দুর্গা ঠাকুর (durga) দেখার সময় কখনও দেখেছেন কি যে, লক্ষ্মীর পেঁচা কোন দিকে তাকিয়ে আছে? কেমন ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকে তাই না? ওসব আসলে যাকে হিন্দিতে বলে দিখাওয়া! ব্যাটা চোখ অর্ধেক বুজে মিটিমিটি করে দেখে কে-কে ঠাকুর দেখছে আর কেউ তাঁর লক্ষ্মী মায়ের ঝাঁপিখানা বাগিয়ে নিতে আসছে কিনা! আর সিংহ? তাঁর যে বুকের ছাতি সব সময় ছাপ্পান্ন ইঞ্চি হয়ে থাকে, সেটা লক্ষ করেছেন কি? হবে নাই বা কেন? স্বয়ং দুর্গার বাহন বলে কথা! মোদ্দা কথা হল আপনি লক্ষ্য করুন বা না করুন, দেবদেবীদের (family) বাহনরাও (vahanas) গরিমা বা গ্ল্যামারের দিক থেকে কিছু কম নয়। এই বাহনরাও এক-একজন একেকটি মিনি দেবতার মতো। এক-এক দেবতার সঙ্গে একেক বাহনের (vehicles) যুক্ত হওয়ার পিছনে রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। দেবদেবীদের সঙ্গে এঁরাও কিন্তু সমান আদরে পূজিত হন। আর সেসব গপ্পো বেশ মজাদারও। গপ্পোর কথা যখন উঠল তখন আবার ধান ভানতে শিবের গীত কেন? শুনেই নেওয়া যাক বাহনদের কীর্তিকলাপ।
কীভাবে ইঁদুরের সঙ্গে দেখা হল গণেশের
পুরাণ বলছে ইন্দ্রের রাজসভায় ক্রৌঞ্চ নামক এক গায়ক ছিলেন। অহঙ্কারে মত্ত ক্রৌঞ্চ একদিন অপমান করে বসলেন বামদেব নামের এক ঋষিকে। ঋষির গলায় সুর ছিল না, তাও তিনি গান গাইছিলেন। এতেই ঠাট্টা করে ক্রৌঞ্চ। ক্রুদ্ধ, কুপিত বামদেব বললেন যে সৌন্দর্য ও গুণের জন্য তাঁর এত অহঙ্কার সে সব কিছুই থাকবে না। ক্রৌঞ্চ পরিণত হলেন এক ছোট্ট কদাকার ইঁদুরে। মর্তে এসে ঋষি পরাশরের আশ্রমে আশ্রয় নিলেন ক্রৌঞ্চ। সেখানেই একদিন গণপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হল তাঁর। গণেশ সব শুনে ক্রৌঞ্চকে নিজের বাহন করে নিলেন। অন্যান্য গ্রন্থে অবশ্য আলাদা ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়। তবে বিশালকায় গণপতির সামনে ক্ষুদ্র ইঁদুর থাকার অর্থ হল নিজের অহঙ্কার, ক্রোধ ও অনান্য তামসিক গুণের উপর নিয়ন্ত্রণ।
যেমন সুন্দর কার্তিক, তেমন সুন্দর ময়ূর
অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য দেব সেনাপতি কার্তিক হলেন কন্দর্পকান্তি। দেখবেন তাঁর সঙ্গে যে ময়ূর থাকে সেও কিছু কম সুন্দর নয়। ময়ূর কীভাবে কার্তিকের বাহন হল সেই নিয়ে কোনও পৌরাণিক ব্যাখ্যা নেই। তবে ময়ুরের অন্যান্য গুণ আছে। যেমন ময়ূর খুব তৎপর একটি পাখি। সে সর্পহন্তা এবং তার মধ্যে আলস্য দেখা যায় না। ময়ূর সদা সতর্ক থাকে এবং খুব কম ঘুমায়। সম্ভবত একজন সেনাপতির সহচর হিসাবে এইসব গুণ একজন রক্ষীর থাকা উচিত বলেই এই বাহনকে কার্তিক বেছে নিয়েছেন। অনেকে বলেন হরিয়ানা অঞ্চলে যৌধেয় নামক এক উপজাতি বা গোষ্ঠী থাকত। এঁরা ছিল যুদ্ধবাজ জাতি। এঁদের দেবতা ছিলেন কার্তিক। এই গোষ্ঠীর প্রতীক ছিল ময়ূর। সেই কারণেও ময়ূর কার্তিকের বাহন হতে পারে।
