Care

ফ্রিজি চুলের সমস্যা? জেনে নিন, কারণ এবং তা থেকে মুক্তির উপায় (How To Tame Frizzy Hair)

Debapriya Bhattacharyya  |  Sep 16, 2019
ফ্রিজি চুলের সমস্যা? জেনে নিন, কারণ এবং তা থেকে মুক্তির উপায় (How To Tame Frizzy Hair)

শ্যাম্পু করার পরেই কি আপনার চুলটা বেলুনের মতো ফুলে যায়? অথবা চুল সুন্দর করে আঁচড়ানোর পরেই কি জট পড়ে বা চুলের জট ছাড়াতে গিয়ে চোখের জলে নাকের জলে একাকার হয়ে যান? তাহলে তো বুঝতেই পারছেন যে আপনার চুলের যা ধরন তাকে ফ্রিজি হেয়ার (frizzy hair) বলে! এই ফ্রিজি চুল সামলানো যে কতখানি ঝক্কির ব্যাপার, তা যে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে একমাত্র সেই জানে। চুলের এই ফ্রিজি ভাব দূর করতে কখনও স্মুদনিং, কখনও বা আরও দামী ট্রিটমেন্ট, কিন্তু সুরাহা (solution) হয়নি কি? কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে কিন্তু চুলের ফ্রিজি ভাব কাটিয়ে নরম ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল ফিরে পাওয়া খুব একটা কঠিন ব্যাপার হবে না। তবে তার আগে জানতে হবে মূল সমস্যার কারণ কী অর্থাৎ চুল কেন ফ্রিজি হয়ে যায়!

ফ্রিজি হেয়ার হওয়ার কারণ – Reasons for Frizzy Hair

https://www.shutterstock.com

এক কথায় যদি বলতে হয়, চুলের প্রচন্ড অযত্ন করলে চুল রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায় আর তখনই তাকে ফ্রিজি হেয়ার (frizzy hair) বলা হয়। এবার ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি। ভেবে দেখুন, যদি আপনি খাবার এবং জল না খান, তাহলে যেমন আপনার শরীর শুকিয়ে যাবে, পুষ্টির অভাবে শরীর ভেঙে পড়বে; ঠিক তেমনই চুল যদি যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি এবং ময়শ্চার না পায় তাহলে চুলও শুষ্ক হয়ে যাবে এবং নানা সমস্যা দেখা দিতে দিতে চুলের আরও বড় ক্ষতি হতে থাকবে। আর তখনই চুল ম্যাড়ম্যাড়ে এবং প্রাণহীন দেখায়।

ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে ফ্রিজি হেয়ার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় – Home Remedies to Tame Frizzy Hair

পার্লারের দামী দামী ট্রিটমেন্ট আপনি চাইলে করাতেই পারেন তবে তাতে ঠিক কতটা কাজ দেবে তা আমরা বলতে পারব না; তবে হ্যাঁ, ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যা থেকে মুক্তির (solution) জন্য বেশ কিছু ঘরোয়া টোটকা বলে দিতে পারি।

১। আমন্ড অয়েল ও ডিম

https://www.shutterstock.com

আমন্ড অয়েল প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে এবং ডিম চুলের বিভিন্ন ড্যামেজ মেরামত করতে খুব উপকারী, কাজেই দুটোর মিশেল যে ফ্রিজি চুলের সমস্যা সমাধান করবেই, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

কী কী  উপকরণ প্রয়োজন – এক কাপের এক চতুর্থাংশ আমন্ড অয়েল এবং একটি গোটা ডিম

কীভাবে ব্যবহার করবেন – আমন্ড অয়েল এবং ডিম একটি ছোট কাচের বা চিনামাটির বাটিতে নিয়ে একসঙ্গে ভাল করে ফেটাতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি স্মুদ পেস্ট তৈরি হচ্ছে। এবার ভাল করে চুল আঁচড়ে নিয়ে অল্প অল্প করে ওই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে নিন এবং ডগা পর্যন্তও লাগান। মিনিট ৪০ রেখে ঠান্ডা জলে কোনও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

