একটা সময় ছিল যখন প্রত্যেক বাঙালির বাড়িতে ছিল ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল (Castor Oil) ব্যবহারের রেওয়াজ। এই তেলে যেহেতু নতুন চুল গজায় তাই অনেক মহিলাই এই তেল ব্যবহার করতেন। এখনও যে ব্যবহার হয় না তা বলছিনা। আসলে এই তেলের গুণাবলীর তালিকা এতটাই দীর্ঘ, যে সবটা বলতে গেলে রীতিমতো একটা উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে। হাজার হাজার বছর ধরে এই সর্বগুণসম্পন্ন ভেজিটেবিল তেলের ব্যবহার চলে আসছে সারা বিশ্বে। Ricinus Communis বলে একটি গাছের বীজ থেকে এই তেল নিঃসরণ করা হয়। এই বীজগুলোকে (Seeds) বলা হয় ক্যাস্টর বিনস (Castor Beans)। এই বীজগুলোতে রয়েছে এক বিষাক্ত এনজাইম যার নাম Ricin। কিন্তু যখন ক্যাস্টরের বীজ উতপ্ত করা হয় তখন এই বিষাক্ত এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নির্ভয়ে এই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্যাস্টর অয়েল মূলত ব্যবহার হয় ওষুধ নির্মাণে, শিল্পে এবং প্রসাধনী তৈরির ক্ষেত্রে। প্রাচীন ইজিপ্টে ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) ব্যবহার হত প্রদীপ জ্বালাতে। তাছাড়াও ইজিপ্টের মানুষ এই তেল চোখে চুলকানি কমাতে এবং গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব যন্ত্রণা কমাতে এই তেল ব্যবহার করত।তবে ভারত এবং আফ্রিকাতেও এই তেল পাওয়া যায়। বাংলাতে একেই বলা হয় রেড়ির তেল।
Table of Contents
এখনও এই তেল কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকের নানা সমস্যা, চুলের সমস্যা সারাতে এবং নানা রকম প্রসাধনী নির্মাণে এই তেল ব্যবহার হয়। আসুন জেনে নিন ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil Benefits In Bengali) কি কি কাজে লাগে।
ক্যাস্টর অয়েল কি কি কাজে লাগে
সেরা ছয়টি ক্যাস্টর অয়েল ব্র্যান্ড
কী কী প্রকারের ক্যাস্টর অয়েল আছে (Castor Oil Types)
রেড়ি বা ক্যাস্টর অয়েলের বীজ থেকে কোন পদ্ধতিতে তেল নিষ্কাশন করা হচ্ছে তার উপরে ভিত্তি করে ক্যাস্টর অয়েলকে দুভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল – ১) কোল্ড প্রেসড ক্যাস্টর অয়েল ও ২) ব্ল্যাক ক্যাস্টর অয়েল। কোল্ড প্রেসড ক্যাস্টর অয়েল অনেক হাল্কা হয় আর যখন রেড়ির বীজ ভেজে সেখান থেকে তেল বের করা হয় তখন সেটাকে ব্ল্যাক ক্যাস্টর অয়েল বলে।
ক্যাস্টর অয়েল কি কি কাজে লাগে (Castor Oil Uses)
ক্যাস্টর অয়েল কি এবং ক্যাস্টর অয়েল কত প্রকার তা তো আমরা জানলাম। এবার দেখে নেব ক্যাস্টর অয়েল কি কাজে লাগে –
সুন্দর চুলের যত্নে ক্যাস্টর ওয়েল বা রেড়ির তেল (Castor Oil For Hair)
ঘন এবং লম্বা চুলের রহস্য (Castor Oil For Hair Growth):
১. চুলকে লম্বা, ঘন করতে এবং তার প্রাকৃতিক উজ্বলতা বজায় রাখতে নিয়মিতভাবে ক্যাস্টর অয়েল (রেড়ির তেল) দিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করা উচিত।
২. কিছু লোক স্ক্যাল্পে ইনফেকশনের সমস্যায় ভোগেন, যার থেকে তাদের মাথায় চুলাকানি হয়ে টাক পড়ে বা খুশকির মত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। প্রত্যেক বার চুল ধোওয়ার আগে যদি ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) দিয়ে মাথায় মালিশ করা হয়, তাহলে চুলের এই সব সমস্যাগুলো থেকে বাঁচা যেতে পারে।
৩. চুলের প্রাকৃতিক রং বাঁচিয়ে রাখতেও ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতাকে (Benefits Of Castor Oil) অস্বীকার করা যায় না। যদি মাথায় পাকা চুল দেখা যায়, তাহলে ক্যাস্টর অয়েল লাগালে পিগমেন্টেশন নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