সরস্বতীর বাহন রাজহংসের গতি সর্বত্র অবাধ
দেবী সরস্বতী পড়াশোনা নিয়ে থাকেন, গানবাজনা নিয়ে থাকেন। তাঁর অন্য কোনও দিকে হুঁশ থাকে না। আর তাঁর পায়ের কাছে চুপটি করে বসে থাকে শ্বেতশুভ্র এক রাজহাঁস। কেন হাঁস নিয়ে তিনি ঘোরেন জুড়িগাড়ি কেন চড়েন না এই প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। কবি মৃদুল দাশগুপ্ত যেমন বলেই ফেললেন, “সরস্বতীর হাঁস সেও কি এমএ পাশ? বিষয় হল প্রাচীন ইতিহাস!” না প্রাচীন ইতিহাস হাঁস পড়েছে কিনা জানি না। তবে জ্ঞানের গতি যেমন সর্বত্র অবাধ ঠিক তেমনই রাজহংস সর্বত্র বিচরণ করে। দুধ আর জল মিশিয়ে দিলে সে শুধু দুধটুকু পান করে। অর্থাৎ সবাই যাতে অকিঞ্চিৎকর বিষয় ত্যাগ করে পরমার্থ জ্ঞান লাভ করে সেটাই বলে বীণাপাণির বাহন। তবে অন্য পুরাণ বলে ব্রহ্মা সরস্বতির রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিবাহ করতে উদ্যত হন। ভীত দেবী একটি হাঁসের রূপ ধারণ করেন। পরে সেটাই বাহনে রূপান্তরিত হয়েছে বলে অনুমান।
লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন
এই প্রশ্ন বহুবার মনের মধ্যে জেগেছে। লক্ষ্মী ঠাকুর এত সুন্দর দেখতে আর তিনি কিনা সঙ্গে করে একখান পেঁচা নিয়ে ঘোরেন। আসলে পেঁচা হল একটি প্রতীক। লক্ষ্মীর অসীম ঐশ্বর্যের দিকে তার কোনও লক্ষ্য নেই। সে আসলে উদাসীন। জাগতিক সমস্ত চাওয়াপাওয়া থেকে সে নিজেকে সরিয়ে রাখে দূরে। সম্ভবত এই সব কারণেই সে লক্ষ্মীর বাহন হওয়ার মর্যাদা পেয়েছে।
সবশেষে সিংহমশাই
দুর্গা মায়ের চার ছেলে মেয়ের বাহনের কথা তো হল, কিন্তু স্বয়ং মা দুর্গার বাহন সিংহ কেন সেটা তো বলাই হল না। আপনারা জানেন দেবতাদের সম্মিলিত তেজ থেকে দেবী দুর্গার জন্ম হল। দেবতারাই তাঁকে নানা অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে দিলেন। আর হিমালয় দিলেন সিংহ। সম্ভবত দেবী দুর্গার অসম্ভব শক্তি আর শৌর্যের সঙ্গে তাল মেলাতেই সিংহকে দেবীর বাহন করা হয়েছে। দেবী যেমন রাজরানি ঠিক সেরকমই বনের রাজা হল সিংহ। তবে বঙ্গে এক ঘোড়ামুখী সিংহ দেখা যায় যাকে ঘোটক সিংহ বলে। এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন মূর্তিবিদরা। তাঁদের মতে পশ্চিমবঙ্গে কোনও সিংহ পাওয়া যায় না। তাই প্রাচীনকালে বাঙালি পটুয়ার কাছে সিংহমূর্তি তৈরি করা কঠিন ছিল। সেই কারণেই হয়তো এটা হয়েছে।
Featured Images: Incredible_kolkata and Sumona
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo Shop-এর স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…