মেকআপ ট্রেন্ড ও আইডিয়া

দুর্গাপুজোর কমপ্লিট মেকআপ গাইড: ত্বকের ধরন ও টোন অনুযায়ী মেকআপের কায়দা ও প্রোডাক্টস

Parama Sen  |  Aug 28, 2019
দুর্গাপুজোর কমপ্লিট মেকআপ গাইড: ত্বকের ধরন ও টোন অনুযায়ী মেকআপের কায়দা ও প্রোডাক্টস

আর যার কাছে, যা-ই হোক না কেন, দুর্গা পুজো মানে অনেকের কাছেই কিন্তু সাজগোজ! নতুন জামা এবং নতুন লুক! আর তাই মাসখানেক ধরে দর্জির দোকানে লাইন আর পার্লারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট খাতাটি ফুল। ফেসিয়াল করতে-করতে পার্লারের দিদির হাতে কড়া পড়ে যাওয়ার জোগাড়! আর আপনি সংসার-অফিস-বস-স্বামী-ছানাপোনা সামলে শনি-রবিবারের দুপুরের ভাতঘুমের সময়টা কাটাচ্ছেন হয় দরজির সামনে ডিজাইনের বই ঘেঁটে, নয়তো শপিং মলে প্যাকেট সামলে, নয়তো পার্লারের স্পা চেয়ারে! মোট কথা, সে একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি! একটু এদিক থেকে ওদিক হওয়ার যো নেই! সব না হয় হল। প্রস্তুতি পর্বটা না হয় ভালই সমাধা হল। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচ? মানে, পুজোর (Durga Puja) পাঁচদিন? তখন তো আর রোজ-রোজ পার্লারে ছুটতে পারবেন না! তখন মেকআপের গুরুদায়িত্বটি সামলাবে কে? সারা বছর তো মেকআপের দিকে আমরা কেউই তেমন নজর-টজর দিই না। ওই কোনও অনুষ্ঠানে, পয়লা বৈশাখ কিংবা কোনও বিয়েবাড়ি এলে একটু-আধটু পোঁচ মারি মুখে! কিন্তু পুজোর সময় তো সেলফি রেডি মুখ চাই! আর সেই কাজেই আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি আমরা। এখানে দেওয়া হল একটি দীর্ঘ, সুবিন্যস্ত মেকআপ (Makeup) গাইড, যেটি আপনি কালোই হোন বা ফরসা, আপনার ত্বক তেলতেলেই হোক কিংবা শুকনো, আপনার কাজে আসবেই!

যাঁদের ত্বক তেলতেলে, তাঁরা কীভাবে মেকআপ করবেন (Durga Puja Makeup Tips For Oily Skin)

পিক্সাবে

সবচেয়ে আগে শুরু করা যাক, তেলতেলে ত্বকের জন্য মেকআপ দিয়ে। এই ধরনের ত্বক বাগ মানানো একটু কঠিন বটে, কিন্তু ঠিকঠাক প্রোডাক্ট ও মেকআপের কায়দা বেছে নিলে কিন্তু মেকআপ সহজে বসানো এবং টেকানো, দুটোই সহজ! সেই কায়দা এবং প্রোডাক্টের কথাই বলে দেওয়া হল এখানে। মেকআপ করার আগে কয়েকটা জরুরি জিনিস মাথায় রাখবেন। এক, আগে ভাল করে কোনও ক্লেনজিং জেল দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন। তারপর মুখে লাগাবেন টোনার, যাতে লোমকূপের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে অতিরিক্ত তেল বেরনো বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ওয়াটার বেসড কোনও ময়শ্চারাইজার লাগাতে হবে। তেলতেলে ত্বকের অধিকারিণীরা অনেক সময়ই এই ময়শ্চারাইজারের পার্টটা স্কিপ করতে চান আরও তেলতেলে দেখানোর ভয়ে। কিন্তু ত্বক ময়শ্চারাইজড না থাকলে কিন্তু বেস মেকআপটাই ঠিক করে বসবে না।

