আজ শুভ রথযাত্রা। উড়িষ্যার পুরী (Puri) শহরে আজ মানুষের ঢল নেমেছে। সারা পৃথিবী থেকে মানুষ এসেছেন জগন্নাথ দেবকে দর্শন করতে। জগন্নাথ দেব আজ তাঁর বোন সুভদ্রা আর দাদা বলরামের সঙ্গে গুণ্ডিচা মন্দিরে তাঁর মাসির বাড়ি যাবেন। সেখানে সাতদিন থাকার পর আবার পুরীর মন্দিরে ফিরে আসবেন তিনি। পুরীতে এই মানুষের ঢল যেন মহামিলন ক্ষেত্র। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একাত্ম হয়ে এখানে জগন্নাথের স্মরণে আসেন। কথায় বলে ‘রথে চ বামনং দৃষ্ট, পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে। অর্থাৎ একবার যদি কেউ রথের রশি বা দড়ি ছুঁতে পারে তা হলে জগন্নাথের কৃপায় তাঁর পাপমুক্তি হয় এবং বারবার জন্ম গ্রহণ করার কষ্ট দূর হয়। শুধু এটুকুই নয়, পুরীর মন্দিরে যুগ-যুগ ধরে পূজিত দেবতা জগন্নাথকে (Jagannath) ঘিরে রয়েছে অনেক কিংবদন্তী (Legend) আর রহস্য। তারই কিছুটা আজ তুলে ধরার চেষ্টা করব আপনাদের সামনে।
জগন্নাথের জ্বর
রথের পনেরো দিন আগে অনরবাহ প্রথায় জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা হয়। এই অনরবাহ প্রথা সম্পর্কে আপনাদের দু চার কথা বলি। সাধারণ মানুষ যেভাবে স্নান করেন সেভাবে কি আর দেবতার স্নান হয়? তাই জগন্নাথ দেবের স্নানের জল আসে বদ্ধ কুয়ো থেকে। এমন কুয়ো যেখানে সূর্যের আলো পড়েনি। সেই রকম কুয়ো থেকে ১০৮ ঘড়া জলে তিনি স্নান করেন। আর স্নানের পরেই তাঁর খুব জ্বর হয়।
অসুখ করলে তাঁর চিকিৎসাও তো করতে হবে নাকি? প্রভু যখন স্নান করেন ‘চাহনি মণ্ডপ’ থেকে তা দেখেন শ্রীলক্ষ্মী মাতা। জ্বরের পর তিনিই নাকি প্রভুর সেবার দায়িত্ব নেন। আর তাঁকে সাহায্য করেন অন্ত্যজ দয়িতাপতিরা। জগন্নাথের সারা শরীরে চন্দন লেপে এই চিকিৎসা করা হয়। সেরে উঠতে সময় লাগে ১৫ দিন। আর এই সময়টা ভক্তদের দর্শন দেন না তিনি।
মাসির বাড়ির আদর
সবাই জানে যে রথের দিন মহাপ্রভু তাঁর দুই ভাই বোনকে নিয়ে চলে যান মাসির বাড়ি। মাসির বাড়ির আদর সাত দিন ধরে খেয়ে তবেই ফিরে আসেন নিজের বাড়ি। কখনও জানতে ইচ্ছে হয়েছে কে এই মাসি? তা হলে বলি শুনুন। পুরাণে কথিত আছে জগন্নাথ, বলভদ্র বা বলরাম ও সুভদ্রা যখন মাসির বাড়ি যেতেন তখন তাঁদের জন্য লাগত ছ’টি রথ। একসময় পুরীর মন্দির আর গুণ্ডিচা মন্দিরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যেত সারদা নদী। রথে করে তো আর নদী পেরনো যায় না। তাই নদীর অপর পারে মাসি আরও তিনটি রথের ব্যবস্থা করে রাখতেন বোনঝি আর বোনপোদের জন্য। সব মিলিয়ে ছ’টি রথ। এই মাসির নাম হল অর্ধাসনী দেবী। প্রচলিত কথা অনুসারে মাসির হাতের তৈরি চালের পিঠে জগন্নাথের খুব প্রিয়। আজও অর্ধাসনী দেবীর মন্দিরে চালের পিঠের ভোগ দেওয়া হয়।
প্রভুর গণপতি বেশ
