পড়াশোনা

ভারতবর্ষের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র (Famous Historical Places In India)

Doyel Banerjee  |  Jun 24, 2019
ভারতবর্ষের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র (Famous Historical Places In India)

বাঙালির নাকি পায়ের তলায় সর্ষে! নিজের রাজ্য থেকে ভিন রাজ্য, সব সময়ই তাঁরা ঘুরে বেড়ান। কখনও সাধ্যের মধ্যে আবার কখনও সাধ্যের বাইরেও তাঁরা বাজেট করে দিব্যি এদিক সেদিক যান। কেউ সমুদ্র ভালবাসেন তো কেউ পছন্দ করেন পাহাড়। তবে তার মধ্যেই পুরনো মন্দির বা কোনও সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ দেখে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে পড়েননি এমন বাঙালি কমই আছেন। আর শুধু বাঙালিদের কথাই বা বলছি কেন? ভারতের (India) প্রতিটা রাজ্যের মানুষ ঘুরতে ভালবাসেন। ভ্রমণপ্রিয় বলে ভারতীয়দের সুনাম তো আর এমনি হয়নি। আর এই ভ্রমণপ্রিয় ভারতীয়দের কথা ভেবেই আমরা নিয়ে এসেছি ভারতবর্ষের এমন কয়েকটি ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র (Famous Historical Places In India) যার প্রতি পরতে মিশে আছে ইতিহাস।  

ভারতে বেড়ানোর মতো কী-কী ধরনের ঐতিহাসিক স্থান আছে (Types of Historical Places In India)

ভিমবেটকার (মধ্যপ্রদেশ) গুহাচিত্র Instagram

ভারত দেশ হিসেবে যতটা বৃহৎ, যতটা বিশাল, ঠিক ততটাই বিস্তৃত তার ইতিহাস। তাই ভারতের ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র গুলির (Historical Places In India) সংখ্যাও গুণে শেষ করা যায় না। 

প্রাগৈতিহাসিক ও ইতিহাসের গোড়ার দিকে সঙ্গে যুক্ত যে জায়গা (Pre & Proto-Historic Places In India)

বোঝাই যাচ্ছে, আদিম মানুষ যখন পৃথিবীর বুকে প্রথম টলোমলো পায়ে হাঁটছে এটা সেই সময়কার কথা। তবে এই সময়ের ইতিহাস অনেকটাই হারিয়ে গেছে বা এখনও সেভাবে উদ্ধার করা যায়নি। আমরা জানি মানুষ সেই সময় গুহায় বাস করত এবং গুহার গায়ে ছবিও আঁকত। এই জাতীয় ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে আছে মধ্যপ্রদেশের ভিমবেটকার গুহা এবং পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক স্থান ভালুকসোঁদা গুহা। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের চূড়াতেও আদি মানবের তৈরি কিছু অস্ত্র এখনও পাওয়া যায়। তাম্র ও লৌহ যুগের বস্তু বিভিন্ন মিউজিয়ামে সযত্নে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে অবশ্যই তালিকাভুক্ত হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর সুবিশাল সভ্যতা। দুর্ভাগ্যবশত এর অনেকটাই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানে চলে গেছে। আমাদের দেশে রাজস্থান ও গুজরাতে কিছু-কিছু নিদর্শন এখনও দেখা যায়। 

আদি ঐতিহাসিক স্থান (Historical Monuments In India)

এই সময় ইতিহাস হাতে কলমে লেখা হয়েছে। ফলে এগুলোর তথ্য প্রমাণ পাওয়া অনেক সহজ। গুপ্ত যুগের মন্দির বা সম্রাট অশোকের শিলালিপি ও স্তম্ভ ইত্যাদি এই সময়ের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও আছে অদ্ভুত সুন্দর কারুকাজ করা কিছু মন্দির। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম ভারত মিলিয়ে আমাদের দেশে অগুন্তি মন্দির আছে। আর আশ্চর্যের বিষয় হল প্রতিটি মন্দিরের নির্মাণ শৈলী প্র্যতেকের থেকে আলাদা।

সুলতানি ও মুঘল স্থাপত্য (Famous Islamic Monuments In India)

