আজ রথযাত্রা, আর রথযাত্রা (Ratha Yatra) মানেই কিন্তু শুধু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে রথের রশিতে টান তা নয়, আমাদের পশ্চিমবঙ্গও কিন্তু একদমই পিছিয়ে নেই। পশ্চিমবঙ্গেও (West Bengal) বৈষ্ণব ধর্ম বহুল প্রচলিত এবং বহুকাল ধরে চলে আসছে রথযাত্রার উৎসব। আগেকার দিনে রাজা-রাজড়াদের পরিবারে রথ টানার উৎসব ছিল দেখার মতো। যদিও প্রতি বছর পুরীতে এই সময়ে বহু মানুষ ভিড় জমান শুধুমাত্র একটিবার রথের রশিতে হাত ছোঁওয়ানোর জন্য, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জায়গায়ও কিন্তু মানুষের ঢল নামে রথ দেখার জন্য।
মায়াপুর
রাধা-কৃষ্ণের পীঠস্থান বলতে প্রথমেই যদিও মায়াপুরের কথা মনে পড়ে, তবে এখানে কিন্তু রথযাত্রাও হয় দেখার মতো। না, মায়াপুরের মন্দির থেকে রথ বের হয় না, বরং বলরাম, জগন্নাথ এবং সুভদ্রা আসেন এই মন্দিরে রথে চড়ে। বেশ একটা ইন্টেরেস্টিং গল্প আছে, বলি শুনুন – মায়াপুর আর রাজাপুর, দুটি গ্রাম ছিল পাশাপাশি। রাজাপুরের বেশিরভাগ বাসিন্দাই ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত। প্রায় ৫০০ বছর আগে নাকি একজন স্থানীয় পুরোহিত স্বপ্নে আদেশ পেয়ে প্রথমবার রাজাপুরে রথযাত্রার আয়োজন করেন। ঠিক হয় রাজাপুর থেকে রথে চড়ে দেব-দেবী যাবেন মায়াপুরে এবং সেখান থেকে আবার ফিরে আসবেন রাজাপুরে। এই প্রথাই চলে আসছিল। কিন্তু কিছুদিন পর এই উৎসব বন্ধ হয়ে যায় এবং মানুষের স্মৃতি থেকেও তা ধীরে-ধীরে মুছে যায়। শোনা যায়, ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ওই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম জানতেনই না সেখানে কোনও মন্দির ছিল! তবে মন্দির ধংস হয়ে গেলেও দেবদেবীর মূর্তি নাকি অক্ষত ছিল – এটি লোককথা। পরে ইসকন সোসাইটির হাতে রথযাত্রা উৎসবের সমস্ত ভার দেওয়া হয় এবং এখন তাঁরাই এই উৎসব পরিচালনা করেন।
মাহেশ
পশ্চিমবঙ্গের রথযাত্রার কথা হবে আর সেখানে মাহেশের নাম উঠবে না, তা আবার হয় নাকি? শোনা যায়, ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের কোনও এক সময়ে ধ্রুবনন্দ ব্রহ্মচারী এই উৎসবের সূচনা করেন। প্রায় ৬০০ বছর পুরনো এই উৎসবে যোগ দিতে আসেন বহু মানুষ। শুধুমাত্র যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে ভিড় জমান, তা কিন্তু নয়। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তের কৃষ্ণভক্তের দল আসেন এখানে এই আশায় যে, যদি একবার রথের রশিতে টান দেওয়া যায়। কথিত আছে, মাহেশের রথের চুড়ায় নাকি একটি নীলকণ্ঠ পাখি বসে থাকে এবং পুরীতে রথযাত্রা শুরু হলে সে ওই চুড়া থেকে উড়ে যায় এবং তখন নাকি মাহেশে রথ চলতে শুরু করে। অদ্ভুতভাবে এই নীলকণ্ঠ পাখিটিকে শুধুমাত্র প্রধান পুরোহিতই দেখতে পান। পুরনো রথ এবং দেবদেবীর মূর্তি আজ আর নেই। এখন নতুন রথ এবং মূর্তি স্থাপন করেই এই উৎসব পালিত হয়।
গুপ্তিপাড়া
পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাচীন এলাকা গুপ্তিপাড়া। শোনা যায়, এখানেই প্রথমবার বারোয়ারি দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়, সে’ও বহুযুগ আগের ঘটনা। তবে শাক্ত এবং বৈষ্ণবের মিলমিশ বেশ ভালই রয়েছে এখানে। ১৭৪৫ সালে প্রথমবার এখানে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির থেকে সে’সময়ে ১৩ চাকার একটি রথ বের হয় জগন্নাথ দেবের পিসির বাড়ির উদ্দেশ্যে। তবে ১৮৭৩ সালে একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর রথের চাকা কমিয়ে নয় করে দেওয়া হয়।
আমোদপুর
বর্ধমানের মেমারি অঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম আমোদপুর। গ্রামের জমিদার পরিবারের কুলদেব হলেন রাধামাধব এবং এঁরা প্রতি বছর রথযাত্রার আয়োজন করেন, তবে রথে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম থাকেন না, থাকেন রাধামাধব। গ্রামেরই প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরে পূজিত হন রাধামাধব এবং রথের দিন সকালে রথে চড়ে প্রথমে দুর্গাবাড়ি (মা দুর্গার মন্দির) এবং পরে সারা গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন দেবদেবী।
রাজবলহাট
হুগলির রাজবলহাট তাঁতের কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। তবে এখানেও খুব অন্যরকমভাবে রথযাত্রা পালিত হয়। আমোদপুরের মতো এখানেও রথে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম থাকেন না, বরং রথে চড়েন রাধাকৃষ্ণ। আর অদ্ভুত ব্যাপার, রথ রশির সাহায্যে নয়, টানা হয় লোহার শিকলের সাহায্যে। ১২ চাকার এই বিশাল রথ রাজবলহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে টানা শুরু হয় এবং বেশ অনেকটা জায়গা প্রদক্ষিণ করে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!