মাঝেমধ্যে মনে হয় এ কোন পৃথিবী? এরকম এক বিশ্বই কি আমরা চেয়েছিলাম? যেখানে সহস্র বছর ধরে কেবল অধিকারের লড়াই লড়তে হয়। তারপরেও তাঁদের অধিকারের লড়াই থামানোর উপায় নেই, মনে হয় আরও অনেক অনেক বছর লড়াই (say no to dowry) করতেই হবে।
আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে যখন সংসারে মেয়ে জন্মাত, মা ও বাবারা বড্ড চিন্তায় পড়তেন। এই মেয়ে ‘পার’ করাতে কী জানি কত না পণ লাগবে। আর মেয়ের গায়ের রং যদি একটু চাপা হয়, তাহলে তো আরও যন্ত্রণা। সেই সেসব সময় থেকেই কালো মেয়ের যন্ত্রণা বয়ে এসেছেন বাবা, মায়েরা। যেন মেয়ে নয় এক পণ্য। আর পরিমাণ মতো পণ না দিতে পারলেই সেই মেয়েদের কপালে জুটেছে অত্যাচার, লাঞ্ছনা। মানসিক ও শারীরিক দুটোই। অত্যাচারের সীমা যখন আকাশ ছাড়িয়েছে, গায়ে কালসিটের দাগ নিয়ে বাড়িতে পালিয়ে এসেছে মেয়ে। তারপর মায়ের কাছে লুকিয়ে কেঁদেছে। অনুরোধ করে বলেছে, “মা আমাকে আর পাঠিও না।” মা সেই কথা শুনবে কেন? মায়ের চোখে যে শ্বশুর বাড়ির অত্যাচারই বড় সাধারণ ঘটনা। বুঝিয়ে শুনিয়ে মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এরপর মেয়ে ফেরেনি, ফিরেছে মেয়ের লাশ। কখনও খুনের শিকার কখনও বা অত্য়াচারের চরম সীমায় পৌঁছে আত্মহত্যার পথই বেছে নিয়েছেন (say no to dowry)অনেকেই।
মেয়ের পাশে প্রয়োজন তাঁর অভিভাবককে
এই ছবি চল্লিশ বছর আগেও যেমন ছিল, চল্লিশ বছর পরেও ঠিক তাই। মাঝেমধ্যে তো বিশ্বাসই হয় না এটা ২০২১। কারণ, এখনও খবরের কাগজের পৃষ্ঠা উল্টালেই সামনে আসে সেই সব নৃশংসতার নজির। পণের চাপে গৃহবধূর মৃত্যুর (say no to dowry)মতো যন্ত্রণা। মাঝে মধ্যে নিজেকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, এই যন্ত্রণার শেষ কোথায়?
ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ার ২০১৭-র রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই বছরে ৭০০০ জনের মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছিল, যার প্রতিটির পিছনেই কারণ ছিল পণের জন্য চাপ(say no to dowry), তা শারীরিক হোক বা মানসিক। অত্যাচারের সংজ্ঞা ক্ষেত্র বিশেষে পাল্টে গিয়েছে শুধু, অত্যাচার শেষ হয়নি।
মেয়ের পাশে থাকার দায়িত্ব আপনার
এই সময়ে কী করা উচিত?
প্রথম পদক্ষেপ করতে পারেন বাবা ও মা
কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া যে অপরাধ নয়, তা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অনেকটাই স্পষ্ট। সেই বিষয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাও ভারতের মতো দেশে জন্মের আগে লিঙ্গ নির্ধারণ দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ, কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয় এই দেশে। পুরুষ ও নারীর মধ্য়ে শরীরগত বিভেদ ছাড়া যে আর কোনও পার্থক্য নেই তা বোঝা প্রয়োজন। বাকিটা তো সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করে।
মেয়ের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার, কিন্তু সিদ্ধান্ত আপনার নয়। আপনার কন্য়া সন্তান যখন বিয়ে করতে চাইছেন তখন তাঁকে বিয়ে দিন। অবশ্যই তিনি যদি প্রাপ্তবয়স্ক হন। আপনার মেয়ে যদি বিয়ে করতে না চায়, তবে তাঁকে বিয়ের জন্য জোর করার কোনও প্রয়োজন নেই। বিয়েটাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। এটা সব বাবা, মাকেই বুঝতে হবে।
বিয়ে হয় দুজন মানুষের মধ্যে
যাঁরা বিয়ে করছেন তাঁরা একে অপরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই বিয়ে করছেন। বিয়ের সঙ্গে আর কোনও কারণ জড়িয়ে থাকতে পারে না। আপনিও সেই বিষয়টি মাথায় রাখুন। তাই মেয়ের বিয়ের জন্য আপনি কেন পণ দেবেন? ছেলের বাড়ি থেকে তো পণের কথা ভাবা হচ্ছে না। পণ চাইলে আপনি না বলুন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
সে নো টু “মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেবেন!”
কখনও নয়। যদি আপনার মেয়ে ও তাঁর হবু বর একসঙ্গে নতুন সংসারের আসবাব কেনার পরিকল্পনা করেন, তবে তো কোনও কথাই নেই। আর সেটাই করা উচিত। যদি না করে থাকেন, তবে মেয়ের সংসার সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব মেয়ের বাবা ও মায়ের নয়। সেই চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলুন।
মেয়ে মানিয়ে গুছিয়ে নেবে না
শ্বশুরবাড়িতে একজন মেয়ে মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য যায় না। তাঁর স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে যায়। নিজেদের ফ্ল্যাট থাকলে তো তা আলাদা বিষয়, না থাকলে শ্বশুর ও শাশুড়ির কিংবা পরিবারের অন্যান্য় সদস্যদের অত্যাচার সহ্য করবেন না কোনও মেয়ে। এই সময় প্রতিবাদ করার। আপনার কোনও পরিচিত মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে গেলে তাঁকে সাহায্য করুন, তাঁর পাশে থাকুন। মানিয়ে গুছিয়ে নিতে বলবেন না, আপনিও মানিয়ে নেবেন না।
সব শেষে মনে রাখবেন, পণপ্রথা দণ্ডনীয় অপরাধ(say no to dowry)। এর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে পারে।
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!