কেশে মাখো কুন্তলীন/রুমালেতে দেলখোস, পানে খাও তাম্বুলীন/ধন্য হোক এইচ বোস! বহুকাল আগে কলকাতার অলিগলি ছেয়ে গিয়েছিল এই বিজ্ঞাপনে। এইচ বোস বা হেমেন্দ্রকুমার বোস ছিলেন সে যুগের অন্যতম সফল সুগন্ধি (how to use ittar) ব্যবসায়ী। ল্যাভেন্ডারসহ অন্যান্য জিনিস মিশিয়ে তিনি তৈরি করেন এই দেলখোস সেন্ট।
এত কথা মুখবন্ধে এই কারণেই বলছি, গরমকালে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হল এই সুগন্ধির। ঘামের বিশ্রী গন্ধ কারই বা ভাল লাগে? তা ছাড়া এই সময় একটু তরতাজা থাকতে সকলেই পছন্দ করেন। সকলের পক্ষে তো এক গাদা দাম দিয়ে ফরাসি পারফিউম কেনা সম্ভব হয় না। আর কম দামি পারফিউমের সুবাস মোটেও বেশিক্ষণ থাকে না। অনেকের আবার পারফিউমে মেশানো নানা রাসায়নিক থেকে অ্যালার্জিও হয়। এই সমস্যার সমাধান একমাত্র করতে পারে আতর। হ্যাঁ, আমাদের দেশি প্রোডাক্ট আতর। এই আতর নিয়েই আমাদের আজকের প্রতিবেদন।
আতরের জন্মবৃত্তান্ত
আতর বা ইতর একটি পারসিয়ান শব্দ। যার অর্থ হল অ্যারোমা বা সুবাস। সাধারণত ডিসটিলড পদ্ধতিতে অর্থাৎ বাষ্পীভূত করে আতর নির্মাণ করা হয়। কথিত আছে, পার্সিয়ান পদার্থবিদ ইবন সিনা প্রথম এই আতর তৈরি করেন। ফুলের পাপড়ি, চন্দন ও অন্যান্য ভেষজ মিশিয়ে এই সুগন্ধি তৈরি করা হয়।
প্রাচীন ভারতেও যে আতর তৈরি করা হত ইতিহাসে তার প্রমাণ মিলেছে। আতর আসলে সুগন্ধি তেল যা বিশেষ পদ্ধতিতে হালকা তরলে পরিণত করা হয়। চরক সংহিতার মতো আয়ুর্বেদিক গ্রন্থে উল্লেখ আছে কীভাবে আতর তৈরি করতে হয়। উত্তরপ্রদেশের কানপুর আতরের জন্য বিখ্যাত। তবে বর্তমানে বিভিন্ন পারফিউম আর ডিওডোরেন্টের চাপে পড়ে ভারতের এই প্রাচীন সুগন্ধি ব্যবহারের প্রথা ধীরে-ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
আতর কয় প্রকার
খুব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আতরের অনেকগুলি শ্রেণি আছে। কিন্তু খুব সহজভাবে দেখলে এর উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন, ফুলের আতর তৈরি হয় ফুলের পাপড়ি থেকে। এর মধ্যে আছে গোলাপ, জুঁই, পদ্ম, গাঁদা ইত্যাদি। আবার ভেষজ আতর তৈরি হয় নানা রকম ভেষজ দিয়ে। এর মধ্যে পড়ে অ্যাম্বার আর মাস্ক। এছাড়াও সোঁদা মাটি থেকে তৈরি হয় মিট্টি আতর।
আতর ব্যবহারের নিয়ম
আতর ব্যবহার করার বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। কারণ, এটি বাজারচলতি কোনও সেন্ট নয়। এতি একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম সুগন্ধি।
১) আতর কেনার পর সরাসরি বোতল থেকে শুঁকবেন না।
২) সেন্টের মতো জামাকাপড়ে এক গাদা আতর লাগাবেন না। আপনাকে সারাদিন সুবাসিত রাখতে এক ফোঁটাই যথেষ্ট।
৩) আতর ব্যবহারের সঠিক নিয়ম হল, এক ফোঁটা আঙুলের ডগায় ঢেলে সেটা জামাকাপড়ে আলতো করে ঘষে দেওয়া।
৪) ঋতুর সঙ্গে-সঙ্গে আতরের সুবাসের নির্বাচনও পাল্টে যায়। গরমকালের জন্য সেরা আতর হল খস, গোলাপ, মোগরা বা জুঁই এবং কেওড়া। আবার শীতকালে হিনা, শেমামা, কস্তুরি, কেশর, অ্যাম্বার ও অউদ বেছে নেওয়া উচিত। কারণ, এগুলি শীতে শরীরকে উষ্ণ রাখে!
৫) গোলাপের আতর ব্যবহার করারও কিছু নিয়ম আছে। একটা তুলোর বলে এক ফোঁটা গোলাপের আতর ঢেলে সেটা জামাকাপড় যেখানে রাখেন, সেখানে রেখে দিন। দেখবেন, আলাদা করে সেন্ট মাখার প্রয়োজন হচ্ছে না।
৬) গরম থেকে বাঁচতে আতর ব্যবহার করার আরও একটি সেরা উপায় আছে। যুগ-যুগ ধরে এই পদ্ধতি প্রাচীন ভারতে চলে আসছে। এক জগ জলে কয়েক ফোঁটা খস বা গোলাপের আতর ঢেলে রেখে দিলে পুরো ঘরটাই সুবাসিত হয়ে যাবে।
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!
Read More From রূপচর্চা ও বিউটি টিপস
চশমা পরা হবু কনেরা কিভাবে সাজবেন জেনে নিন
SRIJA GUPTA
চুল ভাল রাখতে শ্যাম্পুর বদলে এগুলি ব্যবহার করুন
SRIJA GUPTA