (benefits of lemon water in the morning) বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আসলে লেবুতে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারী উপাদান, যেমন ধরো প্রোটিন রয়েছে ১.১ গ্রাম, সেই সঙ্গে ৯.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২.৮ গ্রাম ফাইবার, ০.০৩ গ্রাম ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ০.০৬ গ্রাম ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিডেরও সন্ধান মেলে। শুধু তাই নয়, লবুতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ এবং আরেও অনেক ধরনের উপকারী উপাদান, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। আর সকাল সকাল যদি লেবুর রস খাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে যে যে সুফলগুলি মেলে, সেগুলি হল…
১. ওজন কমে তরতরিয়ে:
কম সময়ে ওজন কমিয়ে ফেলার ইচ্ছা থাকলে লেবুর (lemon water) সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে দেরি করো না যেন! কারণ সকালে ঘুম থেকে ওঠা মাত্র এক গ্লাস গরম জলে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে যদি নিয়মিত পান করা যায়, তাহলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে চোখে পড়ার মতো। আর একথা তো প্রমাণিত হয়েই গেছে যে মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি পেলে শরীরের ইতিউতি মেদ জমার আশঙ্কা যায় কমে। ফলে ওজন কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, গরম জলে লেবুর রসের সঙ্গে যদি অল্প করে মধু মিশিয়ে (lemon water with honey) খেতে পারো, তাহলে আরও দ্রুত রেজাল্ট মেলার সম্ভাবনা বাড়ে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে রোজের ডায়েটে লেবুর রসকে জায়গা করে দিলে শরীরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে কোনও ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর পক্ষেই সেই রক্ষাকবচ ভেঙে শরীরের ক্ষতি করে ওঠা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় সব রোগ-ব্যাধি দূরে থাকতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না। এই কারণেই তো যারা ইমিউন সিস্টেম ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছে তাদের প্রতিদিন লেবুর রস বা কাঁচা লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৩. শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকে:
দেহের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেম, নার্ভাস সিস্টেম, ত্বক, পেশী, জয়েন্ট এবং হজম ক্ষমতাকে ঠিক রাখতে শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। আর ঠিক এই কারণেই তো নিয়মিত লেবু জল ( benefits of lemon water) পান করার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে এই পানীয়টি পান করা শুরু করলে দেহে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়াতে শুরু করে যে তার প্রভাবে পিএইচ ব্যালেন্স বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষার সাহস পায় না।
৪. ডিটক্সিফাইং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে:
খাবার এবং পরিবেশে উপস্থিত বিষাক্ত উপাদানেরা শরীরে প্রবেশ করার কারণে দেহের প্রতিটি কোনায় টক্সিক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর ঠিক সময়ে যদি এইসব ক্ষতিকর উপাদানদের শরীর থেকে বের করে দেওয়া না যায়, তাহলে কিন্তু ভিষণ বিপদ! কারণ সেক্ষেত্রে ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। এখন প্রশ্ন হল এইসব টক্সিক উপাদানদের শরীর থেকে বের করা যায় কীভাবে? এমনটা করতে নিয়মিত লেবু জল পান করতে হবে। কারণ লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এইসব টক্সিক উপাদানদের ধ্বংস করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না বললেই চলে!
৫. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:
কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে না চাইলে নিয়মিত লেবু জল খাওয়া মাস্ট! কারণ একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি স্ট্রোক বা বিভিন্ন ধরনের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই তো বলি বন্ধু, যাদের পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা নিয়মিত লেবুর রস খেতে ভুলো না যেন!