ভারতে প্রথম সুলতানি যুগ শুরু হয় আর তার পর শুরু হয় মুঘল যুগ। সুলতানি যুগে একেবারেই অন্য ধারার স্থাপত্য নির্মাণ শুরু হয়। মুঘল সম্রাটরা ছিলেন ‘মেগালোম্যানিয়াক” অর্থাৎ কোনও ছোটখাট স্থাপত্যে তাঁরা বিশ্বাস করতেন না। তাই হুমায়ুনের স্মৃতি সৌধ থেকে শুরু করে ভালবাসার অমর চিহ্ন তাজমহল সবই আকারে বিশাল।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘলদের সঙ্গে ব্যবসা করার অভিপ্রায়ে এদেশে এসেছিল। কিন্তু “বণিকের মানদণ্ড পোহালে শর্বরী দেখা দিল রাজদণ্ড রূপে!” অর্থাৎ ধীরে ধীরে তাঁরা ভারতের শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। তবে ব্রিটিশ রাজেও বেশ কিছু জায়গা আমাদের দেশে তৈরি হয়েছিল যেগুলো পরে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল বা শিমলার ইন্সটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডিয এর মধ্যে অন্যতম। এই সব স্থাপত্য ও জায়গাগুলিকে আমরা আধুনিক ইতিহাসের অংশ বলে ধরব।

উত্তর ভারতের দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থান (Historical Places To Visit In North India)

কুতুব মিনার (দিল্লি) Instagram

আমরা প্রথমে শুরু করলাম উত্তর ভারত দিয়ে। কারণ উত্তর ভারত একটি বিশাল ভূখণ্ড। শুধু ইতিহাসের দিক থেকে নয়, ভৌগোলিক দিক থেকেও এর গুরুত্ব বিশাল। 

১| দিল্লি (Delhi)

ভারতের রাজধানী দিল্লি। আর দিল্লি বলতেই প্রথমেই পর্যটকদের যে স্থানটির (Historical Places) কথা মনে পড়ে সেটি হল আগ্রার তাজমহল। এছাড়াও এখানে আছে ফতেহপুর সিক্রি ও বুলন্দ দরওয়াজা। রয়েছে আগ্রার কেল্লাও। তবে এটুকু দিয়েই দিল্লি ভ্রমণ শেষ হয়না। এখানে রয়েছে হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধ। এটাকে বিবি কা মকবরাও বলা হয়। কারণ হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু এটি নির্মাণ করেছিলেন। দিল্লি ছিল মুঘলদের রাজধানী। তাই এখানে অলিতে গলিতে ঐতিহাসিক স্থান বা ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র (Historical Monuments of India) আছে। আছে লাল কেল্লা, পুরানা কিলা, মহামাঙ্গার স্মৃতিসৌধ, দিওয়ানি খাস, কুতুব মিনার ইত্যাদি। 

২| হরিয়ানা (Haryana)

দিল্লিতে এত কিছু দেখার আছে তোহরিয়ানাও কিছু কম যায় না। মহাভারতের যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়েছিল সেই স্থান এবং ইতিহাসের বিখ্যাত পানিপথের যুদ্ধের স্থান পানিপথ এখানেই অবস্থিত। এছাড়াও এখানে যে যে ঐতিহাসিক স্থানগুলি আছে সেগুলি হল শিশ মহল, ইব্রাহিম লোদির সৌধ, সুরজকুণ্ড (দশম শতাব্দীর জলাধার) ইত্যাদি। 

৩| জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu & Kashmir)

কাশ্মীরের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য একে বলা হয় ভূস্বর্গ। তবে এখানকার ইতিহাসও শতাব্দী প্রাচীন। এখানে আছে পরি মহল, পাথর মসজিদ ও মার্তণ্ড মন্দির। শেষেরটি একটি সূর্য মন্দির যা অষ্টম শতাব্দীতে নির্মিত।  

৪| হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh)

পাহাড়ের রানি হিমাচল শুধু তার অভ্রভেদী পাহাড় আর অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। এখানে আছে হিরিম্বা মন্দির, কাংরা ফোর্ট, বৈজনাথ মন্দির। এছাড়া কালকা সিমলা রেলওয়েও একটি অবশ্য দ্রষ্টব্য। কারণ এটি একটি হেরিটেজ রেলওয়ে।

৫| উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh)

