লাইফস্টাইল

#POPxoWomenWantMore কলকাতার Chinatown-এর একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী Monica Liu

Doyel Banerjee  |  Mar 6, 2019
#POPxoWomenWantMore কলকাতার Chinatown-এর একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী Monica Liu

কলকাতা শহরে একআধ দিন ঘুরলেই আপনি বুঝতে পারবেন, এই শহরের উপর ব্রিটিশ সংস্কৃতির প্রভাব এখনও কতটা প্রবল। হবে নাই বা কেন বলুন? ১৯১১ সাল পর্যন্ত এই শহর যে ব্রিটিশ রাজের রাজধানী ছিল। এতদিনের অভ্যেস কি আর এক দুদিনে ভোলা যায়? সাহেবদের এত গভীর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও কী করে জানি, কলকাতার মানুষদের প্রিয় খাবার চাইনিজ হয়ে গেল! আপনি পার্কস্ট্রিটে যান, পরপর নামি দামী চিনে (Chinese) রেস্তরাঁ, আপনি ট্যাংরার চায়নাটাউন (Chinatown) যান একদম আদি অকৃত্রিম চিনে (Chinese) খাবারের গন্ধ আপনাকে পাগল করে দেবে। চিনে (Chinese) খাবার নিয়ে বাঙালিদের অতিরিক্ত প্রেম দেখে কিছু কিছু মুঘলাই রেস্তরাঁ পর্যন্ত তাদের মেনুতে চিনে খাবার রাখতে বাধ্য হয়েছে। আর কলকাতার এই চৈনিক খাদ্যপ্রীতিকে যিনি রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তিনি হলেন ডন অফ চায়নাটাউন (Chinatown) মনিকা লিউ (Monica Liu)। আসুন আজ আমরা এই আশ্চর্য মহিলার অদ্ভুত গল্প শুনি।

কে এই মনিকা লিউ?

চায়না টাউনে সবাই মনিকাকে ভালোবেসে ‘ডন অফ চায়না টাউন’ বলে। তাই বলে এটা ভাববেন না, সিনেমায় দেখা ডনের মতো মনিকা খুব ভয়ঙ্কর। একদমই না। বরং সর্বক্ষণ স্মিত এক হাসি লেগে থাকে মনিকার মুখে। সারাদিন এত কর্মব্যাস্ত আর ফিট থাকেন যে তাঁকে দেখে বোঝাই যায়না তিনি ন’জন নাতি নাতনির ঠাকুমা।১৮ বছর বয়সে মনিকার বাবা লিওন তনসেং কলকাতায় আসেন রোজগারের আশায়।একটি জুতোর দোকানে সেলসম্যানের কাজ নেন তিনি। ১৯৬২ সালে শুরু হল ইন্দো-চায়না যুদ্ধ। মনিকা তখন নেহাতই শিশু। পুরো পরিবারকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। নিয়ে গেল রাজস্থানের দেওলি ক্যাম্পে।অসহায় মনিকা এবং ক্যাম্পের একটি ছেলে চিঠি লিখলেন হোম মিনিস্টারকে। অবশেষে মুক্তি পেল তার পরিবার। মনিকার মা মোমো তৈরি করে রাস্তায় বিক্রি করতেন। মাকে সাহায্য করতেন ছোট্ট মনিকা।অবশেষে ১৯৯১ সালে খোলেন নিজের রেস্তরাঁ, নাম দিলেন কিম লিং। খুব সহজ লাগছে শুনতে? মনিকার জীবন কিন্তু অতটা সহজ নয়।কিম লিং খোলার পরেই শুরু হল গুন্ডাদের উৎপাত। মনিকাকে জোর করা হল প্রতিদিন বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার জন্য। একা হাতে সামলালেন সব কিছু। নতুন নাম হল ‘ডন অফ চায়না টাউন।’   

পুরনো সেই দিনের কথা

‘জীবন খুব কঠিন, লড়াই করতেই হয়।’ বারবার এই কথা বলেন মনিকা। ছোটবেলায় অসম্ভব দারিদ্র্যের মধ্যে কাটিয়েছেন। জুতোর দোকানে কাজ করে মাত্র ৫০ টাকা পেতেন মনিকার বাবা। আর তাই দিয়ে সংসার চলত না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল যখন মনিকার বাবার এই কাজটাও চলে গেল।কলকাতা ছেড়ে পরিবার চলল কালিম্পং। যেটুকু পুঁজি ছিল তাই দিয়ে একটা ছোট্ট দোকান খুললেন মনিকার বাবা আর মা। বেশিরভাগ তিব্বতিরা এখানে খেতেন। তবে আবার দেশের পরিস্থিতি উত্তাল হল। বন্ধ করে দেওয়া হল সীমান্ত।দোকান বন্ধ হয়ে গেল তনসেং-এর। মনিকা ও তার ভাই বোনেরা গেলেন শিলং। অমানুষিক কষ্ট করে থাকা। হেঁটে স্কুলে যাওয়া, আধপেটা খাওয়া। মনিকা এখনও ভোলেননি সেই সব দিনের কথা।

রাইজ অ্যান্ড রাইজ…

 

কিম লিং-এর পর ১৯৯৩ সালে ম্যানডারিন রেস্তরাঁ খোলেন মনিকা। ১৯৯৮ তে প্রতিষ্ঠিত হয় বেইজিং। পার্কস্ট্রিটের তুংফং-এর দরজা খোলে ২০০১ আর লেক ভিউ অঞ্চলে মনিকার পঞ্চম রেস্তরাঁ হল ম্যানডারিনের শাখা। ২৫০র বেশি মানুষ কাজ করেন মনিকার অধীনে। রেস্তরাঁর বার্ষিক আয়? ১০ কোটি টাকা!

মধুরেন সমাপয়েৎ

যারা মনিকার রেস্তরাঁয় খেতে আসেন তাদের মতামতকে এখনও গুরুত্ব দেন মনিকা। মজার ব্যাপার হল অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে যারা একসময় বাবা মার হাত ধরে খেতে আসত, এখন বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আসে। তারা মনিকা আনটির সঙ্গে দেখা করে যায়। যারা নিজেরা কিছু করতে চায়, তাদেরকে কী বলতে চান মনিকা? তির্যক চোখে ঝিলিক খেলে যায়। মুচকি হেসে ‘ডন’ সব সময় বলেন, “খাটতে হবে আর লড়াই করতে হবে, তাহলে সব পাবে!”    

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

Picture Courtsey: Aditya Ghosh and Youtube 

 

Read More From লাইফস্টাইল