আরজে। সঙ্গীতশিল্পী। স্ক্রিপ্ট লেখক। পরিচালক। মিউজিক প্রোডিউসার। ছোটদের দিদিমণি। ‘ছুটির পাঠশালা’ নামক একটি সংস্থায় ছোটদের গ্রুমিং করান তিনি। অনেকগুলো পরিচয় তাঁর। আবার তিনি অভিনেত্রী শকুন্তলা বড়ুয়ার বড় মেয়ে বা বলিউড অভিনেতা আশিস বিদ্যার্থীর স্ত্রীও বটে। তিনি পিলু (Piloo) বিদ্যার্থী। প্রায় ২১ বছর হল কলকাতা ছেড়ে মুম্বইয়ে বাসা বেঁধেছেন। এখনও কেউ কেউ ‘আরজে’ রাজশ্রীকে মনে করেন, মিস করেন। রাজশ্রী অর্থাৎ পিলু কলকাতায় আরজে হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিলেন। মুম্বইতে গিয়েও ধীরে ধীরে নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করেছেন তিনি। অন্য সব পরিচয় তাঁর কাছে গর্বের নিঃসন্দেহে। কিন্তু পিলু হয়েই পরিচত হওয়া তাঁর পছন্দের। কেমন তাঁর জার্নি? POPxo বাংলার সঙ্গে আড্ডায় পিলু।
গান কি একেবারে ছোট থেকে শিখেছেন?
গান (music) আমার এনভায়রনমেন্টে সব সময়ই ছিল। কিন্তু ছোট থেকে কোনও ফর্মাল গুরু ছিলেন না। কারও কাছে সেভাবে তালিম নেওয়া হয়নি। দিদার গোলপার্কের বাড়িতে প্রায় সব সময় থাকতাম। উনি বেগম আখতারের খুব প্রিয় ছাত্রী ছিলেন। তখনকার দিনে ঠুমরি, দাদরার ঘরোয়া শিল্পী। বাংলা গজল, শ্যামাসঙ্গীতও গাইতেন। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ওঁর গুরুভাই ছিলেন। ধনঞ্জয় দাদু আসতেন বাড়িতে। তারপর মা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখতেন। আমি মায়ের সঙ্গে সুচিত্রা মিত্রর ক্লাসে গিয়ে বসে থাকতাম। ফলে কানটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আজ বুঝতে পারি, আমি যেটুকু গান গাই, তাই কৃতিত্ব ওঁদের।
মঞ্চে ঋত্বিকা সাহানির সঙ্গে পিলু।
কলকাতায় থাকার সময় গান একেবারেই গাইতেন না?
কলকাতায় থাকার সময় নাচতাম বেশি। গানের দিকে অ্যাটেনশন কম দিয়েছিলাম। পরে কলেজে পড়ার সময় ইন্দ্রাণী সেনের কাছে বাণীচক্র-তে গিয়ে গান শিখেছি। ধীরে ধীরে দিলীপ মুখোপাধ্যায়কে মেন্টর হিসেবে পেয়েছিলাম। তখনকার সময়টা এখনকার মতো ছিল না। প্রচুর ফাংশন হত। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে গাইতাম। অমিত কুমারের সঙ্গে দু বছর টানা প্রায় ২৫টা শো করেছি। ডুয়েট গাইতাম। কিন্তু আমার মনে হত, গান আমার ভালবাসার জায়গা। কিন্তু ভবিষ্যতে হয়তো এটা করতে চাই না। কিন্তু কী করতে চাই, জানতাম না। তবে গান গাইতে ভাল লাগত।
কী করতে চান, সেটা কীভাবে বুঝতে পারলেন?
১৯৯৩-৯৪ সালে এফএমএ কাজ করতে গেলাম। তখন দেখালাম কথাও বলতে পারি, লিখতেও পারি। মিউজিকের মধ্যে সারাদিন থাকার সুযোগ পেলাম। ওটা আমার ড্রিম জব ছিল। সারাদিন প্রায় অফিসে থাকতাম। আরজে হিসেবে জনপ্রিয় হলাম। আমার অ্যালবাম বেরিয়েছিল। সেটাও মাঝেমধ্যে বাজাতাম। তখন মনে হল, গানের মধ্যেই থাকতে চাই।
বিয়ের পর মুম্বই শিফট করলেন?
হ্যাঁ। তখন টাইমস মিউজিকে ট্রান্সফার হল আমার। ওখানে অনেক কিছু শিখেছি। বিভিন্ন রকম অ্যালবাম প্রোডিউস করেছিলাম। ওই শেখা আমার সারা জীবনের সম্বল। তবে কোনওদিনই আমার কোনও বাঁধাধরা জিনিসে থাকতে ভাল লাগে না।
পিলু-আশিসের বিয়ের ছবি। রয়েছেন শকুন্তলা বড়ুয়াও।
আবার অন্য কিছু শুরু করলেন?
(হাসি) অন্তরা, মানে অন্তরা চৌধুরি আমার খুব ভাল বন্ধু। সে সময় ও মুম্বইতে ছিল। আমরা একসঙ্গে শুভা জোশির কাছে গান শিখতাম। সকলে সুযোগ পায় না। অন্তরা কিছুদিন পরে কলকাতা ফিরে যায়। আমি অনেকদিন শিখেছিলাম ওঁর কাছে। তারপর কিছুদিন গান বন্ধ ছিল।
কেন?
