খেয়াল করে দেখলে বুঝবে সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে রাত্রে ঘুমতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমাদের ঘিরে রাখে নানান শব্দ। কখনও টিভির আওয়াজ, তো কখনও মোবাইলের নোটিফিকেশন। সেই সঙ্গে গাড়ির আওয়াজ এবং লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি তো রয়েছেই। তাই এমন পরিস্থিতিতে শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ১০-১৫ মিনিট চুপ থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা (health benefits of silence)। কারণ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শব্দ দানবের হাত থেকে শরীরকে বাঁচাতে নীরবতার কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে।
আসলে নিয়মিত কিছু সময় চুপ থাকলে এবং শব্দহীন পরিবেশে সময় কাটালে আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কের ভিতরে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায় (advantages of being silent person)। যেমন ধরো…
১. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
২০১১ সালে ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিক একটি গবেষণাপত্র অনুসারে নিয়মিত ১৫-২০ মিনিট চুপ থাকলে (silence) এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটালে ব্রেনের হিপোক্যাম্পাস নামক অংশটির ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।
একই গবেষণায় এমনটাও দাবি করা হয়েছে যে প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যদি শান্ত পরিবেশ উপভোগ করতে করতে ৪০ মিনিট একটু হাঁটাহাটি করে, তাহলেও নাকি সমান উপকার পাওয়া যায়। তাই তো বলি, শব্দ যেখানে প্রতিদিন আমাদের একটু একটু করে মেরে ফেলছে, সেখানে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে নীরবতা পালনের প্রয়োজন যে বেড়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২. ব্রেন সেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে:
চুপ করে কয়েক মিনিট বসে থাকলে যে শুধু স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে, এমন নয়, সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায় (importance of being silent)। যেমন ধরো ২০১৩ সালে ব্রেন স্ট্রাকচার অ্যান্ড ফাংশন পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে নিয়মিত কিছু সময় শব্দ দূষণ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলে ব্রেন সেলের গ্রোথ রেট বাড়তে শুরু করে। যার ফলে ব্রেন পাওয়ার এতটাই বেড়ে যায় যে লার্নিং এবিলিটির যেমন উন্নতি ঘটে, তেমনি বুদ্ধির ধারও বাড়ে।
৩. স্ট্রেসের খপ্পর থেকে মুক্তি মেলে:
বেশ কিছু গবেষণায় ইতিমধ্যেই একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে আমাদের আশেপাশে শব্দের মাত্রা যখন বাড়তে শুরু করে, তখন মস্তিষ্কে এমন একটি সিগনাল গিয়ে পৌঁছায়, যার প্রভাবে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ যায় বেড়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাংজাইটি এবং স্ট্রেসের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। আর দিনের পর দিন এমনটা হতে থাকলে শরীরের নানাবিধ ক্ষতি হতে যে সময় লাগে না, তা তো বলাই বাহুল্য! কিন্তু নিয়মিত ১০-১৫ মিনিট চুপ থাকলে এবং শব্দহীন পরিবেশে সময় কাটাতে শুরু করলে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তচাপও স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে। ফলে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। তাই এবার থেকে যখনই কোনও কারণে দুশ্চিন্তা হবে, তখনই শান্ত পরিবেশে কিছুটা সময় কাটানোর চেষ্টা করবে, দেখবে উপকার মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
৪. অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়:
একেবারে ঠিক শুনেছো! বাস্তবিকই কিছু সময় শান্ত পরিবেশে কাটালে অনিদ্রার সমস্যা দূর হতে সময় লাগে না। ২০১৫ সালে হওয়া এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কয়েক মিনিট শান্ত পরিবেশে এক মনে মেডিটেশন করলে আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে ইনসমনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে মন স্থির হয়। ফলে খারাপ চিন্তা ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। আর এমনটা যখন হয়, তখন জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আনন্দে ভরে উঠতে সময় লাগে না। তাই এবার বুঝেছো তো চুপ থাকলে কত উপকার পাওয়া যায়!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!