বেস মেকআপের কায়দাকানুন (Base Makeup For Oily Skin)

ত্বকের অতিরিক্ত তেল বেরনো বন্ধ করতে বেস হিসেবে প্রথমেই লাগান প্রাইমার। তবে কোনও বেস প্রোডাক্টই হাত দিয়ে লাগাবেন না। আপনি এক্সপার্ট না হলে কোনওদিন আঙুলের ডগা দিয়ে ভাল করে মেকআপ বসাতে পারবেন না। তাই বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করুন। ভাল করে সারা মুখে সমান ভাবে প্রাইমার লাগান। এটি আপনাকে ম্যাট লুক দিতে সাহায্য করবে।

যদি আপনার ত্বকে কালো ছোপ বেশি থাকে, তা হলে এর পর আপনাকে ব্যবহার করতে হবে কনসিলার। ম্যাট কলসিলার নিন। যেখানে-যেখানে দাগ-ছোপ আছে, সেখানে ছোট-ছোট টিপ দিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করুন। এরপর আসবে ফাউন্ডেশনের পালা। এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন। যদি আপনি দিনের জন্য মেকআপ করছেন, তা হলে ফাউন্ডেশন স্কিপ করতে পারেন। প্রাইমার-কনসিলারের পর কম্প্যাক্ট পাউডারের ছোঁওয়া পেলেই হল।

তেলতেলে ত্বকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হল ফাউন্ডেশন ব্যাপারটা। কারণ, এটির উপরেই আপনার পুরো মেকআপ টিকে থাকবে। আর এটাই মেকআপের শেষ লেয়ার। তাই ভেবেচিন্তে সেরা প্রোডাক্টটি কিনুন আর সেটিকে সময় নিয়ে, যত্ন করে ব্লেন্ড করুন সারা মুখে ও গলায়। 

এর পর বেস শেষ করুন ট্রান্সলুসেন্ট পাউডারের ছোঁওয়া দিয়ে। খবরদার, পাউডারের সঙ্গে দেওয়া পাফটি ব্যবহার করবেন না। কিনে নিন একটি পাউডার ব্রাশ, যেটি দিয়ে হালকা করে পাউডার লাগান মুখে ও গলায়। মনে রাখবেন, এই পাউডার লাগানো হয় আপনার লুকটিকে আরও ম্যাটিফাই করার জন্য। ফরসা দেখানোর জন্য নয়! তাই একগাদা ভুলেও লাগাবেন না যেন!

কন্টোরিং করার জন্য বেছে নিন ব্লাশ অন। কারণ, আমরা কেউই প্রোফেশনাল মেকআপ আর্টিস্ট নই। ফলে পটু হাতে কন্টোরিংয়ের লাইন টানাটা প্রায় অসম্ভব। তার চেয়ে চিক বোনের উপরে হালকা ব্লাশের ছোঁওয়া বরং ঢের ভাল এবং সাবধানীও বটে।

তেলতেলে ত্বকে কেমন হওয়া উচিত চোখের মেকআপ (Eye Makeup For Oily Skin)

যদি আপনার ত্বক তেলতেলে হয়, তা হলে চোখের মেকআপের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না। শুধু মনে রাখবেন কোনও স্টিকি শ্যাডো আপনি ব্যবহার করবেন না। ওয়াটারপ্রুফ কাজল, লাইনার এবং মাস্কারা ব্যবহার করুন। চোখের ধরন অনুযায়ী এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন আইলাইনার আঁকার কায়দা। তবে বেশি মোটা করে কাজল দেবেন না। কারণ, যেহেতু আপনার ত্বক তেলতেলে, একটা সময় পরে তেল বেরবেই এবং তখন সেই কালো লাইন ধেবড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে ষোলো আনা!

