সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে হইচই পড়ে গেছে। ছোট্ট একরত্তি প্রাণ। বয়স মোটে তিন। না, সে কোনও আশ্চর্য কাজ করেনি। কোনও প্রতিযোগিতায় সোনার মেডেলও পায়নি। সবার মন জয় করে নিয়েছে ছোট্ট (baby) বেদার একরাশ আলোর মতো হাসি। বেদা ডাউন সিনড্রোমে (down syndrome) আক্রান্ত। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর অনেক কলুষতাই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু তার যে চিকিৎসা চলছে, তাকে প্রতিদিন যে প্রাণান্তকর থেরাপির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেটা কিন্তু তাকে দেখে একটুও বোঝা যাচ্ছে না। মুখের অনাবিল হাসিটি (smile) বজায় রেখেই সে জীবনের যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে।
ডাউন সিনড্রোম হল একটি জেনেটিক ডিসঅর্ডার, যেখানে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় ও অতিরিক্ত ক্রোমোজোম দেখা দেয়। সাধারণত এই রোগের বিশেষ কোনও প্রতিকার নেই। এরকম একটি বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুকে এমনিতেই কেউ দত্তক নিতে চায়না। কারণ আমরা মনে করি এঁরা “স্বাভাবিক” নয়। অথচ স্বাভাবিক হওয়ার সংজ্ঞা আমাদের নিজেদের কাছেই ঠিক পরিষ্কার নয়। কবিতা বালুনি আর তাঁর স্বামী হিমাংশু কাকতোয়ান কিন্তু অন্যরকম ভাবতে শিখেছিলেন বা বলা ছলে অন্যরকম ভেবেছিলেন। বছর তিনেক আগে দিল্লির এই মধ্যবিত্ত দম্পতি ভেদাকে দত্তক নেন। এটা জেনেই দত্তক নেন যে ভেদার ডাউন সিনড্রোম আছে। আত্মবিশ্বাসী কবিতা জানিয়েছেন যে নিজের সন্তানের জন্ম দেওয়ার আগে তাঁর বারবার মনে হত, এই পৃথিবীতে অনেক শিশু আছে, যাঁদের কেউ নেই। তাদের একটা বাড়ি দরকার, একটা পরিবার আর পারিবারিক স্নেহ ভালবাসা দরকার। মূলত এই ভাবনা থেকেই তাঁরা ভেদাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ভারতে তাঁরাই প্রথম দম্পতি যারা ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কোনও শিশুকে দত্তক নিয়েছেন। কবিতা আর হিমাংশু যখন প্রেম করতেন, তখনই এই ইচ্ছের কথা কবিতা তাঁকে জানিয়ে ছিলেন। সায় দেন হিমাংশু। বোঝা যায়, দুটি মন সত্যিই এক হয়েছে।
তবে বাধা যে আসেনি, তা কিন্তু নয়। পরিবারের অনেকেই দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে রাজি ছিলেন না। যেখানে দুজনেই শারীরিকভাবে সক্ষম, সেখানে তো একদমই নয়। একে তো একটি মেয়ে, তার উপরে সে স্পেশ্যাল! আত্মীয় স্বজনদের কটু কথা আর বেঁকা মন্তব্য ব্যথিত করত কবিতাকে। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েননি তিনি। মার্কিন মুলুকে থাকাকালীন ডাউন সিনড্রোম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন দু’জনে। দেখেন যে এঁদের নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে মানুষের মনে। এজেন্সির মাধ্যমে পনেরো মাসের বেদার ছবি এসে পৌঁছয় তাঁদের কাছে। সেই ছবি দেখে কেঁদে ফেলেন কবিতা। বুঝতে পারেন, তাঁর মেয়েকে তিনি পেয়ে গেছেন।
এরপর জীবনটাই পাল্টে গেছে হিমাংশু আর কবিতার। কবিতা বলেন, “বেদা আমায় শিখিয়েছে, আলাদা হওয়াটা কোনও দোষের নয়। যারা অন্যরকম হয় তারাও সুন্দর হয়। ছোট-ছোট ইচ্ছেগুলো নিয়ে বাঁচতে শিখিয়েছে আমায় ও। আমরা ওর কাছে কৃতজ্ঞ।”
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের নানা রকম থেরাপির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যাতে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে। এই থেরাপি একটি বছরতিনেকের শিশুর কাছে খুব কষ্টকর। কিন্তু বেদা হাসিমুখে সবটাই গ্রহণ করছে। মায়ের মুখের হাসিই তাকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগাচ্ছে। কবিতা আর হিমাংশুকে আমাদের কুর্নিশ। আর বেদাকে বলব, “ফাইট বেদা ফাইট!”
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!