কতদিন ব্যবহার করবেন – সপ্তাহে একবার করলেই যথেষ্ট।

২। অ্যাভোকাডো মাস্ক

অ্যাভোকাডোতে ভিটামিন বি এবং ই রয়েছে যা চুলের কিউটিক্যালস মেরামত করতে সাহায্য করে এবং টক দই চুলের রুক্ষতা দূরে করে, ফলে চুলে যথেষ্ট পরিমাণে ময়শ্চার পৌঁছয় এবং চুল স্মুদ হয়ে ওঠে।


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – একটি পাকা অ্যাভোকাডো এবং এক কাপ জল ঝরানো দই

কীভাবে ব্যবহার করবেন – অ্যাভোকাডো কেটে নিয়ে বীজ বার করে নিন। এবারে একটি ব্লেন্ডারে দই আর অ্যাভোকাডোর পাল্প একসঙ্গে মিশিয়ে একটি স্মুদ পেস্ট তৈরি করে নিন। স্ক্যাল্পে, চুলের গোড়ায় এবং ডগা পর্যন্ত ওই পেস্ট লাগিয়ে নিন। ঘন্টাখানেক পর ভাল করে কোনও মাইল্ড সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

কতদিন ব্যবহার করবেন – যদি আপনার চুল খুব বেশি শুষ্ক ও ফ্রিজি হয় তাহলে এই মাস্ক সপ্তাহে অন্তত দু’বার ব্যবহার করতে হবে, তা না হলে সপ্তাহে একবার করে লাগান।

৩। নারকেল তেলের মাস্ক

নারকেল তেল খুব ভাল কন্ডিশনারের কাজ করে যার ফলে চুল নরম ও সিল্কি হয়ে ওঠে এবং ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ফলে চুলের পুষ্টিতে কোনও অভাব হয় না। ফ্রিজি হেয়ারের জন্য এই মাস্কটি খুবই উপকারী।


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – চার চা চামচ অরগানিক নারকেল তেল এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল

কীভাবে ব্যবহার করবেন – দুটি উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন, খেয়াল রাখবেন যেন ভালভাবে মিশে যায়। এবারে যে ভাবে নারকেল মাথায় মাখতে হয় ঠিক সেভাবে মাসাজ করুন। অন্তত ১৫ মিনিট মাসাজ করবেন স্ক্যাল্পে, চুলের গোড়ায় এবং বাকি অংশেও। মিনিট ৪০ রেখে শ্যাম্পু করে নিন।

কতদিন ব্যবহার করবেন – সপ্তাহে একবার ব্যবহার করতে পারেন।

৪। কলার প্যাক

https://www.shutterstock.com/

পাকা কলাও খুব ভাল প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে এবং যদি আপনার চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয় তাহলে সে সমস্যা তাড়াতাড়ি সমাধান করতে সাহায্য করে।


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – একটি মাঝারি আকারের পাকা কলা, দুই চা চামচ মধু এবং তিন টেবিল চামচ নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল

কীভাবে ব্যবহার করবেন – পাকা কলার খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে চটকে নিন, দেখবেন যেন কোনও দানা না থাকে। এবারে তাতে মধু আর নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে নিন ভাল করে। ওই মিশ্রণ এবার চুলে লাগিয়ে রেখে দিন আধ ঘন্টা। ঠান্ডা জলে শ্যাম্পু করে নিন। চাইলে কন্ডিশনার লাগাতেও পারেন বা না লাগালেও সমস্যা নেই।

কতদিন ব্যবহার করবেন – আপনার চুলে যদি ফ্রিজি ভাব খুব বেশি থাকে তাহলে সপ্তাহে দু’বার এই মাস্ক ব্যবহার করুন তা না হলে সপ্তাহে একবার করে কিছুদিন ব্যবহার করলেই দেখবেন চুলের স্বাস্থ্য ফিরে গেছে।

