ছোটবেলায় অনেক বন্ধু বা আত্মীয়দের বাড়ি যেতে চাইতাম না কারণ তাদের বাড়িতে পোষ্য ছিল। কিন্তু পরে ব্যাপারটা বদলে গেল, নিজেই যখন প্রথমবার দু’টি পোষ্য নিয়ে এলাম। তবে যেহেতু কোনও রকম পুর্ব-অভিজ্ঞতা ছিলনা (practical advices for first time pet parents), তাই ছোট পোষ্য দু’টিকে বাড়ি আনার পর নানা রকম চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা আমাকেও করতে হয়েছে। যা হাতের সামনে পাচ্ছে সেটাই কামড়ে ছিঁড়ে দিচ্ছে, সারা সন্ধে ঘুমিয়ে রাতভর নিজেরাও জেগে খেলছে আর আমাকেও জাগিয়ে রাখছে, আবার সকাল হতে না হতেই তাদের খাওয়ানো, দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ানো– এসব তো ছিলই, সবচেয়ে বড়ো সমস্যা ছিল পোষ্য দু’জন যখন তখন যত্রতত্র টয়লেট করে দিত।
সেসব দিন গেছে বটে! যাই হোক, তারা এখন বড় হয়েছে। বাধ্য বাচ্চার মতো সব কথা শোনে। কিন্তু আমি পরে ভেবে দেখেছি যে অভিজ্ঞতা না থাকলে বাড়িতে পোষ্য নিয়ে আসাটা এবং তাদের সমস্ত দায়িত্ব নেওয়াটা কঠিন কাজ! আপনিও কি ঠিক করছেন যে বাড়িতে পোষ্য নিয়ে আসবেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ুন, বাড়িতে প্রথমবার পোষ্য আনার আগে কি কি বিষয় মাথায় রাখা উচিত, সেটা এখানে বলা আছে
আপনি সব রকম দায়িত্ব নিতে তৈরি?
একটি পোষ্যকে বাড়িতে নিয়ে মানে কিন্তু শুধু তার সাথে খেলা নয়, আপনাকে অনেক বড়ো একটি দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আপনার পোষ্যকে হাঁটাতে নিয়ে যাওয়া, তাকে সময় মতো খাবার দেওয়া, ওষুধ খাওয়ানো, আরও অনেক কিছু। নিজেকে আগে প্রশ্ন করুন, যে আপনি সেই দায়িত্ব নিতে তৈরী কিনা? যদি আপনার উত্তর ‘না’ হয়, এবং আপনার বাড়িতে এমন কেউ না থাকে যিনি আপনার হয়ে ওই কাজ গুলো করে দিতে পারবেন, তাহলে দয়া করে কোনো পোষ্য আনবেন না বাড়িতে।
আপনি তাকে বাড়ির সদস্য হিসেবে রাখতে পারবেন?
আপনার বন্ধু বাড়িতে একটি ছোট কুকুরছানা নিয়ে এসেছে, তাই আপনারও পোষ্য হিসেবে কুকুরছানা চাই; কিংবা ইন্টারনেটে বিড়ালছানার ছবি বা ভিডিও দেখে আপনার এত কিউট মনে হয়েছে যে আপনিও ভাবছেন বিড়াল পুষবেন – এরকম যদি পরিস্থিতি হয়, তাহলে আগে থেকেই বলে রাখি, দয়া করে কুকুরছানা বা বিড়ালছানা বাড়িতে আনবেননা; যদি না আপনি তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে যত্ন করতে পারেন।
কারণ পোষ্য হিসেবে কুকুর বা বিড়াল বেশিরভাগেরই প্রথম পছন্দ হলেও এটা জেনে রাখা ভালো যে এই পোষ্যগুলি কিন্তু নিজের প্রভুকে কিছুতেই কাছ-ছাড়া করে না। কখনও খাটে উঠবে তো কখনো সোফায় বসবে। সত্যি কথা বলতে কি আমি মাঝেমাঝে একা ওয়াশরুমেও যেতে পারি না। বাড়িতে একটা কুকুর বা বিড়াল আনার আগে ভাল করে ভেবে নিন যে আপনার জীবনযাত্রায় কি আপনার পোষ্যদের আপনি অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন?
আপনি অ্যাডজাস্ট করতে প্রস্তুত?
