লাইফস্টাইল

বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের তালিকা (List of Best Bengali Novels)

Swaralipi Bhattacharyya  |  Apr 6, 2020
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের তালিকা (List of Best Bengali Novels)

বাঙালি মাত্রেই বই পড়ুয়া। পড়তে সকলেই ভালবাসেন। গল্প, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ… ভান্ডার পরিপূর্ণ। কারও পছন্দ রোমান্টিক উপন্যাস বা প্রেমের উপন্যাস। কিন্তু সেরা প্রেমের উপন্যাসের নাম (Bangla Novel) বলতে বললে হয়তো মুশকিলে পরবেন। অনেকেই বাংলা সেরা উপন্যাস সমূহের খোঁজ করেন। পাঠকরা উপন্যাস পড়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রিভিউ দিয়েছেন। তার উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনে বাংলা সেরা উপন্যাসের তালিকা (List of Best Bengali Novels) দেওয়ার চেষ্টা করলাম আমরা। আগামী ২৩ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড বুক ডে। তার আগে হয়তো আপনার কাজে লাগবে এই তালিকা।

পথের পাঁচালী (Pather Panchali By Bibhutibhushan Bandopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

পথের পাঁচালী (১৯২৯) প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বিখ্যাত উপন্যাস। বাংলার গ্রামে দুই ভাইবোন অপু আর দুর্গার বেড়ে ওঠা নিয়েই বিখ্যাত এই উপন্যাস (Top Bengali Novels)। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অপু ও তার পরিবারের জীবনযাত্রার কথাই পথের পাঁচালীর মুখ্য বিষয়। অপুর বাবা পুরোহিত হরিহর রায় নিশ্চিন্দিপুরের পৈতৃক ভিটেয় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি পেশায় পুরোহিত। আয় সামান্য। লেখাপড়া জানেন। তাই কিছু ভাল যাত্রাপালা লিখে অধিক উপার্জনের স্বপ্ন দেখেন। বাস্তবে তিনি অত্যন্ত ভালমানুষ এবং লাজুক প্রকৃতির লোক। সকলে সহজেই তাকে ঠকিয়ে নেয়। পরিবারের তীব্র অর্থসংকটের সময়েও তিনি তার প্রাপ্য বেতন আদায় করার জন্য নিয়োগকর্তাকে তাগাদা দিতে পারেন না। 

হরিহরের স্ত্রী সর্বজয়া তাঁর দুই সন্তান দুর্গা ও অপু এবং হরিহরের দূর সম্পর্কের বিধবা পিসি ইন্দির ঠাকরুণের দেখাশোনা করেন (পথের পাঁচালী)। দরিদ্রের সংসার বলে নিজের সংসারে ইন্দির ঠাকরুনের ভাগ বসানোটা ভাল চোখে দেখেন না সর্বজয়া। সর্বজয়ার অত্যাচার অসহ্য বোধ হলে ইন্দির মাঝে মাঝে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। দুর্গা তার ধনী প্রতিবেশীর বাগান থেকে ফলমূল চুরি করে আনে ও ইন্দির ঠাকরুনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খায় (Best Bengali Novels)। একদিন, সেই প্রতিবেশীর স্ত্রী এসে দুর্গাকে একটি পুঁতির মালা চুরির দায়ে অভিযুক্ত করেন ও এই চুরির প্রবণতাকে উৎসাহ দেওয়ার অপরাধে সর্বজয়াকে দোষী সাব্যস্ত করেন। 