৫। মধু ও লেবুর রস

মধু, লেবুর রস ও জলের মিশ্রণ চুলের গোড়া থেকে ময়লা দূর করতে সাহায্য করে ফলে চুলের কিউটিক্যালস ঠিক থাকে এবং চুল ফ্রিজি হয় না। এছাড়া লেবুর রসে যে ভিটামন সি রয়েছে তা নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট চুলের কোনও ক্ষতি না করেই চুলে একটা হাইলাইট এফেক্ট দেয়।


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – সম পরিমাণে মধু এবং লেবুর রস, সঙ্গে এক কাপ জল

কীভাবে ব্যবহার করবেন – এই ঘরোয়া টোটকাটি ব্যবহার করার আগের দিন শ্যাম্পু করে নেবেন। পরিষ্কার ধোয়া চুলে মধু, লেবির রস ও জলের মিশ্রণ ঢেলে মিনিট দশেক ভাল করে মাসাজ করুন। এবারে আরও দশ মিনিট মতো রেখে উষ্ণ জলে আরও একবার শ্যাম্পু করে নিন।

কতদিন ব্যবহার করবেন – দু’সপ্তাহে একবার করে এই টোটকা ব্যবহার করুন। তবে বাকি সময়েও কিন্তু চুলের যত্ন নেবেন।

৬। নারকেলের দুধ

ড্যামেজ হয়ে যাওয়া নিষ্প্রাণ চুল মেরামত করতে একমাত্র নারকেলের দুধই কাজে আসে। যাঁদের চুল একেবারে ড্যামেজ হয়ে গেছে এবং প্রচণ্ড শুষ্ক হয়ে ফ্রিজি হয়ে গেছে তাঁরা এই ঘরোয়া টোটকাটি অবশ্যই ট্রাই করুন। চুল মোলায়েম, সিল্কি এবং মজবুত করতে নারকেলের দুধের কোনও জুড়ি নেই!


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – তিন টেবিল চামচ নারকেলের দুধ

কীভাবে ব্যবহার করবেন – একটি পাত্রে নারকেলের দুধ নিয়ে সামান্য গরম করে নিন এবং একটু ঠান্ডা হলে (তবে উষ্ণ থাকা চাই) স্ক্যাল্প থেকে শুরু করে চুলের ডগা পর্যন্ত মেখে নিন। আধ ঘন্টা পর মাইল্ড কোনও সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

কতদিন ব্যবহার করবেন – সপ্তাহে দু’বার করে নিয়মিত ব্যবহার করুন।

৭। অ্যালোভেরা জেল

https://www.shutterstock.com/

চুলের ময়শ্চার ধরে রাখতে অ্যালোভেরা জেলের কোনও তুলনা হয় না, আর এর সঙ্গে নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল মিশলে যে চুলের রুক্ষতা দূর হয়ে স্মুদ হবে, সে কথা আর নতুন করে বলে দিতে হবে না নিশ্চয়ই!


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – এক টেবিল চামচ প্রাকৃতিক অ্যালোভেরা জেল এবং সমান পরিমাণে যে-কোনও ক্যারিয়ার অয়েল (নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল অথবা অলিভ অয়েল)

কীভাবে ব্যবহার করবেন – আপনার পছন্দের যে-কোনও ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল (অ্যালোভেরা পাতা থেকে সরাসরি জেল বার করে লাগাবেন না, এতে জ্বলুনি হবে এবং চুল উঠে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে, ভাল কোনও ব্র্যান্ডের অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন) মিশিয়ে নিয়ে স্ক্যাল্পে, চুলের গোড়ায় এবং ডগায় মাসাজ করুন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।

কতদিন ব্যবহার করবেন – ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যা দূর করতে সপ্তাহে একদিন এই মাস্ক ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।