৬. কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা কমে:
লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড শরীরে প্রবেশ করা মাত্র প্রস্রাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কিডনিতে উপস্থিত টক্সিক উপাদানগুলি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে শরীরের এই অংশে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না বললেই চলে। আর একথাও উপেক্ষা করার নয় যে বারংবার প্রস্রাব হওয়া এক দিকে থেকে ভালোই। কারণ এমনটা হলে শরীরে আর কোন ক্ষতিকর উপাদান জমে থাকতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ রোগ-ব্যাধির খপ্পরে পরার আশঙ্কা যায় কমে।
৭. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
বাঙালি যেমন খাদ্য রসিক, তেমনি পেট রোগাও বটে! আর এমন পরিস্থিতি হবে নাই বা কেন! আমারা সবাই কম-বেশি প্রতিদিনই যে এদিক-সেদিকের খাবার খেয়ে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম ক্ষমতার বারোটা বেজে তো যায়ই, সেই সঙ্গে লেজুড় হয় নানাবিধ পেটের রোগও। তাই তো কব্জি ডুবিয়ে খাবার খাওয়ার পাশাপাশি লেবু জল পান করাটাও জরুরি। কারণ এমনটা করলে পাচক রসের ক্ষরণ ঠিক মতো হতে থাকে। ফলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।
৮. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে:
এমন রোগের খপ্পরে পড়তে না চাইলে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি মাত্রায় খেতে হবে। সেই সঙ্গে লেবুর রস খাওয়াটাও জরুরি। কারণে এই পানীয়টিকে রোজের ডায়েটে জায়গা করে দিলে একদিকে যেমন আয়রনের ঘাটতি দূর হয়, তেমনি লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে শরীর দ্বারা আয়রনের শোষণ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহে এই বিশেষ খনিজটির ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। আর আয়রনের চাহিদা পূরণ হলে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনও বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দূরে পালাতে সময় লাগে না।
৯. লিভারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
মাঝে মধ্যেই অ্যালকোহল সেবন হয় নাকি? তাহলে তো লেবুর রস পান করা ছাড়া আর কোনও উপায়ই নেই! কারণ নিয়মিত এই পানীয়টি পান করলে লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মদ্যপানের কারণে শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
১০. প্রদাহের মাত্রা কমে:
শরীরে প্রদাহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ছাড়ালে একদিকে যেমন শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তেমনি ক্যান্সার, হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস এবং অ্যাস্থেমার মতো ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় বেড়ে। তাই তো ইনফ্লেমেশন রেট যাতে কখনই নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, তা সুনিশ্চিত করতে লেবু জাল পান করা মাস্ট! কারণ লেবুতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ, শরীরে প্রবেশ করা মাত্র প্রদাহের মাত্রাকে কমিয়ে ফেলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
১১. জলের ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা কমে:
শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে সচল রাখতে জলের ভূমিকা অনেক। তাই তো দেহে যাতে কোনও ভাবেই জলের ঘাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর ঠিক এই কারণেই লেবু জল খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এমনটা করলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা কমে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।
লেবু জলের কিছু সাইড এফেক্ট (lemon water side effects):
নিয়মিত লেবুর রস খেলে নানাবিধ শারীরিক উপকার পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু কেউ যদি বেশি মাত্রায় এমন পানীয় খাওয়া শুরু করে, তাহলে কিন্তু বিপদ! কারণে সেক্ষেত্রে দেহের বেশ কিছু ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেমন…
ক. দাঁতের ক্ষতি হয়:
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেন্টাল অ্যান্ড ক্রেনিওফেসিয়াল রিসার্চের প্রকাশ করা এক স্টাডি অনুসারে লেবু রস প্রকৃতিতে অ্যাসিডিক। তাই তো বেশি মাত্রায় এই পানীয়টি খাওয়া শুরু করলে দাঁতের উপরি অংশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এমনকি দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই তো দিনে এক গ্লাসের বেশি লেবুর রস খাওয়া মোটেও উচিত নয়।
খ. অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা হতে পারে:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে লেবুর রস খাওয়া শুরু করলে হজমে সহায়ক পাচর রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যে কারণে বদহজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমতে সময় লাগে না। কিন্তু বেশি মাত্রায় লেবু জল খাওয়া শুরু করলে স্বাভাবিকভাবেই পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যার ফলস্বরূপ অ্যাসিডিটি বা অ্যাসিডি রিফ্লাক্সের মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। শুধু তাই নয়, আলসারের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার ভয়ও থাকে।
গ. মাথা ঘোরা এবং বমি ভাব:
শরীরে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি হওয়াটা যেমন উচিত নয়, তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়ে গেলেও কিন্তু বিপদ! যেমন ভিটামিন সি-এর কথাই ধরো না। বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে দিনে কেউ যদি ৩-৪ গ্লাস লেবুর জল পান করে ফেলে, তাহলে শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে প্রথমে মাথা ঘোরা, তারপর বারে বারে বমি হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণে এই পানীয়টি খাওয়া উচিত, না হলেই বিপদ!
ঘ. দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে:
বেশি মাত্রায় লেবুর রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে শরীরের তো কোনও উপকার হয়ই না, উল্টে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। তাই তো বলি বন্ধু, শরীরকে বাঁচাতে দিনে ১ গ্লাসের বেশি এই পানীয়টি খাওয়া চলবে না কিন্তু!
আরও পড়ুন –
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
Read More From ডি আই ওয়াই লাইফ হ্যাকস
এই ৬টি ঠোঁটের অধিকারিণীরা এইসব গুণের মানুষ হন
SRIJA GUPTA
বর্ষায় মোবাইল ভিজে গেলে কিভাবে মেরামত করবেন
Debapriya Bhattacharyya