আজ শিক্ষক দিবস। ছোটবেলায় স্কুলে পড়তে যাঁকে বা যাঁদের সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করতেন, আজ সকালে উঠেই তাঁদের উদ্দেশ্যে ভাল-ভাল কথা লিখে ফেসবুকে আপডেট দিয়েছেেন নিশ্চয়ই! এদিকে কুতিয়ে-কুতিয়ে শিক্ষক দিবসটি কার জন্মদিনে পালিত হয়, সেটিও হয়তো মনে করতে পারবেন না! গোড়ায় তা হলে সেই জ্ঞানটুকু আবার দিয়ে দিই। স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনটিই শিক্ষক দিবস (Teachers Day) হিসেবে পালন করা হয় এদেশে! সেদিন শিক্ষকেরা ভারী লজ্জা-লজ্জা মুখ করে স্কুল-কলেজে যান, সকলে তাঁদের নিয়ে ভারী ভাল-ভাল কথা বলে। ছোট শিশুরা প্রোগ্রাম-টোগ্রাম করে। আমাদের স্কুলে ছোটবেলারয় আমরা টিচারদের একটা করে গোলাপ দিতাম! কেন, তা জানি নে বাপু। দিতে বলা হয়, স্কুল থেকেই ওই গোলাপগুলো কিনে আমাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হত। আমরা ভারী গোবেচারা মুখ করে সেগুলো দিতুম আর নিজেদের মধ্যে ফিস-ফিস করে বলতুম, আজ আমাদের কেউ বকবে না!
যাক গে, শিক্ষক দিবস নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মনে কোনও বক্তব্য নেই বটে, কিন্তু শিক্ষকদের দিক থেকে দিনটা ভাবুন, বেশ গর্বের কিন্তু! অন্য কোনও পেশার লোকদের নিয়ে এমন বিশ্বব্যাপী আদিখ্যেতা হয় না, কারণ, আপনি ডাক্তারই হোন কিংবা ব্যবসায়ী, কোনও না-কোনও স্কুল-কলেজে তো পড়াশোনা করেছেন বটেই, ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকার (teachers) সংস্পর্শেও এসেছেন! তাই এঁদের আবেদন এক্কেবারে পাক্কা সর্বজনীন! আজ শিক্ষক দিবসে আমরা এখানে তুলে ধরলাম কয়েকজন শিক্ষিকার কিছু মজার অভিজ্ঞতার (funny experience) কথা। পড়ে দেখুন, নির্মল আনন্দে হাসবেনই।
১. C ফর Cat, নাকি Meaow!
এই অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করেছেন কলকাতার এক কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা অনিন্দিতা দেব।
“স্কুলে বড়-বড় লেটার কার্ড দিয়ে বাচ্চাদের এ, বি, সি, ডি শেখাচ্ছিলাম। এ ফর অ্যাপেল, বি ফর বয়, এরকম করে এগোচ্ছিল। বাচ্চারা এক-এক করে দিব্যি উত্তরও দিচ্ছিল। হঠাৎ সি-তে পৌঁছেই হল সমস্যা! জনাদুয়েককে সি ফর ক্যাট বলিয়ে তৃতীয়জনের দিকে এগোচ্ছি, তাকেও ভালমানুষের মতো মুখ করে বললাম, বলো, সি ফর ক্যাট…সে দেখি, খুব রাগত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! আমি মুখটাকে আরও মিষ্টি করে বললাম, বলো বাবু, সি ফর ক্যাট…সে আরও রেগে গোল-গোল চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল! আমি ভাবলাম, কী হল রে বাবা! বললাম, কী হল সোনা, সি ফর ক্যাট বলো? সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, মিয়াও! আমি বললাম কী? সে বইয়ের বিড়ালের ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল, এটা ক্যাট নয়, এটা মিঁয়াও, ভুল বলছ কেন? অকাট্য যুক্তি! কী আর বলব…হেসে ওর মাথার চুলটা একটু ঘেঁটে দিয়ে বললাম, মিঁয়াও মানেই ক্যাট!”