গ্রামে ভাল উপার্জন করতে সক্ষম না হয়ে হরিহর একটা ভাল কাজের আশায় শহরে যান। সর্বজয়াকে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান যে, ভাল উপার্জন হলে ফিরে এসে ভাঙা বসতবাড়িটা সারিয়ে তুলবেন। হরিহরের অনুপস্থিতিতে তাদের অর্থসংকট তীব্রতর হয়। সর্বজয়া অত্যন্ত একা বোধ করতে থাকেন ও খিটখিটে হয়ে যেতে থাকেন। বর্ষাকালে একদিন দুর্গা অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধায়। ওষুধের অভাবে তার জ্বর বেড়েই চলে ও শেষে এক ঝড়ের রাতে দুর্গা মারা যায়। এরপর একদিন হরিহর ফিরে আসেন। শহর থেকে যা কিছু এনেছেন, তা সর্বজয়াকে বের করে দেখাতে থাকেন। সর্বজয়া, প্রথমে চুপ করে থাকেন (পথের পাঁচালী), পরে স্বামীর পায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। হরিহর বুঝতে পারেন যে, তিনি তার একমাত্র কন্যাকে হারিয়েছে। তাঁরা গ্রাম ও পৈতৃক ভিটে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাত্রার তোড়জোড় শুরু হলে, অপু দুর্গার চুরি করা পুঁতির মালাটা আবিষ্কার করে। সে মালাটা ডোবার জলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

Goodreads Rating: 4.5/5 

সেই সময় (Sei Somoy By Sunil Gangopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

সেই সময় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর লেখা একটি বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাস যার উপজীব্য ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনামলের বিকাশমান কলকাতা নগরীর সমাজ এবং মানুষ (Top Bengali Novels)। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালির নবজাগরণ উপন্যাসটির অন্যতম মূল বিষয়বস্তু। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশব চন্দ্র সেন, ডেভিড হেয়ার এবং জন বেথুন এর মতো প্রখ্যাত চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এ উপন্যাসের আখ্যানভাগ। 

প্রথমে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি। পরবর্তীতে কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স ১৯৮১ সালে দুই খন্ডে পুস্তক আকারে উপন্যাসটি প্রকাশ করে। একই প্রকাশনী থেকে উপন্যাসের অখণ্ড সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। ১৯৮৩ সালে উপন্যাসটি বঙ্কিম পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়। ‘সেই সময়’ এবং সুনীলের অন্য দুটি উপন্যাস ‘পূর্ব-পশ্চিম’ ও ‘প্রথম আলো’ মিলিয়ে একটি ত্রিপর্বীয় ঐতিহাসিক কালপঞ্জী (Best Bengali Novels)।

মধ্য ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা এই উপন্যাসের পটভূমিকা। সেই সময়ের সামাজিক সমস্যা, বাবু সংস্কৃতি, বাল্যবিবাহ ও বিধবাদের করুণ অবস্থাসহ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বিস্তারের ফলে কতিপয় ব্যক্তির সমাজ সংস্কারমূলক প্রবণতা— সবই উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। চরিত্র পরিকল্পনা ও ঘটনা বিন্যাসে সাহিত্যিক তথ্য ও কালানুক্রমিক ভারসাম্য রেখেছেন।

Goodreads Rating: 4.2/5

টেনিদা সমগ্র (Tenida Samagra By Narayan Gangopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

টেনিদা বা টেনি বা ভজহরি মুখার্জি হলো নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র। টেনিদা মূলত উত্তর কলকাতার পটলডাঙায় বসবাসরত একটি স্থানীয় চরিত্র। টেনিদার প্রকৃত নাম ভজহরি মুখার্জি। পটলডাঙার আশেপাশে ​​বসবাসরত চার তরুণ ছেলেদের একটি দলের নেতা টেনিদা পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না। সাত বারের চেষ্টাতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন তিনি। টেনিদা বিখ্যাত ছিলেন তার খাঁড়ার মত নাকের জন্যে, গড়ের মাঠে গোরা পেটানোর জন্যে। আর তার বিখ্যাত সংলাপ, “ডি-লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক”। টেনিদা সম্বন্ধে গল্পলেখক প্যালারাম লিখেছেন, “টেনিদাকে নইলে আমাদের যে একটি দিনও চলে না। যেমন চওড়া বুক – তেমনি চওড়া মন।” পাড়ার কারও বিপদ-আপদ হলে টেনিদাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের আগে। লোকের উপকারে এক মুহুর্তের জন্য তার ক্লান্তি নেই – মুখে হাসি তার লেগেই আছে। ফুটবলের মাঠে সেরা খেলোয়াড়, ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন। আর গল্পের রাজা। এমন করে গল্প বলতে কেউ জানে না।” নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় টেনিদাকে বেশ কয়েকটি উপন্যাস (টেনিদা সমগ্র) ও ছোট গল্প এবং একটি নাটকে উপস্থাপিত করেছেন।

