Festival

এবছরের পিতৃপক্ষ শুরু হল: কাকে বলে পিতৃপক্ষ এবং মাতৃপক্ষ, এই পক্ষদু’টির বিশেষত্বই বা কী?

Parama Sen  |  Sep 13, 2019
এবছরের পিতৃপক্ষ শুরু হল: কাকে বলে পিতৃপক্ষ এবং মাতৃপক্ষ, এই পক্ষদু’টির বিশেষত্বই বা কী?

একটা লাইন ছোটবেলায় প্রায়ই শুনতাম মহালয়ার দিনটিতে। আজ পিতৃপক্ষের অবসান ও মাতৃপক্ষের শুরু! লাইনটির অর্থ যথারীতি বুঝিনি, বোঝার চেষ্টাও করিনি! মহালয়া মানে দুর্গা পুজো এসে গিয়েছে, টেনেটুনে আর গোটাচারেক দিন কাটাতে পারলেই পড়াশোনার ছুটি, পাড়ার প্যান্ডেলে ঠাকুর এসে যাবে, সারা পাড়া টুনি বাল্ব আর ডুমের আলোয় ঝিকমিক করবে, প্রতিদিন একবার অন্তত নতুন জামাগুলো বের করে গন্ধ শুঁকতে হবে, এগুলোই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল তখন। পরে যখন চাকরিসূত্রে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হলাম, তখন আস্তে-আস্তে এই পিতৃপক্ষ (pitru paksha) এবং মাতৃপক্ষ (matri pokkho) ব্যাপারগুলোর অন্যরকম অর্থ জানার-বোঝার চেষ্টা শুরু হল। সত্যি কথা বলতে গেলে, ধর্ম ব্যাপারটিকে রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে আমরা সকলে তার দফারফা করে ফেলেছি ঠিকই, কিন্তু একটু গভীরভাবে ভেবে দেখবেন, হিন্দু মতে, সারা বছরটিকে বিভিন্ন পক্ষে কী সুন্দর করে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিটি ভাগের তাৎপর্যও (significance) বড় মধুর! আমরা পল্লবগ্রাহীতার অভ্য়েসটি কোনওদিন ত্যাগ করতে পারিনি বলেই, সেগুলি সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি।

আমি এখন প্রবাসী, পুজো মানে এখন আমার কাছে নবরাত্রি। আর এই সময়টায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সারা বাংলা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালিরা য়খন পুজোর লাস্ট মিনিট প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, মুম্বইসহ দেশের বিভিন্ন অংশে আবাঙালিরা তখন ব্যস্ত ‘শ্রাদ্ধ’-পালনে! কথাটা শুনে আপনারা যতটা অবাক হচ্ছেন, বিশ্বাস করুন, প্রথম-প্রথম আমিও ততটাই অবাক হয়েছিলাম! একে তো শ্রাদ্ধ, তা-ও আবার পালন! আচ্ছা মুশকিল তো! ব্যাপারটির গভীরে ঢোকা প্রয়োজন বোধ হল এবং তখনই জানতে পারলাম সেই ছোটবেলায় শোনা পিতৃপক্ষ এবং শ্রাদ্ধ-র কী যোগাযোগ! এবছর শুরু হয়ে গিয়েছে পিতৃপক্ষ, তাই এই দু’টি পক্ষ নিয়ে আপনাদেরও কিঞ্চিৎ জানিয়ে রাখার চেষ্টা করছি!

