যষ্টিমধু (licorice)! এই শব্দটার মধ্যে মধু থাকলেও এটা কিন্তু মধু নয়! তবে এর গুণাগুণ মধুর থেকে কোনও অংশে কম নয়। আসলে ছোটবেলা থেকেই যষ্টিমধুই (licorice) আমাকে সুস্থ (healthy) রাখতো। সর্দি-কাশি হলে (cold) আমি আবার কাফ সিরাপটা একদম খেতে পারি না। হয় তেতো লাগে, না হলে ভীষণ মিষ্টি লাগে! তো গলাব্যথায় প্রচণ্ড কষ্ট পাই বলে ছোটবেলা থেকেই মা অনেক ঘরোয়া টোটকা (home remedy) ব্যবহার করেই আমার সর্দি-কাশি (cold) কমানোর চেষ্টা করতো। তার মধ্যে আমার যেটা সব থেকে বেশি মনে পড়ে, সেটা হল যষ্টিমধু। কারণ যষ্টিমধুতে (licorice) আমার কাশি কমে যেত। আসলে যষ্টিমধু হল গাছের শিকড়। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের সব রকম ওষুধ তৈরির কাজেই প্রায় যষ্টিমধু ব্যবহার করা হতো। যা আজও চলে আসছে। আজকাল ঘরোয়া টোটকা (home remedy) হিসেবেও আমরা এটা ব্যবহার করে থাকি। শুধু কি শরীর-স্বাস্থ্যের (health) জন্যই এর ব্যবহার! একেবারেই না। স্কিন (skin) চুল (hair) সুস্থ রাখতেও এই যষ্টিমধু (licorice) একই ভাবে কার্যকর। আসুন জেনে নিই, যষ্টিমধু (licorice) কী ভাবে আপনাকে সুস্থ (healthy) রাখবে।
স্বাস্থ্যের যত্নে
সর্দি-কাশিতে
ধরুন, আপনার গান বা আবৃত্তির অনুষ্ঠান রয়েছে। আর তার আগে আপনার গলাটাই বিগড়ে বসল। এমন অবস্থায় আপনার মুশকিল আসান হতে পারে যষ্টিমধুই। কারণ সর্দি-কাশি-গলাব্যথা দূর করার সঙ্গে সঙ্গে এটা আপনার কণ্ঠনালিও পরিষ্কার করে। আর আপনার গলার স্বরকে আরও শ্রুতিমধুর করে তোলে। আর ঠান্ডা (cold) লেগে বুকে কফ জমে গেলেও সেই কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে যষ্টিমধু! ব্রঙ্কাইটিস ও টনসিলাইটিসও সারায় যষ্টিমধু (licorice)।
অ্যালার্জিতে
ঠান্ডা লাগলে তো যষ্টিমধু কাজে দেয়ই, অ্যালার্জি দূর করতেও খুবই উপকারী। আবার মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও এটি কার্যকর।
অ্যাসিডিটিতে
যষ্টিমধু আবার বদ হজম বা অ্যাসিডিটিরও (acidity) খুব ভাল ওষুধ। ফুটানো জলে যষ্টিমধু (licorice) ভিজিয়ে রেখে ওই জলে অল্প করে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। খুব সহজেই অ্যাসিডিটি (acidity) দূর হবে।
মৃগী রোগে
মৃগী রোগ থাকলেও সেই যষ্টিমধুই (licorice) উপকারী। এক বা দুই গ্রাম যষ্টিমধু আধকাপ চালকুমড়োর রসের সঙ্গে মিশিয়ে রোজ খেলে অনেকটা উপকার পাওয়া যাবে।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে
ঘর-বাইরে সামলাতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই এটা-ওটা ভুলে যাচ্ছেন? তা হলে দুধের সঙ্গে যষ্টিমধু (licorice) মিশিয়ে পান করতে হবে। এতে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়বে।
পুষ্টিজনিত কারণে
পুষ্টিজনিত কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে রোজ অল্প পরিমাণে যষ্টিমধু খেলে উপকার পাবেন।
আলসার ও জন্ডিসে
আলসার ও জন্ডিসেও খুবই উপকারী। জন্ডিসে তো তেল-ঝাল-মশলা খাওয়া বারণ থাকে। তো এই সময় আধ কাপ গরম দুধে এক গ্রাম যষ্টিমধু গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকেল পান করলে উপকার পাবেন।
লিভারের জন্য
লিভারের সুরক্ষাতেও যষ্টিমধু (licorice) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চোখের জন্য
চোখে অনেক সময় হয়তো ঝাপসা দেখছেন। তা হলে এক কাজ করুন, শুকনো ২-৩টে আমলকির সঙ্গে যষ্টিমধু নিয়ে একটু থেঁতো করে আধ কাপ গরম জলে ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এ বার ওই জল কয়েক বার ছেঁকে নিন। এ বার চোখে ওই ছেঁকে নেওয়া জলের ঝাপটা দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই আপনার চোখের ঝাপসা ভাব দূর হবে।
ত্বকের যত্নে
স্কিনের জেল্লা বাড়াতে
ত্বক (skin) উজ্জ্বল ও মসৃণ করতেও যষ্টিমধু জরুরি। ঘিয়ের সঙ্গে যষ্টিমধু মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক (skin) তো উজ্জ্বল হবেই। আর ব্রণ, বলিরেখা, দাগ-ছোপের থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে।
ফোঁড়া হলে
ফোঁড়া হলে যষ্টিমধু বেটে তার প্রলেপ লাগান। ফোঁড়া কমে যাবে।
চুলের যত্নে
চুলের হাজারো সমস্যায়
শুধু ত্বকের যত্নেই নয়। চুলের (hair) যত্নেও একই ভাবে যষ্টিমধুর গুরুত্ব অসাধারণ। যষ্টিমধু, তিলের তেল ও আমলকি মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল (hair) পড়া তো বন্ধ হয়ই, খুশকির সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।
তবে যষ্টিমধু কখনওই বেশি পরিমাণে বা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা উচিত নয়। এক নাগাড়ে ৬ সপ্তাহের বেশি ব্যবহার না করাই উচিত।
মনে রাখবেন – যষ্টিমধুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁদের জন্য যষ্টিমধু ভাল নয়।
- কিডনির সমস্যা থাকলেও যষ্টিমধু ব্যবহার করা উচিত নয়।
- যষ্টিমধুর পরিমাণ বেশি হয়ে গেলেই উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- গভর্বতী থাকাকালীন বা লিভার সিরোসিস থাকলে যষ্টিমধু ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
- আবার বেশি পরিমাণে যষ্টিমধু (licorice) খেলে মাথা ধরা, আলস্য এবং পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে।
- যষ্টিমধুর তৈরি কোনও ওষুধ ব্যবহারের আগে সব সময়ই ডাক্তার অথবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ছবি সৌজন্যে: ইউটিউব
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!