পড়াশোনা

পেশায় ডাক্তার, নেশায় প্রোগ্রামার বাংলাদেশের মেহদি হাসান খানের জন্যই কম্পিউটারে বাংলা লিখছি আমরা!

Doyel Banerjee  |  May 31, 2019
পেশায় ডাক্তার, নেশায় প্রোগ্রামার বাংলাদেশের মেহদি হাসান খানের জন্যই কম্পিউটারে বাংলা লিখছি আমরা!

কম্পিউটারে যে আঞ্চলিক (Bengali) ভাষা লেখা যেতে পারে, এটা একসময় আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। অথচ এই অসম্ভবকেই সম্ভব করার স্বপ্ন দেখছিলেন একজন। তিনি বাংলাদেশের মেহদি হাসান খান (Mehedi Hasan Khan)। তাঁর মনে হয়েছিল যে ভাষা (Bengali) মুখে বলছি, খাতায় লিখছি, সেটা দিয়েই আমাদের টাইপ (keyboard) করা উচিত। আর আশ্চর্য বিষয় হল এই যে, হঠাৎ এরকম চিন্তাভাবনা তাঁর মাথায় এসেছিল যখন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র আঠেরো। সদ্য ঢুকেছেন ঢাকার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে। ডাক্তারি পড়ার চাপ তো কিছু কম নয়। কিন্তু তার মধ্যেই দিনরাত এক করে পড়ে রইলেন তাঁর স্বপ্নের পিছনে। ডাক্তারি পড়তে এলেও মেহদি হাসানের (Mehedi Hasan Khan) আরও একটি পছন্দের বিষয় হল সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং। নিজের ছোট্ট ঘরে একটা মামুলি কম্পিউটার নিয়েই লড়াই চলতে থাকল। এই নিয়ে তাঁকে কম কটূক্তি শুনতে হয়নি। যে ছেলে ডাক্তারি পড়তে এসেছে তার চিকিৎসাবিদ্যায় মন নেই, সে কিনা দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছে কী করে ইংরেজি কিবোর্ড (keyboard) ব্যবহার করে বাংলা (bengali) লেখা যায় তাই নিয়ে। মেহেদির প্রোফেসররা এ-ও বলেছিলেন তাঁর অবিলম্বে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দেওয়া উচিত! 

আরও পড়ুন বাংলাদেশের খুলনার মেয়ে আসমা কাজীর আশ্চর্য কাহিনি 

ডক্টর হাসান কিন্তু হাল ছাড়েননি। অনেক পরিশ্রমের পর অবশেষে তৈরি হল তাঁর স্বপ্নের ফন্ট। তিনি তাঁর নাম দিলেন ‘অভ্র।’ ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ জন্ম হয় এই ফন্টের (font)। কিন্তু এই ফন্টের নাম অভ্র (avro) কেন? যখন তিনি এই সফটওয়্যার তৈরি করলেন, তখন তাঁর মনে হল, এবার এটার একটা নামকরণ করা উচিত। কিন্তু কী নাম দেওয়া যায়? ভাবতে-ভাবতে তিনি অভিধানের পাতা উল্টিয়ে দেখতে থাকলেন। আচমকা চোখ আটকে গেল একটা শব্দের উপর এসে। আর সেই শব্দ হল অভ্র, যার অর্থ আকাশ। এই নামটিই তাঁর তৈরি সফটওয়্যারের জন্য যথার্থ মনে হল তাঁর। কারণ, তিনি তো তাই চেয়েছিলেন। যে আকাশের মতো উন্মুক্ত হবে ভাষা, যার কোনও সীমানা থাকবে না। পৃথিবীর যে-কোনও প্রান্তে বসে যে কেউ এই ফন্ট ব্যবহার করতে পারবে। অভ্র নামকরণের পর মেহদি দিলেন তাঁর ট্যাগলাইন বা স্লোগান, “ভাষা হোক উন্মুক্ত!” সত্যিই ভারী সুন্দর এই লাইন। 

সারা বিশ্বে যারা বাংলায় লেখেন, তাঁরা প্রত্যেকেই মেহদির কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, এই কাজের জন্য তিনি কোনও কপিরাইট বা পেটেন্ট দাবি করেননি। যারা মেহদিকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তাঁরা জানেন যে, তিনি ভীষণ লাজুক ও প্রচারবিমুখ। মেহদি নিজে অবশ্য বলেন, নিভৃতে থাকেন বলেই তাঁর কাজ করতে সুবিধে হয়। ডাক্তারি তিনি সম্মানের সঙ্গেই পাশ করেছেন। স্ত্রী সুমাইয়া নাজমুন আর ছেলে অর্ককে নিয়ে তাঁর সুখী সংসার। তবে আপাতত অভ্রর আরও উন্নতি সাধনে সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং নিয়েই কাজ করেন তিনি। এই নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে বিনীত সুরে মেহদি বলেন, “এটা আমার ভাল লাগে। যদি সফল না হই, আবার ডাক্তারি করব তখন!” 

বাংলা ভাষা আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে ডক্টর হাসান! 

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!

Read More From পড়াশোনা