উত্তর প্রদেশ হল এমন একটি রাজ্য যার প্রতিটা জেলায় রয়েছে ইতিহাস। যেহেতু দিল্লির কথা আগেই বলেছি তাই দিল্লির কথা আর এখানে বলছিনা। উত্তর প্রদেশের দর্শনীয় স্থান (List of Historical Places In India) বলতে এখানে রয়েছে বড় ইমামবাড়া (লখনউ), রয়েছে বেনারসের মতো প্রাচীন শহর, মূলগন্ধকোটি বিহার ( বেনারস), কংস কি কিলা (মথুরা), ঝাঁসির কেল্লা (ঝাঁসি) ও গুপ্তসম্রাট সমুদ্রগুপ্তের বিখ্যাত এলাহাবাদ প্রশস্তি স্তম্ভ (এলাহাবাদ)। 

৬| পাঞ্জাব (Punjab)

সুস্বাদু খাবার আর রঙ বাহারি পরান্দা (পাঞ্জাবি মেয়েদের চুলে বাঁধার সরঞ্জাম) নিয়ে হাজির পাঞ্জাব। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রয়েছে এখানে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন জালিয়ানবালা বাগের কথা বলছি। তার থেকে একটু এগিয়েই রয়েছে পাঞ্জাবের বিখ্যাত স্বর্ণমন্দির (Historical Places In India)। রয়েছে পাঞ্জাব কেশরী মহারাজা রঞ্জিত সিংহের দুর্গ আর গোবিন্দগড় কেল্লা। 

৭| উত্তরাখণ্ড (Uttarakhand)

উত্তরপ্রদেশ রাজ্যটিকে ভেঙেই উত্তরাখণ্ড তৈরি হয়েছে। কটরমল সূর্য মন্দির (Historical Monuments of India) এখানকার দর্শনীয় স্থান। এছাড়াও রয়েছে বাগেশ্বর মন্দির যার সঙ্গে জড়িত আছে বহু পৌরাণিক কাহিনি। 

দক্ষিণ ভারতে দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থান (Top Historical Places To Visit In South India)

হাম্পি (কর্ণাটক) Instagram

উত্তর থেকে আমরা চলে এসেছি দক্ষিণে। উত্তর ভারতের মতো দক্ষিণ ভারতেও ঐতিহাসিক স্থান (List of Historical Places In India) প্রচুর। শুধু দক্ষিণ ভারত ভাল করে ঘুরে দেখতেই সাড়া জীবন কেটে যাবে। 

১| অন্ধ্রপ্রদেশ (Andhra Pradesh)

কোনও দিন অন্ধ্রপ্রদেশে গেলে দেখতে ভুলবেন না এখানকার উন্দাভাল্লি গুহা। এটি একটি মোনোলিথিক রক কাট স্থাপত্য। এছাড়াও রয়েছে গুটি কেল্লা এবং থোটলাকোণ্ডা বৌদ্ধ বিহার। 

২| তেলেঙ্গানা (Telangana)

তেলঙ্গানা রাজ্যটিও অপেক্ষাকৃত নতুন। এর রাজধানী হায়দ্রাবাদ একটি প্রাচীন শহর। আর হায়দ্রাবাদ বলতেই মনে পড়ে এখানকার সুস্বাদু বিরিয়ানি এবং অবশ্যই চারমিনার। এছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত গোলকোণ্ডা কেল্লা। গোলকোণ্ডা অঞ্চলের হিরে ছিল বিখ্যাত। মুঘল সম্রাট আউরঙ্গজেবের সঙ্গে এই কেল্লার ঐতিহাসিক যোগাযোগ আছে। মূলত এই কেল্লা জয় করার চেষ্টাই মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।  

৩| কর্ণাটক (Karnataka)

কর্ণাটকের স্মৃতি জড়িয়ে আছে টিপু সুলতানের সঙ্গে। কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু শহরেই আছে টিপুর কাঠের তৈরি সামার প্যালেস। রয়েছে মাইসোর দুর্গ এবং টিপুর সমাধিস্থলও। তবে এখানকার মূল আকর্ষণ হাম্পির অদ্ভুত সুন্দর মন্দির। এই রাজ্যেই রয়েছে ভারতের একমাত্র অ্যাপসাইডাল অর্থাৎ অর্ধচন্দ্রাকৃতি দুর্গা মন্দির যা পট্টডাকালে অবস্থিত। বেঙ্গালুরুর খুব কাছেই আছে বেলুর, হালেবিদু ও শ্রবনবেলগোলা। এই তিনটেই বিখ্যাত ভারতের ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র। 

