গরমকাল মানেই তো বাঙালিদের খাবার প্লেটে ফলের রাজা (mango) থাকবেই থাকবে। আসলে গরমের সময় রসনাতৃপ্তির পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতেও এই ফলটির যে কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
প্রোটিন, উপকারী ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, এ,ফলেট এবং ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ এই ফলটিকে রোজের ডায়েটে জায়গা করে দিলে একদিকে যেমন হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না, তেমনি দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাক (mango health benefits)। তবে এখানেই শেষ নয়, ডার্মাটোলজিস্টদের মতে গরমকালে ত্বকের যত্নে যদি আমকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে নাকি একাধিক উপকার পাওয়া যায় (amazing benefits of mango for skin health in summer)। যেমন ধরো…
ত্বকের যত্নে আম:
১. ত্বকের উপর অতি বেগুনি রশ্নির প্রভাব কম পরে:
গরমকালে সূর্যের তেজ বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের উপরে অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব পরে বেশি। ফলে একদিকে যেমন বলিরেখা প্রকাশ পাওয়ার কারণে ত্বকের সৌন্দর্য কমতে সময় লাগে না, তেমনি আরও নানাভাবে স্কিনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও যায় বেড়ে। তাই তো সারা গরমকাল জুড়ে ত্বকের যত্নে আমকে কাজে লাগানো উচিত (mango on face)। আসলে এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. ত্বকের সব রোগ দূরে থাকে:
আমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর মাত্রায় বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ই, যা ত্বকের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান ধ্বংস করে দেয়। ফলে একদিকে যেমন ত্বকের জেল্লা বাড়ে, তেমনি কোনও ধরনের স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না।
৩. প্রদাহ কমায় এবং ব্যাকটেরিয়াদের দূরে রাখে:
এই ফলটিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, ত্বকের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি নানাবিধ ত্বকের সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। মোট কথা ত্বকের এ-টু-জেড খেয়াল রাখতে ফলের রাজার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
ত্বকের পরিচর্যায় আমের ফেসপ্যাক (mango face mask):
১. আম এবং মুলতানি মাটি:
পরিমাণ মতো পাকা আম নিয়ে তার সঙ্গে মুলতানি মাটি এবং পরিমাণ মতো দই মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর মুখটা ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটি মুখে এবং গলায় লাগিয়ে কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সপ্তাহে কয়েকদিন এইভাবে ত্বকের পরিচর্যা (skin care) করলে আমের গুণে একদিকে যেমন ত্বক নরম এবং তুলতুলে হয়ে উঠবে, তেমনি মুলতানি মাটি এবং দইয়ের কারণে ত্বকের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত তাপ প্রবাহের কারণে ত্বকের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
২. আম এবং অ্যাভোকাডো:
গরমকালে কোনও কারণেই যাতে ত্বকের ভিতরে জলের ঘাটতি দেখা না দেয়, তা সুনিশ্চিত করতেই এই ফেসমাস্কটি ব্যবহার করতে হবে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত এই মিশ্রণটি মুখে লাগাতে শুরু করলে ত্বকের আর্দ্রতা তো ফিরে আসবেই, সেই সঙ্গে যে কোনও ধরনের দাগ মিলিয়ে যেতেও সময় লাগবে না।
এতসব উপকার পেতে পরিমাণ মতো আম নিয়ে তা চটকে নিতে হবে। তারপর তাতে অল্প করে অ্যাভোকাডো এবং মধু মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন, যাতে প্রতিটি উপাদান একে-অপরের সঙ্গে ঠিক মতো মিশে যাওয়ার সুযোগ পায়। তারপর সেই মিশ্রণটি মুখে এবং গলায় ভালো করে লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩. আম এবং ওটসমিল:
প্রতিনিয়ত আমাদের ত্বকের উপরি অংশে মৃত কোষ জমতে থাকে, যে কারণে ত্বকের জেল্লা কমতে সময় লাগে না। এই কারণেই তো ত্বকের যত্নে আমকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আসলে মৃত কোষের স্তরকে সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি ত্বককে ভিতর থেকে সুন্দর করে তুলতে এই ফলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো আমের টুকরো নিয়ে তা চটকে নিতে হবে। তারপর তাতে ৩ চামচ ওটসমিল গুঁড়ো এবং ৭-৮ টা বাদাম ফেলে ভালো করে গ্রাইন্ড করে নিতে হবে, যাতে প্রতিটি উপদান ঠিক মতো মিশে যাওয়ার সুযোগ পায়। সবশেষে সেই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছু সময় ধীরে ধীরে মাসাজ করতে হবে। এরপর কম করে আধ ঘন্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে পেস্টটা। এই ভাবে সপ্তাহে কয়েক দিন ত্বকের পরিচর্যা করলেই দেখবে ফল মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
৪. আম এবং গোলাপ জল:
পরিমাণ মতো আমের সঙ্গে ২ চামচ মুলতানি মাটি, ২ চামচ দই এবং ২ চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে একটা মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। তরপর তা মুখে লাগিয়ে কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখ।
সপ্তাহে ২-৩ বার এইভাবে ত্বকের যত্ন নিলে স্কিনের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে জলের ঘাটতিও দূর হবে। ফলে গরমকালে ত্বকের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তো কমবেই, উল্টে স্কিনের জেল্লা বাড়বে চোখে পড়ার মতো।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!