এক সময় কম্প্রোমাইজের অফার পেয়েছি, তবে এখন ইন্ডাস্ট্রির পরিবেশ বদলেছে: রূপসা
মা, বাবা, গোল্ডু আর চিনিকে নিয়ে তাঁর সংসার। গোল্ডু এবং চিনি তাঁর আদরের পোষ্য। তিনি অর্থাৎ অভিনেত্রী রূপসা (Rupsa) চট্টোপাধ্যায়। দিন কয়েক আগেই ‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘তানসেনের তানপুরা’ (Tansener Tanpura)। বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, জয়তী ভাটিয়ার মতো শিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। আগামী নভেম্বরে আসছে এই ওয়েব সিরিজের সেকেন্ড সিজন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? মুখোমুখি রূপসা।
টেলিভিশনে আপনার অভিনয় বহুদিন ধরেই দেখছেন দর্শক। কিন্তু ‘তানসেনের তানপুরা’য় ‘শ্রুতি’ চরিত্রটা আপনার পরিচিতি যেন অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে।
আমি ১০ বছর ধরে অভিনয় করছি। এর আগে ‘হইচই’ বা ‘জি ফাইভে’র ওয়েব সিরিজে ছোট ছোট কাজ করেছি। ‘জাজমেন্ট ডে’, ‘সিক্স’, ‘লালবাজার পার্ট ওয়ান’-এ একটা ছোট চরিত্র করেছি। কিন্তু ওয়েবে হিরোইন হিসেবে এটাই প্রথম কাজ। গত ২৬ জুন থেকে ‘হইচই’-তে প্রথম সিজনটার স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে। দেখেছেন অনেকে। ভাল লাগছে যে, সেটা জানিয়েওছেন।
অফার এসেছিল কীভাবে?
এই স্ক্রিপ্টের অফার যখন এসেছিল, তখন আরও একটা মেগায় কাজ করার কথা ছিল আমার। কিন্তু ‘শ্রুতি’র ব্রিফ যখন পেলাম, এতটাই ভাল লেগেছিল, না করার কোনও কারণ ছিল না। ডেট ক্ল্যাশ করছিল বলে ওই কাজটা আর করা হয়নি। আমি যেমন শ্রুতি ঠিক তেমনই। যদিও গান গাইতে পারি না, গিটার বাজাতে পারি না। আর শ্রুতি গান পাগল মেয়ে। রক মিউজিক ভালবাসে। একটু তারকাটা। রহস্যের সমাধান করতে হচ্ছে। তার মধ্যেও ফুরফুরে একটা ব্যাপার রয়েছে। বহুদিন পরে এমন একটা চরিত্র।
শুটিংয়ে রূপসা এবং বিক্রম।
চরিত্রটা গড়ে তুললেন কীভাবে?
আমাদের পরিচালক সৌমিক চট্টোপাধ্যায় প্রচুর সাহায্য করেছেন। শুধু আমাকে নয়, সকলকেই ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতেন। যিনি লিখেছেন, মানে সৌগতদাও প্রচুর হেল্প করেছেন। যখনই ফোন করেছি, বুঝিয়ে দিয়েছেন। এটাতে তো অনেক গান, রাগ রয়েছে। সেটা প্রপার বুঝতে হয়েছিল। সকলের তো আর ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজিকে ইন্টারেস্ট নেই। কিন্তু যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের কারও বুঝতে অসুবিধে হয়নি।
‘তানসেনের তানপুরা’র সেকেন্ড সিজনও তো রেডি?
হ্যাঁ। ৪২ দিনের মধ্যেই আমরা দুটো সিজন শুট করে ফেলেছিলাম। পুরুলিয়াতে একটা বড় আউটডোর ছিল। অনেক বড় স্ক্রিপ্ট। আমরা কিন্তু বেশ তাড়াতাড়িই করে ফেলেছি।
আপনার ছোটবেলা কোথায় কেটেছে?
উত্তরপাড়ায়। উত্তরপাড়া চিলন্ড্রেন্স ওন হোমে ক্লাস টেন পর্যন্ত পরেছি। তারপর ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছি। আমি ক্লাস সেভেন থেকে অভিনয় করতাম। সে কারণেই ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে পরেছি।
অভিনয় ছাড়া আর ভাল লাগার জায়গা?