৪| তামিলনাড়ু (Tamil Nadu)

যারা কোনোদিন দক্ষিণ ভারত যাননি, তাঁরাও জানেন তামিলনাড়ুর সবচেয়ে জনপ্রিয় ঐতিহাসিক স্থল হল মীনাক্ষী মন্দির। এছাড়াও আছে বৃহদেশ্বর মন্দির। তামিলনাড়ু ভারতের দক্ষিণতম রাজ্য। আর এখানেই আছে বিখ্যাত বিবেকানন্দ রক। স্বামী বিবেকানন্দ ভারত ভ্রমণের সময় সাগর পার হয়ে এই ভূখণ্ডে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। কথিত আছে এখান থেকেই তিনি সারা ভারত দর্শন করেন। এখানেই অবস্থিত বিখ্যাত রামেশ্বরম সেতু। যা জড়িয়ে আছে রামায়ণের সঙ্গে। এছাড়াও এখানে আছে বিখ্যাত রথ মন্দির যা রথের আকারে নির্মিত। এটি মহাবলীপুরমে অবস্থিত।   

৫| কেরল (Kerala)

কেরলকে বলা হয় ‘গডস ওন কান্ট্রি’ অর্থাৎ ইশ্বরের নিজের দেশ।এত সবুজ, এত সুন্দর ও শান্ত রাজ্য সত্যিই বিরল। এখানে আছে রক কাট কেভ টেম্পল, বেকাল ফোর্ট, পালাক্কাড ফোর্ট ইত্যাদি।  

পূর্ব ভারতের দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থল (Historical Places To Visit In East India)

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল (কলকাতা ) Instagram

এবার আমরা পূর্ব ভারতে (India) এসে গেছি। এখানে আছে কলকাতার মতো প্রাচীন শহর। রয়েছে ওড়িশার মতো সমৃদ্ধ রাজ্যও।

১| পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)

কলকাতা ১৯১১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের রাজধানী ছিল। তাই এখানে কলোনিয়াল স্থাপত্যর ছড়াছড়ি। তবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় কিছু না কিছু ঐতিহাসিক স্থল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রয়েছে পুরনো গির্জা, মন্দির ও মসজিদ। হুগলির বড় ইমামবাড়া থেকে শুরু করে নদিয়ার শ্রী চৈতন্যের জন্মস্থান সবটাই ইতিহাসে পরিপূর্ণ। বর্ধমানের কাটোয়ার ১০১ শিব মন্দির, বীরভূমের ফুল্লরা অট্টহাস বা কোচবিহারের রাজবাড়ি, দুর্গাপুরের কাছে শ্যামরুপার গড়, ইছাই ঘোষের দেউল বা উত্তর চব্বিশ পরগনার বেড়াচাঁপা, পশ্চিমবঙ্গের প্রতি জেলা একেকটি জীবন্ত মিউজিয়াম। 

২| বিহার (Bihar)

পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া জেলা বিহারও। এখানে আছে পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দা। আছে রাজগিরের মতো বৌদ্ধ ধর্মের স্থান। এখানেই আছে বোধগয়া। যেখানে অবস্থিত বিখ্যাত মহাবোধি মন্দির। এই মন্দিরের বাইরেই আছে সেই বিখ্যাত বোধিবৃক্ষ, যার নীচে ধ্যানে বসে গৌতম হয়ে উঠেছিলেন গৌতম বুদ্ধ। 

৩| ঝাড়খণ্ড (Jharkhand)

বিহার রাজ্যকে ভাগ করেই করে উঠেছে ঝাড়খণ্ড। এখানে গেলে অবশ্যই দেখবেন মালুতি মন্দির কমপ্লেক্স। এছাড়াও আছে পালামৌ কেল্লা। 

৪| ওড়িশা (Odisha)