Goodreads Rating: 4.50/5

শেষের কবিতা (Sesher Kobita By Rabindranath Tagore)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

শেষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি প্রেমের উপন্যাস। ১৯২৭ সাল (১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ভাদ্র) থেকে ১৯২৮ সাল (১৩৩৪ বঙ্গাব্দের চৈত্র) পর্যন্ত প্রবাসীতে ধারাবাহিকভাবে রচনাটি প্রকাশিত হয়। শেষের কবিতা বিংশ শতকের বাংলার নবশিক্ষিত অভিজাত সমাজের জীবনকথা। 

বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় (‘অমিট্ রে’) প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত এবং রোমান্টিক যুবক। তর্কে প্রতিপক্ষকে হারাতে সিদ্ধহস্ত। এই অমিত একবার শিলং পাহাড়ে গেল বেড়াতে। আর সেখানেই এক মোটর-দুর্ঘটনায় পরিচয় ঘটল লাবণ্যর সঙ্গে। যার পরিণতি প্রেম। কিন্তু অচিরেই বাস্তববাদী লাবণ্য বুঝতে পারল অমিত একেবারে রোমান্টিক জগতের মানুষ যার সঙ্গে প্রতিদিনের সাংসারিক হিসেব-নিকেশ চলে না। ইতিমধ্যে শিলং এ হাজির হয় কেটি (কেতকী)। হাতে অমিতের দেওয়া আংটি দেখিয়ে তাকে নিজের বলে দাবী করে সে। ভেঙে যায় লাবণ্য-অমিতর বিবাহ-আয়োজন (শেষের কবিতা)। শেষ পর্যন্ত অমিত স্বীকার করে যে, লাবণ্যের সঙ্গে তাঁর প্রেম যেন দিঘির জল, সে জল ঘরে আনবার নয়, সেই জলে মন তার সাঁতার দেবে। আর কেতকীর সাথে সম্পর্ক ঘড়ায় তোলা জল- প্রতিদিন তুলবে, প্রতিদিন ব্যবহার করবে।

Goodreads Rating: 4.22/5

পুতুল নাচের ইতিকথা (Putul Nacher Itikotha By Manik Bandopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

পুতুল নাচের ইতিকথা বাঙালি সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত উপন্যাস। প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র গ্রামের ডাক্তার শশী। ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস নেই। গ্রামের পটভূমিতে শশী, শশীর বাবা, কুসুম-সহ অন্যান্য চরিত্রগুলোর মাঝে বিদ্যমান জটিল সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে এর কাহিনি ও প্রেক্ষাপট (পুতুল নাচের ইতিকথা)। ক্ষয়িষ্ণু সমাজের প্রেম, বিরহ, দ্বেষ ও পারস্পরিক সহমর্মিতা কে উপজীব্য করে লেখা এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

Goodreads Rating: 4.44/5

ব্যোমকেশ সমগ্র (Byomkesh Samagra By Saradindu Bandopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

ব্যোমকেশ বক্সী শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্র হিসেবে ব্যোমকেশ বক্সীর আবির্ভাব হয় সত্যান্বেষী গল্পে। ১৩৩১ বঙ্গাব্দে কলকাতার চীনাবাজার অঞ্চলে পরপর কয়েকটি খুনের ঘটনার কিনারা করতে ‘বে-সরকারী ডিটেকটিভ’ ব্যোমকেশ বক্সী পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নিয়ে অতুলচন্দ্র মিত্র ছদ্মনামে এই অঞ্চলে এক মেসে বসবাস শুরু করেছিলেন। এই মেসে তার ঘরের অন্য ভাড়াটিয়া অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশের অধিকাংশ গোয়েন্দা গল্পগুলি লিখিয়েছিলেন।