৪. চুলের কোমলভাব বজায় রাখতে হেয়ার কণ্ডিশনার ব্যবহার করা হয়। চুলকে তার গোড়া থেকে কণ্ডিশন করতে ক্যাস্টর অয়েলও অনেক সাহায্য করে। চুল পড়া বন্ধ করে। ক্যাস্টর অয়েল থেকে রুক্ষ এবং নিষ্প্রাণ চুলের চিকিৎসাও করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ অর্শ নিরাময়ে রেড়ির তেল
চুল ও স্ক্যাল্পের যত্নে (Castor Oil For Scalp Care):
যারা চুলের সমস্যায় নাজেহাল হয়ে যাচ্ছেন তাদের জানিয়ে রাখি ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) কিন্তু একটি প্রাকৃতিক কনডিশনার (Natural Conditioner)। চুল পড়া রোধ করার উপায় হল রেড়ির তেল। আপনি এই মুহূর্তে যে লিভ-ইন কনডিশনার ব্যবহার করছেন সেটার মধ্যে এক টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল (রেড়ির তেল) মিশিয়ে নিন। এবার এই বোতলটা ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার পর এই তেল মেশানো কনডিশনার ব্যবহার করুন আর তফাৎ দেখুন। চুলে ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) মাসাজ করলে চুলের ডগা ফাটে কম। ক্ষতিগ্রস্ত এবং রুক্ষ চুলে ক্যাস্টর অয়েল মাসাজ করলে চুলে আর্দ্রতা আসে ফলে চুল অনেক নরম এবং উজ্জ্বল হয়। তাছাড়াও আমাদের স্ক্যাল্পে মৃত কোষ থেকে হয় ড্যানড্রাফ বা খুশকি। ক্যাস্টর অয়েল স্ক্যাল্পে (Scalp) মাসাজ করলে খুশকি দূর হয়।
মনে আছে ছোটবেলায় দেখেছি, যাদের মাথায় বা ভুরুতে চুল কম সেখানে মা দিদিমারা ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে দিচ্ছেন। কারণ এটা বহু বছর ধরেই প্রমাণিত যে ক্যাস্টর অয়েল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই তেল মাথায় মাসাজ করা হলে হেয়ার ফলিকলে রক্ত চলাচল বাড়ে। তাছাড়াও এতে আছে ওমেগা নাইন (Omega 9 Fatty Acid) ফ্যাটি অ্যাসিড। যা চুলের পুষ্টি সরবরাহ করে।
ক্যাস্টর অয়েল হেয়ার মাস্ক (Castor Oil Hair Mask):
১। অ্যালোভেরা ও ক্যাস্টর অয়েল মাস্ক (Aloe Vera And Castor Oil Hair Mask)
সম পরিমাণে অ্যালোভেরা (Aloe Vera) জেল ও ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) মিশিয়ে নিন। ভালো করে এটা দিয়ে মাসাজ (Massage) করুন। তারপর একটি হট টাওয়েল জড়িয়ে নিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রেখে দিন। বিশেষ অসুবিধে না থাকলে এই প্যাক সারা রাতও মাথায় রেখে দিতে পারেন। এবার ৪৫ মিনিট পর শ্যাম্পু (Shampoo) করে নিন।
২। মেথি, নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েলের মিশ্রণ (Fenugreek, Coconut Oil And Castor Oil Hair Mask)
একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল (Coconut Oil) , ২ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল (রেড়ির তেল) ও সামান্য মেথি নিয়ে সেটা ফোটান। মেথি থেকে তেল বেরনো শুরু হলে আঁচ বন্ধ করে পাত্র নামিয়ে নিন। এই তেল ঠাণ্ডা করে একটা পাত্রে রেখে দিন। মাঝে মাঝে এই তেল দিয়ে মাসাজ করতে পারেন।নারকেল তেলের পরিবর্তে সর্ষের তেল, আমন্ড তেল বা অলিভ অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। ক্যাস্টর অয়েলের সাথে গ্লিসারিন মিশিয়েও মিশ্রণ তৈরি করা যায়। ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল নিলে তাতে ৪ ফোঁটা গ্লিসারিন মেশাবেন। এইভাবেই অনুপাত করে নেবেন।ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে শুধু জল মিশিয়েও মাখা যায়। আগেই বলেছি এই তেল ভারী হয়। তাই জল মিশিয়ে এটাকে একটু পাতলা করা যায়।