ওড়িশা মানেই আমাদের কাছে পুরির জগন্নাথ মন্দির। যতটা এই মন্দিরের ধর্মীয় গুরুত্ব, ঠিক ততটাই এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব। এছাড়াও ধৌলিতে আছে সম্রাট অশোকের তৈরি বিখ্যাত ধৌলি এলিফ্যান্ট। এখানেই সম্রাট অশোক লড়েছিলেন কলিঙ্গের যুদ্ধ। এখনও সেই প্রান্তর দেখলে গায়ে কাঁটা দেয়। এছাড়াও কোনারকের সূর্য মন্দির, ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির ও উদয়গিরি খণ্ডগিরি গুহা দেখার মতো। এখানেই কটক শহরে জন্মেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর আদি বাড়িতে গড়ে উঠেছে একটি অবশ্য দর্শনীয় মিউজিয়ামও।

৫| আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (Andaman and Nicobar Islands)

এখানকার সবচেয়ে দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থান হল সেলুলার জেল। যা একসময় ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে ছিল ত্রাস সেই জেল এখন একটি মিউজিয়াম। 

উত্তর পূর্ব ভারতে দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থান (Historical Places To Visit In North East India)

ময়দাম (আসাম) Instagram

ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বে উত্তর পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বও কিছু কম নয়।

১| আসাম (Assam)

আসামের ঐতিহাসিক (Historical) স্থলগুলির বিশেষ গুরুত্ব আছে। অন্যান্য জায়গায় যেমন স্মৃতিসৌধ দেখা যায় এখানেও বিশেষ আকারের সৌধ চোখে পড়ে। এগুলোকে স্থানীয় ভাষায় ময়দাম বলা হয়। এছাড়াও এখানে আছে শাহজাহানের আমলে নির্মিত বিখ্যাত হজ পউয়া মক্কা মসজিদ। পোয়া বা পউয়ার অর্থ এক চতুর্থাংশ। বলা হয় এখানে খোদ মক্কা থেকে মাটি আনা হয়েছিল যার একের চার ভাগ দিয়ে এই মসজিদ তৈরি হয়। তাই এই নামকরণ। এখানকার আরও একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান হল শিবসাগর অঞ্চলের রঙ ঘর। একে এশিয়ার অ্যাম্ফিথিয়েটার বলা হয়।

২| মণিপুর (Manipur)

মণিপুরের রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন মহাভারতের তীরন্দাজ অর্জুন। মণিপুরের নিজস্ব ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। তাই এখানে সেই ধরনেরই ঐতিহাসিক স্থান আছে। তার মধ্যে কাংলা ফোর্ট আর খংজম ওয়ার মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স অন্যতম।

৩| নাগাল্যান্ড (Nagaland)

মণিপুরের মতো নাগা উপজাতিরও রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস। বিভিন্ন ট্রাইব বা উপজাতি নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে তাঁদের ভাল লাগবে এখানকার নাগা ভিলেজ। এছাড়াও এখানকার কুকি দোলং ভিলেজ ও তেরশ শতাব্দীর কাছারি সভ্যতার ধ্বংসাবশেষও দেখার মতো।

৪| ত্রিপুরা (Tripura)

ত্রিপুরায় আছে ঊনকোটি। যেটি একটি দুর্দান্ত ঐতিহাসিক স্থান। ঊনকোটি অর্থাৎ কোটির থেকে একটি কম। এটি একটি শৈব সাইট অর্থাৎ এখানে এক সময় শিবের পূজা হত। পাহাড়ের এই ঢালে এতগুলো মূর্তি কে বা কারা তৈরি করল এবং কেন করল এই রহস্য এখনও ভেদ করা যায়নি। এছাড়া এখানে আছে নীলমহল। এটি ত্রিপুরার দেববর্মণ রাজবংশের বাড়ি।

৫| মিজোরাম (Mizoram)

এখানে আছে মিজোদের গ্রাম ফারকাওন। তাঁদের জীবনযাত্রা কীরকম এখানে এলে বোঝা যাবে। এছাড়াও দেখার মতো  হল বালি পাথরে তৈরি সিবুতা লং যা আইজলে অবস্থিত। 

৬| অরুণাচল প্রদেশ (Arunachal Pradesh)

অরুণাচল প্রদেশের রূপ চোখ জোড়ানো। একদম পোস্টকার্ড পিকচারের মতো। স্থানীয় জনজাতির ইতিহাসকে দেখতে হলে এখানকার মিউজিয়ামগুলিতে একবার ঢুঁ মারতে হবে। এখানকার রাজধানী ইটানগর একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে আছে শতাব্দী প্রাচীন ইটা ফোর্ট। 