আদিম রিপু গল্পে ব্যোমকেশের বাল্যকাল সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানা যায়। ব্যোমকেশের পিতা স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন ও বাড়িতে সাংখ্য দর্শনের চর্চা করতেন এবং তার মাতা বৈষ্ণব বংশের মেয়ে ছিলেন। ব্যোমকেশের যখন সতেরো বছর বয়স, তখন তার পিতা ও পরে তার মাতা যক্ষ্মা রোগে মারা যান। পরে ব্যোমকেশ জলপানির সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন।

Goodreads Rating: 4.55/5

চাঁদের পাহাড় (Chander Pahar By Bibhutibhushan Bandopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

চাঁদের পাহাড় প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা রোমাঞ্চকর উপন্যাস। ১৯৩৭ সালে গ্রন্থাকারে বের হওয়া এই উপন্যাসটি শঙ্কর নামক ভারতবর্ষের সাধারণ এক তরুণের আফ্রিকা মহাদেশ জয় করার কাহিনি।

শঙ্কর গ্র্যাজুয়েশন করার পর পাটকলে চাকরি পায়। কিন্তু সে রোমাঞ্চ খোঁজে। সে আফ্রিকার দুর্গম স্থানে যেতে চায় (Bengali Novels)। অবশেষে তার গ্রামের এক অধিবাসী, যে আফ্রিকায় কাজ করে, তার সহায়তায় সে আফ্রিকায় ক্লার্ক হিসেবে কাজ পায় এবং উগান্ডা রেলওয়েতে চাকরি পায়। কিন্তু সেখানে মানুষখেকো সিংহ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর আগের সমস্যা থাকে। ইতিমধ্যে সিংহের সাথে তার যুদ্ধ হয়। এছাড়াও এখানে ব্ল্যাক মাম্বা সাপের আক্রমণ হয়। এখানেই সে পর্তুগিজ অভিযাত্রীক ও স্বর্ণসন্ধানী ডিয়েগো আলভারেজ-এর দেখা পায়। আলভারেজ তাকে তার সময়ের ঘটনা বলে। সে এবং তার সঙ্গী জিম কার্টার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিরের খনির সন্ধান পায়। কিন্তু ভয়ঙ্কর জন্তু বুনিপ জিমকে মেরে ফেলে এবং আলভারেজ ফিরে আসতে বাধ্য হয়। 

সব শুনে শঙ্কর ক্লার্কের চাকরি ছেড়ে দিয়ে আলভারেজের সাথে খনি অনুসন্ধানে বের হয়। তারা ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করে (Best Bengali Novels)। পথে তাদের অবর্ণনীয় অসুবিধা হয়। জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি তাদের পথে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে আলভারেজকেও সেই বুনিপ মেরে ফেলে। শঙ্কর একা হয়ে পড়ে। সে বুনিপের গুহা খুঁজে পায়। সে নিজের অজান্তেই হিরের খনি খুঁজে পায়। সেই গুহায় সে পথ হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে কিছু পাথরের সহায়তায় সে গুহা থেকে বেরতে পারে। সে সঙ্গে করে কিছু পাথর নিয়ে আসে। আসলে সেই পাথরগুলো আর কিছুই নয়, হিরে। সে ইতালীয় অভিযাত্রীক আত্তিলীয় গাত্তির নোট থেকে জানতে পারে, আসলে সে যেই গুহায় পৌঁছেছিল, সেই গুহাই বিখ্যাত হিরের খনি, যার জন্য জন ও আলভারেজ তাদের জীবন হারিয়েছে। কিন্তু সে ততক্ষণে কালাহারি মরুভূমিতে পথ হারিয়েছে। নিজের প্রাণ বাঁচানোই তখন দুষ্কর। তার মাথার উপর শকুনেরা ঘোরাফেরা শুরু করে। পথে সিংহের সাথে তার যুদ্ধ হয়। অবশেষে এক সার্ভে টিম তাকে খুঁজে পায় এবং মুমূর্ষু অবস্থায় সলসবেরি, রোডেশিয়ায় নিয়ে গিয়ে বাঁচায়।

