লকডাউনের পর নাকি গৃহবধূদের মানসিক চাপ বেড়েছে, এইসব কারণের সঙ্গে আপনি একমত?
করোনা আতঙ্ক এবং লকডাউনে (lockdown) গৃহবন্দি জীবন এক নিমেষে পাল্টে দিয়েছে আমাদের। বদলে দিয়েছে চারপাশের সব কিছু। ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন হতে পারে, তা আমাদের অজানা। প্রতিদিন বাড়িতে থেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে টেনশন চলছে প্রত্যেকের। আর এর মধ্যেই যেন বদলে যাচ্ছে সম্পর্কগুলোও।
এই পরিস্থিতিতে অন্য অনেকের তুলনায় নাকি গৃহবধূরা (housewives) অনেক বেশি মানসিক চাপে (stress) রয়েছেন। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসছে এমন তথ্য। কয়েকজনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি আমরা। কিন্তু এর কারণ কী? কেন গৃহবধূরা তুমুল মানসিক চাপে রয়েছেন? তার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে এই প্রতিবেদনে আলোচনা করার চেষ্টা করলাম আমরা।
১) আমাদের সামাজিক কাঠামোয় এখনও পর্যন্ত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যাঁদের রয়েছে, পরিবারে তাঁদের কথারই দাম দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ গৃহবধূ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন নন। তার জন্য সমস্যাতে তাঁরা আগেও ছিলেন। এখন যেন সেই সমস্যা আরও বেড়েছে।
২) সাধারণত গৃহবধূদের উপর সংসার সামলানোর দায়িত্ব থাকে। বাড়ির পুরুষ সদস্য রোজগেরে। তিনি প্রতিদিন বেরিয়ে যান। আর গৃহবধূ সংসার সামলান। এটাই বেসিক কাঠামো। এখন সেই পুরুষ সদস্য বাড়িতে। বাড়ির কাজ করার অভ্যেস হয়তো তাঁর নেই। কোনও ক্ষেত্রে ইচ্ছেরও অভাব রয়েছে। এতদিন গৃহবধূ সে সব কাজ সামলাতেন নির্দিষ্ট সময়ে। এখন সেই সময় ঘেঁটে গিয়েছে। ফলে সর্বক্ষণ বাড়ির পুরুষ সদস্যের প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে পৌঁছে দিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। বাড়ছে মানসিক চাপ।
৩) প্রতিদিনের কাজে গৃহবধূদের যাঁরা সাহায্য করেন, এখন তাঁদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ফলে বাড়ির সব কাজ একার হাতে সামলাতে গিয়ে চাপ বেড়েছে।
৪) বাড়ির পুরুষ সদস্য বেরিয়ে গেলে এতদিন পর্যন্ত নিজের জন্য কিছুটা সময় পেতেন গৃহবধূ। সে সময় হয়তো বই পড়তেন, বাগান করতেন, ফোনে গল্প করতেন অথবা ঘুমিয়ে নিতেন। এখন সেই অবসর তাঁর নেই। পাশাপাশি বাড়ির পুরুষ সদস্যেরও স্পেস প্রবলেম হচ্ছে।
৫) ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক চিন্তা এখন দুঃসহ হয়ে উঠেছে সকলের কাছেই। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকায় অনেক গৃহবধূকেই শুনতে হচ্ছে, ‘এ সবের তুমি কি বুঝবে?’ নিজের খারাপ লাগাটা প্রকাশ করতে পারছেন না গৃহবধূরা। ফলে বাড়ছে মানসিক চাপ।
৬) অনেক বাড়িতেই পুরুষেরা বাড়ির কাজে গৃহবধূদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে গৃহবধূরাই যেন সেই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না। পিতৃতান্ত্রিক পরিবেশ তাঁদের শেখায়নি পুরুষরাও বাড়ির কাজ করতে পারেন। ফলে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের গঞ্জনার শিকার হচ্ছেন গৃহবধূরাই।
৭) সর্বোপরি লকডাউনের পরিস্থিতিতে গার্হস্থ্য হিংসার পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই। অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য ফাস্ট্রেশন মেটাতে না পেরে গৃহবধূদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। ফলে তাঁদের মানসিক চাপ বাড়াটা তো স্বাভাবিক।
মূল ছবি ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।