মধ্য ভারত ও পশ্চিম ভারতে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থান (Top Historical Places In Central and West India)

হাওয়া মহল (জয়পুর) Instagram

আমাদের ভ্রমণ প্রায় শেষের পথে। এবার আমরা এসেছি ভারতের পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলে।

১| গুজরাত (Gujarat)

গুজরাতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি। তাই এখানে এলে সবরমতির আশ্রম অবশ্যই দেখবেন। এছাড়া আছে বিশ্ববিখ্যাত সোমনাথ মন্দির। আছে দ্বারকা। গুজরাতের রাজপুত বংশ অর্থাৎ সোলাঙ্কি রাজপুতদের নির্মিত অসংখ্য মন্দির আছে এখানে। এখানকার অন্যতম বিখ্যাত মন্দির হল মধেরার সূর্য মন্দির।

২| রাজস্থান (Rajasthan)

রাজস্থান মানেই তো সোনার কেল্লা! অন্তত বাঙালিরা তাই বোঝেন। ঐতিহাসিক দিক থেকে জয়শলমিরের এই কেল্লার গুরুত্ব না থাকলেও পরিচালক সত্যজিৎ রায় একে কিংবদন্তির মর্যাদা দিয়ে গেছেন। তবে রাজস্থান নিজেই একটা গোটা ভারতবর্ষ। উদয়পুর প্যালেস, যোধপুর প্যালেস, জয়পুরের হাওয়া মহল, মীরাবাঈয়ের মহল, রানি পদ্মিনীর মহল, কুম্ভলগড় দুর্গ, জুনাগড় দুর্গ, চিতোরের দুর্গ…এই তালিকা অতি দীর্ঘ। 

৩| মহারাষ্ট্র (Maharashtra)

কলকাতার মতো বম্বে বা মুম্বাই একটি পুরনো শহর। ব্রিটিশ স্থাপত্যের ছোঁয়া এখানেও পাবেন। এখান থেকে অউরঙ্গাবাদে গেলে দেখতে পাবেন বিশ্ব হেরিটেজ অজন্তা ও ইলোরার অপূর্ব গুহাচিত্র। বম্বে থেকেই লঞ্চে করে ঘুরে আসা যায় এলিফ্যান্টা গুহা। শহরের মধ্যেই আছে বিখ্যাত বৌদ্ধ চৈত্য কানহেরি। লোনাভালা ও কারলের বৌদ্ধ মঠও (Must Visit Places In India) দেখার মতো। বম্বের বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক গেটওয়ে অব ইন্দিয়াও অবশ্যই দেখার মতো। যারা ইতিহাস পড়েছেন তাঁরা জানেন এখান থেকে নাসিক অঞ্চলে গেলে রাস্তায় পড়বে সাতবাহন সাম্রাজ্যের বিখ্যাত রাজা গৌতমিপুত্র সাতকরনির শিলালিপি। মহারাষ্ট্র ও পুনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ, শম্ভাজি মহারাজ ও বিভিন্ন পেশোয়ার স্মৃতি। পায়ে হেঁটে ঘুরলে অনায়াসে দেখা যায় সেগুলিও।  

৪| মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh)

মধ্যপ্রদেশকে বলা হয় ভারতের হৃদয়। এই ‘হিন্দুস্তান কা দিল’ এর প্রতিটা স্পন্দনে আছে ইতিহাস। এখানে তিনটে জায়গা অবশ্যই যাবেন। সাঁচি, যেখানে আছে বিখ্যাত বৌদ্ধ স্তূপ, ভিমবেটকা, যেখানে আছে আদিম মানবের আঁকা গুহাচিত্র এবং মানডু। আসলে মধ্যপ্রদেশ হল অনেকটা রাজস্থানের মতো। সাড়া জীবন ধরে ঘুরলেও দেখা শেষ হবে না। বাগের গুহা, বিদিশার বৈষ্ণব পিলার, খাজুরাহোর মন্দির আর কত কী যে আছে বলে শেষ হবে না। 

৫| ছত্তিসগড় (Chhattisgarh)

