আমন্ড বাদাম শুধু ড্রাই ফ্রুট হিসেবেই ব্যবহার হয় না, আমাদের সৌন্দর্য রক্ষাতেও এর ভূমিকা অনেক। চুল এবং ত্বক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য রক্ষা (Almond Oil Benefits) পর্যন্ত করে আমন্ড বাদাম এবং সেখান থেকে নিঃসৃত তেল (Oil)। এতে আছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম আর ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান আর প্রয়োজনীয় খনিজ। এই বাদাম ও তেলের (Almond Oil) এত গুণ আছে যে বলে শেষ করা যাবে না।
কীভাবে ব্যবহার করবেন আমন্ড অয়েল?
আমন্ড অয়েলের সাইড এফেক্টস বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আমন্ড অয়েলের ব্যবহার নিয়ে নানা প্রশ্ন ও তার উত্তর
আমন্ড অয়েল আর কিছুই না, আমন্ড বাদাম থেকে পিষে এই তেল বের করা হয়। মিষ্টি আমন্ড বাদামকে কোল্ড প্রেস করে এই তেল বের হয়। বাদাম খাওয়ার থেকে আমন্ড তেলের উপযোগিতা অনেক বেশি।অনেকেই আছেন যারা এই তেলের গুনাগুণ জানেন। তবে জানেন না তাদের জন্য এই লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বাদামে আছে শক্তির উৎস। বুদ্ধির বিকাশ হোক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো হোক বা কোলেসটোরল নিয়ন্ত্রণে রাখা হোক, সবেতেই কাজ দেয় বাদাম। আমন্ড তেলকে বলে রোগান বাদাম তেল। যা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বের করা হয় ফলে এর গুণ অনেক বেশি। এই তেলে থাকে ভিটামিন এ, ডি ও ই। এক্সপার্টরা বলেন এই তেল (Benefits Of Almond Oil In Bengali) মহিলাদের জন্য খুব কার্যকরী।
ত্বকের জন্য আমন্ড তেল খুবই ভালো। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে নিয়মিত ব্যবহার করা উচিৎ আমন্ড তেল।
বাদাম তেল আমাদের ত্বক কোমল ও পেলব করে। আর্দ্রতাকে ত্বকের মধ্যে ধরে রাখে এই তেল। ত্বকে পুষ্টিও যোগায় বাদাম তেল।
নিয়মিত আমন্ড তেল মুখে মালিশ করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হয়। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যানটি অক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে।
সারাদিন পরিশ্রম করার জন্য এবং নানারকম স্ট্রেসের কারণে চোখের নিচে ও চারপাশে ডার্ক সার্কল তৈরি হওয়া কোনও নতুন কিছু নয়। এই জাতীয় সমস্যা আমাদের অনেকেরই থাকে। অনেকেই নানা প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন ডার্ক সার্কল থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু অনেক দামি প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও যে নিশ্চিতভাবে এই ডার্ক সার্কল থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। এই টোটকা ট্রাই করে দেখুন তো। হাতে নাতে ফল পাবেন কথা দিলাম। রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে চোখের নিচে নিয়মিত আমন্ড তেল মালিশ করলে ডার্ক সার্কল ধীরে ধীরে কম হয়ে যায়।
এই তেলে আছে ভিটামিন আর ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বকের কোষে প্রাণ দান করে। ফলে আমাদের ত্বক হয়ে ওঠে তরতাজা আর এর স্বাভাবিক রঙও বজায় থাকে। নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করলে আপনি বয়সের কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন। অনেকেরই দূষণ ও অন্যান্য নানা কারণে চোখের চারপাশে বলিরেখা পড়ে যায়। প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে চোখের চারপাশে আঙুল দিয়ে আমন্ড তেল মাসাজ করুন। প্রতিদিন এই মাসাজ করলে দেখবেন চোখের চারপাশের বলিরেখা অনেক কম হয়ে গেছে।