নতুন কোনও জায়গায় গেলে আমাদের যেমন অ্যাডজাস্ট করতে সময় লাগে, ঠিক সেরকমই যখন আপনি বাড়িতে একটি চারপেয়েকে পোষ্য হিসেবে প্রথমবার নিয়ে আসেন, তখন এটা বুঝতে হবে যে সেই ছোট্ট বাচ্চাটিরও একটা নতুন বাড়িতে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে, কাজেই তার ওপরে কোনও কিছু চাপিয়ে দেবেন না।
আপনাকেও অনেক অ্যাডজাস্ট করতে হবে, এটা মাথায় রাখুন। কুকুরছানারা কিন্তু রাত্রে মাঝেমাঝেই উঠে কাঁদে বা খেলতে চায়। আমার মনে আছে যখন আমার পোষ্য দুটি ছোট ছিল প্রতিরাতে তারা ঠিক একটা নির্দিষ্ট সময়ে উঠতো সেই সাথে আমাকেও জাগিয়ে তুলতো। তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে যখন ওদের বিছানাতে শোয়াতাম ঠিক উঠে পড়তো আর কাঁদতো। আবার কোলে নিয়ে ঘুম পারালে ঘুমোতো। এভাবে মোটামুটি সারা রাত জেগে থাকার পর সকালে আমি যখন ঘুমোতে যেতাম, তখন আবার তারা দুজন উঠে খেলতে আরম্ভ করে দিতো। তাই বলছি, আপনি কি এগুলোর জন্য প্রস্তুত?
শুধু যে রাত জাগতে হবে তা কিন্তু না, যখন কুকুরছানা বা বিড়ালছানা ছোট থাকে অর্থাৎ যখন তাদের নতুন দাঁত ওঠে তখন এদের কামড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। হাতের সামনে যা পায়, সেটা খবরের কাগজ হোক জামা-কাপড় হোক, বাটি-ঘটি- জুতো যাই হোক, এরা সেটা নিয়ে কামড়াতে থাকে। তবে সব থেকে বেশি এরা কিন্তু মালিকের হাত কামড়াতে ভালবাসে। কাজেই প্রচুর আঁচড় এবং কামড়ের জন্য প্রস্তুত হন। আপনি যদি প্রথমবার পোষ্য আনেন, মনে রাখবেন অ্যাডজাস্ট আপনাকেই বেশি করতে হবে। কারণ আপনি তাকে নিয়ে এসেছেন, সে নিজে থেকে আসেনি আপনার বাড়িতে; দ্বিতীয়ত আপনার ছোট্ট পোষ্যটি অবোধ।
এক এক জনের এক এক রকম খাবার
প্রথমবার যখন বাড়িতে পোষ্য হিসেবে কুকুরছানা বা বিড়ালছানা আনবেন, মাথায় রাখবেন যে তাকে কিন্তু বারেবারে খাওয়াতে হবে। বাড়িতে যথেষ্ট পরিমানে খাবার মজুত রাখুন। অনেক পোষ্য আছে খাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা করে না, কিন্তু আবার অনেককেই খাওয়ানো মানে একটা যুদ্ধ।
আপনি যদি বাজার থেকে ডগ ফুড এনে খাওনোর কথা ভাবেন, তাহলে তা কেনার সময় খেয়াল রাখবেন যে আপনি সঠিক বয়েসের ডগ ফুড কিনছেন কিনা। একটু ভেঙে বলছি, ধরুন আপনার পোষ্য কুকুরটি ১ মাস কিংবা ২ মাসের, তার জন্য কখনোই ‘অ্যাডালট’ ডগ ফুড কিনবেন না; আবার ধরুন আপনি পোষ্য হিসেবে পাগ নিয়ে এসেছেন, তাহলে ‘স্মল ব্রিড’-এর ডগ ফুড কিনুন।
আবার আপনি যদি বিড়ালকে পোষ্য হিসেবে পোষেন তাহলে কিন্তু তার আলাদা খাবার, তাকে ডগ ফুড দেওয়া যাবে না।
এ তো গেল রেডিমেড ফুডের কথা। কিন্তু বেশিরভাগ পশু চিকিৎসক পরামর্শ দেন, বাড়িতে রান্না করা খাবার পোষ্যকে খাওয়ানোর জন্য। যদি আপনিও আপনার কুকুর বা বিড়ালকে বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়াতে চান তাহলে রান্নায় ভুল করেও তেল মশলা দেবেন না। মনে রাখবেন, আমরা পোষ্যটিকে ভালবাসি বা পাশে নিয়ে শুই বলে কিন্তু ওরাদেরকে আমাদের খাবার খাওয়াতে পারব না! তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেলে প্রথমত কুকুর বা বিড়ালের লিভারের সমস্যা দেখা দেয় এবং গায়ের লোম উঠে যায়।
প্রথমবার যারা বাড়িতে পোষ্য আনেন, সত্যিই তাদের সঠিক ধারণা থাকে না যে তার পোষ্যটিকে কতটা খাবার দেওয়া উচিত। অনেক সময়েই আমরা বেশি বা কম খাবার দিয়ে ফেলি। তাই আপনার আদরের পোষ্যকে কতটা খাবার দেবেন এবং কখন কখন খেতে দেবেন সেটা পশু চিকিৎসক কিংবা অন্য কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির থেকে জেনে নিয়ে তার পরেই খেতে দিন।
এটা সারা জীবনের কমিটমেন্ট
আপনি হয়তো জোর করে একটা কুকুরছানাকে পোষ্য হিসেবে নিয়ে এলেন, কিন্তু আপনার বাড়ির লোক খুব একটা সেটা পছন্দ করছেন না এবং কুকুরছানাটিকে তারা সময় দেন না – এই অবস্থায় আপনি কি করবেন? কিংবা ধরুন আপনার ট্রান্সফারেবল চাকরি, আর আপনি পোষ্য নিয়ে আসতে চান। কিন্তু ধরুন যখন আবার ২ বছর বা ৩ বছর বাদে আপনার অন্য কোথাও ট্রান্সফার হয়ে গেলো তখন হয় আপনি আপনার পোষ্য কুকুরটিকে একা ফেলে চলে গেলেন কিংবা কোনো শেল্টারে দিয়ে এলেন। এটা কি করণীয়? না তো! এরকম কোনো পরিস্থিতি জীবনে ঘটতে পারে কিনা, সেটা ভেবে পোষ্য আনুন।
মনে রাখুন আরও কিছু জরুরি বিষয়
যেখানে সেখানে চ্যুয়িং গাম, ওষুধের স্ট্রিপ, এলুমিয়াম ফয়েল বা সিগারেটের বাট ফেলবেন না। এটা কুকুরের পেটে চলে গেলে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
খেয়াল রাখবেন যেন আপনার পোষ্যটির মুখে কোনোভাবেই চুল না যায়।
একটি পোষ্যর জন্য কিন্তু মাসে বেশ ভাল খরচ হয়। তার খাবার, ওষুধ, খেলনা, স্নান ও গ্রুমিং-এর সরঞ্জাম – নানা খাতে আপনার বেশ ভাল টাকা খরচ হবে। আপনি সেই অতিরিক্ত খরচ মোটামুটি ১০-১২ বছর টানা বহন করতে পারবেন কি না, সেটা আগে থেকে ভেবে তবেই বাড়িতে কুকুরছানা বা বিড়ালছানা নিয়ে আসুন।
বাড়িতে যেখানে সেখানে ইলেক্ট্রিক তার কিংবা পর্দা ঝোলানোর রড রাখবেন না।
বাড়িতে বা বাগানে যদি কোনো বিষাক্ত গাছ থাকে, এখনই তা উপড়ে ফেলুন।
কোনো ক্যামিক্যালযুক্ত বস্তু আপনার পোষ্য কুকুরছানা বা বিড়ালছানার হাতের নাগালে রাখবেন না। আপনার ছোট্ট পোষ্যটি অবোধ, আপনাকেই দায়িত্বশীল হতে হবে।
ফিনাইল বা ডেটলের বদলে নুন দিয়ে ঘর মুছুন। কারণ একফোঁটা ফিনাইল যদি কুকুরছানা বা বিড়ালছানার পেটে কোনোভাবে চলে যায় তা মারাত্মক (deadly) হতে পারে।
খেয়াল রাখবেন আপনার বাগানের ঘাস থেকে যেন পোষ্যের গায়ে পোকা না হয়। কিংবা আপনার বাড়িতে যদি কোনো পাখি পোষ্য হিসেবে থাকে তাহলে তার মল যেন কোনোভাবেই ছোট কুকুরছানাটির পেটে না যায়। ঘাসের পোকা বা পাখির মল থেকে কুকুরদের ‘পার্ভো’ নামের একটি অসুখ হতে পারে যেটি মারাত্মক।
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!