Goodreads Rating: 4.55/5

হাজার চুরাশির মা (Hajar Churashir Maa By Mahasweta Devi)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

হাজার চুরাশির মা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। এই উপন্যাসটি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাসটি রচিত হয়।

এই উপন্যাস এক মায়ের গল্প। যাঁর ছেলেকে তার আদর্শের জন্য রাষ্ট্র পাশবিকভাবে হত্যা করে। লাশকাটা ঘরে ব্রতীর লাশের নম্বর ছিল ১০৮৪। তা থেকেই উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে। ব্রতী শ্রেণিশত্রু, রাষ্ট্রের সহকারী ও পার্টির অভ্যন্তরে প্রতি-বিপ্লবীদের ক্রমাগত নির্মমভাবে হত্যা করার পক্ষপাতী ছিল (Bangla Novel)। গল্পটি শুরু হয়েছে ব্রতীর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন (হাজার চুরাশির মা)। সুজাতা ব্রতীর জন্ম থেকে তার ছেলের স্মৃতিচারণা করছেন। 

বহু বছর পরে সুজাতা এই ভেবে শান্তি পান যে, রাজনৈতিক অশান্তিতে তার ছেলের মৃত্যু প্রায় কোনও ঘরকেই ছাড়েনি। হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে মানবিক কাহিনির সেই সব অন্য মুখগুলিকে চিত্রিত করা হয়েছে, যেগুলির উৎস বাংলার যুবসমাজের অশান্ত রাজনৈতিক অ্যাডভেঞ্চার। যতদিন না কমিউনিস্ট পার্টি সরকার গঠন করে, ততদিন এই যুবসমাজকে নির্মমভাবে দমন করেছিল সরকার (Bengali Novels)। তারপর কমিউনিস্ট সরকার তার বিরোধী শক্তিকে নির্মমভাবে দমন করে।

Goodreads Rating: 4.17/5 

দেবদাস (Devdas By Sarat Chandra Chattopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

দেবদাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি প্রণয়ধর্মী বাংলা উপন্যাস। দেবদাস শরৎচন্দ্রের প্রথম দিকের উপন্যাস। রচনার সমাপ্তিকাল সেপ্টেম্বর ১৯০০। কিন্তু প্রকাশনার বছর ১৯১৭।

উপন্যাসে দেবদাস বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন ব্রাহ্মন জমিদার বংশের সন্তান, পার্বতী এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে৷ বাংলার তালসোনাপুর গ্ৰামে এই দুই পরিবারের পাশাপাশি বাস। ছোটবেলা থেকেই দেবদাস ও পার্বতীর অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব যা পরবর্তীতে প্রেমের রূপ নেয়। 