আমরা দিল্লি দিয়ে ঘোরা শুরু করেছিলাম, যা শেষ করছি ছত্তিশগড়ে এসে। মধ্যপ্রদেশকে ভেঙেই এই রাজ্য হয়েছে। এখানকার সিরপুর অঞ্চল খুব বিখ্যাত (Must Visit Places In India)। এছাড়াও রয়েছে অসামান্য কারুকাজ করা লক্ষণ মন্দির। রয়েছে রায়পুর ও বিলাসপুরের মতো ঐতিহাসিক অঞ্চলও। 

ইউনেস্কো থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা দেওয়া হয়েছে যে স্থান গুলি কে (World Heritage Sites In India By UNESCO)

১| হাম্পির মন্দির
২| অজন্তা ও এলোরার গুহা
৩| আগ্রার কেল্লা
৪| তাজ মহল
৫| কোনারকের সূর্য মন্দির
৬| মহাবলিপুরমের রথ মন্দির
৭| গোয়ার গির্জা
৮| খাজুরাহোর মন্দির
৯| ফতেহপুর সিক্রি
১০| পট্টডকলের স্থাপত্য
১১| এলিফ্যান্টার গুহা
১২| বৃহদেশ্বর ও ঐরাবতেশ্বর চোল মন্দির
১৩| সাঁচির বৌদ্ধ স্তূপ
১৪| হুমায়ুনের স্মৃতি সৌধ
১৫| কুতুব মিনার
১৬| মহাবোধি মন্দির
১৭| ভিমবেটকার গুহা
১৮| চম্পানের
১৯| লালকেল্লা
২০| যন্তর মন্তর
২১| রানি কা ভাভ
২২| নালন্দা

ভারতের দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থল নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর (FAQs)

১| প্রশ্ন: সংরক্ষিত ও অসংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মধ্যে ফারাক কী?

উত্তর: সাধারণত যে স্থাপত্য বা ঐতিহাসিক অঞ্চলগুলি এএসআই (আরকিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্দিয়া) দেখাশোনা করে বা যেগুলি আমাদের স্টেট বোর্ড দেখাশোনা করে সেগুলি সংরক্ষিত। এগুলির বাইরে নীল রঙের বোর্ড দেখা যায়। 

২| প্রশ্ন: ঐতিহাসিক কমপ্লেক্স বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: যখন একটি নির্দিষ্ট স্থানে অনেকগুলি স্থাপত্য বা ঐতিহাসিক স্থান একসঙ্গে থাকে সেই অঞ্চলকে বলা হয় ঐতিহাসিক কমপ্লেক্স। যেমন মানডুর ঐতিহাসিক কমপ্লেক্স বা হাম্পির ঐতিহাসিক কমপ্লেক্স।

৩| প্রশ্ন: ভারতের ঐতিহাসিক স্থানগুলি কারা দেখাশোনা করে?

উত্তর: মূলত দেখাশোনা করে আরকিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্দিয়া। এরা রাজ্য বোর্ডকে দায়িত্ব দিয়ে দেয়। অনেক সময় কিছু অঞ্চল স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও থাকে। 

৪| প্রশ্ন: ইউনেস্কো থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কীভাবে বেছে নেওয়া হয়?

উত্তর: ইউনেস্কোর নিজস্ব কিছু মাপকাঠি আছে। সাধারণত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হল কোনও বিশেষ স্থাপত্য যেমন তাজমহল, কোনও বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চল যেমন সুন্দরবন এবং বিশেষ কোনও রেলপথ বা সড়কপথ যেমন সিমলার রেলপথ ইত্যাদি। অঞ্চলটির ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক গুরুত্ব, তার জনপ্রিয়তা ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিচার করে এই সম্মান দেওয়া হয়। 

৫| প্রশ্ন: ভারতের ঐতিহাসিক স্থানগুলি পরিভ্রমণের সময় কি গাইড নেওয়া বাঞ্ছনীয়?

উত্তর: সেরকম কোনও বাধ্যতামূলক ব্যাপার নেই। ভারতীয় পুরাসর্বেক্ষণ বা আরকিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্দিয়া থেকে সরকারি গাইড দেওয়া হয়। অনেক সময় স্থানীয় মানুষরাও জায়গাটির সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়ে থাকেন।

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!

Read More From পড়াশোনা