সপ্তাহে একদিন দুই টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে তার মধ্যে দুটো ডিম ফেটিয়ে দিন। আর যোগ করুন এক টেবিল চামচ মধু। এই প্যাক তৈরি করে মাথায় লাগান। মাথায় শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে খুব ভালো কাজ দেয় এই প্যাক।
অকালপক্বতা রোধ করে (Castor Oil For White Hair Treatment):
একদিন সকালে উঠে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ যদি আবিষ্কার করেন আপনার চুলের মাঝে উঁকি দিচ্ছে রুপোলী রেখা, আঁতকে উঠবেন না। বরং চট জলদি মাথায় ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) মাসাজ করা শুরু করে দিন। আরে বাপু, বাকি চুলগুলোকে বাঁচাতে হবে তো নাকি? আসলে ক্যাস্টর অয়েলে আছে এমন কিছু উপাদান যা চুলের পিগমেন্টকে দীর্ঘদিন ধরে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম।
ত্বকের যত্নে ক্যাস্টর ওয়েল বা রেড়ির তেল (Castor Oil For Skin)
সুন্দর এবং সুস্থ হোক ত্বক (Castor Oil For Glowing Skin):
১. ত্বকের শুষ্কতা, ব্রণ বা সানবার্ণের জন্য কখনো কখনো মুখের ওপরে ফোলা ভাব দেখা দেয়। ক্যাস্টর অয়েলের ঔষধিয় গুণ থেকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
২. যদি রেড়ির তেল (Castor Oil) নিয়মিত ভাবে লাগানো যায় তাহলে এটি বয়স বাড়ার চিহ্ণগুলোকে লুকোতে সাহায্য করে।
৩. যে সব লোকেদের ত্বকে ব্রণ হবার সম্ভাবনা থাকে, তারা ব্রণ হবার ভয়ে মুখে কোনো রকম তেল লাগাতে পারে না। অথচ ক্যাস্টর অয়েল ব্রণ কম করতে খুবই উপযোগী হয়।
৪. ক্যাস্টর অয়েল (রেড়ির তেল) ত্বককে ময়শ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করে। যদি আপনি ত্বককে ময়শ্চারাইজ রাখতে সস্তা বা ঘরোয়া উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে ক্যাস্টর অয়েলের (Castor Oil) থেকে ভাল কিছু হতে পারে না।
স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে (Natural Moisturizer):
ক্যাস্টর অয়েলে (রেড়ির তেল) আছে Ricinoleic অ্যাসিড এবং মোনোস্যাচুরেটেড (Monosaturated) ফ্যাটি অ্যাসিড (Fatty Acid)। এই দুটো পদার্থই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সক্ষম। আমাদের ত্বকের উপরিভাগে যদি জল বেরিয়ে যায় বা আর্দ্রতা শূন্য হয়ে যায় তখন ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) খুব কাজ দেয়।অনেক প্রসাধনী যেমন লোশন, মেকআপ প্রোডাক্টস এবং ক্লিনজারে এটা মেশানো হয়। অনেক সময় অনেক ক্ষতিকর প্রসাধনী আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা পুরো শুষে নয়। সেইসব প্রসাধনী ব্যবহার না করে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সরাসরি ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা যায়।এই তেল খুব ভারী তাই অন্য যে কোনও ত্বকের উপযোগী তেলের সঙ্গে যেমন ধরুন আমন্ড, অলিভ, নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাখতে পারেন।মাথায় রাখবেন, ক্যাস্টর অয়েলে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। তাই সারা অঙ্গে লাগানোর আগে একবার হাতে লাগিয়ে প্যাচ টেস্ট করে নেবেন। প্রতিদিন রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) নিয়ে আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে ঘষে মুখে লাগান। দেখবেন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকছে।
অ্যাকনে কমাতে সাহায্য করে (Get Rid Off Acne):
অ্যাকনে (Acne) হচ্ছে এমন একটি ত্বকের সমস্যা যা থেকে হতে পারে ব্ল্যাকহেডস (Black Heads), ব্রণ (Pimple) এবং মুখের মধ্যে ফোলা ফোলা দানা। যেহেতু ক্যাস্টর অয়েলে অ্যাণ্টি ইনফ্ল্যামেটারি এবং অ্যাণ্টি (Anti Bacterial) ব্যাকটিরিয়াল উপাদান আছে তাই অ্যাকনের লক্ষণ কমাতে এটি খুব উপকারী। অ্যাকনে কম করার জন্য এই তেল ব্যবহার করা যায়। এতে যেহেতু আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা আছে, সুতরাং অ্যাকনে কমানোর সাথে সাথে এটি ত্বকে আর্দ্রতাও বজায় রাখতে সক্ষম। অ্যাকনে থেকে যে জ্বালা হয় তার জন্য কটন বা তুলোর বলে অল্প একটু ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে ব্রণ বা অ্যাকনেতে লাগান। যদি কোথাও সান বার্ন হয়ে থাকে সেখানেও ব্যবহার করতে পারেন এই তেল। ঘণ্টা খানেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। অনেক আরাম পাবেন।ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে অ্যাকনে দূর করার একটি পদ্ধতি আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। এটি অতি সহজ একটি উপায়। বেশি সময়ও লাগবে না এবং আপনার উদ্দেশ্যও সিদ্ধ হবে। রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে হাল্কা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। গরম জল দিয়ে মুখ ধুলে আপনার মুখের বা ত্বকের ছিদ্রগুলো সব খুলে যাবে। এবার সার্কুলার বা চক্রাকার মোশনে এই তেল অল্প মাত্রায় মুখে মাসাজ করুন। বেশি চাপ দেবেন না। হাল্কা করে মাসাজ করবেন। সারা রাত এই তেল মুখে রেখে দিন যাতে এই তেল আপনার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করার সময় পায়। সকালে উঠে ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই তেল ত্বকের এতটাই গভীরে গিয়ে কাজ করে যে অ্যাকনে হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। দ্বিতীয়ত এই তেলে উপস্থিত অ্যাসিড জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
বয়স ধরে রাখতে (Anti Aging Treatment):
এই তেলে আছে অ্যাণ্টি এজিং প্রপার্টি (Anti Aging Property)। ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) যখন ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে তখন সেটা কোলাজেন ও ইলাস্টিনের উৎপাদন অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। এই দুটোর উৎপাদন বেড়ে গেলে ত্বকে বলিরেখা ও ফাইন লাইন আসতে দেরি হয়। ত্বক অনেক বেশি সজীব ও তরুণ দেখায়।
স্বাস্থ্যের যত্নে রেড়ির তেল বা ক্যাস্টর অয়েল এর ব্যবহার (Castor Oil For Health)
ল্যাক্সেটিভ হিসেবে (Laxative):
যাদের দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) আছে তাদের জন্য ক্যাস্টর অয়েল খুব ভালো কাজ দিতে পারে। বয়স্ক মানুষদের জন্য বিশেষ করে এটি একটি প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। তবে ক্যাস্টর অয়েল সব সময় অল্প মাত্রায় গ্রহণ করবেন। বেশি মাত্রায় ক্যাস্টর অয়েল মাথা ঘোরা (Dizziness), পেট ব্যাথা, গা বমিবমি ভাব এবং ডাইরিয়া হতে পারে। তাই কত মাত্রায় ক্যাস্টর অয়েল নেবেন সেটা জানা না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।যেহেতু ক্যাস্টর অয়েল স্বাদে একটুও ভালো নয় তাই অনেকেরই এটা সহ্য নাও হতে পারে। আমরা আপনাদের বলে দিচ্ছি কয়েকটি সহজ উপায়। দুধ বা কমলালেবুর রসের সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে পান করুন। এতে আপনার পেট পরিষ্কার হবে যার প্রভাব পড়বে আপনার ত্বকে। এই তেল শুধু পেট পরিষ্কারই করে না, ব্যাকটিরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ইমিউনিটিও বাড়ায়।
ক্যাস্টর অয়েল ডিটক্সিফিকেশান প্যাক (Castor Oil Detoxification Pack):
পেটের উপর ভালো করে ক্যাস্টর অয়েল মাসাজ করুন। এবার একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পেট ঢেকে দিন। কাপড়ের উপরে একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে পেট মুড়ে দিন। এর উপরে একটি গরম জলের বোতল রাখুন। বোতলটি ৪৫ মিনিট মতো রাখবেন। তবে একঘণ্টার বেশি একদম রাখবেন না। এটি করলে আপনার গ্যাস, অম্বল, বমি বমি ভাব ও ব্লটিং অনেকটাই উপশম হবে।
ক্ষত সারাতে কাজে লাগে (Wound Healing):
বেশিরভাগ ক্ষত সারানোর মলম বা লোশনে থাকে ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) বা রেড়ির তেল। কারণ এই তেলে ক্ষত সারানোর ক্ষমতা আছে। আসলে এই তেলে আছে নতুন পেশি গঠনের ক্ষমতা। তাই কোথাও কেটে বা পুড়ে গেলে এই তেল অল্প করে ব্যবহার করা যেতে পারে।তাছাড়া এই তেলে যে Ricinoleic অ্যাসিড আছে যা ক্যাস্টর অয়েলের মূল ফ্যাটি অ্যাসিড উপাদান সেটা ত্বকের জ্বালা এবং ব্যথা সারাতেও কাজ দেয়। যাদের হাত পা ফোলার (Swelling) সমস্যা আছে বা গাঁটে (Gout) ব্যাথা হয় তারা এই রেড়ির তেল ব্যবহার করতে পারেন
ছত্রাক প্রতিরোধ করে (Fungus Treatment):
এক ধরণের ছত্রাক আছে যা আমাদের মুখের বিশেষত দাঁতের ক্ষেত্রে খুব ক্ষতিকর। এই ছত্রাক মাড়ির সংক্রমণ ও রুট ক্যানালে (Root Canal) সংক্রমণ ঘটায়। ক্যাস্টর অয়েল (Castor Oil) এই ছত্রাক প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক মানুষদের যে ধরণের দাঁতের সমস্যা হয় সেগুলি দূর করতে খুব কাজে দেয় ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল।
সেরা ছয়টি ক্যাস্টর অয়েল ব্র্যান্ড (Best Castor Oil Brands)
১) অ্যালোভেদা ডিসটিল কোল্ড প্রেসড হেক্সানে ফ্রি ক্যাস্টর অয়েল (Aloe Veda Distil Cold-Pressed Hexane Free Castor Oil)
চুল ও ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যাবে এই তেল। বিশেষ করে চুলের গ্রোথের জন্য এই তেল খুব কাজে দেবে। দামের দিক থেকেও বেশ সস্তা এই তেল।
এই তেলটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন
২) নেচারস অ্যাবসোলিউট ক্যাস্টর অয়েল (Nature’s Absolute Castore Oil)
ত্বক ও চুলের জন্য তো ব্যবহার করা যায়ই, তাছাড়াও এই তেল মেকআপ রিমুভার হিসেবেও কাজে লাগানো যায়।
এই তেলটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন
৩) সোলফ্লাওয়ার কোল্ড প্রেসড অয়েল (Sunflower Cold Pressed Oil)
প্রতিদিন ত্বক ও চুলে এই তেল লাগালে কাজে দেয়। ভুরু আর চোখের পাতাতেও লাগাতে পারেন অনায়াসে।
এই তেলটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন
৪) জি ড্রপ জামাইকান ব্ল্যাক ক্যাস্টর অয়েল (Jamaican Black Castor Oil)
ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য এই তেল আদর্শ। যেহেতু এর টেক্সচার হাল্কা তাই শ্যাম্পু করার পর কনডিশানার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
এই তেলটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন
৫) হিল ডিউজ ক্যাস্টর অয়েল (Hilldews Castor Oil)
যাদের ত্বক একটু বেশি মাত্রায় শুষ্ক তাদের জন্য খুব কাজে দেবে এই তেল। কারণ এই তেল আপনার ত্বকে আর্দ্রতা জোগাবে।
এই তেলটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন
৬) মরফিম রেমিডিজ ক্যাস্টর অয়েল (Morpheme Remedies Castor Oil)
ত্বক ও চুলের যে কোনও সমস্যায় এই তেল কাজে দেবে। মরফিম অনেক দিনের পুরনো একটি ব্র্যান্ড, তাই ভরসা রাখতে পারেন।
এই তেলটি কিনতে হলে এখানে ক্লিক করুন
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!