এক্সারসাইজ তো করবো, কিন্তু মুখের জন্যও কেন আলাদা করে এক্সারসাইজ করবো এই প্রশ্নটা অনেকের মনে আসতেই পারে, বিশেষ করে সেসব মানুষের মনে যারা এক্সারসাইজ নামক শব্দটা থেকে শতহস্ত দূরে থাকতেই পছন্দ করেন। আপনি শুনলে হয়ত অবাক হবেন যে আমাদের মুখ কিন্তু ৫০টি আলাদা আলাদা মাংসপেশি দিয়ে তৈরি, যদিও শরীরের বাকি অংশের তুলনায় মুখের মাংসপেশির সঞ্চালন অনেকটাই কম হয়! সেজন্যই, নিয়মিতভাবে যদি আপনি ফেসিয়াল এক্সারসাইজ করেন অর্থাৎ মুখের মাংসপেশি সঞ্চালন করেন তাহলে আপনার মুখের ভেতরেও ব্লাড সার্কুলেশন ঠিকভাবে হবে। এতে আপনার মুখের অতিরিক্ত মেদ বা যাকে আমরা ফেসিয়াল ফ্যাট বলি, তা ঝরে গিয়ে আপনার মুখ অনেক পাতলা দেখায়। তাছাড়া ঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হবার ফলে মুখে একটা গ্লোও দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ ঘরে বসে ফেসিয়াল করার পদ্ধতি
শরীরের বিভিন্ন জায়গার সাথে সাথে কিন্তু আমাদের মুখেও মেদ জমে, একেই আমরা বলি ফেসিয়াল ফ্যাট। কারও গালের দু’পাশে ফ্যাট জমে, আবার কারও বা চোখের ওপরে কিংবা চিবুকে বা গলার আশেপাশে ফেসিয়াল ফ্যাট জমে। আপনার মুখেও ফেসিয়াল ফ্যাট রয়েছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হল, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখুন যে মুখের কোনও অংশ ফোলা লাগছে কিনা। আমাদের অনেকেরই পেটে বা শরীরের অন্য অংশে মেদ জমে যা আমরা জামাকাপড়ের নিচে লুকিয়ে ফেলতে পারি, কিন্তু বলুন তো ফেসিয়াল ফ্যাট কি আর লুকানো যায়? সেই কারনেই ফেসিয়াল এক্সারসাইজ করাটা খুব জরুরি।
এক এক জনের মুখের গঠন এক এক রকমের হয়। হাড়ের গঠন যেহেতু এক এক রকমের হয় তাই এক একজনের মুখের আকৃতি এক এক রকমের হয়। অনেকসময়ে পিরিয়ডের আগ দিয়েও অনেকের মুখ ফুলে ওঠে, তার কারণ সেই সময়ে শরীরে হরমোনের নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায়। একে পি এম এস লক্ষণ বলা হয়। আবার যাঁদের হাইপার থাইরয়েড থাকে তাঁদের ওজন খুব দ্রুত বাড়ে, সেই সময়ে শরীরের নানা অংশের সাথে সাথে গলার কাছটাও ফুলে যায়, একে ডবল চিনও বলা হয়। অনেক সময়ে আমাদের লাইফস্টাইলের জন্যও কিন্তু ফেসিয়াল ফ্যাট বাড়তে পারে। অনেকেই যেমন ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্ক, অতিরিক্ত সোডিয়ামযুক্ত খাবার খান, ফলে মুখে প্রচুর মেদ জমে। তাছাড়া যখন শরীরে জলের ঘাটতি দেখা যায় তখন মুখের টিস্যু নিজে থেকেই জল জমাতে আরম্ভ করে যার ফলে মুখ ফোলা ফোলা দেখতে লাগে এবং সেটাকেও আমরা ফেসিয়াল ফ্যাট বলে থাকি। আবার যারা নিয়মিত অ্যালকোহল নেন তাঁদেরও ফেসিয়াল ফ্যাট জমে, আসলে শরীষ্টি যখন পুষ্টি কম আর ক্যালোরি বেশি হয়ে যায় তখনি মুখের নানা অংশে মেদ জমতে থাকে। আবার যারা সিগারেট খান, তাঁদেরও কিন্তু মুখে মেদ জমতে পারে, কারণ নিকোটিন শুধুমাত্র ফুসফুসকেই দুর্বল করে না, মুখের নানা মাংসপেশিকেও দুর্বল করে দেয়।
