লকডাউনে নিজের আমিকে খুুঁজে নেওয়ার পথ দেখালেন অপরাজিতা আঢ্য, কিন্তু কীভাবে?
করোনা আতঙ্ক। সঙ্গী লকডাউন। ফলে গৃহবন্দি দশা সকলের। টিএনজার মেয়েটিও খুব অস্থির হয়ে উঠেছে। ঘরের মধ্যে থেকেই ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে। সেখানেও প্রতি মুহূর্তে ধরা পড়ছে অস্থিরতা।
দরজায় বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে মেয়েকে দেখেন মা। অপরিচ্ছন্ন ঘরটা গুছিয়ে দিতে চান। কিন্তু মেয়ে নারাজ। এক কথায় মাকে চলে যেতে বলে। মা তখন বলেন, শামুকের (Shamukh) কথা। খোলসের থেকে মাথা বের করে থাকলে পৃথিবীটা তার কাছে সুন্দর। আবার খোলসের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে থাকলেও পৃথিবী তার কাছে একই রকম সুন্দর।
না! তাতেও মেয়েকে বোঝানো গেল না। মেয়ে আগের মতোই অস্থির। তখন মা বলেন, এই লকডাউনে রিয়েলাইজেশনের আসল মানে। অর্থাৎ ‘রিয়েল আই’ আমার আমিটাকে খুঁজে দেখা। মা চলে যাওয়ার পরে মেয়ে বুঝতে েপারে মায়ের কথা। নিজেই পরিষ্কার করে ফেলে অপরিচ্ছন্ন ঘর। লকডাউনের মধ্যেও ভাল থাকার মন্ত্র শিখিয়ে দেন মা।
এই মা হলেন অপরাজিতা (Aparajita) আঢ্য। ঠিকই ধরেছেন রিল লাইফে। আসলে লকডাউনের মধ্যেই একটি ছোট ছবি তৈরি করেছেন তিনি। নাম ‘শামুক’। ভাবনা তাঁর। অতনু হাজরার পরিচালনা। মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অপরাজিতা স্বয়ং। আর মেয়ের ভূমিকায় রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা ভট্টাচার্য। সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রেখেই তৈরি হয়েছে ছবিটি। অর্থাৎ প্রত্যেকে নিজের বাড়িতে থেকেই শুটিং করেছেন। ছবির বাকি কাজও হয়েছে বাড়ি বসেই।
অন্যদিকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় এবং নন্দিতা রায়ের প্রোডাকশন হাউজ উইনডোজ এর নতুন প্রয়াস ‘লকডাউন শটস’। যার প্রথম ছবি ‘হিং’-এ অভিনয় করেছিলেন অপরাজিতা। সঙ্গী ছিলেন মানালি মনীষা দে। অপরাজিতা এবং মানালি নিজের বাড়িতে থেকেই শুটিং করেছিলেন। দুই বোনের রোজনামচা নিয়ে গল্প বেঁধেছিলেন জিনিয়া সেন। দিদি অর্থাৎ অপরাজিতা বোন মানালিকে রান্না শেখাচ্ছেন ফোনে। কারণ লকডাউনের পরিস্থিতিতে একে অপরের বাড়িতে যাওয়ার উপায় নেই। দিদির কাছ থেকে ফোনে শুনে রান্না করার চেষ্টা করছেন বোন। কিন্তু রান্না হয়ে যাওয়ার পর, তার স্বাদ ঠিক যেন দিদির মতো হল না।
বছরভর বড় চাকরি করে প্রচুর টাকা রোজগার করেন বোন। আর দিদি সামলে রাখেন বাড়ি। হয়তো তাঁর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই। কিন্তু সংসার করেন গুছিয়ে। সংসার আগলে রাখেন। আর বাইরে না বেরিয়ে যাঁরা বাড়ির বাকিদের দেখভাল করেন, সংসার করেন, সেটাও তো যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ। তার মূল্য কি আমরা দিতে পারি? এই লকডাউন যেন চোখে আঙুল দিয়ে সেই সত্যি আবার দেখিয়ে দিল। সংসার করাটাও যে একটা আর্ট, শিল্প তা যেন বুঝিয়ে দিল ‘হিং’।
আসলে এ এক এমন পরিস্থিতি যা আগে কখনও দেখিনি আমরা। একদিকে যেমন মন খারাপ হচ্ছে সকলের, ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা বাড়ছে সকলের, তেমনই কাছের মানুষরা যেন হয়ে উঠছেন আরও কাছের। ‘হিং’ বা ‘শামুক’ যেন সেই কাছের মানুষদের কথা আরও একবার মনে করিয়ে দিল, যাঁরা আজীবন আগলে রাখেন আমাদের। অথচ তাঁদের প্রাপ্য সম্মান আমরা অনেক সময়ই দিতে পারি না।