হ্যাঁ, স্নানযাত্রার সময় জগন্নাথ দেবকে সাজিয়ে তোলা হয় গণেশের মতো। ব্রহ্মপুরাণ অনুযায়ী জগ্ননাথ দেবের পরম ভক্ত সাত্বিক ব্রাহ্মণ গণপতি ভট্ট জগ্ননাথকে গণেশরূপে দর্শন করেছিলেন। ভক্তের মান রাখতে প্রতি বছর স্নানের পর গণেশরূপে সেজে ওঠেন তিনি। জগন্নাথ দেব যে রথে চড়েন সেটির নাম নান্দীঘোষ (১৬টি চাকার রথ), বলরামের রথের নাম তালধ্বজ ( ১৪টি চাকার রথ) আর সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন (১৪টি চাকার রথ)।
জগ্ননাথ দেবের বিশাল রত্নভাণ্ডার
এটি গুণ্ডিচা মন্দির, জগ্ননাথ দেবের মাসির বাড়ি : Instagram
প্রভুর কাছে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে রাজি থাকেন ভক্তরা। ইচ্ছে পূর্ণ হলে অনেক ভক্তই অনেক কিছু ডান করেন পুরীর মন্দিরে। জগ্ননাথ দেবের রত্ন ভাণ্ডারে আছে মণি, মুক্তো, নীলকান্ত মণি, প্রবাল, সোনা, রুপো ও আরও অনেক কিছু। তিন ভাই বোনের একটি করে নেকলেস আছে যার ওজন প্রায় ১২০ তোলা! এছাড়াও রয়েছে তিন থেকে সাত হাজার ভরির তিনটে সোনার মুকুট। রত্ন ভাণ্ডারের একটি চাবি থাকে পুরীর গজপতি মহারাজদের কাছে। আর একটি থাকে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে। কথিত আছে এই রত্নভাণ্ডার পাহারা দেয় একটি সাপ, যার মাথায় আছে মণি। সেই সাপ যুগ যুগ ধরে রত্নভাণ্ডার পাহারা দিয়ে আসছে। পুরীর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ব্যতীত সেই সাপকে কেউ দেখতে পায় না বা না দেখার অধিকার নেই। জগ্ননাথের ভক্তরা মনে করেন, এই সাপ আছে বলেই বহুবার রত্নভাণ্ডার আক্রমণ করা সত্ত্বেও বিশেষ ক্ষতি হয়নি।
মহাপ্রভু জগ্ননাথের চরণে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য
সোনার ঝাঁটা নিয়ে রথ যাওয়ার আগে রাস্তা পরিষ্কার করছেন পুরীর গজপতি মহারাজ : cox and king
জগন্নাথের সামনে এসে নিজের বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন শ্রী চৈতন্য। রাজা প্রতাপরুদ্র যখন পুরী শাসন করছেন সেই সময় ঘটল এক অলৌকিক কাণ্ড। জগন্নাথ দেবের সামনে দু’হাত তুলে ইষ্টনাম জপ করছেন মহাপ্রভু। রাজা দেখলেন রথের উপর জগ্ননাথদেব আবার রাস্তাতেও তিনি! রাজা চোখ কচলে আবার দেখলেন। এবার দেখলেন রথের উপর শ্রী চৈতন্য আবার রাস্তাতেও তিনি। বোঝা গেল, ভক্তি আর ভক্ত এক হয়ে বিলীন হয়ে গেছেন। রাজা প্রতাপরুদ্রের ইচ্ছেতে জগ্ননাথ দেবের রথ পথে নামল। ডাহুক আর কলাবৈঠিয়া গোষ্ঠীর মানুষ এলেন রথ টানতে। কিন্তু রথের চাকা এক চুলও নড়ল না। হাতি এল, ঘোড়া এল রথ অনড়। নিরুপায় রাজা সাহায্য চাইলেন শ্রী চৈতন্য দেবের কাছে। মহাপ্রভু তাঁর আরাধ্য দেবতার রথের রশি তুলে দিলেন ভক্তদের হাতে। রথও ছুটে চলল গতিমান হয়ে।
সেই প্রথা আজও একই রকম আছে। হাজার-হাজার ভক্ত এসে একটিবার রথের রশি ছুঁতে চান। আর এখানেই জগ্ননাথ দেবের অপার মহিমা।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!