৮। মধু ও দই


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – তিন টেবিল চামচ দই এবং এক টেবিল চামচ মধু

কীভাবে ব্যবহার করবেন – একটি কাচের বাটিতে মধু আর দই ভাল করে মিশিয়ে নিন এবং তা স্ক্যাল্প ও চুলে ভাল করে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে চুল ধুয়ে নিন ঠান্ডা জল দিয়ে।

কতদিন ব্যবহার করবেন – সপ্তাহে একবার করে করুন।

৯। বিয়ার

বিয়ারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং প্রোটিন রয়েছে যা চুলে ময়শ্চার জোগানর সঙ্গে চুলে পুষ্টিও যোগায়। বিয়ার দিয়ে চুল ধুলে চুলের ভেঙে যাওয়া কিউটিক্যালস মেরামত হয় এবং চুল মোলায়েম ও স্মুদ হয়ে ওঠে।


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – এক পাইন্ট বিয়ার

কীভাবে ব্যবহার করবেন – অনেকেই বিয়ারের বোতল খুলে সরাসরি তা মাথায় ঢালেন, এই কাজটি কিন্তু কোনও সময়েই করবেন না। বিয়ার বোতল থেকে একটি কাচের বাটিতে ঢেলে রেখে দিন সারা রাত, এতে বিয়ারের ঝাঁঝভাব কেটে যাবে এবং তা চুলে দেওয়ার উপযুক্ত হবে। পরদিন স্নানের সময়ে শ্যাম্পু করুন চুলে এবং শ্যাম্পু মাথায় থাকা অবস্থায় অল্প অল্প করে বিয়ার মাথায় ঢালতে থাকুন ও মাসাজ করুন। এরপর ঠান্ডা জলে চুল ধুয়ে নিন।

কতদিন ব্যবহার করবেন – দু’সপ্তাহে একবার করে করুন। এতে ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যা দূর হবে এবং চুল নরম হবে।

১০। অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার

অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার চুলের পিএইচ ব্যাল্যান্স রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং চুলের কোনও কিউটিক্যালও যদি খোলা থাকে তাহলে তা বন্ধ করে চুল স্মুদ করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও স্ক্যাল্পের ময়লা বা কোনও ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর করতেও সাহায্য করে।


কী কী উপকরণ প্রয়োজন – দুই টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার এবং দু’কাপ জল

কীভাবে ব্যবহার করবেন – একটি কাচের বড় পাত্রে (জগ হলে ভাল) জল ও অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিন। যেমন শ্যাম্পু করেন সেভাবেই শ্যাম্পু করে নিন এবং তারপর জল মেশানো অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মাথায় ঢেলে নিন। মিনিট পাঁচেক রেখে ঠান্ডা জলে চুল ভাল করে ধুয়ে নিন।

কতদিন ব্যবহার করবেন – সপ্তাহে একবার করে ব্যবহার করলে রুক্ষ ও শুষ্ক চুলের হারানো জেল্লা ফিরে আসবে এবং ফ্রিজি ভাব চলে যাবে।

সেরা দশ অ্যান্টি-ফ্রিজ প্রোডাক্ট – 10 Best Anti-Frizz Hair Products

যদি কোনও কারণে ঘরোয়া টোটকা প্রয়োগ করতে অসুবিধে থাকে বা সময় না পান তাহলে কিন্তু বাজারচলতি কিছু প্রোডাক্টও ব্যবহার করতে পারেন। POPxo বাংলা টীমের পছন্দের দশটি অ্যান্টি-ফ্রিজ প্রোডাক্টের সন্ধান রইল এখানে –  