পিতৃপক্ষের তাৎপর্য ও পৌরাণিক ব্যাখ্যা

Instagram

পক্ষ মানে হল ১৫ দিন। চান্দ্র ক্যালেন্ডার, মানে, যেটা মেনে হিন্দুধর্মের সব তিথি-নক্ষত্রের বিচার হয়, সেটি অনুযায়ী প্রতিটি মাস দুটি পক্ষে ভাগ করা থাকে, শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ। চন্দ্রকলার বৃদ্ধির উপর এই পক্ষ নির্ধারিত হয়। ভাদ্র মাসের শেষ পক্ষেই হয় পিতৃপক্ষ, যা শেষ হয় মহালয়া অমাবস্যায় গিয়ে। এই পক্ষটির সঙ্গে কেন পিতৃ নামটি যুক্ত হল, বা শ্রাদ্ধ শব্দটিই বা কেন জুড়ল, তা নিয়ে একটি অদ্ভুত গল্প কথিত আছে! মহাভারতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কর্ণ মারা যাওয়ার পর তিনি গেলেন স্বর্গে। সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হল একথালা সোনা ও রুপো! দেখে তো তিনি অবাক, বললেন তাঁর সত্যিকারের খাবার চাই, যা খেতে পারবেন! তখন ইন্দ্র তাঁকে জানালেন যে, জীবিত অবস্থায় তিনি চিরকাল স্বর্ণ-রৌপ্য দান করেছেন সকলকে, কিন্তু কোনওসময় তাঁর পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে খাদ্যবস্তু দান করেননি, তাই এখনও তিনিও খাবার পাচ্ছেন না! একথা শুনে কর্ণ জানান যে, তিনি তাঁর পিতৃপুরুষের কথা জানতেন না, তাই সে সুযোগ পাননি। তারপর তাঁকে আবার ১৫ দিনের জন্য মর্ত্যে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সেখানে তিনি ঘটা করে পিতৃপুরুষকে জল-খাদ্য দান করেন এবং তারপর ফেরত আসেন স্বর্গে! গল্পটি সত্যি না মিথ্যে, সেই তর্কে না গিয়ে বরং একটা কথা লক্ষ করুন, পিতৃপুরুষকে জল-খাদ্য দান করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ! এই ভাবনাটির উপরেই দাঁড়িয়ে আছে পিতৃপক্ষের আসল তাৎপর্য!

আপনি আপনার পূর্বপুরুষের কাছে ঋণী, পিতৃপক্ষ শ্রাদ্ধ, মানে, গোদা বাংলায় যাকে আমরা তর্পণ বলি, সেটি করে সেই ঋণশোধের চেষ্টা করবেন আপনি। আর পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে খাদ্য-জল পেয়ে স্বর্গের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন পিতৃপুরুষ! সাধারণত, কোনও পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই এই তর্পণ করে থাকেন। তবে এখন দিনকাল পাল্টেছে, তাই অনেক মহিলাও গঙ্গা তীরে মহালয়ার দিন তর্পণে যোগদান করেন! সাধারণত, তিন পুরুষের জন্য তর্পণ করা হয়ে থাকে। তাৎপর্য হল, বছরের এই একটি পক্ষ অন্তত তাঁদের স্মরণ করুন, যাঁদের জন্যই আজ আপনার অস্তিত্ব আছে!

 

কাকে বলে মাতৃ পক্ষ

Instagram

দেখুন, সত্যি কথা বলতে গেলে, মাতৃ পক্ষ বলে হিন্দু শাস্ত্রে কিচ্ছুটি নেই। মহালয়ার পর থেকে পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে পৌঁছয় বলে ওটিকে আমরা, বাঙালিরা নিজেদের মতো করে গড়েপিটে নিয়েছি! মাতৃ পক্ষ, কারণ, এই সময়ে মায়ের আরাধনা করা হয়। মহালয়া থেকে যার শুরু দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমে এবং শেষ কোজাগরী পূর্ণিমায়, মা লক্ষ্মীর আরাধনায়। তবে আমার মত যদি জানতে চান, আমি বলব, বছরের এই দিনপনেরো না হয় মায়ের নামেই থাকুক। তাতে কারও অসুবিধে তো হচ্ছে না! 

Featured Image: lenslocker_arup and folkstudiobanglaonline

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!

Read More From Festival