শরীর এবং মন সুস্থ রাখার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে যোগব্যায়ামের চল রয়েছে এবং ইদানীং যোগব্যায়ামের (benefits and side effects of kapalbhati pranayama) গুরুত্ব মানুষের মধ্যে ব্যাপকহারে বৃদ্ধিও পেয়েছে। শুধু ভারতীয়দের মধ্যে নয়, পশ্চিমি দেশগুলোতেও যোগব্যায়াম এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়। এমনকী, তথাকথিত প্রথম বিশ্বের বহু লোকজন ভারতে এসে রীতিমতো যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন! তবে যোগব্যায়ামেরও নানা রকমফের আছে এবং তাঁর মধ্যে কপালভাতি প্রাণায়াম একটি।
ব্যাপারটি কী?
কপালভাতি প্রাণায়াম এক প্রকারের ব্রিদিং এক্সারসাইজ যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। কপালভাতি, এই সংস্কৃত শব্দের অর্থ ‘উজ্জ্বল কপাল’ এবং প্রাণায়াম শব্দের অর্থ হল ‘শ্বাস নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি’। কপালভাতি প্রাণায়াম এর উপকারিতা অনেক, যেহেতু এই যোগব্যায়ামের সাহায্যে আমাদের মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে হয় এবং মস্তিক অ্যাক্টিভ করতে সাহায্য করে, কাজেই এই এক্সারসাইজের নাম এমন।
কপালভাতির প্রকারভেদ
প্রাচীন পদ্ধতি অনুসারে কপালভাতি প্রাণায়াম তিন প্রকারের হয়:
১। বাতক্রম: এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। পদ্মাসনে বসে শিরদাঁড়া সোজা রেখে মুখ দিয়ে বড় করে শ্বাস নিতে হবে যাতে পেট ফুলে যায়। এরপরে কিছুক্ষণ বাতাস ধরে রেখে ধীরে-ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে এবং সেসময় পেট ক্রমশ ভিতর দিকে ঢুকে যাবে – একেই বলা হয় কপালভাতি প্রাণায়াম।
২। ভ্যূতক্রম: এই পদ্ধতিতে নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময় জলও টেনে নিতে হয় এবং মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ার সময় জল বাইরে ফেলে দিতে হয়।
৩। শীতক্রম: এটি ভ্যূতক্রমের ঠিক উল্টো। এই পদ্ধতিতে মুখ দিয়ে জল টেনে নাক দিয়ে বের করতে হয়। প্রথাগত প্রশিক্ষণ না নিয়ে ‘ভ্যূতক্রম’ এবং ‘শীতক্রম’ প্রাণায়াম করা উচিত নয়।
কিভাবে করবেন এই প্রাণায়ামটি?
কপালভাতি প্রাণায়াম (benefits and side effects of kapalbhati pranayama) পদ্ধতি বেশ সহজ। যেকোনও যোগব্যায়ামের শিক্ষকের থেকে আপনি প্রশিক্ষণ নিয়ে এই প্রাণায়াম অনুশীলন করতে পারেন –
ক) প্রথমেই একটি শান্ত জায়গা দেখে পদ্মাসনে বসুন।
খ) এবার দুই হাত দু হাঁটুর ওপরে রেখে তর্জনী এবং বুড়ো আঙুলের ডগা এক জায়গায় এনে মুদ্রা তৈরি করুন।
গ) ধীরে-ধীরে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন। খুব তাড়াতাড়িও নেবেন না আবার খুব দীর্ঘও যেন না হয়।
ঘ) শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে বড় করে মুখ দিয়ে শ্বাস নিন এবং ধরে রাখুন।
ঙ) এবার ধীরে-ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। খেয়াল রাখবেন যেন আপনার ছাড়া প্রতিটি শ্বাসের সঙ্গে একটু একটু করে আপনার পেট ভিতর দিকে ঢুকে যায়।
চ) এভাবে ২০ বার করে পাঁচ সেট করুন।
কপালভাতি প্রাণায়ামের উপকারিতা
এমনিতেই যোগব্যায়ামের উপকারিতা অসীম। তার উপর যদি সঠিক পদ্ধতিতে কপালভাতি করা যায়, তা হলে শুধু শারীরিকভাবেই নয়, আরও নানাভাবে আমরা উপকৃত হতে পারি।
১। শারীরিক উপকারিতা
- কপালভাতি প্রাণায়াম সঠিক পদ্ধতিতে করলে খুব তাড়াতাড়ি পেটের বাড়তি মেদ ঝরে। পেটের মাংসপেশি মজবুত হয় এবং পেটের নানা সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
- কপালভাতি প্রাণায়ামে মধুমেহ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাঁরা কপালভাতি করলে এই সমস্যা দূর হবে।
২। মানসিক উপকারিতা
- কপালভাতি প্রাণায়ামের সাহায্যে স্নায়ুতন্ত্রে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে হয়। ফলে আমাদের মস্তিস্কের প্রতিটি কোষ সচল হয়ে ওঠে।
- সারাদিনের ধকল থেকে মুক্তি পেতে এবং মন শান্ত করতে এই প্রাণায়াম খুবই কার্যকরী।
- মনঃ সংযোগ বাড়াতে এবং স্মৃতিশক্তি প্রখর করতে কপালভাতি প্রাণায়াম সাহায্য করে।
৩। ত্বকের যত্নে কপালভাতি
- ত্বকের সমস্ত টক্সিন দূর করতে কপালভাতি সাহায্য করে।
- অকালে ত্বককে বুড়িয়ে যেতে দেয় না (benefits and side effects of kapalbhati pranayama), এমনকি নিয়মিত কপালভাতি প্রাণায়াম করলে আপনার ত্বকের বয়স বোঝাই যাবে না।
৪। চুলের যত্নে কপালভাতি
- অকালে চুল পাকা বন্ধ করতে এই ব্রিদিং এক্সারসাইজ সাহায্য করে।
- চুল পড়া রোধ করতেও সাহায্য করে কপালভাতি।
রয়েছে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও
যদিও কপালভাতি প্রাণায়ামের অনেক উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু প্রথম প্রথম হয়ত কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো হল,
- মাথা ব্যাথা
- মুখের ভিতর শুকিয়ে যাওয়া
- অতিরিক্ত ঘাম
- বমি পাওয়া
কাজেই, যখনই কোনও প্রাণায়াম করবেন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তবেই করবেন।
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!