তৈলাক্ত ত্বকের উপযোগী ঠোঁট (Lipstick For Oily Skin)

আপনার ত্বক তৈলাক্ত হলে এই একটা জায়গায় আপনার অ্যাডভান্টেজ থাকবে অন্যদের উপর! কারণ, ঠোঁটও তেলতেলে হবে এবং সহজে লিপস্টিক লাগানোর পর তা ক্র্যাক করবে না! আপনি বেছে নিন পছন্দসই রংয়ের ম্যাট লিপস্টিক। কারণ, আপনার ত্বক তৈলাক্ত। মুখের ম্যাট ফিনিশের সঙ্গে ঠোঁটও তো খাপ খাওয়া চাই, তাই না? রাতে গ্লসি লুক চাইলে এর উপর হালকা কোনও শিমারি গ্লস বুলিয়ে নিতে পারেন। 

যাঁদের ত্বক শুষ্ক, তাঁদের জন্য পুজো স্পেশ্যাল মেকআপ গাইড (Durga Puja Special Makeup Tips For Dry Skin)

পিক্সাবে

সত্যি কথা বলতে গেলে, আপনার উপর মা দুর্গার আশীর্বাদ আছে! নইলে সারা দুনিয়া যখন ঘেমেনেয়ে একশা এবং মুখের তেল সামলাতে ব্যস্ত, আপনি তখন মুচকি হাসছেন, কারণ, ঘাম-তেল মেখে ততক্ষণে আপানার শুষ্ক, ফুটিফাটা ত্বক ঝলসাচ্ছে! মানে, অন্যের সর্বনাশ, আপনার পৌষমাস আর কী! যাক গে, তবুও শুষ্ক ত্বক এমনি নিয়ে তো আর পুজোর দিনে বাইরে বেরনো যায় না। তাই আপনারা ঠিক কী-কী করবেন পুজো-রেডি হতে, সেটা বলে দেওয়া হল এখানে…

বেস মেকআপ করবেন কীভাবে (Base Makeup For Dry Skin)

বেস হিসেবে যা-যা আপনারা ব্যবহার করবেন, মানে, প্রাইমার, কনসিলার, ফাউন্ডেশন কিংবা পাউডার, সবই হতে হবে অয়েল বেসড, কারণ আপনার ত্বকে সারা দিন ধরে তারা জরুরি তেলটুকু যোগাবে এবং মেকআপে লাইন পড়তে দেবে না। মেকআপের আগে ক্লেনজিং-টোনিং-ময়শ্চারাইজিং রুটিন একই হবে। শুধু আপনারা ব্যবহার করবেন ক্লেনজিং মিল্ক, রোজ টোনার এবং হালকা, অয়েল বেসড ময়শ্চারাইজার। হালকা, কারণ, পরের অন্য প্রোডাক্টগুলিও আপনি অয়েল বেসডই ব্যবহার করবেন।

প্রাইমার আপনাদের জন্য জরুরি নয়। তবুও যদি মনে হয়, প্রাইমার লাগালে আরও একটু ভরসা পাবেন, তা হলে হালকা করে লাগান, যাতে একটা পরত পরে না যায়।

কনসিলার লাগাতেই হবে দাগ-ছোপ ঢাকার জন্য। তাই অয়েল বেসড কনসিলার বেছে নিন। খুব ভাল করে বিউটি ব্লেন্ডার কিংবা কনসিলার ব্রাশ দিয়ে ব্লেন্ড করে দিন প্রাইমারের সঙ্গে। তবে কনসিলার আমরা বলছি বলেই আপনাকে সেটা ঠুসে লাগাতে হবে, তা নয়। মুখে দু-একটা ব্রণ থাকলে প্লিজ কনসিলার লাগাবেন না। জানবেন, মিনিমাম মেকআপ ইজ দ্য বেস্ট! 