অনেকেই হয়তো জানেন না যে আমন্ড অয়েল হল একটি স্বাভাবিক সানস্ক্রিন।বাজার চলতি সানস্ক্রিনের উপর আপনার যদি ভরসা না থাকে তাহলে চোখ বুজে আমন্ড তেল ব্যবহার করা শুরু করে দিন। বিশেষ করে আপনাকে যদি প্রতিদিন বাড়ির বাইরে বেরোতে হয় তাহলে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি আপনি আজ থেকেই এই তেল ব্যবহার শুরু করুন। কারণ ট্যানিং দূর করতে আর সানবার্ন কমাতে তো এই তেল কাজে আসেই, উপরন্তু সূর্য রশ্মির বাজে প্রভাব যেমন ধরুন অতিবেগুনি রশ্মির বাজে প্রভাব এই তেল অনেকটা কম করে।
আপনার ত্বকে যদি ব্রণ, ফুসকুড়ি, মেচেতা ইত্যাদি থাকে তাহলে সেগুলোও দূর হবে নিয়মিত আমন্ড তেল ব্যবহার করলে। আর এটা যে সম্ভব সেটা রীতিমত প্রমাণিত। ত্বকে জ্বালা বা চুলকানি দূর করে আমন্ড তেল ত্বককে করে সুন্দর আর স্বচ্ছ। ত্বক যাতে আরও পরিষ্কার আর দাগছোপহীন দেখায় তার জন্য এই প্রক্রিয়া ট্রাই করে দেখুন। দু চামচ আমন্ড তেলের সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস মেশান। এবার এটি মুখে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট এটি মুখে রেখে দিন তারপর ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু থেকে তিনবার এটি করে দেখুন আমস খানেক পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার ত্বকে কীরকম ম্যাজিক গ্লো এসেছে।
আপনার ত্বক যদি শুষ্ক, প্রাণহীন আর খসখসে হয়ে যায় তাহলে নিয়মিত বাদাম তেল দিয়ে মুখে মাসাজ করুন। এটি আপনার ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচায়। বিশেষ করে শিতকালে এই তেল ওষুধের মতো কাজ করে।
মেকআপ তোলার জন্য এই তেল খুব কাজে দেয়। কারণ এই তেল হাল্কা আর একদম চিটচিটে নয়। এই তেল ত্বকের ছিদ্র ভালো করে খুলে দেয় আর মেকআপ পুরো পরিষ্কার করে দেয়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল এই তেল যে কোনও ত্বকের জন্য উপযোগী।তাছাড়াও ঠোঁটের যত্নেও এই তেল অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন। যাদের ঠোঁট খুব বেশি ফাটে বা যাদের ঠোঁট খুব খসখসে তারা কয়েক ফোঁটা আমন্ড তেল যদি প্রতিদিন ঠোঁটে মাসাজ করেন তাহলে ঠোঁট গোলাপি হয়ে যাবে। এই তেলে যেহেতু ময়েশ্চার আছে তাই শুষ্ক ঠোঁটের সমস্যাও দূর হবে।
যদি ত্বক সম্বন্ধিত যে কোনও সমস্যা হয় তাহলে আমন্ড তেল মুখে মাসাজ করতে পারেন। রাতে শোয়ার সময় মুখে বাদাম তেল লাগান আর ৫ মিনিট হাল্কা করে মাসাজ করুন। তারপর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে কাপড় দিয়ে মুছে নিন। কিছু দিনের মধ্যেই বুঝতে পারবেন (Benefits Of Almond Oil In Bengali) আপনার ত্বকের কতটা উন্নতি হয়েছে।
শুধু ত্বক নয়, এটি চুলের জন্যও বেশ লাভজনক। চুল পড়া বন্ধ করা থেকে শুধু করে ঘন, মজবুত চুল পেতে এই তেল মাথায় মাসাজ করা উচিৎ। আসুন দেখে নিই কীভাবে চুলের যত্নে কাজে লাগাতে পারি আমন্ড অয়েল।
চুলের যত্নে বাদাম তেল জাদুর মতো কাজ করে। এটা চুলে মাসাজ করলে চুল পড়া বন্ধ হয়। তাছাড়া চুলের কোয়ালিটিও অনেক ভালো হয়ে যায়। এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম যা চুলের জন্য খুব ভালো। যাদের খুব চুল পড়ার সমস্যা আছে বা যাদের চুল নানা কারণে পাতলা হয়ে গেছে তারা চোখ বুঝে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল সপ্তাহে এক বা দু দিন মাসাজ করলে চুলের ভলিউম বাড়বে এবং চুল পড়াও বন্ধ হবে। শুধু লম্বা আর ঘন চুল নয় চুলের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও এই তেলের জুড়ি নেই। যদি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি চান তাহলে দু চামচ আমন্ড তেল আর দু চামচ তিলের তেল মিশিয়ে সপ্তাহে দুবার মাসাজ করুন। দেখবেন চুলের বৃদ্ধি অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে।
স্ক্যাল্পের মৃত কোষ দূর করে খুস্কি রোধ করে এই তেল। শুধু চুল নয় স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও আমন্ড তেল দুর্দান্ত কাজে দেয়।