১। অরিফ্লেম মিল্ক অ্যান্ড হানি গোল্ড হেয়ার মাস্ক

শ্যাম্পু করার পরেই যদি চুল ফুলে ওঠে এবং রুক্ষ দেখায় সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি চাইলে অরিফ্লেমের মিল্ক অ্যান্ড হানি গোল্ড হেয়ার মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন। স্নানের আগে ভাল করে মাস্কটি চুলে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে সালফেট-ফ্রি কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। যেহেতু এতে সবকটি উপকরণই প্রাকৃতিক কাজেই চুলের কোনও ক্ষতি করে না।

২। বায়োলেজ স্মুদ প্রুফ শ্যাম্পু

অনেকেই শ্যাম্পু করার সময়ে নিজেদের চুলের ধরণ অনুযায়ী শ্যাম্পু বাছেন না। ফলস্বরূপ, স্বাভাবিকভাবেই চুল রুক্ষ, শুষ্ক ও ফ্রিজি হয়ে যায়। আপনারও যদি ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যা থাকে তাহলে কিন্তু বায়োলেজের স্মুদ প্রুফ শ্যাম্পুটি খুবই কার্যকরী, কারণ এটি চুল মোলায়েম করে এবং ভেতর থেকে ড্যামেজ মেরামত করতে  সাহায্য করে।

৩। বি-ব্লান্ট ব্যাক টু লাইফ ড্রাই শ্যাম্পু

শুধুমাত্র চুল ফুলে থাকলেই যে তাকে ফ্রিজি হেয়ার বলা হয় তা কিন্তু নয়, ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যা থাকলে কিন্তু অনেকসময়ে চুল তেলতেলে হয়ে পেতেও থাকে। বি-ব্লান্টের ব্যাক টু লাইফ ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করে কিন্তু আপনি নিমেষের মধ্যে ফ্রিজি লুক থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

৪। কামা আয়ুর্বেদা ল্যাভেন্ডার পাচৌলি হেয়ার ক্লেনজার

স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা কিন্তু চুল ফ্রিজি হয়ে যাওয়ার সমস্যা বেশি হয়। কাজেই চুলের সঙ্গে মাথার তালু পরিষ্কার রাখাটাও অত্যন্ত জরুরি। কামা আয়ুর্বেদার এই হেয়ার ক্লেনজারটিতে এমন কিছু উপকরণ রয়েছে যা মাথার তালু খুব ভালভাবে পরিষ্কার করে এবং চুলের রুক্ষতা দূর করে। খুব অল্প পরিমাণে ক্লেনজারটি নিয়ে ভেজা চুলে এবং স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন মিনিট দশেক। এরপর মাথা ধুয়ে ফেলুন।

৫। নায়াসা হিবাসকাস কন্ডিশনার

জবা ফুল যে চুলের কত উপকারে লাগে তা মা-ঠাকুমার আমল থেকেই শুনে আসছি। জবা ফুলের নির্যাস প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে এবং যেহেতু এতে কোনও ক্ষতিকারক রাসায়নিক নেই, কাজেই চুলের কোনও ক্ষতি না করেই চুলের যাবতীয় রুক্ষতা দূর করতে সাহায্য করে। অরগানিক কোনও শ্যাম্পু করার পর এই কন্ডিশনারটি ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রিজ থেকে মুক্তি পাবেনই!

৬। অরগানিক্স মরোক্কান আরগান অয়েল ওয়েটলেস হিলিং অয়েল স্প্রে

ছোটবেলা থেকেই নিশ্চয়ই আপনিও শুনে আসছেন যে মাথায় তেল না লাগালে চুল অকালে পড়ে যায়! কথাটা কিন্তু খানিকটা হলেও সত্যি! চুল যদি পুষ্টি না পায় তাহলে তা অকালে ড্যামেজ হবেই এবং রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যাবে।  অরগানিক্স মরোক্কান আরগান অয়েল ওয়েটলেস হিলিং অয়েল স্প্রে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন মাসাজ করলে কিন্তু এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

