একদিন বন্ধুদের আড্ডায় আমাদের পার্টনারের সঙ্গে ঝগড়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেই নিয়েই হাসাহাসি পর্ব চলছে। কেউ আবার গার্লফ্রেন্ডের বেশ নিন্দে করছে, যদিও তাঁর আবার গার্লফ্রেন্ড ছাড়া এক পা চলে না। এই সময়েই আমাদের এক বন্ধু একটা কথা বলে। যে কথা শোনার পর আমরা প্রায় সবাই অনেক্ষণ চুপ করেছিলাম। আর ভাবছিলাম, সত্য়িই এই কথাটা ভেবে দেখিনি।
সেই বন্ধু বলেছিল, যতক্ষণ সম্পর্কে মতবিরোধ আছে, ঝগড় আছে ততক্ষণ পর্যন্তই সেই সম্পর্কটা সুন্দর আছে। অর্থাৎ, আপনার কোনও বিষয়ে ভাল না লাগলে যদি পার্টনার প্রকাশ করে এবং একটু চিৎকারও করে। তাহলেও ঠিক আছে। কিন্তু আপনার কোনও কিছুতেই যদি পার্টনারের কিছুই যায় না আসে। মানে আপনি কিছু করলেন যাতে তাঁর রাগ হওয়ার কথা, কিন্তু সে কোনও কিছুই প্রকাশ করল না। চুপ করে থাকল। তখনই বুঝতে হবে, সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আর সেই সমস্যাই আসল সমস্যা। পার্টনারের এই ব্যবহার সম্পর্কের ওপর যেমন প্রভাব ফেলে, একইভাবে অন্য পার্টনারের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব ফেলে। আমাদের ওই বন্ধু বলত, প্রেমিকাই ঝগড়া করে ব্লক করবে আবার প্রেমিকাই জড়িয়ে ধরবে।
সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট হয় আপনার উপর?
সেদিন সেই কথা শোনার পর আমরা অনেকেই চুপ করেছিলাম। একেই বলে সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট (silent treatment) বা স্টোন ওয়ালিং (stonewalling) । এখন আপনি মনে করে দেখুন তো, আপনার পার্টনার কি আপনার উপর এই সাইলেন্ট ট্রিটমেন্টই জারি রাখে? মানে কখনওই আপনার কোনও বিরুদ্ধ মতের উত্তর দেন না। আলোচনা করতে চাইলেও আপনার সঙ্গে কথা বলতে কোনোভাবেই রাজি নন। মনস্তত্ত্বের ব্যাখায় কিন্তু সাইলেন্ট ট্রিটমেন্টকে (silent treatment) মানসিক অত্যাচার বলেই মনে করা হয়। আসুন কয়েকটি বিষয়ে জেনে নিই…
মানুষ কেন সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট করেন?
অবজ্ঞা – কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ চুপ করে থাকেন বা সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট করেন কারণ তিনি কোনওরকম বিবাদে জড়াতে চান না।
কমিউনিকেশন – একজন মানুষের হয়তো কখনও মন খারাপ রয়েছে। কিন্তু সেই কথা পার্টনারকে সরাসরি বলতে পারছেন না। বা তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছেন না। সেই সময়ে পার্টনারকে নিজের কথা বোঝানোর জন্য চুপ করে থাকেন(silent treatment)।
শাস্তি (silent treatment as emotional abuse) – যদি কোনও মানুষ তাঁর পার্টনারের উপর ক্ষমতা বোঝানোর জন্য বা তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট করেন (silent treatment as emotional abuse), তবে সেটিকে একরকমভাবে মানসিক অত্যাচার মনে করা হয়। নীরব অত্যাচার সহ্য করবেন না।
ভালবাসায় ঝগড়া-অভিমান হয়। আঘাত নয়।
এটি কি সত্য়িই অত্যাচার?
- যদি অন্যকে আঘাত করার অভিপ্রায় নিয়ে করা হয়(silent treatment as emotional abuse)
- যদি দীর্ঘ সময় ধরে নীরবতা চলতে থাকে
- নিরবতা তখনই ভাঙে যখন সে চায়
- অন্য় মানুষের সঙ্গে কথা বলে কিন্তু নিজের পার্টনারের সঙ্গে নয়
- তাঁর পার্টনারকে দোষী করার জন্য যদি সে চুপ করে থাকে
- যদি সেই নিরবতার মাধ্যমে তাঁর পার্টনারকে ‘আরও ভাল’ করতে চায় (silent treatment in relationship)
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য় তাঁকে অকারণ সরি বলবেন না
কীভাবে সামলাবেন : বিশেষজ্ঞদের মত
- আপনাদের মধ্যে কথা বন্ধ কেন (silent treatment in relationship)তা খেয়াল করে দেখুন? যদি এরকম হয়, আপনাদের মধ্যে কমিউনিকেশনে সমস্যার কারণে এরকম হচ্ছে না তো? সেটা বোঝার চেষ্টা করুন।
- পার্টনারের মন পড়ার চেষ্টা করবেন না। আপনার পার্টনার কথা বলছেন না বলে আপনি সারাক্ষণ ভাবতে থাকলে আসলে আপনার পার্টনার কী কী ভাবতে পারেন। সেই সব ভেবে মাথা খারাপ করলেন। তা করবেন না। তাঁর মন পড়ার দরকার নেই, বরং সরাসরি প্রশ্ন করুন।
- অকারণ ক্ষমা চাইবেন না। শুধুমাত্র পরিস্থিতি সাধারণ করার জন্য় তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এতে সমস্য়ার সমাধান হবে না। সেই ইশুটাই থেকে যাবে। কমিউনিকেশন গ্যাপ ঠিক করার জন্য আপনি তাঁর সঙ্গে কথা বলে বোঝাতে পারেন, আপনার অভিপ্রায় কী ছিল।
- যদি কথা শুরু হয় তাহলে কী করবেন। তাহলে একজন ভাল শ্রোতা হন। তাঁকে বুঝুন। কম তর্ক করুন।
- বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। যদি কোনও ভাবেই সমস্যা সমাধান না করতে পারেন, এবং প্রতি মুহূর্তেই এটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে তাহলে আপনার একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। নীরব অত্যাচার সহ্য করবেন না।
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!