ফেসিয়াল ফ্যাট দূর করা খুব একটা সহজ না হলেও ডাবল চিন দূর করার উপায় আছে, যাতে ধীরে ধীরে মুখে জমে থাকা মেদ ঝরে যায়। সবার আগে শরীরের ওজন কমানোটা খুব জরুরি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক্সারসাইজ করতে আরম্ভ করুন যাতে সময় থাকতে থাকতে আপনি আপনার মুখের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলতে পারেন, কারণ যত দিন যাবে মেদ বাড়বে বৈ কমবে না। আপনি দৌড়তে পারেন, জগিং করতে পারেন, যোগ ব্যায়াম করতে পারেন আবার জিমেও যেতে পারেন – সবটাই আপনার ইচ্ছের ওপরে। দৌড়নো এবং ব্রিস্ক ওয়াকিং অর্থাৎ তাড়াতাড়ি হাঁটা কিন্তু খুব সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি বাড়তি ওজন কমাতে এবং মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। এছাড়া আপনি নানা ধরণের ফেসিয়াল এক্সারসাইজ তো করতেই পারেন ডাবল চিন দূর করতে। প্রতিদিন না করলেও সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন ২০-২৫ মিনিটের জন্য ফেসিয়াল এক্সারসাইজ বা মুখের ব্যায়াম করুন।
শুধুমাত্র মুখের বাড়তি মেদ ঝরানো না, ফেসিয়াল এক্সারসাইজের উপকারিতা কিন্তু অনেক –
যখন মুখের মাংসপেশি সঞ্চালন করা হয় তখন আপনা-আপনিই ব্লাড সার্কুলেশন ঠিকভাবে হতে আরম্ভ করে, ফলে শরীরের প্রতিটি অংশে অক্সিজেন পৌঁছয় এবং কোষ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে; ফলে স্কিনে একটা আলাদা গ্লো চলে আসে।
ফেসিয়াল এক্সারসাইজ করতে করতে যেহেতু মুখের কোষগুলি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ফলে ডেড সেল সরে নতুন সেল অর্থাৎ কোষ তৈরি হতেও সাহায্য করে।
এক্সারসাইজের ফলে যে মাসল টোনড হয় সেটা আর নতুন করে বলে দিতে হবে না আশা করি। এর ফলে প্রাকৃতিকভাবে ত্বকও কিন্তু উজ্জ্বল হয়।
নিয়মিতভাবে যদি মুখের ব্যায়াম করা যায়, তাহলে তা ত্বকের নানা ধরণের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। যেহেতু এক্সারসাইজের ফলে শরীরের থেকে টক্সিন বেড়িয়ে যায় এবং ব্লাড সার্কুলেশন ঠিকভাবে হয় কাজেই ত্বকের টেক্সচারেরও উন্নতি হয়।
সব সময়ে মেকআপ করে কন্টোরিং না করে যদি প্রাকৃতিক ভাবেই মুখের আকারে কন্টোর হয় তাহলে তো বেশ ভালই হয় তাই না? ফেসিয়াল এক্সারসাইজ কিন্তু এই ব্যাপারে অনেকটাই সাহায্য করে।
ঠোঁট বন্ধ করে একটু হাসুন। এবারে যতটা সম্ভব দুই গালকে ভেতরের দিকে টেনে নিন ঠিক যেভাবে সেলফি তোলার সময় পাউট করেন সেভাবে, এবং এইভাবে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। দিনে অন্তত ৫ বার এভাবে ফেসিয়াল এক্সারসাইজ করুন। আপনি চাইলে অন্য একটা পদ্ধতিও ফলো করতে পারেন, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখে হাওয়া ভরে নিন। এবারে দুই গালে হাতের তালুর সাহাজ্যে বাইরে থেকে প্রেশার দিন, কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেন মুখের থেকে হাওয়া না বের হয়। এভাবে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। দিনে ৪ থেকে ৫ বার করুন, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার গাল অনেক পাতলা দেখাচ্ছে।
প্রথমেই বাঁ দিকে মাথা ঘোরান, এমনভাবে করবেন যেন আপনি আপনার বাঁ কান দিয়ে বাঁদিকের ঘার ছুঁতে চেষ্টা করছেন। যতটা সম্ভব কান আর ঘাড়ের মধ্যেকার গ্যাপ কম করার চেষ্টা করুন। এভাবে ৪-৫ বার করুন। এবারে একইভাবে ডান দিকেও করুন। এই এক্সারসাইজটি করার সময়ে খেয়াল রাখবেন যাতে ঘাড় স্ট্রেচ কো হয় তবে ঘাড়ে যাতে না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।