২. জ্বর হলে মা কী করে?
এই অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করেছেন শিলিগুড়ির এক সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা প্রণতি মজুমদার।
“অনেকদিন আগের কথা। তখন স্কুলে প্রাইমারি ক্লাসে ভর্তি নেওয়ার পরীক্ষা চলছে। এক-এক করে বাচ্চা ভিতরে ঢুকছে, আমরা আমাদের লিস্ট অনুযায়ী প্রশ্ন করছি তাদের। কেউ পরিষ্কার করে উত্তর দিচ্ছে, কেউ দিচ্ছে না। প্রশ্নাবলীর মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিল, তোমার জ্বর হলে তোমার মা কী করে? বেশিরভাগ বাচ্চাই বলছিল, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ওষুধ দেয়…একটা বাচ্চা কিছুতেই উত্তর দেয় না! দু-একবার জিজ্ঞেস করাতে শেষে প্রচণ্ড রেগে বলল, মা গালে একটা ঠাস করে চড় মেরে বলে আবার জ্বর বাধালি! সেদিন শুনে খুব মজা পেয়েছিলাম! কিন্তু পরে মনে হয়েছিল, সত্যিই আমরা মাঝে-মাঝে অকারণই ছোটদের উপর রাগ করি!”
৩. আমাদের সেবা করার জন্য ধন্যবাদ!
এই অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করেছেন মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা শ্রীপর্ণা চক্রবর্তী।
“তখন স্কুলে পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। আমরা জনাকয়েক কোলিগ মিলে পরীক্ষার খাতাগুলো নিয়ে বাড়ি ফেরার আগে একটি কফি শপে ঢুকে একটু জিরোতে বসেছি। কফির অর্ডার দিয়ে সকলে মিলে রোজকার স্কুলের নানা গল্প শেয়ার করছি…স্টুডেন্টদের বকবকানি, বাবা-মায়ের আবদার, পেরেন্টস-টিচার মিটিং, রাত জেগে পরীক্ষার খাতা দেখা, রেজাল্ট যাদের খারাপ হবে, তাদের কীভাবে পথে আনা যায়, সেই চেষ্টার কথা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের পাশের টেবিলে আর্মি ইউনিফর্মে বসে একজন কফি খাচ্ছিলেন মন দিয়ে। কফি শেষ করে বিল মিটিয়ে হঠাৎই তিনি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন! আমরা তো ভাবছি, কী হল রে বাবা! ভদ্রলোক আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমাদের সব অত্যাচার সহ্য করেও আমাদের সেবা করার জন্য সমস্ত স্টুডেন্টদের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ!’ বলে হেসে মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন করে চলে গেলেন! সেদিন এত ভাল লেগেছিল, বলে বোঝাতে পারব না!”
৪. আপনাকে নিয়ে লিখতে পারি?
এই অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করেছেন দিল্লির একটি প্রি-প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা বীণা নাথানি।
“সেদিন ফার্স্ট স্ট্যান্ডার্ডের ক্লাস নিচ্ছিলাম। ক্যাপিটাল লেটার আর পাংচুয়েশন মার্ক শেখানো হচ্ছিল সেখানে, রাইটিং অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে। স্টুডেন্টদের বলছি, তোমরা নিজেদের মা-বাবার সম্বন্ধে লেখো। অমুক-অমুক জায়গায় ক্যাপিটাল লেটার হবে, তমুক-তমুক জায়গায় ফুলস্টপ-কমা বসবে…এর মধ্যে একজন হঠাৎ মিউ-মিউ করে বলল, আমার একটা প্রশ্ন আছে! বললাম, বলো? বলল, বীণা টিচার, আমি আপনার সম্বন্ধে লিখতে পারি? এত আনন্দ হয়েছিল সেদিন…মনে হচ্ছিল, এই পেশায় আসাটা সার্থক হয়েছে!”
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!