কৈশোরে উত্তীর্ণ দুজন হঠাৎই অনুভব করে, তাদের বাল্যকালের বন্ধুত্ত্ব আর‌ও গভীর কিছুতে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেবদাস দেখে যে তার ছোটবেলার পারো বদলে গেছে। পার্বতী তাদের কৈশোরের প্রেম বিবাহবন্ধনে পরিস্ফুটনের কথা ভাবে। প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুযায়ী, পার্বতীর বাবা-মাকে দেবদাসের বাবা-মায়ের কাছে তাদের বিবাহের প্রস্তাব আনতে হবে। পার্বতীর মা দেবদাসের মা হরিমতির কাছে বিয়ের প্রস্তাব আনলে তিনি আনন্দিত হলেও পাশের বাড়ির সাথে এই সম্পর্ক রাখতে তিনি বিশেষ উৎসাহী হন না। এতে পার্বতীর পিতা নীলকন্ঠ চক্রবর্তী অপমানিত বোধ করেন ও পার্বতীর জন্য আরও ধনী গৃহে বিয়ে ঠিক করেন। পার্বতী একথা জানলে দেবদাস অন্তত তাকে গ্ৰহণ করবে এই আশায় রাতের অন্ধকারে তার সাথে দেখা করে। দেবদাস মনস্থির করে তার বাবাকে বললে, তিনি অরাজি হন (Best Bengali Novels)। বিভ্রান্ত অবস্থায়, দেবদাস বাড়ি থেকে কলকাতায় পালিয়ে যায়। সে চিঠি লিখে পার্বতীকে জানায় যে সে এই সম্পর্ক আর রাখতে চায় না। 

দেবদাস কলকাতায় ফিরে যায় ও পার্বতীর হাতিপোতা গ্ৰামে ভুবন চৌধুরী নামে এক জমিদারের সাথে বিয়ে হয়। ভুবন চৌধুরীর পূর্বের স্ত্রী মারা গেছেন ও তার তিনজন সন্তান রয়েছে, যারা পার্বতীর প্রায় সমবয়সী বা তার চেয়ে বড়ো। কলকাতায় গিয়ে দেবদাসের চুনীলালের সাথে বন্ধুত্ব হয় ও তার মাধ্যমে সে চন্দ্রমুখী নামে এক বাঈজীর সাথে পরিচিত হয়। সে দেবদাসের প্রেমে পড়ে, যদিও দেবদাস তাকে ঘৃণা করতে থাকে। হতাশাগ্ৰস্ত দেবদাস অত্যধিক মদ্যপান শুরু করলে তার শরীর ক্রমশ ভে‌‌ঙে পড়ে। চন্দ্রমুখী তার দেখভাল করতে থাকে। দেবদাস তার মনে প্রতিনিয়ত পার্বতী ও চন্দ্রমুখীর তুলনা করতে থাকে ও চন্দ্রমুখীকে সে পারোর কথা বলে। দুঃখ ভুলতে দেবদাস ক্রমশ মদ্যপানের মাত্রা বাড়াতে থাকে ও তাতে তার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটে। চন্দ্রমুখী বুঝতে পারে যে দেবদাসের ভিতরের আসল মানুষটির আজ পতন ঘটেছে (Bengali Novels)। দেবদাস শেষপর্যন্ত চন্দ্রমুখীর প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়। শীঘ্র আসন্ন মৃত্যুর কথা অনুভব করতে পেরে দেবদাস, পারোকে দেওয়া তার পূর্বের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হাতিপোতা গ্ৰামে পার্বতীর কাছে র‌ওনা হয়। পার্বতীর বাড়ির সামনে পৌঁছে, এক অন্ধকার শীতের রাতে দেবদাসের মৃত্যু হয়। 

Goodreads Rating: 3.88/5 

আনন্দমঠ (Anandamath By Bankim Chandra Chattopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

আনন্দমঠ ঊনবিংশ শতাব্দীর ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। এর প্রকাশকাল ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে এর একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। এই উপন্যাসটি ছাপার বিরূদ্ধে ব্রিটিশ সরকার আইন পাশ কৱে, তবে এর হস্তলিখিত গুপ্ত সংস্করণ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে (Best Bengali Novels)। এই উপন্যাসের কাহিনি ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত উত্তর বঙ্গের সন্ন্যাসী আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে রচিত। এই উপন্যাসেই বঙ্কিমচন্দ্র বন্দে মাতরম গানটি লেখেন। পরবর্তীতে ভারতীয় স্বদেশপ্রেমীরা “বন্দে মাতরম” বাক্যটি জাতীয়তাবাদী শ্লোগান হিসাবে গ্রহণ করে।