চওড়া করে হাসুন এবং গালের যে অতিরিক্ত মেদ রয়েছে তা দুহাত দিয়ে চেপে ধরুন। এবারে আগুলের মাথা দিয়ে গাল ওপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন এবং গালের মাসল মাসাজ করতে থাকুন। ১০ সেকেন্ড করে দিনে ৪-৫ বার এভাবে পুরো প্রসেসটা রিপিট করুন। এতে শুধু ত্বকের ভাঁজই দূর হয়না, গালের মাসলও স্ট্রং হয়।
ডবল চিনের সমস্যা একটা বয়সের পরে মোটামুটি সবারই হয়। এটা দূর করতে এক জায়গায় বসে মাথা ওপর দিকে তুলুন যাতে আপনি ঘরের ছাদ দেখতে পারেন। নিচের ঠোঁটটা যতটা সম্ভব স্ট্রেচ করুন। এভাবে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। দিনে ১০-১২ বার রিপিট করুন, দেখবেন ধীরে ধীরে ডবল চিনের সমস্যা আর থাকবেনা।
প্রথমেই ভুরু কুঁচকে নিন। এবারে যতটা সম্ভব কপালের দিকে ভুরু তুলে ধরুন। ৪ থেকে ৫ বার এই প্রসেসটা রিপিট করুন।
ফেস যোগা ব্যপারটা ঠিক কি? শরীরকে সুস্থ রাখতে যেমন নানা আসন করা হয়, ঠিক তেমনি, মুখের মাসল সচল রাখতে ফেস যোগা করা হয়। অনেকেই সময়ের অভাবে কিংবা আলসেমি করে এক্সারসাইজটা ঠিক নিয়মিত করেন না, তাঁদের জন্যই ফেস যোগা, অন্তত মুখের শেপটা ঠিক থাকবে এতে। কীভাবে করবেন এই ফেস যোগা সে খবরই দিলাম এখানে –
খাওয়ার পরে আমরা সবাই কিছু না কিছু মুখশুদ্ধি খাই, তাহলে এখন থেকে মনে করে রোজ মৌরি চিবোন, মুখশুদ্ধি হিসেবে. এতে আপনার চোয়ালের (jaw line) ব্যায়াম হয় এবং চোয়ালের শেপ ঠিক হয়।
যদি আপনার বয়ফ্রেন্ড কিউট হয় কিংবা মিষ্টি দেখতে বাচ্চা থাকে তাহলে তাকে একবারের জায়গায় দিনে বারবার চুমু খান. আরে হ্যাঁ সত্যি! আমি একটুও ইয়ার্কি করছি না! যত বেশি কিস করবেন তত বেশি মুখের মাসলের (muscle) এক্সারসাইজ (workout) হবে. আর যত বেশি মাসল (muscle) কাজে লাগবে তত তাড়াতাড়ি মুখের ফ্যাট (face fat) ঝরবে. তাহলে আর দেরি কিসের? হ্যাপি কিসিং!
অনেক তো পাউট (pout) করেন সেলফি নেবার সময় কিন্তু জানেন কি এটাও এক ধরণের ফেসিয়াল যোগা (facial yoga)? তবে সাধারণ পাউটের (pout) থেকে এটা একটু আলাদা. যেভাবে পাউট (pout) করেন সেরকমই মুখ করুন কিন্তু গাল দু’টো ভেতর দিকে চুপসে নিন. মুখটা মাছের মতো হয়ে গেলো! এভাবে কয়েক সেকেন্ড রাখুন. দরকার হলে মনে মনে ১ থেকে ১০ গুনুন. এবারে আবার কয়েকবার এই প্রসেসটা রিপিট করুন.
জন্মদিনে হোক কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে, বেলুন তো আমরা সবাই কোনো না কোনো সময়ে ফুলিয়েছি. মুখের ফ্যাট (face fat) ঝরানোর জন্য এবং মুখের শেপ (face shape) ফিরিয়ে আনার জন্য আবার এই ফেসিয়াল যোগার (facial yoga) সাহায্য নিন. মনে করুন আপনি বেলুন ফোলাবেন, মুখে হাওয়া ভরে নিন, এবারে ৫ অবধি গুনুন, এবারে মুখ না খুলেই একবার ডান দিকে আর একবার বাঁ দিকে হাওয়া পাস করুন এবং এবং প্রতিবারই ৫ সেকেন্ড করে ধরে রাখুন.
হাসা তো এমনিই শরীরের পক্ষে ভালো, মনের পক্ষেও! আর হাসলে যদি মুখের ফ্যাট (facial fat) ঝরে যায়, তাহলে তো কথাই নেই. মনে আছে ছোটবেলায় গাল টানলে হাসি পেতো? আবার সেই দিন ফিরিয়ে আনুন. প্রাণ খুলে হাসুন (Laugh out loud) আর নিজেই নিজের গাল টানুন. এভাবে দিনে কয়েকবার ফেসিয়াল যোগা (facial yoga) করুন, কিছুদিনের মধ্যেই মুখের বাড়তি চর্বি (facial fat) ঝরে যাবে.
এখন যখন ফেসিয়াল এক্সারসাইজ আর ফেস যোগা সম্বন্ধে এতকিছু জেনেই গেলেন তাহলে কবে থেকে আরম্ভ করছেন?
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন