বিদেশে ভ্রমণ

চেরিফুলের সমারোহে বসন্তের আগমন জাপানে (Spring season in Japan)

Doyel Banerjee  |  Feb 28, 2019
চেরিফুলের সমারোহে বসন্তের আগমন জাপানে (Spring season in Japan)

খানিকটা শখ করেই একদিন জাপানি ভাষা শিখতে শুরু করেছিলাম। দেখতে দেখতে শুধু জাপানের ভাষা নয়, সেখানকার সংস্কৃতি, খাবার সব কিছুর প্রেমে পড়ে গেলাম। তবে কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবিনি জাপান (Japan) জেতে পারব। ২০১৫ সালে আমার স্বামীর কর্মসূত্রে জাপান (Japan) যাওয়ার সুযোগ হয়ে গেল। পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য করতে আমিও চললাম জাপান। ব্যাপারটা কিছুটা সৌভাগ্য আর কিছুটা কাকতালীয় হলেও একটা মজার ব্যাপার ঘটেছিল। আমি যে সময় (Season) জাপান গিয়েছিলাম অর্থাৎ মার্চের শেষে, সেই সময় জাপানে আসে বসন্তকাল (Spring)। বেশিরভাগ পর্যটক এই সময় (Spring) জাপানে বেড়াতে যান। কারণ এই সময় এখানে ফোটে সাকুরা বা চেরিফুল (Sakura) । 

সাকুরা সিজন

টোকিয়ো টাওয়ারের কাছে ফুটেছে সাকুরা  

সাধারণত মার্চ আর এপ্রিল এই দুটো মাস নিয়েই সাকুরা সিজন হয়। সাকুরা হল চেরি ফুলের জাপানি নাম। এই ফুলকে কেন্দ্র করে জাপানিরা প্রায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। ফলে এই সময় হয় সাকুরা ফেস্টিভ্যাল। তবে সাকুরা ফুল কিন্তু বেশিদিন থাকে না। ফোটার পর দশ বারো দিনের মধ্যে ঝরে যায়। প্রতি বছর জাপান সরকার একটি সাকুরা রিপোর্ট বের করেন। যেখানে বলা থাকে এবার কোন কোন পার্কে সাকুরা ফুটবে। পর্যটকরা সেখানেই যান।

কেমন হয় সাকুরা

শিনজুকু কোয়েনে ফুটেছে গোলাপি ও সবুজ সাকুরা 

সাকুরা অনেকটা দোপাটি ফুলের মতো দেখতে হয়। সাকুরার অনেক প্রকার আছে। ফুল কোন মাসে ফুটছে, সমতলে ফুটছে নাকি পাহাড়ি অঞ্চলে ফুটছে এবং ফুলের রঙ ও আকার এই সমস্ত কিছুর উপর ভিত্তি করে সাকুরার শ্রেণী বিভাগ হয়। হাল্কা গোলাপি, ঘন গোলাপি, সাদা, কমলা, সবজেটে সাদা, দুধে আলতা এইরকম প্রায় দশ রকমের সাকুরা জাপানে ফোটে। তবে সবগুল এক সময় ফোটে না।

কীরকম হয় সাকুরা ফেস্টিভ্যাল

সাকুরার রঙে রাঙানো হয়েছে টোকিয়োর স্কাই ট্রি

বিভিন্ন পার্কে বসে মেলা, নানা রকমের প্রতিযোগিতার আসর। নদীর ধারে যেখানে যেখানে এই ফুল ফুটেছে সেখানে জমিয়ে পিকনিক করে জাপানিরা। তবে সেই জায়গাটা একটুও নোংরা না করে। না পুলিশে ধরে না ওখানে রাস্তা নোংরা করলে। ওরা এমনিই করে না। আর এই সময় পাওয়া যায় সাকুরা ফ্লেভারের নানা খাবার। তার মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের হল সাকুরা কিটক্যাট। ভালো লাগে চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি মোচি বল উইথ সাকুরা ক্রিম।  

  

আনন্দ বসন্ত সমাগমে

উয়েনো ন্যাশনাল পার্ক 

জাপানে পৌঁছে আমরা প্রথমেই গিয়েছিলাম রিকুগিয়েন ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্ক সম্পর্কে বলার আগে একটা কথা বলে রাখি। জাপানে অসংখ্য জাতীয় পার্ক আছে। আর সেগুলির আকার প্রায় ছোটখাট একটা দেশের মতো। অসম্ভব পরিষ্কার এবং সুন্দর প্রতিটি পার্ক। ভাবছেন বুঝি এ আর এমন কী ব্যাপার। ব্যাপার হল এই যে এখানে একেকটি পার্কের বয়স ৫০০ থেকে ১০০০! হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন। জাপানে সামন্তপ্রভু বা শোগুনদের জমানা থেকেই এই পার্কগুলো রয়েছে।

রিকুগিয়েন ন্যাশনাল পার্ক

রিকুগিয়েন পার্কে উইপিং উইলো 

রিকুগিয়েন পার্কে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। দলে দলে জাপানি হাসিমুখে ঢুকছেন পার্কে। বেশ ভিড় জমেছে। টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। মনে হল আমার জাপান আসা সার্থক। চারদিকে ফুটে আছে গোলাপি সাকুরা।এই পার্কে আছে উইপিং সাকুরা। একটা মস্ত বড় চেরি গাছ যার অসংখ্য ডালপালা। এই সাকুরার রঙ সাদা। দেখে মনে হয় একটা বুড়ো মানুষ বসে কাঁদছে। তাই এহেন নামকরণ।জাপানিরা জেন বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। তাই প্রতি পার্কে আছে একটি করে পুকুর আর একটি সেতু।

এছাড়াও যে যে পার্কে সাকুরা ফুটেছিল

কোশিকাওয়া কোরাকোয়েনে পর্যটকদের ভিড় 

 

কোশিকাওয়া কোরাকোয়েন

সাকুরা স্কোয়্যার, আসাকুসা

টোকিও টাওয়ার ও জোজোজি মন্দির

কিতানোমারু ন্যাশনাল পার্ক

উয়েনো ন্যাশনাল পার্ক

শিনজুকু ন্যাশনাল পার্ক

কীভাবে যাবেন

শহর জুড়ে ফোটে গোলাপি সাকুরা 

যদি সাকুরা সিজনেই যেতে চান তাহলে ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির গোড়ায় চোখ রাখতে হবে বিভিন্ন জাপানি সাইটে। সরকারি সাইট বেশি নির্ভরযোগ্য। সেখানে বলে দেওয়া হবে কবে ফুটবে সাকুরা।কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুর বা ব্যাংকক হয়ে নারিতা/হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে পারেন। নতুন দিল্লি থেকে সরাসরি টোকিয়োর ফ্লাইট আছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স খুবই ব্যায়বহুল। অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ভাড়া চেক করে নেবেন।

নারিতা বা হানেদা থেকে পাওয়া যায় আপনার গন্তব্যস্থলের বাস। বিমানবন্দরের সব কাজ সেরেই বাসের কুপন কেটে নিন। মনে রাখবেন টোকিয়ো পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর। প্রয়োজন ছাড়া ট্যাক্সি ডাকবেন না। ট্র্যাভেল করুন চিকাতেতসু বা মেট্রোতে।

কোথায় থাকবেন

বিশ্বের অন্যতম ব্যায়বহুল শহর টোকিয়ো 

চেষ্টা করবেন মূল শহর থেকে একটু দূরে থাকতে। যেমন ধরুন ইয়োকোহামা, নাগোয়া ইত্যাদি। এগুলো টোকিয়োর থেকে একটু সস্তা। এখানে থাকার জন্য সবচেয়ে কম খরচে পাবেন ক্যাপসুল বাঙ্কার। খুব একটা আরামদায়ক না হলেও খরচে পুষিয়ে যাবে।

POPxo Recommends Airbnb

কী খাবেন

জাপানেও সমান জনপ্রিয় কেএফসি 

এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ও ভারতীয় দোকান আছে। তবে ভারতীয় মুদ্রায় দেখতে গেলে দাম শুনে আপনি জ্ঞান হারাতে পারেন!সিফুডে অ্যালার্জি না থাকলে নির্দ্বিধায় স্ট্রিট ফুড খান। পেয়ে যাবেন ম্যাকডোনাল্ড ও কেএফসিও।  

খরচ বাঁচাতে

মেট্রোয় যাতায়াত সবচেয়ে ভালো 

মেট্রো স্টেশনের কাছে থাকার চেষ্টা করুন।

হেঁটে শহর দেখুন।

সস্তায় ওবেনতো বা প্যাকড লাঞ্চ কিনে নিন।

পাসমো কার্ড করিয়ে নিন। এই কার্ডে মেট্রোর টিকিট কেনা, কেনাকাটা ও খাওয়াদাওয়া অনেক কিছু করতে পারবেন।

ছবিঃ নিজস্ব     

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও! 

 

Read More From বিদেশে ভ্রমণ