নাচ। আড়াই বছর বয়স থেকে নাচ শিখেছি। একটা সময় মমতাশঙ্করের কাছেও শিখতাম। এখনও প্রচুর স্টেজ শো করি।
আপনার পরিবারের কেউ অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত?
না। আমার মায়ের বাবা, মানে আমার দাদু অভিনয় করতেন। প্রচুর থিয়েটার করতেন, শো করতেন। কিন্তু সে সব আমার জন্মের আগে। আমি আসলে বাড়ি থেকে কোনও কিছুতেই বাধা পাইনি। যা করতে চেয়েছি, বাবা মা সব সময় করতে দিয়েছেন।
নতুন কী কাজ চলছে আপনার?
‘প্রথমা কাদম্বিনী’তে সদ্য জয়েন করলাম। আমার চরিত্রের নাম ‘স্বর্ণ’। যে কাদম্বিনীকে কলকাতায় নিয়ে এসে পড়াশোনা শেখানোর কাজটা শুরু করে। এছাড়া আর কয়েকটার কথা চলছে।
নিউ নর্মালে শুটিং করাটা কতটা সমস্যার?
দেখুন, কাজ বন্ধ করে তো বাড়িতে বসে থাকা যাবে না। লকডাউনের মধ্যেও আমরা বাড়িতেই শুটিং করেছি মোবাইল ক্যামেরায়। আমি আর আমার এক বন্ধু শর্ট ফিল্ম তৈরি করেছি। সেটা এখন ফেস্টিভ্যালে ঘুরছে। আর শুটিংয়ে গিয়ে দেখলাম যথেষ্ট মেনটেন করা হচ্ছে। চেয়ার, রুম, কস্টিউম সব স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। বাইরের খাবার অ্যালাও করা হচ্ছে না। বাকি সেফটি তো নিজেকে মেনটেন করতে হবে।
নেপোটিজন এখন অত্যন্ত চর্চার বিষয়। ১০ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেলার পর এই বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী?
নেপোটিজম বলিউডে তো রয়েইছে। তবে টলিউডে কতজন অভিনেতা, অভিনেত্রীর ছেলে-মেয়ে কাজ করে বলুন তো? আজ ধরুন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সন্তু মুখোপাধ্যায় তাঁর বাবা ঠিকই। কিন্তু স্বস্তিকা তো নিজের পরিচয়েই পরিচিত। ওঁর অন্য লেভেল। অসাধারণ অভিনেত্রী। সেটা কি বাবার জন্য? নিজের পরিচিতির জন্য বাবার পরিচয় কি ওঁর দরকার হয়েছে? আমার তো মনে হয় না। তবে একটা অন্য বিষয়ও রয়েছে।
সেটা কী?
আমি ১০ বছর ধরে সিরিয়ালে অভিনয় করলেও কোনও প্রপার সিনেমা করতে পারিনি। কেন পারিনি? আমাকে কর্মাশিয়াল ছবির খুব নামকরা এক ডিরেক্টরের কাজের জন্য ডেকেছিলেন। তখন আমার ১৫-১৬ বছর বয়স। বিভিন্ন রকম বক্তব্য ছিল তাঁর। ডিরেক্টলি না বললেও ইনডিরেক্টলি কম্প্রোমাইজ করার কথা বলেছিলেন। আমি এত কিছু বুঝতেও পারিনি। তখন আবার তিনি বলেছিলেন, আর পাঁচটা প্রোডাকশন হাউজ ঘুরে এস। তুমি তো ছোট। দেখো, তারা তোমাকে কী কাজ দেয়। আমি সেই যে ওঁর অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম, আর কোনও দিন যাইনি। উনি কিন্তু এখনও কাজ করেন। তবে আগের থেকে পরিবেশ এখন অনেক বদলেছে।
কেমন বদল চোখে পড়ছে?
এখন অনেকে আসছেন, যাঁরা কাজটাকেই প্রায়োরিটি দেন। তবে এমন প্রচুর অভিনেত্রী রয়েছেন, যাঁরা ওই সব অফার অ্যাকসেপ্ট করেন। সে কারণেই এঁরা এ সব বলার সাহস পান। ওই অভিনেত্রীরা হয়তো অভিনয়টা করতে পারেন না। সে জন্য হারিয়েও যান।