৭। এভন অ্যাডভান্স টেকনিক্স রিকন্সট্রাকশন সেভেন হেয়ার মাস্ক

চুল ফ্রিজি হলে তা স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঝরে জেতেও সময় লাগে না। চুলের স্বাভাবিকত্ব ফিরিয়ে আনতে সপ্তাহে অন্তত একদিন এভন অ্যাডভান্স টেকনিক্স রিকন্সট্রাকশন সেভেন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। অন্যান্য হেয়ার মাস্কের মতোই এর ব্যবহার। নিয়মিত ব্যবহার করলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই চুলের শাইন এবং নমনীয়তা ফিরে এসছে।

৮। অ্যালো-ভেদা হেয়ার থেরাপি পিএইচ ব্যাল্যান্স কন্ডিশনার

অ্যালোভেরা পাতা, লেমনগ্রাস এসেনশিয়াল অয়েল, মধু এবং বাদাম তেল – এই তিনটি প্রাকৃতিক উপাদানের সংমিশ্রনে তৈরি করা এই হেয়ার কন্ডিশনারটি চুল শুধু ফ্রিজ-ফ্রি করে না, সঙ্গে চুলে পুষ্টি জুগিয়ে চুল ভেতর থেকে মজবুত করে তোলে। তাছাড়া চুলের পি এইচ ব্যাল্যান্সও রক্ষা করে।

৯। বায়োটিক বায়ো মাস্ক রুট ফ্রেশ গ্রোথ নারিশিং ট্রিটমেন্ট

চুল স্মুদ করে তোলার জন্য ব্যবহার করতে পারেন বায়োটিক বায়ো মাস্ক রুট ফ্রেশ গ্রোথ নারিশিং ট্রিটমেন্ট মাস্কটি। সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন (নির্ভর করছে আপনার চুল কতটা শুষ্ক তার উপর) চুলে এই মাস্কটি লাগিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে মাইল্ড কোনও সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

১০। বি-ব্লান্ট ক্লাইমেট কন্ট্রোল অ্যান্টি-ফ্রিজ লিভ-ইন ক্রিম

শ্যাম্পু করার পর এই লিভ-ইন ক্রিমটি চুলে লাগিয়ে নিতে পারেন। এটি বাইরের ধুলো, ধোঁয়া ও দূষণ থেকে চুল রক্ষা করে এবং একইসঙ্গে চুলের আর্দ্রতাও বজায় রাখে জার ফলে চুলে ফ্রিজ দেখা যায় না এবং চুল ভাল থাকে।

আরও কিছু জরুরি বিষয় – Things to Remember

https://www.shutterstock.com

১। স্নানের পর কখনোই ঘষে ঘষে চুল মুছবেন না। নরম তোয়ালে দিয়ে চুল জড়িয়ে রাখুন এবং চেপে চেপে চুল থেকে জল বার করে নিন।

২। ভেজা চুলেই সিরাম লাগাবেন।

৩। চেষ্টা করুন হেয়ার ড্রায়ার যতটা কম ব্যবহার করা যায়। যদি একান্তই ব্যবহার করতে হয় তাহলে একদম ভিজে চুলে ব্যবহার করবেন না। অন্তত চুল আধ-শুকনো হওয়ার অপেক্ষা করুন।

৪। চওড়া দাঁতের কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান, এতে চুলে জট পড়বে না এবং প্লাস্টিকের চিরুনিতে যে কেমিক্যাল থাকে তা চুলে লেগে চুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকেবনা।

৫। সম্ভব হলে বালিশের কভার সিল্কের ব্যবহার করুন। সুতির বালিশের কভারে ঘষা লেগে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার এবং চুলের কিউটিক্যালস ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং চুল ফ্রিজি হয়ে যেতে পারে।

৬। চুলে নিয়মিত নারকেল তেল লাগান, এতে চুল রুক্ষ হবে না উপরন্তু পুষ্টিও পাবে। 

৭। চুল কখনোই গরম জলে ধোবেন না, এমনকি শিতকালেও গায়ে গরম জল দিতে পারেন কিন্তু মাথায় ভুলেও গরম জল দেবেন না। সব সময়ে ঠান্ডা জলেই চুল ধুয়ে নিন। 

৮। চুলে নানা স্টাইলিং যেমন, স্ট্রেটনিং, কার্ল, ব্লিচ, রঙ কারানো বা নানা কেমিক্যাল ট্রীট্মেন্ট যতটা সম্ভব কম করুন। না করলে সচেয়ে ভাল যদিও! 

