সাদামাটা খাবার বাপু আমাদের মুখে রোচে না। কেন রোচবেই বা বলুন! আমরা হলাম গিয়ে প্রথম সারির খাদ্যরসিক। অল্পতে সন্তুষ্ট হওয়া আমাদের ধাতে নেই। তাই তো সুস্বাদু কোফতা-কালিয়া, নয়তো তেলে ভাসা কষা মাংস হল আমাদের প্রথম পছন্দ। তার আগে একটু ডাল, সঙ্গে ভাজা। আর শেষ পাতে চাটনি, নয়তো দই-মিষ্টি চাইই চাই! তাতে প্রায় দিন গুরুপাক হয়ে গিয়ে গ্যাস-অম্বল, বুক জ্বালার মতো সমস্যা হয় বই কী! কিন্তু তাই বলে কি আর সুস্বাদু খাবার খাওয়া ছেড়ে দেওয়া যায়!
এক্কেবারে ঠিক বলেছেন, রসনা তৃপ্তির খাতিরে একটু গ্যাস-অম্বলের (Digestion) জ্বালা সইতে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু সইবেনই কেন, যখন খাওয়ার পরে এই আসনগুলি করলে গ্যাস-অম্বল তো দূরে থাকবেই, সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটবে। মানে! আসন করলেই খাবার হজম হয়ে যাবে। এক্কেবারেই! সঙ্গে শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটিও বাড়বে ষোলো আনা। জেনে নিন, কোন-কোন আসন (Yoga) করলে উপকার পাবেন।
১. গোমুখাসন
আসনটি করার সময় মেরুদণ্ড এবং পেটের পেশির ক্ষমতা বাড়ে। সঙ্গে পাচক রসের ক্ষরণ ঠিক মতো হওয়ার কারণে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না। একই সঙ্গে অনিদ্রা, স্বপ্নদোষ, ফ্রোজেন শোল্ডার এবং বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাও দূরে পালায়।
আসনটি করার পদ্ধতি
বাঁ-হাঁটুর উপরে ডান হাঁটু রেখে বসতে হবে। এই সময় বাঁ পায়ের গোড়ালি, ডান নিতম্বের এবং ডান পায়ের গোড়ালি বাঁ নিতম্বের পাশে থাকবে। এবার ডান হাত মাথার উপরে তুলে কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে পিঠের মাঝ বরাবর নামান। বাঁ হাত কনুইয়ের কাছে ভেঙে পিছনে নিন। তারপর দু’হাতের আঙুলগুলি বাঁকিয়ে হুকের মতো করে আঁকড়ে ধরুন। এই সময় মেরুদণ্ড সোজা থাকবে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে-নিতে কয়েক সেকেন্ড থাকার পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। এবার বিপরীত ভাবে আর একবার আসনটি অভ্যাস করুন। আসনটি শেষ করে শবাসনে ফিরে এসে কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, খাবার খাওয়ার পরে কম করে তিন বার আসনটি করলে উপকার পাবেই পাবেন। এক্ষেত্রে আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হল যে পা হাঁটুর উপরে থাকবে, সে হাতই উপরে তুলতে হবে।
২. বজ্রাসন
হজম ক্ষমতা উন্নতি ঘটাতে বজ্রাসনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ, নিয়মিত এই আসনটি করলে ছোট-বড় নানা রেটের রোগের প্রকোপ কমতে যেমন সময় লাগে না, তেমনই গ্যাস-অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যাও দূর হয়। তবে এখানেই শেষ নয়, এই আসনটির গুণে পায়ের বাত, হাঁটুর ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, সায়াটিকা এবং ভেরিকোজ ভেইনের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে।
আসনটি করার পদ্ধতি
হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা মুড়ে, গোড়ালি ফাঁক করে তার ওপর নিতম্ব রেখে বসুন। এই সময় হাঁটু দুটো পাশাপাশি জোড়া অবস্থায় থাকবে। শিরদাঁড়া থাকবে একেবারে সোজা। আর দু’হাত, দু’হাঁটুর উপরে রাখতে হবে। এই পজিশনে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে নিতে কুড়ি থেকে তিরিশ সেকেন্ড থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। খাবার খাওয়ার পরে আসনটি তিনবার করলে হজম সংক্রান্ত আর কোনও সমস্যাই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না। আসনটি করা হয়ে গেলে মিনিটদুয়েক শবাসনে বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না যেন!
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ: যাঁদের হাঁটুতে কোনও ব্যথা আছে, তাঁরা এই আসনটি করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
৩. অর্ধ-চন্দ্রাসন
এই আসনটি নিয়মিত করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটার পাশাপাশি কিডনির ক্ষমতা বাড়বে, মেরুদণ্ড নমনীয় হবে এবং পেটের চর্বিও ঝরবে। তাই কবজি ডুবিয়ে খেয়েও যদি গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দূরে রাখতে চান, সঙ্গে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকুক, এমন ইচ্ছেও থাকে, তা হলে প্রতিদিন অর্ধ-চন্দ্রাসন ব্যায়ামটি করতেই হবে।
আসনটি করার পদ্ধতি
দু’ পা জোড়া করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার হাত দুটো কানের পাশে রেখে নমস্কারের ভঙ্গিতে মাথার উপরে তুলুন। তারপর কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ ধীরে-ধীরে যতটুকু সম্ভব পিছন দিকে বেঁকিয়ে নিন। এই সময় হাঁটু দুটো যেন না ভাঙে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে কুড়ি থেকে তিরিশ সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে ধীরে-ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ান। প্রতিদিন আসনটি বারদুয়েক করলেই উপকার মিলবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আর একভাবেও আসনটি করা যায়। এক্ষেত্রে দু’পা জোড়া করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দুটো কানের কাছে রেখে নমস্কারের ভঙ্গিতে মাথার উপর তুলুন। এবার কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ ধীরে-ধীরে যতটুকু সম্ভব ডানদিকে বেঁকিয়ে নিন। এই সময় হাঁটু যেন না ভাঙে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে কুড়ি-তিরিশ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকার পরে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
picture courtesy: youTube
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন
অর্শ বা পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!