ফাউন্ডেশন লাগাতেই হবে এবং ভাল, অয়েল বেসড ফাউন্ডেশন। একটু পয়সা খরচ করেই এটি কিনুন। ত্বকের সঙ্গে রং মিলিয়ে। ফাউন্ডেশন ব্রাশ অথবা বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর অল্প একটু জল স্প্রে করে নিন, যাতে সেটি জায়গামতো বসে যায়। 

শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে বেস মেকআপ এখানেই শেষ। পাউডারের কোনও প্রয়োজন আপনাদের নেই!

চোখের মেকআপ, শুষ্ক ত্বকের অধিকারিণীদের জন্য (Eye Makeup Tips For Dry Skin)

চোখের মেকআপের সময় আপনাদের একটু যত্নশীল হতে হবে। কারণ, আইলাইনার কিংবা আইশ্যাডো, দুটোই আপনার চোখের পাশের ত্বককে আরও শুকনো করে দেখায়। তাই চোখের পাতার উপরে একটু প্রাইমার লাগিয়ে নিয়ে তারপর আইশ্যাডো লাগান। ক্রিম বেসড আইশ্যাডো হলে ভাল হয়। আইলাইনারের বদলে কাজল, কোহল কিংবা আই পেনসিল বেছে নিন। যা এক্সপেরিমেন্ট করার, এগুলো দিয়েই করুন।

ঠোঁটের মেকআপের জন্য কী ব্যবহার করবেন (Lip Shades For Dry Lips)

আপনাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হল যে-কোনও ধরনের লিপ গ্লস কিংবা গ্লসি লিপস্টিক। লাগাতে পারেন ক্রিম বেসড লিপস্টিকও। তবে যে-কোনও লিপস্টিক লাগানোর আগে একটু লিপ বাম লাগিয়ে নেবেন, যাতে ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনাই না থাকে।

যদি আপনি কম্বিনেশন ত্বকের অধিকারিণী হন, তা হলে কীভাবে মেকআপ করবেন (Durga Puja Makeup Tips For Combination Skin)

পিক্সাবে

এঁদের কাজটা সবচেয়ে কঠিন! কারণ, এঁদের ত্বকের ধরন সত্যিই গোলমেলে! এঁদের টি জোন, অর্থাৎ, নাকের চারপাশ হয় তেলতেলে, আবার গাল, কপাল ও চোখের চারপাশটা হয় শুষ্ক প্রকৃতির! সুতরাং, আপনাদের মেকআপ করতে হবে খুব ভেবে-চিন্তে, বেশ কয়েকটি নিয়ম মেনে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক, কী-কী নিয়ম মানবেন আপনারা…

কম্বিনেশন ত্বকের জন্য বেস মেকআপ (Base Makeup For Combination Skin)

ক্লেনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিংয়ের পাট চুকলে বেস শুরু করুন প্রাইমার দিয়ে। প্রাইমার লাগাতে হবে দুই ভাবে। টি জোনে একটু মোটা করে আর বাকি মুখে হালকা হাতে। কারণ, নাকের দুই পাশ যেহেতু তৈলাক্ত, তাই ওখানকার ছিদ্রগুলি বন্ধ করাটা বেশি জরুরি। বাকি মুখের ত্বক আবার শুষ্ক, তাই সেখানে অতিরিক্ত প্রাইমারের প্রয়োজন নেই।

এরপর আসবে কালার কারেক্টিং কনসিলারের পালা। কালার কারেকশনের প্রয়োজন আছে, কারণ, আপনার মুখের বিভিন্ন জায়গায় ত্বকের ধরন বিভিন্ন। ফলে নাকের দুই পাশের চেয়ে মুখের বাকি অংশের ত্বকের রংও আলাদা হবে। কনসিলার যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে প্রয়োজন হলে দুই পরত লাগান।

এই ধরনের ত্বকে বেস মেকআপের জন্য দরকার বিল্ড আপ ফাউন্ডেশনের। মানে, যে ফাউন্ডেশন প্রয়োজনে কোনও জায়গায় দুই পরত লাগানো যায়, কিন্তু তাতে রং মেলানোতে কোনও সমস্যা হয় না। বিউটি ব্লেন্ডারে ফাউন্ডেশন নিয়ে ভাল করে প্রয়োজন অনুযায়ী তৈলাক্ত জায়গায় কম এবং শুষ্ক জায়গায় বেশি করে লাগান! তা হলে মুখে সমান টোন আসবে।

আপনাদের ক্ষেত্রে এরপরে প্রয়োজন হবে হাইলাইটারের! কারণ, যতই ভাল করে মেকআপ করুন, পরে যদি কোনও সময় নাকের পাশে তেল ফুটে বেরোয়, তা হলে তার সঙ্গে যেন বাকি মুখের সামঞ্জস্য থাকে! তাই চিকবোনের উপর দিয়ে হনু পর্যন্ত হাইলাইট করুন শিমারি হাইলাইটার দিয়ে, তারপর ভাল করে ব্লেন্ড করে দিন।

আর হ্যাঁ, আপনারাও পাউডার স্কিপ করুন।

চোখের মেকআপ কীভাবে করবেন (Eye Makeup Tips For Combination Skin)

আপনাদের ক্ষেত্রে লোকের নজর টানতে হবে চোখের দিকে, যাতে বাকি মুখের ত্বকের খুঁত কেউ দেখতে না পায়! তাই চোখের মেকআপে যত পারেন যত্ন করুন। আইশ্যাডো, মোটা করে লাইনার, কোহল, মাস্কারা, সব লাগান! করতে পারেন উইঙ্গড আই, দুটো-তিনটে রংয়ের শ্যাডোর কম্বিনেশন! মোট কথা, আপনার চোখ হতে হবে ড্রামাটিক! আর পাউডার কিংবা ক্রিম, যে-কোনও ধরনের শ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন আপনি।

ঠোঁট যেন কথা বলে মেকআপের মাধ্যমে! (Lipstick Shades For Combination Skin)

চোখের ক্ষেত্রে যে নিয়ম ছিল, একই নিয়ম চালু থাকবে ঠোঁটের ক্ষেত্রেও। ঠোঁটে আনুন গাঢ় রংয়ের ছোঁওয়া। লিপ লাইন আঁকুন একটু উপর দিয়ে, যাতে ঠোঁট আরও ভরাট দেখায়। আরও একটা ছোট্ট ট্রিক আছে। ঠোঁটের ভিতরের দিকে একটু গাঢ় শেড লাগান আর বাইরের দিকে একটু হালকা, তাতে ঠোঁটের রহস্য আরও গভীর হবে! ঠোঁটের মেকআপ শেষ করবেন গ্লস দিয়ে।

শ্যামবর্ণারা কী-কী প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন (Makeup Products For Dusky Skin Tone)

Instagram

কীভাবে মেকআপ করবেন আর কী দিয়ে করতে পারেন, তা তো জেনে নেওয়া গেল ত্বকের ধরন অনুযায়ী। কিন্তু বেস মেকআপ থেকে শুরু করে ঠোঁট, সবকিছুই করতে হবে আপনার ত্বকের ধরন এবং টোন অনুযায়ী! মানে, সোজা বাংলায় বলতে গেলে, প্রোডাক্ট কেনার সময় ত্বকের ধরন অনুযায়ী তার বৈশিষ্ট্য দেখবেন আর তার শেড বাছবেন আপনার ত্বকের টোন অনুযায়ী! কীভাবে সেই সম্বন্ধেই এখানে গাইড করব আমরা। শুরু করছি, শ্যামবর্ণারা কী-কী মেকআপ শেড ব্যবহার করতে পারেন, তা দিয়ে…

বেস মেকআপের নানা প্রোডাক্ট (Base Makeup Products)

বেস মেকআপের নানা প্রোডাক্টের শেড বেছে নেওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়! এখানে কয়েকটি শেড বলে দেওয়া হল, যেগুলি শ্যামবর্ণারা ব্যবহার করতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত কিন্তু টেস্ট করে তবেই কিনবেন এই ধরনের প্রোডাক্টগুলি। 

প্রাইমারের শেড: ক্যারামেল, রেডিয়েন্ট ইয়েলো

ফাউন্ডেশনের শেড: বেজ, ক্যারামেল, মোকা, ব্রাউন, ডিপ

কনসিলারের শেড: চেস্টনাট, মিডিয়াম টু ডার্ক 

ট্রান্সলুসেন্ট পাউডারের শেড: ডাস্কি, হুইটিশ টু ডার্ক

ব্লাশ অনের শেড: গাঢ় লাল, কালচে খয়েরি, চেস্টনাট, ক্যারামেল

এগুলি হোক চোখের মেকআপের শেড (Eye Makeup For Dusky Skin)

শ্যামবর্ণাদের চোখের মেকআপে যে-যে শেড ব্যবহার করা যেতে পারে, সেগুলি হল…

আই মেকআপ শেড: পার্পল, গোল্ড, ব্রোঞ্জ, ব্লু ইত্যাদি, যদি সেফ খেলতে চান! যদি একটু এক্সপেরিমেন্টাল মেকআপে যেতে চান, তা হলে বেছে নিন হলুদ, শকিং পিঙ্ক, পাউডার পিঙ্কের মতো রং! এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন আইলাইনার এবং আইপেনসিলের শেড নিয়েও। কালো ছাড়াও মানাবে হালকা নীল, প্যাস্টেল সবুজ শেড। মাস্কারায় থাকুক আরও সাহসের ছোঁওয়া! নীল কিংবা পার্পল রঙে রাঙিয়ে দিন চোখের পাতা!

ঠোঁটের মেকআপের নানা রং স্কিন টোন অনুযায়ী লিপস্টিক (Lipstick According To Skin Tone)

লিপস্টিকের শেড: কপার ব্রাউন, গাঢ় লাল, রোজ পিঙ্ক, ম্যাজেন্টা, চকোলেট ব্রাউন, পিচ, ব্রোঞ্জ, নুড শেড

লিপ গ্লসের শেড: ব্রোঞ্জ, হানি, লালচে ব্রাউন

যাঁদের ত্বকের রং শ্যামবর্ণ, তাঁদের এই রংয়ের লিপস্টিক ও লিপ গ্লস মানাবে। এমনকী, এগুলো মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করেও লাগাতে পারেন!

ফর্সা ত্বকের মহিলারা কী-কী প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন (Makeup Products For Glowing Skin)

Instagram

যাঁরা ভাবেন যে, রং একটু ফরসার দিকে হলেই আপনারা যে-কোনও রংয়েই সুন্দরী হয়ে উঠবেন, তাঁরা কিন্তু ভুল ভেবেছেন! কারণ, ফর্সারও রকমফের আছে। আপনি হলদেটে ফর্সা নাকি গোলাপি ফর্সা, তার উপরেও নির্ভর করবে আপনার মেকআপ প্রোডাক্টের শেড! হলদেটে ফর্সা হলে আপনি ওয়ার্ম আন্ডারটোনের মানুষ আর গোলাপি ফর্সা হলে আপনাকে ধরা হবে কুল আন্ডারটোনের অধিকারী বলে। আর এই আন্ডারটোনের উপর ভিত্তি করেই কেনা উচিত মেকআপ প্রোডাক্টস। তবে আপনাকে অত চিন্তা করতে হবে না। কারণ, আমরা নিয়ে এসেছি মুশকিল আসান!

বেস মেকআপের নানা প্রোডাক্টের শেড কার্ড (Base Makeup Products For Glowing Skin)

বেস মেকআপ প্রোডাক্টটি যা-ই হোক না কেন, তার শেডের ক্ষেত্রে আপনাদের একটা থাম্ব রুল মেনে চলতে হবে। সেটি হল, আপনাকে ওয়ার্ম আন্ডাটোনের শেড বাছতে হবে। মানে, আপনার বেস মেকআপের যে-কোনও প্রোডাক্টের শেড ঘোরাফেরা করবে মিউটেড অরেঞ্জ, পিচ ও হানি-র মধ্যে। 

আপনাদের ক্ষেত্রে কতগুলি শেড একেবারে কিনতে মানা! সেগুলি হল, ব্রোঞ্জ, কপার ও ডার্ক ব্রাউন।

এগুলি হোক চোখের মেকআপের শেড (Eye Makeup Shades For Glowing Skin)

চোখের মেকআপ করার সময় ফর্সা স্কিন টোনের অধিকারিণীরা খুব একটা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারেন না। কারণ, ত্বকের সাদা রংয়ের জন্য যে-কোনও শেডই তাঁদের চোখে ফ্যাটফ্যাটে হয়ে ফুটে ওঠে। এঁরা যে রংগুলি বেছে নিতে পারেন আই মেকআপের জন্য, সেগুলি হল…

আইশ্যাডোর শেড: হানি, পিচ, মিউটেড অরেঞ্জ, শ্যাম্পেন, ব্রাউন, সফট পিঙ্ক।

তবে এঁরা কাজল আর কোহলের কম্বিনেশনে বোল্ড লুক আনতে পারেন নিজেদের চোখে!

ঠোঁটের মেকআপের নানা রং স্কিন টোন অনুযায়ী (Lipstick According To Skin Tone)

যদিও আমাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা যে, ফর্সাদের ঠোঁটে যে-কোনও রংই মানাবে, তবুও এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে চলুন দেখে নিই, ফর্সারা ঠোঁটে কোন রং লাগাতে পারেন!

লিপস্টিকের শেড: রিচ রেড, অরেঞ্জ, পিঙ্ক, কোরাল, পিচ

লিপ গ্লসের শেড: অরেঞ্জ, ব্রাইট শিমারি পিঙ্ক, ব্রাইট রেড, অমব্রে, নুড, প্লাম

গমরঙা ত্বকের অধিকারিণীদের জন্য মেকআপ প্রোডাক্ট শেডকার্ড (Makeup Products For Wheatish Skin Tone)

Instagram

বেশিরভাগ ভারতীয় মহিলাই আসলে এই গমরঙা ত্বকেরই অধিকারিণী। আর এই ধরনের ত্বকে বেশিরভাব শেডই মানায়! ফলে মেকআপের রং পছন্দ করাটা আপনাদের জন্য অনেক সহজ, বিশেষত চোখ আর ঠোঁটের মেকআপ। তবুও আপনাদের কাজ হালকা করতে এখানে একটি ডিটেলড প্রোডাক্ট শেড কার্ড দিয়ে দেওয়া হল…

বেস মেকআপের নানা প্রোডাক্ট (Base Makeup Products For Wheatish Skin Tone)

বেশিরভাগ ব্র্যান্ডই হুইটিশ বলে একটি আলাদা শেডই তৈরি করে ফেলেছে সাধারণ ভারতীয় ত্বকের রংয়ের জন্য! বেস মেকআপ প্রোডাক্ট কেনার সময় এই ইন্ডিয়ান স্কিন টোন কালারটি দেখে কিনুন। এই রেঞ্জে পাবেন আইভরি, পার্ল, ডেজার্ট বেজ, বেজ, ক্যারামেল ইত্যাদি। তারপর পারফেক্ট শেডটি বেছে নেওয়ার জন্য হাতের উপরে ফেলে টেস্টিং তো আছেই! 

তবে ব্লাশ অন কেনার সময় বেছে নিন কফি, চকোলেট, চেস্টনাট, মোকা ইত্যাদি ব্রাউন ফ্যামিলি ঘেঁষা রংগুলিকে। কন্টোরিংটা ভাল করে করতে পারবেন তা হলে!