Goodreads Rating: 3.93/5 

প্রথম প্রতিশ্রুতি (Prothom Protishruti By Ashapurna Devi)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

প্রথম প্রতিশ্রুতি সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর একটি বিখ্যাত উপন্যাস (Bangla Novel)। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তী কালে এই উপন্যাসটি (প্রথম প্রতিশ্রুতি) অবলম্বনে একটি বাংলা সিনেমাও তৈরি হয় ১৯৭১ সালে। পরিচালনা করেন, দীনেন গুপ্ত। এটি একটি উপন্যাস ত্রয়ীর প্রথম উপন্যাস। পরবর্তী দুটি উপন্যাসের নাম হল সুবর্ণলতা এবং বকুলকথা।

Goodreads Rating: 4.41/5 

ফেলুদা সমগ্র (Feluda Somogro By Satyajit Ray)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসের সন্দেশ পত্রিকায় ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প “ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি” প্রকাশিত হয় (Bangla Novel)। ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ৩৫টি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। ফেলুদার প্রধান সহকারী তার খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে ও লেখক লালমোহন গাঙ্গুলি (ছদ্মনাম জটায়ু)। ফেলুদার চরিত্র নির্মাণে সত্যজিৎ রায় (Bengali Novels) তার ছোটবেলায় পড়া শার্লক হোমস এর গোয়েন্দা গল্পের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই ফেলুদার চরিত্রের সাথে অনেক জায়গায় আমরা হোমসের আর ফেলুদার ভাই ও সহকারি তোপসের সাথে হোমসের সহকারি ওয়াটসনের মিল পাই। 

Goodreads Rating: 4.50/5 

তুঙ্গভদ্রার তীরে (Tungabhadrar Teere By Saradindu Bandopadhyay)

তুঙ্গভদ্রার তীরে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস। উপন্যাসটি প্রকাশের পর এটি রবীন্দ্র পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিল। রাজা দেবরায় উপন্যাসের একটি মুখ্য চরিত্র (Bangla Novel) হলেও কেন্দ্রীয় চরিত্র নয়। বরং উপন্যাসটি (তুঙ্গভদ্রার তীরে) দুই নারী বিদ্যুন্মালা এবং মনিকঙ্কনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।

Goodreads Rating: 4.22/5

ঘুণপোকা (Ghun Poka By Shirshendu Mukhopadhyay)

ছবি সৌজন্যে: ইনস্টাগ্রাম

ঘুণপোকা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। গল্পটা অনেকটা এই রকম… সেইন্ট অ্যান্ড মিলারের চাকরিটা জুন মাসে ছেড়ে দিল শ্যাম। চাকরি ছাড়ার কারণটা তেমন গুরুতর কিছু ছিল না। তার ড্রইংয়ে একটা ভুল থাকায় উপরওয়ালা হরি মজুমদার জনান্তিকে বলেছিলেন, বাস্টার্ড। মজুমদার অনেক হাবভাব, কথাবার্তা নকল করে আসছিল (Bangla Novel)। মাঝে মাঝে বেয়ারা এবং দু’-একজন শিক্ষানবিশ ড্রাফটসম্যানকে সে মজুমদারের মার্কামারা গালাগালগুলো একই ভঙ্গিতে এবং সুরে উপহার দিয়েছে এবং এমনকী তার এ রকম (ঘুনপোকা) বিশ্বাস এসে যাচ্ছিল যে,পুরনো এইসব গালাগালগুলো বহু ব্যবহারে শক্তিহীন হয়ে গেছে, এগুলোর আর তেমন জোর তেজ নেই। আরও কিছু নতুন রকমের গালাগাল আবিষ্কৃত না হলে আর চলছে না। তবু মজুমদারের কথাটা কানে এলে দু’একদিন একটু ভাবল শ্যাম…। 

Goodreads Rating: 3.61/5 

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!

বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন।

Read More From লাইফস্টাইল