২০০০-এ ছেলে হওয়ার পর একটা মেন্টাল ব্লক এসে গিয়েছিল। একটা অ্যালবাম করতে পারলাম না। ভেবেছিলাম আর গান গাইতে পারব না। হয়তো সেদিন গলা খারাপ ছিল। হয়তো বা অন্য কিছু। কী হয়েছিল, আজও জানি না। মনে হয়েছিল, এখন থেকে জার্নিটা অন্যরকম হবে। সাইলেন্ট ফাস্ট্রেশনে চলে গিয়েছিলাম।
ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এলেন কীভাবে?
সে সময় মিউজির ডিরেক্টর সন্দেশ শান্ডিল্য আমার প্রতিবেশী ছিলেন। আমি মিউজিক নিয়ে অনেক কথা বলতে পারতাম। কিন্তু গাইতে পারতাম না। উনি জোর করে গাইয়েছিলেন। সে সময় এক অপেরা ভোকাল কোচের কাছে ট্রেনিং নিয়েছিলাম। মাসে দু’দিন করে ক্লাস নিতেন। উনি বলেছিলেন, ভয় পেয়ে গিয়েছ। আর কিচ্ছু হয়নি।
আশিসের সাপোর্ট পিলুর সর্বক্ষণের সঙ্গী।
সে সময় পরিবার বা স্বামী আশিসের সাপোর্ট পেয়েছিলেন নিশ্চয়ই?
ইউ নিড টু সাপোর্ট ইয়োরসেল্ফ ফার্স্ট। আশিস সে সময় নিশ্চয়ই এনকারেজ করেছে। কিন্তু আমার ভেতর থেকে ‘না’ ছিল। আমি আসলে বরাবরই নিজেকে আন্ডারএস্টিমেট করেছি।
ছুটির পাঠশালা’ কীভাবে তৈরি হল?
২০০৭-এ ‘ছুটির পাঠশালা’ তৈরি হয়। মোনালিসা এবং বৌদ্ধায়ন এর ক্রিয়েটিভ পার্টনার। কৃষ্ণা ওয়ার্কিং পার্টনার। আমরা ভেবেছিলাম, বাচ্চাদের নিয়ে বাংলায় কিছু করা যায় কিনা। সেখান থেকেই এর জার্নি শুরু। আমার ছেলে এখন ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়াশোনা করছে। ও ছোটবেলায় এখানে ক্লাস করত। বাচ্চাদের এখানে গান, কবিতা, গল্প- যা কিছু হয় সব বাংলাতে। মুম্বইতে আসলে একটা খিচুড়ি ল্যাঙ্গুয়েজ হয়ে যায়। সেটা থেকে বেরনোর জন্য সবটা বাংলাতে করাই আমরা। আমার ক্লাসের কোনও চ্যাপ্টার নেই। কোনও সিলেবাস নেই। গান শেখানোর সময় প্রচুর গল্প হয়। বাচ্চাদের বাবা-মায়েদের প্রচুর সাপোর্ট আছে। আবার কোনও বাচ্চার ইন্টারেস্ট অন্যদিকে গ্রো করেছে। ২০১২-র পরে ‘ছুটির পাঠশালা’র বাচ্চাদের বাবা-মায়েদের নিয়েও আমরা একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেটার নাম ছিল ‘ছাতিমতলা’।
আপনি কলকাতাকে মিস করেন এখনও?
মিসিং জিনিসটা বরাবর অন্যভাবে উপলব্ধি করেছি। আসলে এখন মনের জায়গাটা অনেক পাল্টে গিয়েছে। প্রথম প্রথম মুম্বইতে এসে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। সেই ওয়ার্মটা খোঁজার চেষ্টা করিনি। তাই পাইওনি। যখন খুঁজতে শুরু করলাম কলকাতার ওয়ার্ম এখানেও পেলাম। কনফিডেন্স ফিরল। কলকাতা-মুম্বই এই কম্পারিজনটাই কমে গেল।
ভার্চুয়ালি গান শেখাচ্ছেন পিলু।
শকুন্তলা বড়ুয়ার মেয়ে, আশিস বিদ্যার্থীর স্ত্রী, নাকি পিলু- কোন পরিচয়ে আপনি সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ?
(হাসি) আমি তো পিলুতেই সবচেয়ে বেশি কমফর্টেবল। মানুষ সবচেয়ে কমফর্টেবল নিজের সঙ্গে। পিলু ভাল গান করে, ছোট থেকে শুনেছি। কিন্তু সেখানে আমাকে বলা হত, শকুন্তলাদির বড় মেয়ে। কোনও অনুষ্ঠান খুব ক্লোজরাও ইন্ট্রোডিউজ করায় আশিসের বউ হিসেবে। যখন আরজে হলাম, তখন মনে হল নিজে কিছু করেছি। বাকি সম্পর্কগুলোতে আমি প্রাউড, হ্যাপি। বাই ডিফল্ট বাকি সম্পর্কগুলো রয়েছে। আসলে নিজেকে খুঁজে পেতে আমার অনেকটা সময় লেগেছে।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!