এগুলি হোক চোখের মেকআপের শেড (Eye Makeup For Wheatish Skin Tone)

আইশ্যাডোর শেড কার্ড: গোল্ড, ব্রোঞ্জ, অরেঞ্জ রেড, ব্রাউন, ব্লু, পার্পল, গ্রিন

আইশ্যাডোর ক্ষেত্রে এই রংগুলি গমরঙা ত্বকে বেশি মানাবে। লাইনার ও আই পেনসিল বেছে নিন ঘন কালো রংয়ের। একটু অন্য রং স্পোর্ট করতে ইচ্ছে হলে লাগাতে পারেন গাঢ় খয়েরিও। মাস্কারা অবশ্যই কালো রংয়ের হবে।

ঠোঁটের মেকআপের নানা রং স্কিন টোন অনুযায়ী (Lip Shades According To Skin Tone)

এই ধরনের ত্বকের অধিকারিণীদের ঠোঁটে মানিয়ে যায় প্রায় সব রংই! তবুও কয়েকটি শেড যেন কথা বলে এঁদের ঠোঁটে, সেগুলি হল…

লিপস্টিকের শেড: নুড, কোরাল, ব্রিক রেড, মেরুন, বার্গান্ডি, ফুশিয়া, রক্ত লাল, ব্রোঞ্জ

লিপ গ্লসের শেড: নুড, সিনামন, বার্গান্ডি

দুর্গা পুজার মেকআপ সংক্রান্ত কিছু জরুরি প্রশ্নের উত্তর (FAQs)

১। প্রশ্ন: মেকআপ করার জন্য কি বিউটি ব্লেন্ডার জরুরি? নাকি আঙুলের ডগা দিয়েই কাজ সারা যেতে পারে?

উত্তর: যাঁরা পেশাদার মেকআপ আর্টিস্ট নন, তাঁদের জন্য বিউটি ব্লেন্ডার খুবই জরুরি। আঙুলের ডগা দিয়ে মেকআপ ঠিক করে স্প্রেড করতে গেলে যে দক্ষতা প্রয়োজন, তা পেশাদার মেকআপ আর্টিস্ট ছাড়া প্রায় কারও থাকে না!

২। প্রশ্ন: মেকআপের জন্য ক’টি ব্রাশ কিনতে হবে?

উত্তর: কিছু বেসিক ব্রাশ, যেমন, পাউডার ব্রাশ, আই শ্যাডো ব্রাশ, ব্লাশ অন ব্রাশ এবং লিপ ব্রাশ, এগুলি চাই-ই। এগুলো ছাড়া মেকআপ করার চেষ্টা করাটাও বৃথা!

৩। প্রশ্ন: মেকআপ রিমুভার কি জরুরি? নাকি সাধারণ ক্লেনজার দিয়ে পরিষ্কার করলেই কাজ চলে যাবে?

উত্তর: না, মেকআপ রিমুভার খুবই জরুরি। এটি মেকআপের শেষ কণা পর্যন্ত ধরে পরিষ্কার করে যা সাধারণ ক্লেনজার করতে পারে না। তাই প্রতিদিন মেকআপ করার পর রিমুভার দিয়ে তা তুলে ফেলবেন!

৪। প্রশ্ন: মেকআপ সেটিং স্প্রে কি ব্যবহার করতেই হবে?

উত্তর: না, মেকআপ সেটিং স্প্রে ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তার বদলে ঠান্ডা জলের স্প্রে-ও ব্যবহার করতে পারেন মেকআপ ধরে রাখার জন্য।

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজিহিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!

এগুলোও আপনি পড়তে পারেন

দুর্গা পুজা তে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠতে এই টিপসগুলি ফলো করুন

Read More From মেকআপ ট্রেন্ড ও আইডিয়া