পুজো মানে নতুন জামা, নতুন জুতো, নতুন সাহিত্যও! সাহিত্যাপ্রেমী বাঙালি পুজোর সময় নতুন গল্প-উপন্যাসে চোখে ডুবিয়ে থাকতে সত্যিই পছন্দ করে। আর তাই আমরা আয়োজন করেছিলাম অণুগল্প প্রতিযোগিতার। পাঠকদের কাছ থেকে পুজোর (Durga Puja) জন্য স্পেশ্যাল (special) অণুগল্প (story) চেয়েছিলাম আমরা। বিপুল সাড়া মিলেছে। নানা স্বাদের অণুগল্প জমা পড়েছে আমাদের দফতরে। তার মধ্যে থেকেই বেছে নেওয়া হল কয়েকটি। পুজোর চারদিন সকাল-বিকেল দু’টি করে অণুগল্প আমরা পেশ করব পাঠকদের জন্য।
এই ‘রূপান্তর’ গল্পটি লিখেছেন সম্পূর্ণা সাহা।
দেখতে-দেখতে আজ দুর্গাপুজোর পঞ্চমী এসে হাজির। শহরটা তাই আলোয় ভরে উঠেছে। কাল থেকে দশমী অবধি কাজের ছুটি উমার। শহরের একটা ফ্ল্যাটে কাজ করে উমা। ওদের বস্তি থেকে একটু দূরেই ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটে একটা বাচ্চা, তার মা-বাবা থাকে। মা-বাবা অফিসে গেলে উমা বাচ্চাটার দেখাশোনা করা। ওরা খুব ভাল, উমাকে খুব ভালবাসে। উমাও ওদের ভালবাসে, সাথে মাইনেটাও ভাল। অসুস্থ বাবা আর মা-হারা দুই ভাই-বোনের সংসার টানতে এই কাজটা তাই খুব দরকারি।
পুজোর আগে শেষদিন উমার ফিরতে দেরি হয়। পাঁচদিনে দরকারি সব জিনিস কোথায় থাকছে-সব বুঝিয়ে দেয় বাচ্চাটার মাকে, সঙ্গে বোনাসের টাকাটা নিয়ে আসে। এখনও পুজোর কেনাকাটি হয়নি বলে টাকা নিয়ে সে জামা-কাপড়ের দোকানে যায়। রাত বেশ ভাল হয়েছে তবে শেষ দিন বলে দোকানপাট এখনও বন্ধ হয়নি। লোকজনের ভিড় আছে এখনও। দোকান থেকে নিজেদের জন্য নতুন জামা-কাপড় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয় উমা।
শহরের রাস্তা পেরিয়ে বস্তির এলাকাটায় ঢুকতেই মনটা ছ্যাঁত করে ওঠে তার। আজ যেন এদিকটা বেশি অন্ধকার, নাকি শহরের চোখ ধাঁধানো আলোর পর অন্ধকারে ফিরে এরকম মনে হচ্ছে। তবে যাই হোক চারিদিক নিস্তব্ধ। তাড়াতাড়ি পায়ে হাঁটা শুরু করল উমা। হঠাৎ অন্য একটা পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল সে। বুকের কাছটা দলা পাকিয়ে আসল, আরও জোর পায়ে হাঁটতে শুরু করল। সেই পায়ের আওয়াজটাও কাছে আসতে লাগল। উমা বুঝল এবার বিপদ, আশেপাশে কেউ নেই, যা করার নিজেকেই করতে হবে।
হঠাৎ অন্ধকারে পেছন থেকে কে যেন তার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিল। হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল মানুষটার গায়ের উপর। ঘোর অন্ধকারে মানুষটাকে ঠাহর করা যাচ্ছে না, তবে তার গায়ে মাদকের দুর্গন্ধ ম-ম করছে। বিপরীতে থাকা মানুষটার নেশার্ত গলা শোনা গেল-” কী রে! আআআমাকে আআআররর মঅঅঅঅনেইইই পঅঅড়ে না বল!” গলার শব্দে উমা বুঝল গলাটা পাশের বস্তির রমেনের। মাঝবয়সি রমেনের বহুদিন ধরে উমার উপর নজর। বাড়িতে বউ-ছেলে থাকতেও অন্য মেয়েদের সঙ্গে ফুর্তি করে পয়সা ওড়ায় সে। অভাবের তাড়নাতেও পয়সার লোভে উমা রমেনকে পাত্তা দেয়নি কোনওদিন।
গলাটা চিনে উমা সব বুঝে তাড়াতাড়ি মাটি থেকে উঠে পড়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে, তবে রমেন তার হাতটা চেপে রাখায় সে ব্যর্থ হয়। ইতিমধ্যে উমার ছটফটানি দেখে রমেন তার নিজের অভিসন্ধিতে তৎপর হয়ে উমাকে ধর্ষণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকে। সেই ঘন অন্ধকারে তখন একটা জনপ্রাণী নেই যে উমাকে সাহায্য করে।
কী অদ্ভুত না! শহরের বুকে যখন এক নারীর মূর্তি সাজছে দামি শাড়ি-গয়নায়, শক্তিরূপে আরাধনার জন্য চলছে প্রস্তুতি; তখন অন্যপ্রান্তে লালসার শিকার হচ্ছে আর এক নারী। কিন্তু এ যে দেবীপক্ষ, নারীশক্তির আরাধনার সময়! এক নারী কীভাবে মেনে নেবে আর এক নারীর বলিদান? তাই সেদিন যেন উমার মধ্যে জেগে ওঠে মা দুর্গার মহিষাসুরমর্দিনী রূপ! আজ সে যদি ধর্ষিত হয়, তবে সমাজ তাকে নিয়ে নিন্দা করবে, তাকে একঘরে করবে; তখন কে পেট চালাবে তাদের? সংসার বাঁচানোর তাগিদে তাই নিজের জেদে উমা হয়ে উঠল দেবী দুর্গা। রমেনের মতো কীটকে যে নিজের মনের জোর আর শক্তি দিয়ে কাবু করে নিল। বোধনের আগের রাতে মা দুর্গা যখন প্যান্ডেলের আলোয় আলোকিত, তখন বস্তির অন্ধকারে এক নারী হয়ে ওঠে অসুরবধকারিণী। সময় পাল্টায়, ভাল-মন্দের লড়াই থেকেই যায়, নারীকে সেই যুগ থেকে আজও লড়তে হয় মন্দের বিরুদ্ধে, প্রমাণ করতে হয়, সে তাচ্ছিল্যের পাত্র নয়। শুধু দেবীপক্ষ নয়, সব পক্ষেই নারী নানাভাবে, নানা রূপে তা প্রমাণে ব্যস্ত।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo Shop-এর স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…