বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী! মা লক্ষ্মীকে নিয়ে এই প্রাচীন প্রবাদ সর্বজনবিদিত। অর্থাৎ ব্যবসা বাণিজ্য করলে মা লক্ষ্মী খুশি হন এবং সেখানেই অধিষ্ঠান করেন। দুর্গা পুজোর সময় মা দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী আসেন। কারণ তিনি মা দুর্গার চার সন্তানের মধ্যে একজন। যদিও প্রাচীনকাল থেকে মহিষাসুরমর্দিনীর পুজো একাই হয়ে এসেছে। পরে ছেলে মেয়েদের তাঁর সঙ্গে যোগ করা হয়। আবার একযোগে বলা হয় লক্ষ্মী নারায়ণ। কারণ তিনি হলেন নারায়ণ বা বিষ্ণুর স্ত্রী। তাহলে দেবী লক্ষ্মীর প্রকৃত পরিচয় কী? কোজাগরী পূর্ণিমায় বাঙালির ঘরে ঘরে পূজিতা হন দেবী লক্ষ্মী। আবার দিপাবলির সময়ও দীপান্বিতা লক্ষ্মী হিসেবে তাঁর আরাধনা করা হয়। (who is ma lakhsmi and significance of kojagori purnima)
পুরাণ কি আদৌ কিছু বলে?
পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তাঁর মতে বৈদিক যুগ থেকে মহাশক্তির অংশ হিসেবে লক্ষ্মীর আরাধনা করা হত। পরে সমাজে নারীদের অবস্থান নিম্নগামী হওয়ায় বিষ্ণু বা নারায়ণের সঙ্গে লক্ষ্মীর মহিমা যুক্ত করে দেওয়া হয়। কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীর আরাধনা একদমই অন্যভাবে হয় বাঙালি বাড়িতে। বলা হয় সেইদিন সারারাত জাগতে হয়। সবাই জেগে আছে কিনা সেটা দেখতে আসে লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা। যদি কেউ ঘুমিয়ে পড়ে লক্ষ্মীদেবী অসন্তুষ্ট হন এবং সেই বাড়িতে আর আসেন না।
বর্তমানে ধনসম্পত্তি বা অর্থের দেবী হিসেবে লক্ষ্মীর আরাধনা হলেও প্রাচীন গ্রন্থ কিন্তু অন্য কথা বলছে। বৈদিক যুগে লক্ষ্মীর চেয়েও গুরুত্ব ছিল সরস্বতী নদীর। তাই দেবী সরস্বতীকেই উর্বরতা, শস্য ও ধন সম্পত্তির দেবী বলে মনে করা হত। আর লক্ষ্মীকে মনে করা হত দেব সেনাপতি কার্তিকের পত্নী। পরে এ’সবের অনেকটাই পাল্টে যায়। লক্ষ্মী হয়ে যান ধন সম্পত্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। (who is ma lakhsmi and significance of kojagori purnima)
জেনে নিন সমুদ্র মন্থন কাহিনী
অনেকেই জানেন সমুদ্র মন্থনের সঙ্গে লক্ষ্মী দেবীর কাহিনি জড়িয়ে আছে। তবে সমুদ্র মন্থনের সময় যে দেবী উঠে এসেছিলেন তিনি প্রকৃত অর্থে লক্ষ্মী নন। তিনি হলেন শ্রীদেবী। পরে এই শ্রীদেবী ও লক্ষ্মীদেবী এক হয়ে যান। দুর্গা পুজোর পর কোজাগরী পূর্ণিমায় আলাদা করে লক্ষ্মীপুজো হলেও লক্ষ্মীর আরাধনা বাঙালি গৃহিণীরা বহু আগে থেকেই করে আসছেন। বহু বাড়িতেই প্রতি বৃহস্পতিবার বেশ ঘটা করে লক্ষ্মী পুজো হয়। তাই বৃহস্পতিবারকে লক্ষ্মীবারও বলা হয়। বাংলায় লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায়। তাঁর বাঙালির ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই তিনি বলছেন যে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আলাদা করে লক্ষ্মী পুজোর কোনও মাহাত্ম্য ছিল না। কৃষক সম্প্রদায়ের কল্পনা প্রসূত এই দেবীকে পুজো করা হত শস্য আর উর্বরতার জন্য।
কোজাগরী নাকি কে-জাগে-রে!
পরে কোজাগরী পূর্ণিমায় আলাদা করে লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয়। কোজাগরী শব্দটি এসেছে কো জাগতি থেকে। এর অর্থ হল কে জেগে আছ? যার কিছু নেই সে পাওয়ার আশায় জাগে আর যার অনেক আছে সে হারাবার চিন্তায় জাগে। তবে ঘুমিয়ে পড়লে লক্ষ্মী আর আসেন না। এবারের লক্ষ্মীপুজোয় তাহলে আপনিও জেগে থাকুন। মা লক্ষ্মী স্বয়ং এসে জানতে চাইবেন যে কে জাগে? তখন উত্তর না দিলে আপনার কপাল ফক্কা! (who is ma lakhsmi and significance of kojagori purnima)
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!