৯। নিয়মিত চুল ট্রিম করান, অর্থাৎ চুলের ডগা ছাঁটুন। অন্তত তিন মাস অন্তর ট্রিম করানো খুব জরুরি। তা না হলে স্প্লীট-এন্ডস-এর সমস্যা হতে পারে এবং চুল রুক্ষ হয়ে ফ্রিজি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। 

১০। চুল এবং স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখার জন্য শ্যাম্পু করা খুব ভাল, কিন্তু তা যেন সপ্তাহে তিন দিনের বেশি না হয়! কারণ, প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে চুলের ন্যাচারাল অয়েল কমতে থাকে এবং চুল রুক্ষ হয়ে ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

 

ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যা সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নোত্তর – FAQs

১। মেয়নিজ কি ফ্রিজি চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়?

হ্যাঁ। মেয়নিজ কিন্তু চুল মোলায়েম করতে এবং চুলে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এক কাপ মেয়নিজের সঙ্গে এক টেবিল চামচ চটকানো অ্যাভোকাডো মিশিয়ে প্যাকের মতো চুলে লাগান এবং ২০-২৫ মিনিট পর সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। 

২। চুল রুক্ষ হয়ে গেলে কি ডিম লাগানো যায়?

হ্যাঁ। তবে শুধু ডিম না লাগিয়ে তার সঙ্গে আরও কিছু উপকরণ মিশিয়ে নিলে ভাল। একটি গোটা ডিম, এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগান এবং ঘন্টাখানেক বাদে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুবার এই প্রসেস রিপিট করুন ফ্রিজ থেকে মুক্তি পেতে। 

ব্লো-ড্রাই করতেই হয়। কীভাবে করলে চুলের ক্ষতি কম হবে এবং ফ্রিজি হবে না?

শাটারস্টক

চেষ্টা করুন যাতে হাওয়ায় চুল শুকোতে পারেন। তবে অনেক সময়েই তাড়া থাকে ফলে ব্লো-ড্রাই করতেই হয়। চুল আধ-শুকনো করে নিয়ে তারপরে ব্লো-ড্রাই করুন এবং কখনোই হাই-স্পিডে এবং ফুল-হিটে চুল শুকোবেন না। সম্ভব হলে খানিকটা দূর থেকে ব্লো-ড্রাই ব্যবহার করুন। 

৪। অ্যান্টি-ফ্রিজ শ্যাম্পু কীভাবে চিনবো?

আপনাকে একটু সতর্কভাবে প্রোডাক্ট কিনতে হবে। যখন কোনও শ্যাম্পু কিনবেন, দেখে নেবেন যে উপকরনের তালিকায় সালফেট রয়েছে কিনা। সব প্রোডাক্টেরই বটলের গায়ে উপকরণের তালিকা দেওয়া থাকে। যদি সালফেট না থাকে তাহলে সেই শ্যাম্পুটিই কিনুন। 

৫। কেরেটিন শ্যাম্পু কি ফ্রিজ থেকে মুক্তি দেয়?

কেরেটিন চুলের কিউটিক্যালস সারাই করতে সাহায্য করে। কিউটিক্যালস মজবুত হলে এবং চুল সম্পূর্ণ পুষ্টি পেলে তবেই তা নিজস্ব আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে এবং চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় না; ফলে ফ্রিজি হেয়ারের সমস্যাও থাকে না। 

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo Shop-এর স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…

Read More From Care