বর্তমান লাইফস্টাইল আর দূষণ আমাদের চুল দ্রুত হারে নষ্ট করে দিচ্ছে। আমন্ড তেলের সঙ্গে অলিভ আর ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে মাথার চুলে লাগান। এতে শুধু স্প্লিট এন্ডের সমস্যাই দূর হবে না চুলের গোড়াও মজবুত হবে। সত্যি বলতে কী স্প্লিট এন্ড আর খুশকি চুলের এই দুটি প্রধান সমস্যার জন্য একবার আমন্ড তেল অবশ্যই ব্যবহার করে দেখুন। হাতে নাতে ফল পাবেন।সপ্তাহে দু বার এই তেল মাথার চুল ও স্ক্যাল্পে মালিশ করবেন।
সৌন্দর্য রক্ষায় অর্থাৎ ত্বক আর চুলের যত্নে আমন্ড তেল যেরকম লাভজনক ঠিক সেরকমই আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও কাজে আসে এই তেল। বিশেষজ্ঞরা বলেন আমন্ড তেলে রান্না করলে সেই খাবার খেলে ওজন অনেকটাই কমে বা নিয়ন্ত্রনে আসে।
বাদাম তেলে মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা হার্টের জন্য খুব ভালো।যারা হার্টের সমস্যায় ভোগেন তাদের উচিৎ সর্ষের তেলের পরিবর্তে এই তেল ব্যবহার করা। প্রতিদিন এক চা চামচ তেলে রান্না করুন আর সুস্থ হার্ট পেয়ে যান।হার্টের সমস্যা অনেক সময়ই বাড়তি ওজনের সঙ্গে জড়িত থাকে। সেখানেও এই জাদু তেল ম্যাজিক দেখাতে পারে। কারণ এই তেল দিয়ে রান্না করে খেলে বা এই তেল সরাসরি খেলে ওজন কমে এবং ওজন বৃদ্ধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে থাকে।
এই তেল প্রতিদিন খেলে শরীর শক্তিশালী হয়ে ওঠে আর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়।সরাসরি এই তেল খাওয়ায় আপনার যদি কোনও অসুবিধে থাকে তাহলে স্যালাডে ড্রেসিং করার সময় এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেলে রান্না করলে হজম সংক্রান্ত সমস্যা কম হওয়ার কারণ হল এই তেল (Benefits Of Almond Oil In Bengali) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে খুব সহজেই। আর সেইজন্যি প্রতিদিন পেট পরিষ্কার থাকার জন্য হজম জনিত সমস্যা হয় না বললেই চলে।
যে জায়গায় ব্যথা হয়েছে সেখানে এই তেল সামান্য গরম করে লাগান। এই তেল জয়েন্ট পেন আর পেশীর ব্যথায় আরাম দেয়। এছাড়াও অনেক সময় নানা কারণে যেমন ঠাণ্ডা লাগলে বা কোনও সংক্রমণ হোলে আমাদের কানে ব্যথা হয়। তখন আমন্ড তেল কয়েক ফোঁটা কানে দিলে কানের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায় অনেক তাড়াতাড়ি।
আমন্ড তেলের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। এখনও পর্যন্ত এই তেলের সেরকম কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায়নি। বা এর এমন কোনও ক্ষতিকারক দিক প্রকাশ্যে আসেনি যার জন্য এই তেল ব্যবহারে কোনও বাধা নিষেধ আসবে। তবে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখেবন। যাদের ত্বকে বিশেষ কোনও সমস্যা আছে বা যাদের ত্বক একটু বেশি মাত্রায় সেনসিটিভ এবং অল্পতেই র্যাশ বেরিয়ে যায় তাদের আগে একবার অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই এই তেল ব্যবহার করা উচিৎ।আরও একটি কথা বলে রাখা ভালো। বয়স্ক মানুষ আর শিশুদের এই তেল কম ব্যবহার করা উচিৎ। তবে ছোট শিশুদের দুধে যদি এই তেলের কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে খাওয়ানো যায় তাহলে তাদের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয়।
উত্তরঃ হ্যাঁ, পতঞ্জলি আমন্ড তেল শুধুই বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য। এটি এক ধরণের হেয়ার অয়েল। বাদাম রোগান তেল, মিষ্টি আমন্ড বাদাম কোল্ড প্রেস করে বের করা হয়। এটি আপনি পানও করতে পারেন আবার ত্বকের জন্যও ব্যবহার করতে পারেন।
উত্তরঃ হ্যাঁ, এতে এমন কয়েকটি পুষ্টিকর উপাদান আছে যা আপনার ত্বককে হেলদি করে তোলে। এই লেখাতে আগেই মুখে এই তেল ব্যবহারের পন্থা বলে দেওয়া হয়েছে। আপনি নিশ্চিন্তে এই তেল মুখে লাগাতে পারেন, কোনও অসুবিধা হবে না।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন
ত্বক ও চুলের যত্নে ক্যাস্টর ওয়েল বা রেড়ির তেলের উপকারিতা