চল্লিশ পেরলেই চালশে! এক সময় কবীর সুমনের এই গান খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু এই কথাকে ঘুরিয়ে এক হাত নিলেন ভাবনা তোকেকর (Bhavana Tokekar)। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ওপেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ভারোত্তোলন বিভাগে একসঙ্গে চারটে সোনার (gold) পদক পেয়ে রীতিমতো ইতিহাস তৈরি করলেন তিনি! ভাবনার বয়স এখন ৪৭। তিনি দুই কিশোরী মেয়ের মা। তবে এগুলো যে আসলে কোনও বাধাই নয়, সেটা ভাবনা খুব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
ভারোত্তোলন (powerlifting) নিয়ে ভারতীয়দের মনে নানারকম ভুল ধারণা আছে। অনেকেই মনে করেন, মেয়েরা যদি ভারোত্তোলন করেন তা হলে তাঁরা পুরুষালি হয়ে যাবেন। তাঁদের মধ্যে আর ‘মেয়েলি’ সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। অনেকে আবার এটাও ভাবেন যদি ভারোত্তোলন করতে হয়, তা হলে অনেক ক্ষতিকর স্টেরয়েড নিতে হয়। আর এই স্টেরয়েডগুলো মেয়েদের বন্ধ্যা করে দেয়। তাঁরা আর মাতৃত্বের স্বাদ পান না। তবে এগুলো যে একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা সেটা ভাবনাকে দেখে বেশ বোঝা যায়।
ভাবনার এই জয় সত্যি উদযাপন করার মতো একটি বিষয়। কারণ ওয়ার্ল্ড পাওয়ার লিফটিং অ্যাসোসিয়েশন বা ডব্লিউপিসি রাশিয়ায় যে ওপেন এশিয়ান পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করেছিল, সেখানে ভাবনা প্রথমবার নাম দিয়েছেন। এর আগে এত উচ্চমানের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা তো দূরের কথা, নিজের দেশের মধ্যেও তিনি কোনও প্রতিযোগিতায় নাম দেননি! একজন মধ্যবয়সি মহিলা সংসারের সমস্ত কাজ সেরে, মেয়েদের সামলেও চারটে সোনা আনতে পারেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ একটি ব্যাপার!
তবে সোনা জেতার উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু ভাবনা এই এক্সারসাইজ বা শরীরচর্চা শুরু করেননি। ২০১১ সালে ভাবনার অসুস্থতার জন্য তাঁকে কিছু ওষুধ খেতে হত। সেই সব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে তিনি প্রথমে তিনি সাইক্লিং করতে শুরু করেন। তারপর ২০১২ সাল থেকে জিম করতে শুরু করেন। ভাবনার স্বামী ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের একজন পাইলট। মূলত ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের বডি বিলডাররা ভাবনাকে ভারোত্তোলন শিখতে সাহায্য করেন। প্রথমে অন্যান্য ভারতীয়দের মতো ভাবনারও মনে হয়েছিল যে, ভারোত্তোলন করলে তাঁর চেহারায় লাবণ্য আর থাকবে না। তবে তিনি এই নিয়ে গবেষণা করে দেখেন যে, এই সব ধারণা নেহাতই ভ্রান্ত। ভাবনা জানান ওয়েট ট্রেনিংয়ের অনেক সুফল আছে। এটা শরীরের সঙ্গে-সঙ্গে তা মানসিক গঠনকে উন্নত করতেও সাহায্য করে। আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে এবং পজিটিভ এনার্জির প্রবেশ ঘটায়। মিডিয়াকে ভাবনা জানিয়েছেন, অনেকেই মনে করেন, এই সব ভারোত্তোলন শুধু তরুণ বয়সেই করা যায়। কারণ, বয়স বাড়লে শরীর ভারী হয়ে যায়। এই ধারণা ভুল। তবে ট্রেনিং সঠিকভাবে নিতে হবে। তিনি এও বলেন যে, কোনওদিন কোনও প্রতিযোগিতায় নাম দেবেন এটা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি! কারণ তাঁর সব সময় মন হত যে, প্রতিযোগিতায় নাম দেওয়ার তাঁর বয়স একটু বেশি। আর নাম দিলেও তিনি তাল মেলাতে পারবেন না। এখন আর এই সব কথার কোনও অর্থ হয় না। রীতিমতো চারখানা সোনা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি।
ভাবনার বয়সি আরও অনেক মহিলা, যাঁরা মনে করেন যে, চল্লিশ পার করেছেন বলে তাঁদের আর কিছু করার নেই, আশা করছি, ভাবনাকে দেখে তাঁরা অনুপ্রাণিত হবেন!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!