মনে করে দেখুন আমাদের দাদু-দিদারা তামার গ্লাসে জল খেতেন। কিন্তু আজকের দিনে সেই অভ্যাস আর নেই। এখন হয় কাচের , নয়তো স্টিলের গ্লাসে জল খেতেই সবাই অভ্যস্ত। তবে আয়ুর্বেদশাস্ত্র কিন্তু এখনও তামার গ্লাসে জল খাওয়ার পক্ষে। আসলে প্রাচীন এই চিকিৎসাশাস্ত্র মতে তামার গ্লাসে জল রেখে খেলে একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায় (Benefits of drinking water from a copper glass as per ayurveda)। তামা আসলে প্রাকৃতিক “পিউরিফায়ার” এর কাজ করে। অর্থাৎ তামার গ্লাসে বা বোতলে জল রাখলে সেই জলে উপস্থিত জীবাণু এবং ফাঙ্গাস মারা যায়। ফলে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই। তবে এখানেই শেষ নয় তামার গ্লাসে জল খাওয়া শুরু করলে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
তামার গ্লাসে জল খেলে সাধারণত যে যে উপকারগুলি মেলে:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে কপার গ্লাসে জল (drinking water in copper vessel) রেখে খেলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। আর যদি সারা রাত তামার গ্লাসে জল রেখে পরের দিন সকালে উঠে খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন, তাহলে মেলে আরও অনেক শারীরিক উপকার। যেমন ধরুন…
১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
তামার গ্লাসে জল রাখলে সেই জলে ধীরে ধীরে মিশতে শুরু করে তামা (copper)। আর এমন জল পান করা শুরু করলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে কপারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তো মারা যায়ই, সেই সঙ্গে বদ-হজম এবং স্টমাক আলসারের মতো সমস্যা কমতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, স্টমাকে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদেরও ধ্বংস করে দেয় কপার, সেই সঙ্গে এই খনিজটির প্রভাবে কিডনি এবং লিভারের ক্ষমতাও বাড়ে।
২. ওজন কমে:
তামার গ্লাসে (copper glass) জল খাওয়া শুরু করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। আর মেটাবোলিজম রেটের উন্নতি ঘটার কারণে শরীরের ইতি-উতি জমে থাকা মেদ ঝরে যেতে সময় লাগে না। তবে ওজন কমাতে এই খনিজটি আরেক ভাবেও সাহায্য করে থাকে। আসলে শরীরে কপারের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে দ্রুত গতিতে ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত তামার গ্লাসে জল খাওয়া শুরু করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ষেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে কোনও ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে। শুধু তাই নয়, শরীরে কপারের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে নতুন কোষের উৎপাদন বেড়ে যায়, যে কোনও ধরনের চোট-আঘাত সেরে যেতেও সময় লাগে না।
৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
প্রতিদিন সকালে উঠে তামার পাত্রে জল খেলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে কপারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে দেহে উপস্থিত টক্সিক উপাদানেরা সব ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে নানাবিধ রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি বলিরেখাও উধাও হতে শুরু করে। ফলে ত্বকের বয়স তো কমেই, সেই সঙ্গে সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় চোখে পড়ার মতো (copper water benefits for skin)।
৫. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
শরীরে কপারের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। আর সে কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির করা এক গবেষণাতেই। সেই পরীক্ষায় দেখা গেছে শরীরে কপারের মাত্রা বাড়তে থাকলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সেই সঙ্গে একদিকে যেমন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে, তেমনি হার্ট রেটও স্বাভাবিক থাকে। ফলে কোনও ধরনের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
৬. যে কোনও ধরনের ব্যথা কমে যায়:
তামার পাত্র ব্যবহার করা শুরু করলে শরীরে তামার ঘাটতি কমতে থাকে। ফলে এই বিশেষ খনিজটির প্রভাবে দেহের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা একেবারে কমে যায়। তাই তো যে কোনও ধরনের ব্যথা, তা সাধারণত ব্যাক পেইন হোক, কী বাতের যন্ত্রণা, কমতে সময় লাগে না।
৭. অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দূরে থাকে:
খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করা আয়রন যাতে শরীর দ্বারা ঠিক মতো শোষিত হতে পারে, সেদিকে নজর রাখে কপার। আর শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর হলে স্বাভাবিকভাবেই লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়তে শুরু করে, যে কারণে অ্যানিমিয়ার মতো রোগ ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগ পায় না।
ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: wikipedia
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
